ঢাকা ২৪ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান ঘোষণার রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম
জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান ঘোষণার রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা রিটের শুনানি শেষে এই রায় দেন আদালত।

অন্যদিকে ১৫ আগস্টকে ‘জাতীয় শোক’ দিবসের ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। 

সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

২০০৯ সালে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে হাইকোর্ট। যা এতদিন পালিত হয়ে আসছিল। তবে চলতি বছর এটি পালন না করে স্থগিত করা হয়। এখন পুরো রায়টি স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

সাদিয়া নাহার/

সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার ছেলের ২৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার ছেলের ২৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক

সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের ১৬টি ও তার ছেলে রাহার মালেকের ১২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক পৃথক দুই আবেদনে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়, আসামিদের নামে ব্যাংক হিসাবসমূহে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামিরা হিসাবসমূহে রক্ষিত অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। মামলার তদন্ত সমাপ্তির পূর্বে ব্যাংকহিসাবগুলোতে রক্ষিত অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে তদন্তে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ হওয়া একান্ত আবশ্যক। বাসস

অমিয়/

শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ আসামি খালাস

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ আসামি খালাস
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ৯ আসামিকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট

পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাজাপ্রাপ্ত ৪৭ আসামির সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে তাদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি নিয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। 

আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন কায়সার কামাল এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এদিকে মামলার রায় ঘোষণার পরপরই ঈশ্বরদীতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাস করেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন নেতা-কর্মীরা। শহরে, পাড়া-মহল্লায় খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল বের করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, এ জন্য শহরের রেলগেট ট্রাফিক মোড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। 

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ৯ আসামি ছিলেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম আক্তারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, বিএনপি নেতা মাহাবুবুর রহমান পলাশ, সাবেক কমিশনার শামসুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহীন, পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল ও বিএনপি নেতা শহিদুল হক অটল। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হয়। 

মামলার পর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর ৪৭ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করে মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু আলোচিত রাজনৈতিক এই মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. রুস্তম আলী রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের ষড়যন্ত্রে তৎকালীন আদালতের ফরমায়েশী রায় উল্লেখ করে মামলাটি প্রত্যাহার ও আসামিদের মুক্তির দাবি করে আসছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। 

বাংলায় রায় দিলেন হাইকোর্ট

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ এএম
বাংলায় রায় দিলেন হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে এক মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

বিরোধীদলীয় নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় এই রায় দেন হাইকোর্ট। পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর বাংলায় এই রায় দেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত অংশটুকু আদালত বাংলায় ঘোষণা করেন।

বেঞ্চের নেতৃত্ব দেওয়া বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম রায় ঘোষণার আগে বলেন, ‘মামলার বিষয়বস্তু বিস্তৃত। চুম্বক পয়েন্ট ও সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাস মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। ঐতিহাসিক এ ঘটনা ১৯৫২ সালের। রায়টা বাংলায় দেওয়া হচ্ছে।’ 

এরপর রায়ের পর্যবেক্ষণসহ সিদ্ধান্ত অংশটুকু ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্ট বলেন, মামলাটি বিদ্বেষপূর্ণ, রায়ে পক্ষপাতিত্ব করেছে বিচারিক আদালত।

প্রসঙ্গত, এখন ওয়েবসাইটে সুপ্রিম কোর্টের সব রায় বাংলায় দেখার সুযোগ আছে। ইংরেজি ভাষায় দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের সব রায়-আদেশ বাংলা ভাষায় দেখাতে প্রযুক্তিসেবা সংযোজন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজিতে দেওয়া রায় বা আদেশ গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে বাংলায় অনুবাদ হয়। জনসাধারণের বিচার-প্রক্রিয়ায় সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের অভিপ্রায়ে বাংলায় অনূদিত রায় দেখার ব্যবস্থা রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

আইনজীবীরা জানান, এ প্রযুক্তির সংযোজন ও উদ্বোধন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক সময়োপযোগী নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ প্রযুক্তিসেবা উদ্বোধনের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় দেওয়া সব রায়-আদেশ গুগলের প্রযুক্তির সহায়তায় আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বা যেকোনো ব্যক্তি নিজে নিজেই বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারবেন। এ জনমুখী প্রযুক্তি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি ইংরেজি ভাষায় দেওয়া যেকোনো রায় বা আদেশ, তা যত বড়ই হোক না কেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তা বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারছেন।  

বিএসইসির শিবলী, ম্যাক্সের আলমগীর কারাগারে

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম
বিএসইসির শিবলী, ম্যাক্সের আলমগীর কারাগারে
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ও গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদন শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব ওই আদেশ দেন। 

এর আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পৃথক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তারা ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তাদের আইনজীবীরা নির্ধারিত সময়ে আদালতে ওকালতনামা ও আবেদন দাখিল করতে না পারায় রিমান্ড শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করে তাদের কারাগারে পাঠান বিচারক। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। একই দিন তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

 

বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট, উপজেলায় আদালত

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট, উপজেলায় আদালত
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন

বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ ও সব উপজেলায় বিচারিক আদালত স্থাপনসহ ২৮টি সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অধস্তন আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব বিলোপ ও সব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনা, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় স্থাপন, স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস ও স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন, চূড়ান্তভাবে দণ্ডিতকে ক্ষমা করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বিচারাঙ্গনকে দলীয়করণ মুক্ত রাখা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। 

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ৩৫২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আগের সরকারগুলো বারবার বলেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কার্যত বিচার বিভাগ কখনোই স্বাধীন ছিল না। এ জন্য কমিশন বলেছে, বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন ও কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। এটি ৩৫২ পৃষ্ঠার একটি বড় রিপোর্ট। লিগ্যাল সার্ভিসে স্বচ্ছতা আনার জন্য জাজ অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন কিছু রিকমেন্ডেশন দিয়েছে কমিশন। তার আলোকে কিছু কাজও হয়েছে। জাজ এপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন নীতিমালা নিয়ে আসা হয়েছে।’ 

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মামলার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের মতে, বর্তমানে পুলিশের তদন্তে প্রভাব বা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব পুলিশের একচ্ছত্র অধীনে না থাকে।

আদালত ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কমিশন বলেছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি বিচারিক আদালতের কাঠামো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের বিচারপ্রাপ্তি সহজে নিশ্চিত হয়। 

পৃথক সচিবালয় বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনতে হবে। সে জন্য বিচার-কর্মবিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়ের আওতায় বিচার-কর্মবিভাগের বিচারক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

দণ্ডিতকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদালতের বিচারে চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বোর্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত হবে।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মোবাইল কোর্টে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা সংশোধন করে শুধুমাত্র জরিমানার বিধান করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পরিবর্তে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। 

বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় আইনি সহায়তা পায় না, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্যা সমাধানে চলমান আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে আদালতের বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত থাকে।

আইনি শিক্ষার মানোন্নয়নেও বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন মনে করে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইন পেশায় আকৃষ্ট করতে মেডিকেল শিক্ষার মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে আইনজীবীদের মান উন্নত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব সুপারিশ কার্যকর করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন প্রয়োজন। বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে।