পৃথিবীতে দেশ-জাতিভেদে ভালোবাসা, বিয়ে কিংবা প্রেমের বহিঃপ্রকাশ, উদযাপন-আয়োজনে ভিন্নতা আছে। আর এই ভিন্নতার মধ্যেও কিছু কিছু প্রথা আছে যেগুলো অদ্ভুত কিসিমের। তেমনই কিছু প্রথা সম্পর্কে জানাব আজ।
কফিনে বিয়ে
বিয়ে মানে আনন্দ। আর কফিন হলো মৃত্যুর পর শেষযাত্রার বাহন। কিন্তু থাইল্যান্ডের দশ দম্পতি কফিনে শুয়েই বিবাহিত জীবনের জন্য আশীর্বাদ নিয়েছিল। অধিকাংশ মানুষ জীবিত অবস্থায় যেখানে কফিনে শুতে ভয় পায়, সেখানে ১০ দম্পতি কফিনে শুয়েই অদ্ভুত এক বিয়ের রীতি পালন করে। ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সা লের ভালোবাসা দিবসে। ব্যাংককের ব্যাং ক্রুয়ে জেলায় সেদিন ১০ জোড়া দম্পতি মন্দিরে আসে ভালোবাসার গাঁটছড়া বাঁধতে। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে নয়। সাদা চাদরে আবৃত গোলাপি কফিনে শুয়ে পড়ে তারা। আর সন্ন্যাসীরা তাদের চাদরে মুড়িয়ে মৃত ব্যক্তির জপ জপতে থাকে। জপ শেষে ঠিকই সন্ন্যাসীরা তাদের বিবাহিত জীবনের জন্য প্রার্থনা করে। এই দশ দম্পতির বিশ্বাস, এই রীতির ফলে তাদের বিবাহিত জীবনে সব বাধা কেটে যাবে।
কনেকে তীর নিক্ষেপ
চীনের এক উদ্ভট প্রথা কনেকে তীর নিক্ষেপ। শুনতে যতটা ভয়ংকর মনে হয়, আদতে তেমনটা নয়। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর অঞ্চলের এক ঐতিহ্য বিয়ের আসরে কনেকে তীর ছুড়ে মারা। বিয়ের আসরে নববধূকে তীর ছুড়ে মারবে বর। তবে তীরের মাথা হবে ভাঙা। ছুড়ে মারা তীর অবশ্যই কনের গায়ে আঘাত করতে হবে। এই প্রথার বিশ্বাস অনুযায়ী নবদম্পতি তাদের জীবনে চিরন্তন প্রেম শিকার করতে পারবে।
প্রতীক কথা বলে
ভালোবাসার চিহ্ন বললে আমাদের চোখে ভাসে পানপাতা আকৃতির এক লাল চিহ্ন। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা দম্পতিদের ভালোবাসা প্রকাশে প্রায়ই এই চিহ্ন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে আফ্রিকার বিয়েতে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় লবণ, মরিচ থেকে শুরু করে গম ও ঝাড়ু। বিয়ের অনুষ্ঠানে গম উর্বরতা এবং জীবন ও জমি প্রদানের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতিনিধিত্ব করে ঝাড়ু। এভাবে মোট ১২টি প্রতীক আফ্রিকার বিয়েগুলোতে দম্পতিদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
ভালোবাসার চামচ বিনিময়
চতুর্থ শতাব্দীতে ওয়েলসে সেন্ট ডোয়াইনওয়েন নামে এক রাজকুমারী ছিলেন। বাবার ৩৬ জন কন্যার মধ্যে এই কন্যা মেলন ড্যাফোড্রিল নামে একটি স্থানীয় ছেলের প্রেমে পড়ে। কিন্তু রাজা তাদের এই প্রেম মেনে নেয়নি। আর এদিকে প্রেমিক মেলন এই খবর পেয়ে রাজকন্যাকে হুমকি দেন। তাই রাজকন্যা ডোয়াইনওয়েন মেলনের হাত থেকে বাঁচতে জঙ্গলে পালিয়ে যান এবং প্রার্থনা করেন। নানা ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এক সময় সন্ন্যাসী হয়ে তিনি ল্যান্ডডউইন গির্জায় আশ্রয় নেন। লোককাহিনি মতে, রাজকন্যা পৃথিবীর সব প্রেমিকার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাই প্রতিবছর রাজকন্যার স্মরণে ২৫ জানুয়ারি ওয়েলসে পালিত হয় সেন্ট ডোয়াইনস ডে।
সেদিন প্রেমিক-প্রেমিকারা কিংবা দম্পতিরা হাজির হন ল্যান্ডডউইন গির্জায় আর একে অপরকে নকশা করা কাঠের চামচ উপহার দেন। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নন- এভাবে কাঠের চামচ, কার্ডসহ নানা উপহার দিয়ে লোকজন বন্ধু, পরিবারের প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করে। ওয়েলসে এই দিবসকে কেন্দ্র করে চমৎকার সব নকশা করা কাঠের চামচ পাওয়া যায়। প্রতিটি নকশা আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে।
ঝাড়ুর ওপর লাফ
নাম শুনেই মনে হতে পারে, এটা হয়তো কোনো খেলার অংশ। কিন্তু লাফঝাঁপ আমাদের ছোটবেলার খেলা হলেও পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় ঝাড়ুর ওপর ঝাঁপ দেওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানের অংশ। আফ্রিকা থেকে উদ্ভূত এক অদ্ভুত প্রথা হলো–বিয়েতে নবদম্পতিকে ঝাড়ুর ওপর লাফ দিয়ে পার হওয়া। আফ্রিকা থেকে এই প্রথা আমেরিকা-ইউরোপেও প্রচলন ঘটেছে। লোককাহিনি অনুসারে, বিবাহিত হওয়ার জন্য এক দম্পতিকে একটি ঝাড়ুর ওপর ঝাঁপ দিতে হয়েছিল। দরজায় আটকানো ঝাড়ু পার হলেই তারা বিবাহিত। তাই ইউরোপ-আমেরিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে দম্পতিদের একটা ঝাড়ুর ওপর লাফ দিয়ে পার হয়। যা নিচে থেকে দুজন ধরে রাখে। এভাবে লাফ দেওয়ার অর্থ হলো জীবনে নতুন পর্বে প্রবেশ করা। আর এই জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকে ঝাড়ুর মতো লাফিয়ে পার করা।
প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কান্না
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের তুইজিয়ার মেয়েদের বিয়ের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা কাঁদতে হয়। কখনো কনের মা, দাদিও একসঙ্গে কাঁদেন। নববধূ বিভিন্ন শব্দ করে কাঁদেন। কখনো একে "ক্রাইং ম্যারেজ সং"ও বলা হয়। বিয়ে ঠিক হলে মেয়েদের প্রতিদিন নিয়ম করে এভাবে কাঁদতে হয়। এই নিয়ম তাদের বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কনের কান্নার মাধ্যমে লোকেরা তার বুদ্ধিমত্তা এবং গুণ বিচার করেন। তাই যে যত ভালো কাঁদতে পারে তিনি তত বুদ্ধিমতী বলে চিহ্নিত হন।
কলি