
মাস দুয়েক আগের ঘটনা, সন্ধ্যায় রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম আর রিকশাচালক মুরুব্বির সঙ্গে গল্প করছিলাম। এটা আমার পুরাতন অভ্যাস। রিকশায় চড়লেই রিকশাচালকদের সম্পর্কে জানি, তাদের অভিজ্ঞতা শুনি, নিজের কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করি। আমার উনাদের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, তার মেস বাসা আমার বাসার কাছেই। বউ-বাচ্চারা গ্রামে থাকেন। উনি মাসে একবার গ্রামে যান তাদের দেখতে।
গল্প করতে করতে বাসার কাছাকাছি চলে এলাম। ভাড়া দিয়ে রিকশা থেকে নামতেই উনি আমাকে পাশের চায়ের দোকানে চা পান করতে অনুরোধ করলেন। বললেন, ‘আসেন এক কাপ চা খাইয়া যান, বিল দিতে হইব না’।
একসঙ্গে চা পান করে, একরাশ প্রশান্তি নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বাসার দিকে এলাম। গেটেই দারোয়ান আংকেলের সঙ্গে দেখা হলো। তাকে ব্যাপারটা বললাম, তিনিও অবাক হলেন। তাকে বলার কারণ, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া আরেকটি বিব্রতকর ঘটনা।
আচ্ছা খোলাসা করা যাক। তখন মাত্র বাসা বদল করে এই বাসায় উঠেছি। আগের বাসার কাছ থেকে মুরুব্বি দেখে এক রিকশাচালকের রিকশায় উঠলাম। সাধারণত আমি ভাড়া ঠিক করে উঠি, কিন্তু সেদিন বোকামি করে ভাড়া ঠিক করে উঠিনি। বাসার নিচে নেমে ভাড়া কত হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি ৬০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি বেকুব বনে গেলাম। আমার এক রুমমেট তখন বাসার গেটে ছিলেন, তিনি সব শুনে রীতিমতো রেগে গেলেন। দারোয়ান আংকেলও দূর থেকে সব দেখলেন।
তাকে বললাম, ‘আমার হিসাবে ভাড়া ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আপনি ৭০ বা ৮০ টাকা চাইতে পারেন, ১২০ টাকা কীভাবে চান?’
তিনি গলা উঁচিয়ে তার কথার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। আমার রুমমেটের সঙ্গে তার ঝগড়া লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। দারোয়ান আংকেল এসে থামালেন। পরে তিনি ১০০ টাকা দাবি করলেন। বললাম, ‘দেখেন আপনি ভাড়া জানেন না, এটা বললেও হতো বা আপনার হয়তো টাকার দরকার তাও বলতে পারতেন। আমি নিঃসংকোচে আপনাকে ১২০ টাকাই দিয়ে দিতাম। কিন্তু আপনি ন্যায্য ভাড়া না জেনেই তর্ক করছেন’। তিনি মানতে নারাজ, চেঁচামেচি করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলেন।
আমি তার সামনেই দুজন রিকশাচালক আংকেলকে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে তারা ৬০ ও ৭০ টাকা বললেন। তবুও তিনি মানতে নারাজ। আমি আর ঝগড়ায় গেলাম না। তাকে ১০০ টাকা দিলাম, যদিও তা যৌক্তিক ভাড়া নয়। ভাড়া হাতে দিয়ে আমি বললাম, ‘দয়া করে কারও থেকে আর এমন অযৌক্তিক ভাড়া চাইবেন না’। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। অল্প কদিনের ব্যবধানে আল্লাহ আমাকে একই পেশার দুরকম স্বভাবের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাই তো মুরুব্বিরা বলে থাকেন, ‘জীবন আসলে একটা শিক্ষার পাঠশালা’।
ঠিকানা পাওয়া যায়নি