ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

বন্য প্রাণীর সেবায় রাজী

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
বন্য প্রাণীর সেবায় রাজী
ডা. আলীমুল রাজী

পাখিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর প্রতি তার খুব মায়া। অসংখ্য প্রাণীকে সুচিকিৎসা দিয়ে তিনি সুস্থ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সাপ, ১৫০টি টিয়া, ৬টি বক, ৮টি পাতি সরালি, ৮টি ময়না, ৩টি ধনেশ, ৩টি চিল, ২টি শকুন, ৪টি বানর, ৫টি বনবিড়াল, ১টি উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, ১৩টি কচ্ছপ, ১৩টি বনমোরগ, ১টি ঈগল উদ্ধার করে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে অবমুক্ত করেছেন। প্রাণীপ্রেমী এই মানুষটি হলেন ডা. আলীমুল রাজী। তার প্রাণীপ্রেমের কথা জানাচ্ছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

ডা. আলীমুল রাজী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে বন্য প্রাণীর রোগ, চিকিৎসা, প্রজনন, উৎপাদন ও পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেওয়া, বন্য প্রাণী ও পাখির উদ্ধার কাজ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর পিএইডি করছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি বন বিভাগের অধীনে শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি ও ইকো পার্কে ভেটেরিনারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।

যেভাবে শুরু
ছোটবেলায় খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। পাখি ধরতেন। পুষতেনও। তখন থেকেই তার মনে বন্য প্রাণীর প্রতি প্রেমের জন্ম নেয়। বাবার ইচ্ছে ছিল মানুষের চিকিৎসক হবেন। সেটা যখন হতে পারলেন না তখন বাবার পরামর্শে ভেটেরিনারি বিষয়ে ভর্তি হলেন। একদিকে পড়াশোনা অন্য দিকে পশুপাখির জন্য কাজ দুটোই চলল। ভেটেরিনারি সায়েন্সে মানুষ বাদে সব প্রাণীর চিকিৎসা, প্রজনন, খাদ্য নিরাপত্তাসহ সব বিষয় পড়ানো হয়। ফলে বন্য প্রাণীর সেবা-যত্নে রাজী একাডেমিকভাবেই অভিজ্ঞ হয়ে উঠলেন।

শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি ও ইকো পার্ক 
বন বিভাগের অধীনে শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি ও ইকো পার্কে ২০১৪ সাল থেকে ভেটেরিনারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন রাজী। রাসেল ইকো পার্কে ৭টি বড় বড় অ্যাভিয়ারি তথা পাখির খাঁচা বিদ্যমান। এখানে ৪ শতাধিক পাখি আছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ম্যাকাও, ধনেশ, ময়না, টিয়া, বার হেডেড গিজ, সরালি, মদন টাক, টার্কি, তিতির, বন মোরগ, পেলিক্যান, রাজহাঁস, দেশি হাস, শালিক, তিলা ঘুঘু, কালেম, সাদা ও সবুজ ময়ূর, মথুরা, বানর, চিত্রা ও মায়া হরিণ, তারকা কচ্ছপ, কবুতর, রিং নেক, কনিউর ইত্যাদি। ইকো পার্কের সব প্রাণীর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন রাজী। রাসেল ইকো পার্কটি দেশে একমাত্র বৃহত্তম পক্ষীশালা।

মথুরা পাখি প্রজনন
খাঁচায় মথুরা পাখি প্রজনন করাতে সফল হয়েছেন রাজী। তিনি জঙ্গল থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা কুজে মুরগির মাধ্যমে বাচ্চা ফুটাতে সফল হন। প্রথমে দুটি বাচ্চা পান। পরে তারা ডিম পাড়ে এবং নিজেরাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় বলে রাজী জানান। বর্তমানে পাঁচটি মথুরা পাখি রাসেল ইকো পার্কে রয়েছে। রাজী দাবি করেন, বাংলাদেশে তিনি প্রথম যিনি কিনা এভাবে বন থেকে মথুয়া পাখির ডিম এনে মুরগির তা দেওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন।

