
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি)। আদালত কতৃক পূর্বের নির্ধারিত ছিল শুনানির সময়। এর জন্য চট্টগ্রাম আদালতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে যৌথ বাহিনী টহল ও পাহাড়া দিচ্ছে চট্টগ্রাম আদালত এলাকা।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হলে কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। ওইদিন আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় প্রিজনভ্যান আটকে চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সরিয়ে দিতে টিয়ারেশল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশসংসভাবে হত্যা করা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর চিন্ময়ের পক্ষে আগাম শুনানির জন্য উচ্চ আদালত থেকে ওকালতনামা স্বাক্ষর করে নিয়ে এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।
কিন্তু চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীর ওকালতনামা দিয়েই মামলায় লড়তে হবে-এমনটাই জানিয়েছেন আদালত। পরপর তিনবার এজলাস বসলেও স্থানীয় বারের কোনো আইনজীবী ওকালতনামা দেননি। ফলে, রবীন্দ্র ঘোষের আবেদন নথিভুক্ত করে আবারও ২ জানুয়ারিই শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির নেছার আহমেদ।
চট্টগ্রাম বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী হত্যার আসামি। তার পক্ষে চট্টগ্রামের কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে রাজি নন। আমরা আমাদের ভাই আলিফ হত্যার জন্য চিন্ময় দাসের শাস্তি চাই।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালতের অদূরে সরকারি কৌঁসলি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুন হন এবং পুলিশের ওপর হামলা-গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করে তার বাবা এবং ভাই। আর পুলিশ করে ৩ টি মামলা।
আলিফের বাবার করা হত্যা মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ভাইয়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় ১১৬ জনকে। সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশিস শর্মাকে আসামি করা হয়েছে। তিনি মামলাটির ৩৩ নম্বর আসামি। এরপর আজ চিন্ময়ের জামিন শুনানীর দিন ধার্য্য থাকলেও সে সময় কোনো আইনজীবীই তার পক্ষে অংশ নেননি। ফলে আদালত আগামী বছরের ২ জানুয়ারি শুনানীর দিন ধার্য্য করেছিলেন আদালত।
গত ২৫ অক্টোবর লালদিঘি মাঠে সনাতনীদের নিয়ে একটি বড় সমাবেশ করে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন নতুন এই জোটের মুখপাত্র চন্দন দাস ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।
সেদিন সমাবেশ শেষে নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন বিএনপির এক নেতা। পরে তাকে বহিস্কার করে বিএনপি। সেই মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা থেকে।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণকে আলিফ হত্যায় আসামি করতে আইনজীবীরা বার বার বিক্ষোভ করেছে। আইনজীবীরা চিন্ময়কে আলিফ হত্যা মামলায় আসামি করার দাবি জানান।
এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৮ জনকে আদালতে তোলা হলে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তাদের মধ্যে নুরু ও দেলোয়ার নামে দুই আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন সানজিদা গফুর নামে জুনিয়র আইনজীবী। এনিয়ে আদালত এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। কেননা সানজিদা গফুর আদালতের কাছে যে ওকালতনামাটি দাখিল করেন সেটিতে রাস্ট্র পক্ষের আইনজীবী নেজামুদ্দিনের সীল পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক আইনজীবীরা তার কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তিনি লিখিতভাবে অতিরিক্ত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মাহফুজ