ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বর্ণে মোড়ানো শহর

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
স্বর্ণে মোড়ানো শহর
ধারণা করা হয় এল ডোরাডো শহরটি স্বর্ণ দিয়ে মোড়ানো। এখানে ছড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণের যত গুপ্ত ভাণ্ডার। ছবি: সংগৃহীত

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া অনেক সভ্যতার কথাই আমরা শুনেছি এবং সে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা থেকে মিলেছে প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক নিদর্শন। অর্থাৎ এসব সভ্যতা কাল্পনিক নয় বরং এসব সভ্যতার অস্তিত্ব মিলেছে। আনুমানিক ১৬০০ ও ১৭০০ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানরা বিশ্বাস করত যে, এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একটা জায়গা আছে, যেখানে অঢেল সম্পদ আছে। শুধু তাই না গোটা শহরটাই স্বর্ণ দিয়ে মোড়ানো। স্থানটির নাম এল ডোরাডো। এর মালিক হওয়ার জন্য মানুষ অতীতে অনেক অভিযান চালিয়েছে এবং এখনো চালাচ্ছে। স্বর্ণের সন্ধানে এসব অভিযানে প্রাণ গেছে অগণিত মানুষের, অনেক মানুষ হয়েছে নিঃস্ব, তবু এই জায়গার সন্ধান এখনো কেউ পায়নি। কারও মতে এল ডোরাডোর অস্তিত্ব নেই আবার কারও মতে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণের যত গুপ্ত ভাণ্ডার। কিংবদন্তি এই শহরকে ঘিরে রয়েছে কতই না উপাখ্যান আর নানা কল্পকাহিনি।

এল ডোরাডো স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ যেটি স্বর্ণ বা স্বর্ণের তৈরি। অনেক আগে দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় এক আদিবাসী গোষ্ঠী ছিল যার নাম মুইসকা। মুইসকা ঐতিহ্য অনুসারে, নতুন রাজা নির্বাচন করার পর মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্বর্ণের গুঁড়া মাখিয়ে তাকে গুয়াতাভিতার পবিত্র জলে স্নান করানো হয়। এদেরই বলা হতো এল ডোরাডো। ধীরে ধীরে ব্যক্তি থেকে এই নামটি হয়ে উঠল এক নগরীর। লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে মানুষ মনে করতে লাগল এমন একটি শহর আছে যার পুরোটাই স্বর্ণে মোড়ানো। আনুমানিক ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই বিভিন্ন নথিতে এল ডোরাডোর কথা বিভিন্নভাবে ছড়াতে থাকে। ষোড়শ শতকে সবচেয়ে বিস্তার লাভ করে এ মিথ। বিশেষ করে স্প্যানিশদের মুখেই এই কথা বেশি ছড়াতে শুরু করে। স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর ইতিহাস এবং মিথের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তারা। মুইসকা জাতির মানুষরা নিচু এলাকা থেকে বসবাসের জন্য দুবার স্থানান্তরিত হয়ে কলম্বিয়ার চুন্দিনামার্কা ও বয়াকা অঞ্চলের উঁচু ভূমিতে আসে যথাক্রমে খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭০ ও খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০-৫০০ সালের মধ্যে। এ সময় পৃথিবীতে থাকা অন্য জাতির মানুষেরাও উঁচু ভূমিতে স্থায়ী হয়েছিল। মুইসকা জাতি অ্যাজটেক, মায়া ও ইনকা সভ্যতার মতোই সমৃদ্ধ ছিল। যখন তাদের নতুন নেতা নিযুক্ত হতো, তখন তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে অনেক প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। এরকমই একটা প্রথা ছিল যেটায় নতুন রাজাকে লেক গুয়াতাভিতার কাছে আনা হতো, তারপর তাকে নগ্ন করে স্বর্ণের গুঁড়ায় সারা দেহ ঢাকা হতো। তারপর তাকে ভালোভাবে সজ্জিত একটা ভেলায় অনেক স্বর্ণ ও দামি পাথরের সঙ্গে তাকে এবং তার সাথীদের রাখা হতো। তারপর ভেলাটাকে লেকের কেন্দ্রে পাঠানো হতো, যেখানে হবু রাজা তার দেহ থেকে স্বর্ণের গুঁড়াগুলো ধুয়ে ফেলবেন, যে সময়ে রাজার সাথীরা স্বর্ণ ও মূল্যবান পাথরগুলো লেকে নিক্ষেপ করবে। এই প্রথাকে মুইসকার দেবতার প্রতি তাদের ত্যাগ বলে বিবেচনা করা হতো। বাস্তবিক অর্থে এল ডোরাডো কোনো শহর ছিল না, বরং ওই প্রথার মধ্যমণি রাজাকেই এল ডোরাডো বলা হতো। যদিও এল ডোরাডো একমাত্র রাজাকেই বলা হতো, তবে পরবর্তীতে ‘স্বর্ণের হারানো শহর’ বা দ্রুত সম্পদ আহরণ করা যায়, এমন এক কাল্পনিক জায়গাকে নির্দেশ করতেও এ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। গুয়ানার লেক পারিমের কাছে কল্পনার শহরটির ঠিকানা। বহু যুগ ধরে এর খোঁজে হাজার হাজার মানুষের অভিযান চলেছে বলে কথিত আছে।

ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়দের কাছে বাকি পৃথিবীর অনেকটাই অজানা ছিল। গুজবের সঙ্গে কল্পনা মিশে তাদের ধারণা দৃঢ় হয়, কোথাও নিশ্চয়ই স্বর্ণে মোড়া এ শহরটি ঠিকই আছে। ফ্রান্সিসকো পিসারো ১৫৩০ সালে ইনকা সাম্রাজ্য লুট করার পর বাইরের পৃথিবীর সবাই ভাবত, লাতিন আমেরিকার যে জায়গাগুলো এখনো বাইরের মানুষের কাছে অনাবিষ্কৃত, সেখানে কোথাও বিশাল ধন সম্পদের সাম্রাজ্য রয়েছে। এরাই এই স্বর্ণের রাজ্যের গুজব তৈরি করে।

ঠিক সেই সময় অভিযাত্রী কুয়েসাদা গুয়াতাভিটা হ্রদের পানি সেচে চার হাজার স্বর্ণের টুকরো পেয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর উৎসবের সময় আদিবাসীরা হ্রদে প্রথানুযায়ী স্বর্ণ নিক্ষেপ করত। এটি তারই যেন ইঙ্গিত দিয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই তা বিশ্বাস করেন না। এই সোনার লোভে বহু অঞ্চল থেকে লোকেরা এসেছে। প্রচুর পরিশ্রম করে হ্রদের তলদেশে জোয়ারের সময়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। অনেকেই এভাবে কিছু স্বর্ণের টুকরো সংগ্রহ করতে পারলেও স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর খোঁজ পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি।

স্প্যানিশরা যখন লাতিন আমেরিকা জয় করেন, স্থানীয় মুইসকা গোষ্ঠীকে খুঁজে বেরও করেন। লেক গুয়াতাভিতায় খোঁজ চালিয়ে কিছু স্বর্ণ পান। কিন্তু তাতে তাদের আঁশ মেটেনি। একের পর এক ব্যর্থ অভিযানে মানুষ আসতে থাকে সেখানে। সেখানকার আদিম আদিবাসীদের তারা মারধর, অত্যাচার চালাতে থাকে স্বর্ণের খোঁজে। কিন্তু লাভ হয় না। তাদের হাত থেকে রেহাই পেতে তারাও নানারকম গল্পগাথা তৈরি করে। ক্রমশ তা ফুলেফেঁপে স্বর্ণের শহর এল ডোরাডোর রূপ নিল।

১৭৯৯-১৮০৪ সালে আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট লাতিন আমেরিকায় এক দুঃসাহসিক অভিযান করেন। ১৮০১ সালে ৪৫ দিন দুর্গম পথ অতিক্রম করে পৌঁছাতে সক্ষম হন রিও ম্যাগদালেনাতে। কিন্তু সেই স্বর্ণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে তিনিও ব্যর্থ হন। পরে তিনি শহরটির অস্তিত্ব পুরোপুরি অস্বীকার করেন।

এল ডোরাডোর সন্ধান পেতে গত ১০০ বছরে অভিযানই হয়েছে অন্তত ১৪টি। এই অভিযানে ইনকা সভ্যতার অনেক নিদর্শন পাওয়া গেলেও দেখা মেলেনি সেই স্বর্ণ শহরের। ২০০১ সালে রোমের এক পাঠাগারে হঠাৎ এক ধুলোমাখা নথি আবিষ্কৃত হয়। তাতে এল ডোরাডো শহরের কথা লেখা রয়েছে। আন্দ্রিয়া লোপেজ নামের এক ধর্মযাজক ১৭ শতকের সেই নথি লিপিবদ্ধ করেছেন বলে জানা যায়। লিপি থেকে জানা যায়, সেই শহরের অমিত ধনসম্পত্তির কথা। কিন্তু শহরটি কোথায় তা সেই লিপিতে খোলাসা করেননি যাজক। শুধু বলেছেন পেরু থেকে ১০ দিনের হাঁটাপথ। কিন্তু পেরুর কোন শহর থেকে বা কোন দিক থেকে যাত্রা শুরু করতে হবে তার কোনো সঠিক তথ্য লিপি থেকে জানা যায়নি।

জাহ্নবী

হারানো শৈশব

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
হারানো শৈশব

টিনের চাল। পাটকাঠির বেড়া দিয়ে বানানো ঘর। ছোট্ট একটি উঠোন। উত্তরে ছোট্ট একটি ছনের ঘর। তার পাশে খোলা রান্নাঘর। মাটির চুলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে, চুলো থেকে কয়লা তুলতেন মা। কয়লা নিয়ে দাঁত মেজে বোগদাদি কায়দা হাতে মক্তবে যেতাম। মক্তবের হুজুর বেত হাতে হাঁটতেন। গলা ছেড়ে শব্দ করে কালিমায়ে তাইয়্যেবা, লা ইলাহা... পড়াতেন। আরও কত দোয়া যে পড়াতেন! সেসব দিনের কথা আজ বড় মনে পড়ে।