হাতির বাচ্চা উদ্ধার
প্রাণী উদ্ধারের হাজারো রুদ্ধশ্বাসের ঘটনায় রাজীর অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ। তবে হাতির বাচ্চা উদ্ধারের ঘটনাটি তিনি আজও ভুলতে পারেননি। একবার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে খবর আসে, গহীন বনের ভেতর একটি হাতির বাচ্চা কাদামাটির ভেতর পড়ে আছে চার দিন ধরে। দুর্গম পাহাড়ি পথ। প্রায় সাত কিলো হেঁটে ঘটনাস্থলে যখন পৌঁছলেন। তখন মাঝ রাত। কনকনে ঠাণ্ডা। গভীর রাতে হাতির বাচ্চাটিকে টেনে তুললেন সবাই।

পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফ্লুইড থেরাপি ও ওষুধ দেন। এরপর আগুনের সেঁক দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টার সেবা যত্নে বাচ্চা হাতিটি উঠে দাঁড়ায়। এই কাজগুলো করার সময় জীবনহানির শঙ্কা ছিল। রাজী বললেন, অসীম সাহস নিয়ে কাজ করেছি। কারণ, হাতির বাচ্চাটির আশপাশেই ছিল ওর বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। হাতি পরিবারের সদস্যরা কোনোরকম আক্রমণ করলে আমাদের বাঁচার উপায় ছিল না।

হয়তো ওরা বুঝতে পেরেছে যে, আমরা তাদের বাচ্চাকে উদ্ধার করতে আসছি। সকাল বেলা মা হাতি এসে জোরে জোরে আওয়াজ করে বাচ্চাটিকে কাছে টেনে নেয়। বাচ্চাটিও জোরে জোরে আওয়াজ দিতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যেই তারা বনের মধ্যে চলে যায়। রাজী বললেন, মনে হলো ওরা আওয়াজ তুলে আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।

আহত বন্য প্রাণীর গল্প
বিভিন্নভাবে আহত বন্য প্রাণী নিয়ে আসা হয় রাজীর কাছে। পেট ফাঁপা, লেজের কিছু অংশ কাটা, চোখ নেই, জালে আটকানো ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে মানুষ সাপ নিয়ে আসে তার কাছে। কখনো কখনো মাথা ফাটা, ডানা ভাঙা অবস্থায় বন মোরগের দেখা পান। শকুন, চিল, ঈগল পান তিনি ডানা পা ভাঙা বা উড়তে পারে না এমন অবস্থায়। নাক মুখ ফাটা, মুখে দাঁত নেই এমন অবস্থায় অনেকেই বন বিড়াল নিয়ে আসেন রাজীর কাছে। তিনি এসব প্রাণী ড্রেসিং করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক দেন। প্রয়োজন মনে করলে হাসপাতালে বা কোয়ারেন্টাইন শেডে রাখেন, পরে সুস্থ হলে অবমুক্ত করেন।

হাতি তাড়ানোর উপায়
পার্বত্য এলাকায় হাতির আক্রমণে মানুষ নিহত হয়। আবার কারেন্টের ফাঁদ পেতে হাতি হত্যা করা হয়। এমন অনেক ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। হাতি নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করেছেন রাজী। তাই এই বিষয়ে তার জানাশোনা বেশ ভালোই। তিনি হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচার কিছু উপায় বাতলে দিলেন। হাতি আসলে তাকে মারতে যাওয়া যাবে না। হাতি আসলে ৩৩৩-এ কল করা উচিত।

এটা বন বিভাগের জরুরি সেবার নাম্বার। এ ছাড়া আগুন জ্বালানো, পটকা, বাজি ফুটানো, জোরে শব্দ করলে হাতি দূরে সরে যায়। আর যদি হাতি তাড়া করে তাহলে নার্ভাস না হয়ে হাতির অবস্থান দেখে সোজা দৌড় না দিয়ে আঁকাবাঁকা করে এলোমেলোভাবে দৌড়াতে হবে। অনেক সময় হাতি চোরাবালি, নরম কাঁদায় পড়ে আটকে যায়। উঠতে পারে না। রাজী এমন অনেক হাতিকে উঠিয়ে সুস্থ করেছেন বলে জানান। তিনি ৪টি হাতির চিকিৎসা, ১০টি হাতি পুশ ব্যাক করেছেন রাঙ্গুনিয়া এলাকায়। 

