
১৯ শতকের শেষ দিকে ও ২০ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় পতিতালয়গুলোয় এক ধরনের ছোট মোমবাতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। ‘বুগিস দে পোচে’ (পকেট মোমবাতি) নামের এ মোমবাতিগুলো পতিতালয়ের মোমবাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বিশেষ কারণে এটি ব্যবহারের জন্য এ নামে ডাকা হতো।
বলছি ভিক্টোরিয়ান যুগের কথা। সে সময় ইউরোপে স্কুলের চেয়ে বেশি ছিল পতিতালয়ের সংখ্যা। তবে সমাজের ঊর্ধ্বস্থ নারীরা এ ধরনের পেশার সঙ্গে কখনোই জড়াতেন না। যে সময়ের ঘটনা, তখন নারীরা এত বেশি বৈষম্যের শিকার হতেন যে, পতিতাবৃত্তি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তারা তেমন উপার্জন করতে পারতেন না।
পতিতা নাম দিয়ে এ গোষ্ঠীকে বোঝানো হতো যে তারা অত্যন্ত নিচু শ্রেণির। সমাজের উত্তম ও ঊর্ধ্বস্থ নারীরা কখনোই এ ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িত হতেন না। যেসব নারী এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতেন, তাদের বলা হতো ‘ফলেন উইমেন’ অর্থাৎ ‘পতিত নারী’। সে সময় ইউরোপে পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে বৈধ ছিল। এমনকি পুরুষদের এতে উৎসাহিত করা হতো। সে যুগের পুরুষরা যৌন ইচ্ছার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন বলে মনে করতেন, যাতে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এমনকি বর্তমান সময়েও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম পেশাগুলোর একটি হলো পতিতাবৃত্তি। তবে কোনোকালে কোনো দেশের মানুষই বিষয়টি নিয়ে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। ১৮৮০ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে ‘বুগিস দে পোচে’ নামের ম্যাচবক্সের মতো বাক্সে ছোট এক ধরনের মোমবাতি পাওয়া যেত। বাক্সের কভারে থাকত কোনো নারীর ছবি। বাক্সের একপাশে থাকা একটি ছোট গর্তে রেখে মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো। ফ্যাকাশে সাদা এসব মোমবাতি সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্বলতে পারত।
মূলত মোমবাতিগুলো টাইমার হিসেবে ব্যবহার করতেন তখনকার যৌনকর্মীরা। খদ্দের পতিতার ঘরে অবস্থানের পরপরই একটি মোমবাতি জ্বালানো হতো। মোমবাতি না নেভা পর্যন্ত সময় পাবে খদ্দের। অনেক সময় কেউ কেউ মোমবাতির সুতা এমনভাবে ছেঁটে রাখতেন, যাতে কম সময়ে নিভে যায়। তবে পতিতালয়ে এভাবে মোমবাতি ব্যবহারের ঘটনাটির সত্যতা উদঘাটন করতে গিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি আসলে একটি গুজব ছাড়া কিছুই নয়। ‘পকেট মোমবাতি’ কথাটির চেয়ে ‘পতিতালয়ের মোমবাতি’ অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম। তাই এমন একটি মুখোরচক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে এ পণ্যটি প্রচার এবং বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
ছোট মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো যখন একটি ম্যাচের কাঠির চেয়ে আরেকটু বেশি সময় আলোর প্রয়োজন পড়ে। আরও জানা গেছে, গোল্ড রাশ বছরগুলোয় এ ধরনের মোমবাতি পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ছিল। তখন এ মোমবাতিগুলো ঠিক ৭ মিনিটের জন্য জ্বলেছিল। ১৮৬৭ সালের ফরাসি বই ‘Le dernier mot de Rocambole’-এ ‘Bougies de poche anglaise’ এর উল্লেখ রয়েছে। তারা এগুলো ইংরেজি পকেট মোমবাতি হিসেবে জানত। তবে সেগুলো মাত্র ৩ মিনিটের জন্য পুড়েছে।
কারও কাছে তেল না থাকলে বা অস্থায়ী আলো পেতে এগুলো ব্যবহৃত হতো। আবার কারও কারও কাছে ফসফরাস ডোবানো ডগা ছিল, যাতে মোমবাতিগুলো ম্যাচস্টিকের মতো আলোকিত হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডয়েচেস হিস্টোরিচেস মিউজিয়ামের অ্যাকাউন্টে এ ধরনের মোমবাতির কিছু ছবি পাওয়া গেছে। সেখানে তারা এমন কিছু তথ্য জানিয়েছে, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। ছবিগুলোয় দেখা গাছে, ম্যাচবক্সের মতো দেখতে ছোট মোমবাতির বাক্সের কোনোটির গায়ে চমৎকার একজন নারীর ছবি। কোনোটিতে নাইট, পুরুষ, এমনকি ঝুড়িওয়ালা নারীকেও দেখা গেছে। একটি ওয়েবসাইট ‘Worthpoint.com’-এ এসব মোমবাতির কিছু বিজ্ঞাপন রয়েছে, যেখানে তারা এগুলো বিক্রি করে থাকে।
অপর এক ইতিহাস বলছে, প্রাচীন রোমে নারী ক্রীতদাসদের সেনাদের জন্য যৌন পরিষেবা দিতে বাধ্য করা হতো। সেখানে পতিতালয়গুলো ব্যারাক ও শহরের দেয়ালের কাছাকাছি ছিল। তখন প্রথাটি এমন ছিল, পতিতার ঘর খোলা আছে তা বোঝাতে সেখানে প্রজ্বলিত মোমবাতি প্রদর্শন করা হতো।
/আবরার জাহিন