ভোরে ঘুম থেকে উঠতে কী কষ্টই না হতো সেই সময়! ঘুমঘুম চোখে মক্তবে যেতে যেতে বড় হতে চাইতাম। আরও কতকিছুই না ভাবতাম! চাইতাম রাত করে ঘুমিয়ে বেলা পর্যন্ত ঘুমোতে। মক্তব থেকে ফেরার সময় সবাই কত মজা করতাম! কত রকমের গল্প হতো! রাতে কে কী স্বপ্ন দেখেছে, তার বর্ণনাও করত কেউ কেউ। তখন আমিও একটা-দুটো স্বপ্নের কথা বলতাম।

দিন কেটে যায়। সপ্তাহ কেটে যায়। মাস গড়িয়ে বছর আসে। এভাবে বেড়ে উঠি আস্তে আস্তে। বয়স যখন সাত কিংবা আট বছর, তখন হুট করেই একদিন মা আমাকে স্কুলে নিয়ে গেলেন। বড় স্যারের সামনে দাঁড়ানো। মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে আমাকে বললেন, ‘তুই বড় দুষ্টু। পড়াশোনা করবি তো ঠিকমতো?’ আমি বললাম, ‘জি, করব’। এভাবে শুরু হলো স্কুলজীবন।

মাঠে গোল্লাছুট, মোরগ লড়াই, বউ চোরের মতো কত খেলাই না খেলেছি শৈশবে। ভাঙা জানালা দিয়ে স্কুল পালিয়ে ছুটেছি পাখির পিছু। ভরদুপুরে সাঁতার কেটেছি নদীতে। ছোট নদী। নদীটি আমাদের বাড়ির পাশেই। নাম নবগঙ্গা। ভরদুপুরে নদীতে হই-হুল্লোড় করছি। খবর পেয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্যে ছুটে আসতেন মা। হাতে থাকত পাঠকাঠির লাঠি। মা ডাকতেন আমাকে- ‘উঠে আয়। কিছু বলব না’।  উঠে এসে ধরা দিতেই দু-তিন ঘা লাগিয়ে দিতেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বাড়ি নিয়ে যেতেন। আদর করে ভাত খাইয়ে শুইয়ে দিতেন। কিছুক্ষণ পর পর আলতো করে চোখ খুলতাম। দেখতাম মা ঘুমিয়েছে কিনা। যেই দেখতাম ঘুমিয়ে পড়েছে, অমনি বেরিয়ে পড়তাম মার্বেলের থলি নিয়ে।

মাগরিবের আজান হলে বাড়ি ফিরতাম। সুন্দর করে হাত-মুখ ধুইয়ে দিয়ে ঘরে নিয়ে যেতেন মা। পড়তে বসিয়ে রান্নাঘরে যেনের মা। অ, আ, ক, খ পড়তে পড়তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতাম। রান্না শেষে মা-আব্বা ডেকে তুলে খাওয়াতেন। কোনো দিন ডেকে সফল হতেন। আবার কোনো দিন ব্যর্থ। সেদিন আর খাওয়া হতো না রাতে।

ইচ্ছে হয় শৈশবে ফিরে যেতে। ভরদুপুরে নদীতে সাঁতার কাটতে। পাখির পিছু পিছু ছুটতে। মায়ের হাতে মার খেতে। মাকে জড়িয়ে ঘুমোতে। জানি এর কিছুই এখন আর সম্ভব নয়। তবু হৃদয়ে শখ জাগে। শখ-আহ্লাদ আছে বলেই বেঁচে আছি।

কল্যাণপুর, ঢাকা

কলি

 

উদ্ভট যত রীতি

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০১ পিএম
উদ্ভট যত রীতি
আফ্রিকা থেকে উদ্ভূত এক অদ্ভুত প্রথা হলো–বিয়েতে নবদম্পতিকে ঝাড়ুর ওপর লাফ দিয়ে পার হওয়া

পৃথিবীতে দেশ-জাতিভেদে ভালোবাসা, বিয়ে কিংবা প্রেমের বহিঃপ্রকাশ, উদযাপন-আয়োজনে ভিন্নতা আছে। আর এই ভিন্নতার মধ্যেও কিছু কিছু প্রথা আছে যেগুলো অদ্ভুত কিসিমের। তেমনই কিছু প্রথা সম্পর্কে জানাব আজ।

