
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু তাহেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার হাইকোর্টের নির্দেশে কুমিল্লা আদালতের আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু।
এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সমিতির ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অ্যাডভোকেট আবু তাহের এবং হিসাবরক্ষক কাজী সুমনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে মামলা করা হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের আস্থাভাজন বলে জানা যায়।
অভিযোগে জানা গেছে, লেজার বইয়ে ওভাররাইটিং, ভুয়া ও দ্বৈত ভাউচার করা, লেজার বইয়ের বিভিন্ন অংশে ফ্লুইড ব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহের ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই মেয়াদে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনকে নিয়ে আত্মসাৎ করেন ৪ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৭২০ টাকা। এর মধ্যে প্রথম মেয়াদে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আত্মসাৎ করেন ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৪ টাকা এবং দ্বিতীয় মেয়াদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আত্মসাৎ করেন ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬ টাকা।
আইনজীবী সদস্যদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর সমিতির সাধারণ সভার প্রস্তাবক্রমে একই বছরের ২৪ নভেম্বর কার্যকরী কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য পদ স্থগিত করা হয় এবং একই সঙ্গে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে মামলায় হাইকোর্টের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন আবু তাহের। সোমবার দুপুরে সরাসরি তিনি এজলাসে যাচ্ছিলেন। মাস্ক পরে এজলাসে যাওয়ার পথে আইনজীবীরা তাকে দেখে ধাওয়া দেন। এ সময় তিনি দৌড়ে এজলাসে ঢুকতে যাওয়ার আগেই আইনজীবীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারেন। একপর্যায়ে তিনি এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় আইনজীবীরা তাকে হামলার চেষ্টা করলেও বিচারক চলে আসেন। পরে আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে অবস্থান করেন।
পরে আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জেলহাজতে পাঠান। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর সময় আবার আইনজীবীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা ৩টার কিছু আগে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরানো হয়।