কচ্ছপের মায়ায়
রাজী একবার মারমা গোষ্ঠীর এক ব্যক্তির হাত থেকে একটি কচ্ছপ উদ্ধার করেন। কচ্ছপটি ছিল খুবই দুর্বল। প্রায় ১৩ দিন কোনো খাবারই সে খায়নি। বহু রকমের চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় ধীরে ধীরে কচ্ছপটি খাবার খাওয়া শুরু করে। এভাবে প্রায় তিন মাস যত্ন করেন রাজী। এরপর যখন অবমুক্তকরণের সময় এল। তখন রাজীর বুক ফেটে কান্না আসছিল।

কারণ, কচ্ছপটি যেন তার পরিবারের সদস্য বনে গিয়েছিল। অফিসে এসে রাজী প্রথমেই কচ্ছপটির সঙ্গে দেখা করতেন। রাজী বললেন, অবমুক্ত করার পর শুরু হয় আমার কষ্টের সময়। কারণ অফিসে এসে প্রথমে দেখা করতাম কচ্ছপটির সঙ্গে। ওকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমি খুব একাকিত্ব বোধ করছি।

গবেষক রাজী
পাখি ও বন্য প্রাণী নিয়ে গবেষণার কাজে রাজী ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাডভান্স রিসার্চ ইন বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে পাখিবিষয়ক তার দুটি জার্নাল বের হয়েছে। আরও চারটি বের হওয়ার অপেক্ষায় আছে বলে জানান।

এ ছাড়া চবি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা রাসেল ইকো পার্কে আসেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। স্যাম্পল সংগ্রহ করেন। এসব কাজে পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন রাজী। প্রাণী স্বাস্থ্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন শান্তি পুরস্কার, পেট এনিম্যাল ও বার্ডস সেরা প্র্যাকটিশনার পুরস্কার।

আগামীর ভাবনা
স্কুল-কলেজপড়ুয়াদের বন্য প্রাণী রক্ষায় সচেতন এবং সম্পৃক্ত করতে হবে। এমনটাই মনে করেন রাজী। তাই আগামী দিনে তিনি স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের বন্য প্রাণী রক্ষায় সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার কাজ করবেন বলে জানান।

 কলি

ভিন্নধর্মী চিঠির উৎসব ‘ডাকপিয়ন’

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম
ভিন্নধর্মী চিঠির উৎসব ‘ডাকপিয়ন’
চিঠি উৎসব চলবে আগামীকাল পর্যন্ত

সাল ১৯৮৩। পত্র লেখক রফিক তখন শীতে তুষার আবৃত দেশ তুরস্কে। সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রিয়জন শিরীনকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানাতে না পারার আক্ষেপ জানিয়েছিলেন চিঠিতেই। আবার লেখক বুদ্ধদেব বসুর তিথিডোর পড়ে বন্ধুর কাছে নীল কাগজে চিঠি পাওয়ার বায়না জানাতেই চিঠি লিখেছিলেন মাইশা।

আবেগ ও ভালোবাসা মিশ্রিত এমন সব চিঠি নিয়েই রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী চিঠি প্রদর্শনী উৎসব । 
তৃতীয় বারের মতো ডাকপিয়ন নামে এই উৎসবের আয়োজন করেছে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত সংগঠন হিমু পরিবহণ। ২৫ ও ২৬ এপ্রিল এই উৎসবটি চলবে বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

বেশ কিছুদিন আগে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে চিঠি সংগ্রহ করতে শুরু করে হিমু পরিবহণের তরুণ সংগঠকরা। তাতে সাড়া দিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নিজের সংগ্রহে থাকা চিঠি পাঠায় অনেকে। সেখান থেকে নির্বাচিত ৭০ টি চিঠি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এবারের উৎসব ।পরিবার, বন্ধুজনকে লেখা চিঠির সঙ্গে প্রদর্শনীতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর হাতে লেখা ব্যক্তিগত চিঠিও।

ডাকপিয়ন উৎসবের প্রথম দিনে দর্শনার্থীরা

 


হিমু পরিবহণের সমন্বয়কারী আহসান হাবিব মুরাদ জানান, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যোগাযোগ অনেক সহজ হলেও হাতে লেখা চিঠি এখনো মানুষের আবেগের জায়গা। এই আবেগকে আমরা আবার অভ্যাসে জাগিয়ে তুলতে চাই। তাছাড়া ইতিহাস, সাহিত্যেও রয়েছে চিঠির অবস্থান। তাই এই প্রদর্শনীর আয়োজন।