কফিনে বিয়ে
বিয়ে মানে আনন্দ। আর কফিন হলো মৃত্যুর পর শেষযাত্রার বাহন। কিন্তু থাইল্যান্ডের দশ দম্পতি কফিনে শুয়েই বিবাহিত জীবনের জন্য আশীর্বাদ নিয়েছিল। অধিকাংশ মানুষ জীবিত অবস্থায় যেখানে কফিনে শুতে ভয় পায়, সেখানে ১০ দম্পতি কফিনে শুয়েই অদ্ভুত এক বিয়ের রীতি পালন করে। ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সা লের ভালোবাসা দিবসে। ব্যাংককের ব্যাং ক্রুয়ে জেলায় সেদিন ১০ জোড়া দম্পতি মন্দিরে আসে ভালোবাসার গাঁটছড়া বাঁধতে। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে নয়। সাদা চাদরে আবৃত গোলাপি কফিনে শুয়ে পড়ে তারা। আর সন্ন্যাসীরা তাদের চাদরে মুড়িয়ে মৃত ব্যক্তির জপ জপতে থাকে। জপ শেষে ঠিকই সন্ন্যাসীরা তাদের বিবাহিত জীবনের জন্য প্রার্থনা করে। এই দশ দম্পতির বিশ্বাস, এই রীতির ফলে তাদের বিবাহিত জীবনে সব বাধা কেটে যাবে।

কনেকে তীর নিক্ষেপ
চীনের এক উদ্ভট প্রথা কনেকে তীর নিক্ষেপ। শুনতে যতটা ভয়ংকর মনে হয়, আদতে তেমনটা নয়। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর অঞ্চলের এক ঐতিহ্য বিয়ের আসরে কনেকে তীর ছুড়ে মারা। বিয়ের আসরে নববধূকে তীর ছুড়ে মারবে বর। তবে তীরের মাথা হবে ভাঙা। ছুড়ে মারা তীর অবশ্যই কনের গায়ে আঘাত করতে হবে।  এই প্রথার বিশ্বাস অনুযায়ী নবদম্পতি তাদের জীবনে চিরন্তন প্রেম শিকার করতে পারবে।

প্রতীক কথা বলে
ভালোবাসার চিহ্ন বললে আমাদের চোখে ভাসে পানপাতা আকৃতির এক লাল চিহ্ন। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা দম্পতিদের ভালোবাসা প্রকাশে প্রায়ই এই চিহ্ন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে আফ্রিকার বিয়েতে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় লবণ, মরিচ থেকে শুরু করে গম ও ঝাড়ু। বিয়ের অনুষ্ঠানে গম উর্বরতা এবং জীবন ও জমি প্রদানের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতিনিধিত্ব করে ঝাড়ু। এভাবে মোট ১২টি প্রতীক আফ্রিকার বিয়েগুলোতে দম্পতিদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়।

ভালোবাসার চামচ বিনিময়
চতুর্থ শতাব্দীতে ওয়েলসে সেন্ট ডোয়াইনওয়েন নামে এক রাজকুমারী ছিলেন। বাবার ৩৬ জন কন্যার মধ্যে এই কন্যা মেলন ড্যাফোড্রিল নামে একটি স্থানীয় ছেলের প্রেমে পড়ে। কিন্তু রাজা তাদের এই প্রেম মেনে নেয়নি। আর এদিকে প্রেমিক মেলন এই খবর পেয়ে রাজকন্যাকে হুমকি দেন। তাই রাজকন্যা ডোয়াইনওয়েন মেলনের হাত থেকে বাঁচতে জঙ্গলে পালিয়ে যান এবং প্রার্থনা করেন। নানা ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এক সময় সন্ন্যাসী হয়ে তিনি ল্যান্ডডউইন গির্জায় আশ্রয় নেন। লোককাহিনি মতে, রাজকন্যা পৃথিবীর সব প্রেমিকার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাই প্রতিবছর রাজকন্যার স্মরণে ২৫ জানুয়ারি ওয়েলসে পালিত হয় সেন্ট ডোয়াইনস ডে।

সেদিন প্রেমিক-প্রেমিকারা কিংবা দম্পতিরা হাজির হন ল্যান্ডডউইন গির্জায় আর একে অপরকে নকশা করা কাঠের চামচ উপহার দেন। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নন- এভাবে কাঠের চামচ, কার্ডসহ নানা উপহার দিয়ে লোকজন বন্ধু, পরিবারের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করে। ওয়েলসে এই দিবসকে কেন্দ্র করে চমৎকার সব নকশা করা কাঠের চামচ পাওয়া যায়। প্রতিটি নকশা আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে।

ঝাড়ুর ওপর লাফ
নাম শুনেই মনে হতে পারে, এটা হয়তো কোনো খেলার অংশ। কিন্তু লাফঝাঁপ আমাদের ছোটবেলার খেলা হলেও পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় ঝাড়ুর ওপর ঝাঁপ দেওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানের অংশ। আফ্রিকা থেকে উদ্ভূত এক অদ্ভুত প্রথা হলো–বিয়েতে নবদম্পতিকে ঝাড়ুর ওপর লাফ দিয়ে পার হওয়া। আফ্রিকা থেকে এই প্রথা আমেরিকা-ইউরোপেও প্রচলন ঘটেছে। লোককাহিনি অনুসারে, বিবাহিত হওয়ার জন্য এক দম্পতিকে একটি ঝাড়ুর ওপর ঝাঁপ দিতে হয়েছিল। দরজায় আটকানো ঝাড়ু পার হলেই তারা বিবাহিত। তাই ইউরোপ-আমেরিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে দম্পতিদের একটা ঝাড়ুর ওপর লাফ দিয়ে পার হয়। যা নিচে থেকে দুজন ধরে রাখে। এভাবে লাফ দেওয়ার অর্থ হলো জীবনে নতুন পর্বে প্রবেশ করা। আর এই জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকে ঝাড়ুর মতো লাফিয়ে পার করা।

