বসুন্ধরা গ্রুপের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাব্বির আহমেদ হত্যা মামলার আসামিদের বাঁচাতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু তাহেরের আদালত এ রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে সব মামলার বোঝা থেকে মুক্ত হলেন তারেক রহমান।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম ও তার দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান এবং সাদাত সোবহান, আবু সুফিয়ান, কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) মিয়া নুরুদ্দিন অপু।
মামলার রায়ের পর তার আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বোরহানউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশে আর কোনো মামলা নেই। মিথ্যা মামলার বোঝা থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়েছেন। এখন তিনি দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। দেশবাসীও তাকে সাদরে বরণ করার অপেক্ষায় রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার রায় ঘোষণার আগে কাজী সলিমুল হক কামাল ও আবু সুফিয়ান এজলাসে হাজির ছিলেন। জামিনে থাকা অপর আসামিদের পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়।
২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর এ মামলাটি করে দুদক। পরের বছরের ২৪ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই বছরের ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ফলে শুরু হয় মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাব্বির হত্যা মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারেক, বাবর ও শাহ আলমের মধ্যে বাবরের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শাহ আলমের কাছে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন তারেক ও বাবর। ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই হত্যা রহস্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারেক ও বাবরের সঙ্গে শাহ আলমের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে শাহ আলমের কাছ থেকে বাবর ২১ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। এ টাকার মধ্যে বাবরের নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ২০০৬ সালের ২০ আগস্ট হাওয়া ভবনে ১ কোটি টাকা তারেকের এপিএস অপুকে বুঝিয়ে দেন। বাবর ৫ কোটি টাকা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে নগদ গ্রহণ করে কাজী সালিমুল হক কামালের কাছে জমা রাখেন। বাকি ১৫ কোটি টাকা বাবরের নির্দেশে আবু সুফিয়ান প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সালিমুল হক কামালকে ২০টি চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) তারেক বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তার রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবন বিকল্প শক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
তবে, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দৃশ্যপট বদলে যায়।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে সেনা-সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের একাধিক দুর্নীতির মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তারেক। ওই সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের নেতৃত্বের হাল ধরেন তিনি।
এক-এগারো সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার তারেকের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫টি মামলা করেছিল।
এদিকে, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তারেকের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। সেখানে ঈদের ছুটি কাটিয়ে মা ও ছেলে দুজনে একসঙ্গে ফিরবেন বলে জল্পনা থাকলেও বিএনপি নেতারা এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।