আলোচিত প্রাণী কৃষ্ণ হরিণ

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
আলোচিত প্রাণী কৃষ্ণ হরিণ
ছবি: কৃষ্ণ হরিণ

বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি প্রাণীর নাম হচ্ছে কৃষ্ণ হরিণ। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে বলিউড অভিনেতা সালমান খানসহ একটি শুটিং ইউনিটের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি কৃষ্ণ হরিণ যা চিংকার নামেও পরিচিত- হত্যার অভিযোগে মামলা করে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বিষ্ণোই সম্প্রদায়। তখন থেকেই কৃষ্ণ হরিণ চলে আসে আলোচনার শীর্ষে। 

ভগবান বিষ্ণুর পূজারি  সম্প্রদায় কয়েক শ বছর ধরে ২৯টি রীতি অক্ষরে অক্ষরে মানার চেষ্টা করে। আর সেসব রীতির মূল কথা হচ্ছে- প্রকৃতির সুরক্ষা, বৃক্ষ রক্ষা ও জঙ্গলের প্রাণী রক্ষা।

বিশেষ করে কৃষ্ণ হরিণকে বিষ্ণোই সম্প্রদায় পবিত্র হিসেবে গণ্য করে। এই হরিণকে বলতে গেলে তারা পূজা করে। ভগবান কৃষ্ণের রথ টানত কৃষ্ণ হরিণ, প্রাচীন হিন্দু পুরানে এমনটাই উল্লেখ আছে। কৃষ্ণ হরিণ বা চিংকারকে মানা হয় বাতাস এবং চাঁদের বাহন হিসেবেও।

কোথায় মেলে কৃষ্ণ হরিণ?

কৃষ্ণ হরিণের সংখ্যা দিন দিন কমলেও ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালে এই হরিণ দেখা যায়। ভারতের রাজস্থান এবং গুজরাটের মরু এলাকায় এগুলো চোখে পড়ে বেশি। পুরুষ কৃষ্ণ হরিণের ওজন সর্বোচ্চ ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়। উচ্চতা ৭৪-৮৮ সেমি। আর মাদি কৃষ্ণ হরিণ অপেক্ষাকৃত আকারে ছোট হয়।

রং বদলায় কৃষ্ণ হরিণ

চিংকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি রং বদলায়। বর্ষার শেষে পুরুষ চিংকারের রং থাকে কালো। কিন্তু শীতের সঙ্গে সঙ্গে রং হালকা হতে হতে এপ্রিল নাগাদ বাদামি হয়ে যায়। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আরাফ তাহসিন বলেন, ব্রিটিশদের সময়ে উদয়পুরে ঝাঁকে ঝাঁকে চিংকার দেখা যেত, কিন্তু এখন সেই দৃশ্য বিরল। এরা ঘন জঙ্গলের প্রাণী নয়, সমতলে খোলা জায়গা এদের পছন্দ। যেহেতু এ ধরনের জায়গা দ্রুত মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে, ফলে এরা বিপদে পড়েছে।

২০০ বছর আগে যেখানে ভারতে এই হরিণের সংখ্যা ছিল ৪০ লাখের মতো, ২০১০ সালে সেটি নেমে আসে মাত্র ৫০ হাজারে। কৃষ্ণ হরিণ রয়েছে ভারতের সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায়। ফলে, দেশটিতে কৃষ্ণ হরিণ শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

 

তারেক

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল আবাসন

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল আবাসন
ছবি: হ্যাংঝো রিজেন্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপার্টমেন্ট

পরিকল্পনা ছিল বিলাসবহুল হোটেলের। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এটিকে একটি আবাসনের রূপ দেওয়া হয়। তবে সাধারণ আবাসন নয়, বিলাসবহুল আবাসন। বাড়িটির নাম হ্যাংঝো রিজেন্ট ইন্টারন্যাশনাল। অনেকের মতে, চীনের হ্যাংঝো রিজেন্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপার্টমেন্টই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল আবাসন।

 