প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কান্না
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের তুইজিয়ার মেয়েদের বিয়ের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা কাঁদতে হয়। কখনো কনের মা, দাদিও একসঙ্গে কাঁদেন। নববধূ বিভিন্ন শব্দ করে কাঁদেন। কখনো একে "ক্রাইং ম্যারেজ সং"ও বলা হয়। বিয়ে ঠিক হলে মেয়েদের প্রতিদিন নিয়ম করে এভাবে কাঁদতে হয়। এই নিয়ম তাদের বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কনের কান্নার মাধ্যমে লোকেরা তার বুদ্ধিমত্তা এবং গুণ বিচার করেন। তাই যে যত ভালো কাঁদতে পারে তিনি তত বুদ্ধিমতী বলে চিহ্নিত হন।

 কলি

যে ৫ দেশে চলে না ফেসবুক!

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৩ পিএম
যে ৫ দেশে চলে না ফেসবুক!

বিশ্বের সব থেকে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্য়াটফর্মগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফেসবুক। জনপ্রিয়তার জন্য মেটার মালিকানাধীন এ প্ল্যাটফর্মটি এখন সারা বিশ্বে পরিচিত নাম। এর রয়েছে কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারী।

শুধু সময় কাটানো নয়, অনেকের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে ফেসবুক। সব দেশেই প্রায় ফেসবুক ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এমনও কয়েকটি দেশ আছে যেখানে ফেসবুক নিষিদ্ধ। কেউ লুকিয়ে ব্যবহার করতে গেলেও কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়। সে দেশের কেউ ব্যবহার করেন না এই প্ল্যাটফর্মটি। জেনে নিন  কোন দেশগুলোতে এবং কেন ফেসবুক নিষিদ্ধ-

ইরান: ইরানে ২০০৯ সালে বিতর্কিত নির্বাচন এবং গণবিক্ষোভের মধ্যে ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও কিছু ব্যবহারকারী ভিপিএন ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার করেন। এর পর ইরান সরকার ভিপিএনের ব্যবহার আইনত অপরাধ ঘোষণা করে।

চীন: চীনের কেউ ফেসবুক ব্যবহার করেন না। ২০০৯ সাল থেকে চীনে ফেসবুক নিষিদ্ধ। জিনজিয়াং প্রদেশে মারাত্মক দাঙ্গার পর কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসেবে মেটা মালিকানাধীন ফেসবুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

উত্তর কোরিয়া: বিশ্বের অন্যতম রক্ষণশীল দেশ উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালে ফেসবুক ব্লক করে। এমনকি ঘোষণা করে যে, কেউ ‘অনুপযুক্ত’ উপায়ে ফেসবুকে অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করলে বা এর থেকে ‘প্রজাতন্ত্রবিরোধী ডেটা’ বিতরণ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।

কিউবা: কিউবায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ না হলেও এটি অ্যাক্সেস করা খুব কঠিন। শুধু রাজনীতিবিদ, কিছু সাংবাদিক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ি থেকে আইনত ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারেন। অন্য সবার জন্য অনলাইন জগতের সঙ্গে আইনিভাবে সংযোগ করার একমাত্র উপায় হলো ইন্টারনেট ক্যাফে।

কিউবার জনগণের মাথাপিছু গড় আয় ২০ মার্কিন ডলার। আর ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে প্রতি ঘণ্টায় ৬ মার্কিন ডলার থেকে ১০ মার্কিন ডলারের খরচ হয়। ফলে এত খরচ দিয়ে বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তুর্কমেনিস্তান: মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তানে ফেসবুক নিষিদ্ধ। ফেসবুক ব্লক করার পাশাপাশি, তুর্কমেনিস্তান হোম ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সাইন আপ করার সময় কোরআনের শপথ নিতে বলে যে তারা ভিপিএন অ্যাক্সেস করবে না। শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ সাইটগুলোতে অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়।

 কলি

এক চিলতে হাসির স্বপ্ন

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
এক চিলতে হাসির স্বপ্ন
সংগঠনের স্বপ্নবাজ তরুণরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে প্রতিবছরই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর পৌরপার্ক ঘেঁষে জীর্ণশীর্ণ একটি একতলা ভবন। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এই বাড়ির বিশেষত্ব। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে একদল প্রাণোচ্ছল তরুণের। তাদের মধ্যে কেউ ব্যস্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদানে, কেউ করছে লাইব্রেরির তদারকি, কেউবা ব্যস্ত স্পেশাল চাইল্ডদের থেরাপি নিয়ে। বলছিলাম জয়বাংলা অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ জেতা নোয়াখালীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন-এক চিলতে হাসির জন্যে’-এর কথা।

