
জাদুঘর মানেই প্রাচীন নিদর্শন ও তথ্যভাণ্ডার। ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাচীন অথবা বিলুপ্ত নিদর্শন দেখতে জ্ঞানপিপাসু মানুষ সাধারণত জাদুঘর পরিদর্শন করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়ামে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক তথ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপকরণ। আজ আপনাদের জানাব বেশ কিছু অদ্ভুত বৈচিত্র্যময় জাদুঘর সম্পর্কে।
আইসল্যান্ডিক ফ্যালোগিক্যাল মিউজিয়াম (আইসল্যান্ড)
আইসল্যান্ডে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ অনেক মিউজিয়াম রয়েছে। কিন্তু আইসল্যান্ডিক ফ্যালোগিক্যাল মিউজিয়াম একটু অদ্ভুত। এখানে ফ্যালিক প্রজাতির নানা ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়।
চুলের জাদুঘর (তুরস্ক)
তুরস্কের অ্যাভনোস শহরে গেলে অদ্ভুত এক জাদুঘরের দেখা মেলে। যেখানে জাদুঘরের দেয়ালে নিজেদের চুল ঝুলিয়ে রাখেন নারীরা। অদ্ভুত এই জাদুঘরের নাম হেয়ার মিউজিয়াম। এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গ্যালিপ। তিনি চেজ গ্যালিপ নামেই বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয় ছিলেন। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং তাদের চুলের টুকরো এখানে রেখে যান। বর্তমানে জাদুঘরে ১৬ হাজারেরও বেশি নারীর চুল রয়েছে।
টাকার জাদুঘর (বাংলাদেশ)
আমাদের দেশে রয়েছে দারুণ একটি মুদ্রা জাদুঘর। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রথম টাকা জাদুঘর (Taka Museum) প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের অতীত ও বর্তমান মুদ্রার ইতিহাস সংরক্ষণ, মুদ্রার ঐতিহ্য ও বিকাশের ক্রমধারা সবার কাছে উপস্থাপনের লক্ষ্যে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায় টাকা জাদুঘরের অবস্থান।
টাকা জাদুঘরের দেয়ালে সাজানো আছে রংবেরঙের নকশায় সজ্জিত বৈচিত্র্যময় টাকার সংগ্রহ। প্রাচীন আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রচলিত প্রায় সব ধরনের মুদ্রা দেখতে পারবেন এই জাদুঘরে। এ ছাড়া ডিজিটাল কিয়স্ক, ডিজিটাল সাইনেজ, এলইডি টিভি, থ্রিডি টিভি, ফোটো কিয়স্ক, প্রোজেক্টর এবং স্যুভেনির শপ স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে।
দুটি গ্যালারিতে বিভক্ত জাদুঘরের প্রথম অংশে উপমহাদেশের বিভিন্ন সময়ের প্রচলিত মুদ্রা দেখতে পাবেন। দ্বিতীয় গ্যালারিতে আছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার সংগ্রহ। গুপ্তযুগ ও গুপ্তযুগ পরবর্তী মুদ্রা, হরিকেল রাজ্যে প্রচলিত রৌপ্য মুদ্রা এবং প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা কড়িসহ বিভিন্ন যুগের মুদ্রার পাশাপাশি প্রথম গ্যালারির শেষ প্রান্তে ডিওরোমার মাধ্যমে বাংলার মুদ্রা বিনিময় ও সঞ্চয়ের পদ্ধতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মেগুরো প্যারাসাইটোলজিক্যাল মিউজিয়াম (জাপান)
জাপানের রাজধানী টোকিওতে এই জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে নানা পরজীবী প্রাণী, জীবাণু ও কীটাণু দিয়ে। ১৯৫৩ সালে ডক্টর সাতোরু কামেগাই নামে একজন কীটতত্ত্ববিদ অনেকটা শখের বশেই এটি চালু করেন। এখানে ৬০ হাজারেরও বেশি পরজীবী প্রাণী এবং এ বিষয়ক ৫০ হাজার বই রয়েছে। বিভিন্ন রকমের পোকা-মাকড়, কেঁচো, নানা জাতের সূক্ষ্ম কৃমি, ছারপোকা, মশা, উঁকুন ছাড়াও এখানে রয়েছে নাম না জানা অনেক কীট।
মিউজিয়াম অব মেডিয়েভাল টর্চার ইনস্ট্রুমেন্ট (নেদারল্যান্ডস)
নেদারল্যান্ডসের এই আজব জাদুঘরে দেখতে পাবেন কীভাবে মধ্যযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় শাসকরা অত্যাচার চালাত। এখানে সাজানো আছে এক শরও বেশি নির্যাতন পদ্ধতি এবং যন্ত্র। এসব দিয়ে সে যুগে শোষকরা শাসন করত নিরীহ মানুষদের। অত্যাচারের সেকেলে ও হাতুড়ে এসব প্রক্রিয়া নিজ চোখে দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন বিচিত্র এই জাদুঘরটিতে।
আপসাইড ডাউন মিউজিয়াম (মালয়েশিয়া)
২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তৈরি মালয়েশিয়ার পেনাংয়ের এই জাদুঘরটিতে রয়েছে একেবারে ভিন্ন ধরনের চমক। একটি ফ্ল্যাটের কয়েকটি রুম নিয়ে সাজানো এই জাদুঘরটিতে সবকিছুই উল্টো। অর্থাৎ আপনি যখন একটি রুমের ভেতর হাঁটবেন মনে হবে যে আপনি সেই রুমটির ছাদে হাঁটছেন। রান্নাঘর, বাথরুম, শোবার ঘর, কাপড় ধোয়ার ঘর ও খাবার ঘর মিলে এই পুরো জাদুঘরটি। দেখতে ঘরের মতো হলেও এখানে রয়েছে ক্যাফে যেখানে আপনি চাইলে বসে রেস্ট নিতে পারবেন। এ ছাড়া এখানে দোকান রয়েছে যেখানে কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। মজার ব্যাপার হলো এই জিনিসগুলোও উল্টো!
সমুদ্র তলদেশের জাদুঘর (তুরস্ক)
সমুদ্রের গভীরে পানির তলদেশে জাদুঘর! শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে এমনই এক জাদুঘর তৈরি করেছে তুরস্ক। দেশটির ক্যানাকেল প্রদেশের দার্দানেলস প্রণালিতে এর অবস্থান। সেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে যুদ্ধ চলাকালে গ্যালিপোলি উপদ্বীপে ধ্বংস হওয়া ১৪টি জাহাজের ভগ্নাংশ। সম্প্রতি ডাইভারদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাদুঘরটি।
ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল এয়ার মিউজিয়াম। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘর এটি। ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামকে বলা যেতে পারে আকাশযান ও নভোযানের ঐতিহাসিক বিজ্ঞানের গবেষণাগার। এখানে প্রায় ৬০ হাজার উড়োজাহাজের মূল নমুনা রয়েছে।
জাহ্নবী