হোটেলের বদলে বাসভবন তৈরির পরিকল্পনার পর ওই ইমারতের অভ্যন্তরীণ নকশাও বদলে ফেলা হয়। ছোট ছোট অসংখ্য কক্ষ তৈরি হয় আবাসনের প্রতিটি তলায়।

 

একটি আবাসনের নিচেই যেন আস্ত একটা শহর। কী নেই সেখানে! ৬৭৫ ফুট লম্বা এই আবাসনে একসঙ্গে ২০ হাজার মানুষ বাস করতে পারেন। ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির বিশাল ঝাঁ-চকচকে ইমারত। দূর থেকে দেখলে নজরে পড়ে শুধু জানালা আর বারান্দা। ২ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ অ্যাপার্টমেন্টটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। 

 

আবাসনটিতে মোট ৩৯টি তলা রয়েছে। আর তাতে কয়েক হাজার উচ্চ মানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এখানে রয়েছে নানা বিপণিকেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, স্কুল এমনকি হাসপাতালও। অত্যাধুনিক ফিটনেস সেন্টার, খাবারের দোকান, সুইমিং পুল, সেলুন সবই রয়েছে এর চৌহদ্দির মধ্যেই।

 

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বাসভবনে বাস করেন চিনের ‘হ্যাং পিয়াও’রা। চিনের তরুণ পেশাদার, সমাজমাধ্যমের তারকা এবং প্রভাবশালীদের ‘হ্যাং পিয়াও’ বলা হয়।

 

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনার একটি নিবন্ধ অনুসারে, জানালা ছাড়া ছোট অ্যাপার্টমেন্টগুলো সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ১৫০০ আরএমবি (২২০ ডলার) ভাড়া নেয়। অন্যদিকে বারান্দাসহ বড় ইউনিটগুলোর ভাড়া ৪০০০ আরএমবি (৫৫০ ডলার) পর্যন্ত বা তারও বেশি হতে পারে।

 

তারেক

পাঠকের গল্প: পাগলিটাও মা হয়েছে

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পিএম
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পিএম
পাঠকের গল্প: পাগলিটাও মা হয়েছে

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম চৌকি। চারদিকে সবুজে ঘেরা গ্রামটি। গ্রামের প্রতিটি মানুষের জীবনধারা খুবই সহজ-সরল। অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। খুব একটা শিক্ষিত নয় বৃদ্ধ বা মধ্যবয়সী লোকগুলো। তবে নিজেদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যায় শত অভাবের মাঝে। চৌকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় তাদের হাতেখড়ি। অনেকে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন।

হাজার অভাবের মাঝেও গ্রামের লোকজন খুব অতিথিপরায়ণ। এ গ্রামের সবাইকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছেন যিনি তিনি হলেন রাজপ্রতাপ চৌধুরী। তাকে এই গ্রামের মধ্যমণি বলা যায়। প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হলেও নিরহংকারী মানুষ তিনি। গ্রামের প্রতিটি মানুষ তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। রাজপ্রতাপ চৌধুরীর স্ত্রী মায়া। স্বামীর মতোই উদার মন। তাদের এই বিশাল অট্টালিকার একমাত্র উত্তরাধিকারী তাদের সন্তান দীপায়ন চৌধুরী দ্বীপ। তবে সম্পদ নিয়ে তার বিশেষ কোনো মাথাব্যথা নেই, অনেকটাই উড়নচণ্ডী স্বভাবের। বাউন্ডুলের মতো এদিক সেদিক ছুটে চলা তার কাজ। 