শিক্ষা, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে ৮টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে ‘স্বপ্ন এক চিলতে হাসির জন্যে’ নামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের চলমান প্রজেক্টগুলো হলো ১০ টাকায় শিক্ষা, স্মাইল ফর স্পেশালস, উৎসবে নতুন জামা, স্বপ্নলোকে পাঠাগার, সেফ টাচ রং টাচ, আই অ্যাম ভিকটিম, প্রজেক্ট উৎসবে এক বেলা ভালো খাবার এবং প্রজেক্ট রোদ্দুর।

শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, শুরুর গল্পটা মোটেও সহজ ছিল না মফস্বলের এই সংগঠনের জন্য। ২০১৩ সালে একঝাঁক স্বপ্নবাজ ও সাহসী তরুণ-তরুণী নোয়াখালী জিলা স্কুলের বারান্দায় মাইনুল হাসান শিমুলের নেতৃত্বে নিজেদের পকেটের ক্ষুদ্র অর্থ দিয়ে শুরু করেন এই স্বপ্নযাত্রা। সবাই মিলে দশ হাতকে এক হাতে রূপান্তরিত করে স্বপ্ন দেখল সবার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটানোর।

কিন্তু বাধ সাধে মফস্বলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একসঙ্গে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ। পাওয়া গেলেও ছিল সেই শিশুদের অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সম্মত করানো এবং শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোসহ বহু বাধা-বিপত্তি। এই সমস্যা উত্তরণে স্বপ্নবাজ তরুণরা পরিকল্পনা করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাধ্যমে তাদের সবাইকে অভিভাবকসহ এক ছাদের নিচে জড়ো করবে। উদ্দেশ্য ছিল এসব শিশুর অভিভাবককে শিক্ষার গুরুত্ব ও তাদের অভিপ্রায় সম্পর্কে জানানো। এভাবেই বুকের ভেতরে অগাধ বিশ্বাস আর অদম্য উচ্ছ্বাস নিয়ে তারা মাঠে নেমেছিল উৎসবে ‘একটি নতুন জামার প্রজেক্ট নিয়ে’। সেবারের ঈদে ২৫৬ বাচ্চাকে নতুন ঈদ জামা দিয়ে এবং তাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় পথযাত্রা। সেই থেকে আজ অবধি তাদের স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি।

প্রথম যখন নতুন জামার প্রজেক্টটি শুরু করা হয় তখন একটি রঙিন, ঝকঝকে ও নতুন পোশাক পেয়েই খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল শিশুর দল। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরা এই হাসি মুখগুলো নেশা ধরিয়ে দেয় স্বপ্নবাজদের, তাই প্রতিবার তারা আরও বড় পরিসরে ও নতুন উদ্যম নিয়ে হাসি ফোটানোর এই কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ে। আর ১১ বছর ধরে চলছে এই হাসি ফোটানোর নিয়মিত প্রচেষ্টা।

জরিপের মাধ্যমে পুরো জেলা থেকে সংগ্রহ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যেকটি শিশু, তাদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও প্রয়োজনীয় বৃত্তি প্রদান করে সারা বছর মনিটরিংয়ে রাখে স্বপ্নবাজরা। এই স্বপ্নবাজদের হাত ধরেই প্রতিবছরই ঈদ এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় নোয়াখালীর হাজার হাজার শিশু সাজে রঙিন জামায়।

শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতেও বরাবরই সচেষ্ট ছিল সংগঠনটি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে, পার্কে, বিদ্যালয়ের আঙিনায় পড়ানো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের আঙিনায় ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই তারা চালু করে প্রজেক্ট ‘১০ টাকায় শিক্ষা’। যেখানে তাদের ভলান্টিয়াররা ১০ টাকার বিনিময়ে পাঠদান করায় সেসব বাচ্চাকে, যাদের অভিভাবক অক্ষরজ্ঞানহীন এবং বাচ্চাদের অন্যত্র পড়ানোর সামর্থ্য রাখে না। সেসব বাচ্চাকে এই সংগঠনটি প্রান্তিক পর্যায়ের বিদ্যালয় থেকে খুঁজে এনে পাঠদান করিয়ে থাকে। সহশিক্ষা কার্যক্রমেও তাদের এগিয়ে রাখার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

২০২০ সালে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মেধার বিকাশ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চালু করে প্রজেক্ট ‘স্মাইল ফর স্পেশালস।’ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও মাঝে মধ্যে বাবা-মায়ের জন্য হয়ে ওঠে গলার কাঁটা। আর সেই সঙ্গে তারা যদি হয় অটিজম আক্রান্ত, তাহলে তো কথাই নেই। কী নিদারুণ কষ্ট যে পায় এই বাচ্চাগুলো। সমাজের চোখে বোঝা হয়ে, গলগ্রহ হয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকে। ভালো চিকিৎসা তো দূরের কথা, একটু সুন্দর ব্যবহারও জোটে না অনেকের কপালে। এই ফুটফুটে স্পেশাল বাচ্চাদের নিয়েই তৈরি করা হয়েছে স্মাইল ফর স্পেশালস, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত স্পেশাল বাচ্চাগুলোর মুখে হাসি ফোটানো। এখানে মাসিক ১০ টাকার বিনিময়ে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সাধারণ জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের স্পেশাল থেরাপি এবং উন্নত চিকিৎসা। শুধু তাই নয় এই স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য আরও রয়েছে প্রি-স্কুলিংয়ের ব্যবস্থা, যেন ওরা কোনোভাবেই মূলস্রোত থেকে ছিটকে না পড়ে। যেহেতু দূরদূরান্ত থেকে অনেক শিশু আসে এবং ওদের যাতায়াত হয়ে পড়ে ব্যয়বহুল, তাই এই প্রজেক্টের আওতাধীন শিশুদের যাতায়াতের জন্য দুটি ভ্যানেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সংগঠনটি চালু করে প্রজেক্ট ‘সেফ টাচ, রং টাচ’। যার মাধ্যমে এই সংগঠনের ভলান্টিয়াররা নোয়াখালীর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করে কোন ধরনের স্পর্শ তাদের জন্য নিরাপদ এবং কোনটি নিরাপদ নয়। এ ছাড়া এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে তাদের কী করা উচিত সেই সম্পর্কেও অবহিত করে। কোনো শিশু হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উঠান বৈঠক চলে বছরজুড়ে।

২০১৭ সালে নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইনি সুবিধা ও ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে চালু করে ‘প্রজেক্ট আই অ্যাম ভিকটিম’। যেখানে নির্যাতনের শিকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আইনের লড়াইয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল ট্রমা থেকে বের করে আনার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের সুবিচার পাইয়ে দেওয়া এবং তাদের স্বাবলম্বী করে তোলাই এর মূল উদ্দেশ্য।

এসবের বাইরে পাঠাগার নিয়েও কাজ করেছে সংগঠনটি। নোয়াখালী জেলার মাইজদী শহরে সম্প্রতি চালু করেছে ‘স্বপ্নলোক পাঠাগার’। এখানে অল্প অল্প করে ভারী হচ্ছে তাদের বইয়ের ভান্ডার। শিশু-কিশোররা এখন ডিজিটাল ডিভাইসের বদলে মুখ গুঁজতে পারবে বইয়ের দুনিয়ায়। ওদের হাত ধরেই এই শহরে ফিরে আসবে ঠাকুরমার ঝুলির মজার মজার সব গল্প কিংবা তিন গোয়েন্দার সঙ্গে পাড়ি জমাবে নতুন কোনো রহস্যের খোঁজে।

‘স্বপ্ন এক চিলতে হাসির জন্যে’কে স্বনির্ভর করার তাগিদে রোদ্দুর ‘প্রজেক্ট রোদ্দুর’-এর জন্ম হয়েছিল। এই প্রজেক্টের আওতায় ‘স্বপ্ন এক চিলতে হাসির জন্যে’-এর ভলান্টিয়াররা নিজস্ব ডিজাইনে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিক্রয় করত। একটা সময় রোদ্দুরের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘প্রজেক্ট ১০ টাকায় শিক্ষা’-এর বাচ্চাদের মায়েরা। স্বপ্নবাজদের তত্ত্বাবধানে তারা তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পসামগ্রী। রোদ্দুরের বেশির ভাগ তৈরি করা পণ্য কেনেন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এবং এর সম্পূর্ণ লভ্যাংশ ব্যয় করা হয় নিজেদের এই সংগঠনের ব্যয় নির্বাহে।

করোনা মহামারিও কিন্তু দমিয়ে রাখতে পারেনি এই স্বপ্নবাজের দলকে। করোনার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলোয় তারা প্রথমেই চালু করেছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজেশান বুথ, করেছিল বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ। এ ছাড়া সবাইকে মহামারি সম্পর্কে সতর্ক করানোর লক্ষ্যে জায়গায় জায়গায় লাগানো হয়েছিল লিফলেট। করোনা মহামারি যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তখন তারা চালু করেছিল ইমার্জেন্সি ফুড রেসপন্স। যার আওতায় নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় তারা বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছিল চাল, ডাল, শুকনো খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিল ওষুধের মতো জরুরি সামগ্রীও।

এ ছাড়া উৎসবে সবার জন্যে এক বেলা ভালো খাবার নিশ্চিত করতে ২০২২ ও ২০২৪-এ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় আয়োজন করা হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এক বেলা ভালো খাবারের বন্দোবস্ত।

‘স্বপ্ন - এক চিলতে হাসির জন্যে’র প্রতিষ্ঠাতা মাইনুল হাসান শিমুল বলেন, এই মুহূর্তে নোয়াখালীতে তীব্র বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ২ লাখ পানিবন্দি মানুষের মধ্যে জরুরি খাবার ও ওষধ সরবরাহ করছি আমরা। ইমার্জেন্সি ফুড রেসপন্স নামক প্রজেক্ট নিয়ে, হটলাইন তৈরির মাধ্যমে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা ছুটছেন প্রত্যেকটি মানুষের দুয়ারে। নোয়াখালীর যে প্রান্ত থেকেই ফোন করা হচ্ছে সেখানেই ছুটছে টিম স্বপ্ন। পাশাপাশি খাল ও নালা পরিষ্কারে কাজ করছে আমাদের আরেকটি দল, যেন দ্রুত এই পানি নেমে যায়।