বাউন্ডুলে ছেলেকে সংসারের মায়ায় বাঁধতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাবা-মা। ধুমধাম করে বিয়ে হয় একমাত্র ছেলের। সিলেটের হবিগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অসীম রায়ের একমাত্র মেয়ে রুপার সঙ্গে বিয়ে হয় দীপায়নের। ছেলে-বৌমা নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন যাচ্ছে চৌধুরী পরিবারের। শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখে মুগ্ধ হয় রুপা। কত দয়ালু তারা। নিজেদের থেকেও অন্যের কথা বেশি ভাবে। গ্রামের সবাইকে সাহায্য করে। সব পূজায় ভালো রান্না হয় গ্রামবাসীর জন্য। পেট পুরে খায় পঞ্চব্যঞ্জন। দীপায়ন এখন অনেকটাই ঘরমুখো। দিনশেষে ঠিকই ঘরে ফেরে। মাঝে মাঝে রুপাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম। সবই ঠিক যাচ্ছিল। বছর ঘুরতেই বউয়ের কাছে আবদার করে বসে মায়া দেবী। এবার তারা দাদু, ঠাম্মা হতে চান। রুপাও অমত করেনি। কিন্তু বিধাতা বিরূপ হলো তাদের প্রতি। বিধাতা বোধহয়, ভালো মানুষের কপালে খারাপই লেখেন সবসময়। বহু চেষ্টার পরও তারা বাবা-মা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত। অনেক ডাক্তার দেখানো হলো। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। দ্বীপ কখনোই বাবা হতে পারবে না। রুপাকে ছেড়ে দিতে বলে দ্বীপ। অন্যত্র বিয়ে হলে মা হতে পারবে। রুপা ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনায়ও আনে না। শুধু ঈশ্বরের কাছে দুহাত পেতে এক সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে অশ্রু ঝরায়। বেশ কিছুদিন পর গ্রামে কোথা থেকে যেন এক পাগলি এসে পড়ে। কেউই চেনে না মেয়েটাকে। কোনো এক চাষি খেতে কাজ করতে গিয়ে শুনতে পায় কে যেন কোঁকড়াচ্ছে যন্ত্রণায়। একটু এগোতেই দেখে এক পাগলিকে। তখন দেখতে পায় মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। তাড়াতাড়ি লোক জড়ো করে নিয়ে যায় চৌধুরীদের বাড়ির সামনে। গিন্নি মাকে বিষয়টা জানানো দরকার খুব। এই গ্রামে মায়া দেবীর মতো দয়ালু মমতাময়ী আর কে আছেন! গিন্নি মা খবর পেয়ে অতিথিশালায় নিয়ে যান পাগলিকে। মেয়েটির অবস্থা দেখে খুবই মায়া হয় গিন্নি মায়ের। আহা! পাগলিটাকেও ছাড় দিল না সমাজের হিংস্র জানোয়ারগুলো। মুখে কিছুই বলতে পারে না, কত যন্ত্রণা পাচ্ছে দেখেই বোঝা যায়। খাবার খাইয়ে দিল নিজ হাতে মেয়েটাকে। রাতে প্রসব ব্যথায় যখন কাতরাচ্ছিল সেসময় মায়া দেবী পাশেই বসা ছিল। কিছুক্ষণের ভেতর জন্ম হলো এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের। সে যেন এক ফুটন্ত পদ্ম। মায়া দেবী কোলে তুলেই নাম দিল পদ্ম। আমার পদ্ম। বিধাতার কী নির্মম খেলা। কেউ চেষ্টা করেও সন্তান পায় না, কেউ রাস্তায় পড়ে পাগল হয়ে ঘুরে সন্তান পায়। যেহেতু সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েটার মা পাগলি তাই তার যত্ন কে করবে এই ভেবে মায়া দেবী সদ্য ফোটা পদ্মকে নিয়ে তুলে দেয় নিজ পুত্রবধূর কোলে। পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেয় পদ্মকে। 

এদিকে সদ্য মা হওয়া মেয়েটা দুগ্ধ যন্ত্রণায় যেন মরে যায়। এক ফোঁটা বুকের দুধ দিতে ব্যাকুল হয়ে পৌঁছে যায় চৌধুরীর গৃহে। কীভাবে যেন রুপার পাশ থেকে ছোঁ মেরে তুলে নেয় তার মেয়েকে। মেয়ে মাকে পেয়ে তাকিয়ে হাসছে কেমন, হঠাৎ চোখ মেলে এমন দৃশ্যে রুপা অঝোরে কাঁদতে লাগল। আহা মাতৃত্ব! বড়ই মধুর যন্ত্রণাময়! আবার ফিরে যায় সে অতিথিশালায়। এভাবেই যখনই দুগ্ধ যন্ত্রণা হয় তখনই ছুটে আসে মেয়েকে স্তন পান করাতে। বিষয়টা মায়া দেবী জানতে পারেন। এভাবে চলতে থাকলে পদ্মরও যে বড় ক্ষতি হবে। মেয়েটা সমাজে কোন পরিচয়ে থাকবে! তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই পাগলিকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেবে। একটি ট্রাকে করে কয়েকজন লোক দিয়ে অনেক দূরে রেখে আসলেন পাগলিকে। 

এদিকে রাতের বেলা পাগলি ঠিকই চলে এল মাতৃত্বের টানে। আবার মেয়েকে কোলে নিয়ে দুধ পান করে আবার ফিরে যায়। এভাবেই দুদিন পর পাগলি এসে ঘুমন্ত রুপার পাশ থেকে ছোঁ নিয়ে পদ্মকে তুলে দেয় এক ছুট। রুপার চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখে নিজ সন্তান কোলে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে পাগলিটা। মায়া দেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, মাতৃত্ব বড়ই অদ্ভুত! পাগলি তো কী হয়েছে, মা তো!


মুনমুন চক্রবর্তী 
ঠাকুরবাড়ি 
বড়ালিয়া, চন্দ্রগঞ্জ
লক্ষ্মীপুর

 

তারেক

বিচিত্র সব গাছ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
বিচিত্র সব গাছ
ছবি: সংগৃহীত

বিচিত্র পৃথিবীতে বিচিত্রতার শেষ নেই। অদ্ভুত সব রহস্য এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বিচিত্র পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত গাছ সম্পর্কে জেনে নিই চলুন। যেসব গাছ শুধু একটা করেই আছে।


উল্টো ডুমুর গাছ

ইতালির শহর বাকোলির চীন রোমান আর্চওয়ের ছাদ বেয়ে উলটো করে ঝুলে আছে এক ডুমুর গাছ। অদ্ভুতভাবে বেড়ে ওঠা এই গাছে ফলও ধরে। এই গাছ আক্ষরিকভাবেই উল্টো। মাটি ফুঁড়ে নয় বরং ছাদ থেকে মাটির দিকে নেমে এসেছে এটি। ডুমুর গাছ সাধারণত শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গা পছন্দ করে, তবে তারা শক্তিশালী শিকড় এবং অল্প পানিতেও বেড়ে ওঠে। তবে পারকো আর্কিওলজিকো দেলে তের্মে ডি বাইয়ার একটি গুহার ছাদ থেকে, একটি ডুমুর গাছ ভুল পথে কীভাবে বেড়ে উঠেছে তা অজানা।

প্রিজন ট্রি

বোয়াব প্রিজন ট্রি প্রায় দেড় হাজার বছর পুরোনো। গায়ে বড় ফাঁপাওয়ালা এ অদ্ভুত গাছ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই গাছের পরিধি প্রায় ১৪ মিটার। বলা হয় এই গাছে বন্দিদের রাখা হতো। তাই এর নাম প্রিজন গাছ। অর্থাৎ গাছের কুটুরি বা ফাঁপা অংশে বন্দিদের রাখা হতো। যদিও এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। গাছের অস্বাভাবিক কাণ্ডের আকৃতি এবং স্থানীয় ইতিহাসের সঙ্গে মিশ্রণে এটিকে ভয়ংকর এবং অনন্য করে তোলে। বিশাল কাণ্ডের এই গাছের আশপাশে হাড়গোড় দেখতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এখানকার আদিবাসীরা গাছটিকে মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যবহার করত।

লাহাইনার বটবৃক্ষ

১৮৭৩ সালে রোপণ করা এই বিশাল বটগাছটির একাধিক কাণ্ড রয়েছে, যা একটি গাছ থেকে একটি ছোটখাটো বন তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে অবস্থিত এ গাছটি যেন শহরজুড়ে বিস্তৃত। প্রথম আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্ট মিশনের আগমনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৮৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল হাওয়াইয়ের লাহাইনায় গাছটি রোপণ করা হয়েছিল। ১ দশমিক ৯৪ একর জুড়ে, গাছটি লাহেনা বেনিয়া কোর্ট পার্কে অবস্থিত। প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতার এই গাছ কাণ্ড ব্যতীত ১৬টি প্রধান শিকড়সহ বিস্তৃত, যা প্রায় শূন্য দশমিক ৬৬ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রাজ্য এবং দেশের বৃহত্তম বটগাছ হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

তারেক