স্বপ্নবাজদের এই সুদীর্ঘ পথচলা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। বারবার হোঁচট খেয়েছে তারা। জেলা শহরের বুকে তাদের এই ছোট্ট অফিসে পরপর দুবার চুরি হয়। খোয়া যায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি স্বপ্ন দেখা, স্বপ্নবাজরা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কারণ তারা চান এই সমাজের বুকে শিশুদের আগে সুবিধাবঞ্চিত কোনো বিশেষণ যেন আর না যোগ হয়। এই পৃথিবীর সব শিশুর মৌলিক অধিকারগুলো যেন নিশ্চিত হয়, তারা যেন রঙিন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায় পৃথিবীজুড়ে। এই স্বপ্নবাজরা বিশ্বাস করে, তারা একদিন ঠিকই পারবেন। তাই স্বপ্ন দেখতে দেখতে ডালপালা মেলে তারা এগিয়ে যান। কারণ, সামনে পাড়ি দিতে হবে বিশাল সমুদ্দুর।

 কলি 

ভিন্ন ঘরানার সংগীত অপেরা

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম
ভিন্ন ঘরানার সংগীত অপেরা

অপেরা সংগীত মূলত এক ধরনের নাট্যগীতি। অর্থাৎ নাটকের কাহিনিকে গানের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। গানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে অভিনয় কিংবা নাচও।

অপেরা ইউরোপীয় সংগীত সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। ১৬ শতাব্দীর শেষের দিকে ইতালির ফ্লোরেন্সে অপেরার সূচনা হয়। প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতি ও নাটক নিয়ে কৌতূহলের কমতি ছিল না গোটা ইউরোপে। শুধু নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল গান। যার ফলশ্রুতিতে অসাধারণ এই সংগীতের সূচনা।

৪০০ বছর আগে মন্টেভার্টিতে প্রথম অপেরা সংগীত পরিচালনা করেছিলেন অরফিয়াস কিংবদন্তি লা ফাভলা ডি অর্ফো। সেই থেকে আজও ব্যাপক জনপ্রিয় সংগীত অপেরা। শুরু থেকে গ্রিকদের নাট্যকলার সঙ্গে সংগীতকলার মিলন ছিল অপেরার মূল বিষয়। আর জনপ্রিয় অপেরা সংগীতে ব্যবহৃত হতো ছোট ছোট বাদ্যযন্ত্র। পরে ফ্লোরেন্স এবং রোম হয়ে ওঠে অপেরা সংগীতের কেন্দ্রস্থল। ১৬৩৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে ‘অপেরা’ চালু হয়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপে। ১৭ শতকে নেপলস, ভিয়েনা, প্যারিস এবং লন্ডন অপেরার শহর হয়ে ওঠে।

অপেরা মূলত পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীত এবং বিশেষ করে ইতালীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ। প্রথাগত অপেরায় গায়করা গান গাওয়ার দুটি শৈলী অনুসরণ করেন। যেমন- আবৃত্তিমূলক একটি বক্তৃতা প্রবর্তিত শৈলী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ আরিয়াস। ১৯ শতকে ধারাবাহিক সংগীত নাটকের উত্থান ঘটে।

প্রাচীন গ্রিক নাটকের পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে অপেরার জন্ম হয়। সেই সংগীতই আজকের অপেরা নামে পরিচিত। অপেরা বেশ প্রাচীন গীতিনাট্য হলেও ১৭ শতকের দিকে অপেরা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৭৮১-১৭৯১ সালে অপেরা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। ফলে ইতালীয় ভাষা ছাড়াও জার্মান ভাষায় অপেরা বিস্তার লাভ করতে থাকে। অপেরা আধুনিক আর উন্নতি লাভ করে বিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় এসে।

ইতালীয় শব্দ অপেরার অর্থ ‘কাজ’। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুসারে, ইতালীয় শব্দটি প্রথম ১৬৩৯ সালে ‘কবিতা, নৃত্য এবং সংগীত একত্রিত করা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল। অপেরা সংগীত একটি জটিল এবং সমৃদ্ধ ধারা, যা সাধারণ শ্রোতাদের মধ্যে সবসময় জনপ্রিয় নাও হতে পারে। এ ছাড়া অপেরা সংগীতের শৈলী এবং এর থিম অনেক সময় সাধারণ সংগীতপ্রেমীদের জন্য সহজবোধ্য হয় না।

এই ধারাটি এখনো বাংলাদেশের মূলধারার সংগীত ও সংস্কৃতির বাইরে থেকে গেছে। যার কারণে অপেরা সংগীতের প্রচলন এবং জনপ্রিয়তা এখনো বাংলাদেশে তেমন বিস্তার লাভ করেনি। দেশে অপেরা মূলত একদল বিশেষজ্ঞ শ্রোতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তবে ক্রমশ এই সংগীত ধারা সম্পর্কে দেশের সংগীতাঙ্গনে সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়ছে।

 কলি