ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

রহস্যময় ইনকা সভ্যতার মানুষ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
রহস্যময় ইনকা সভ্যতার মানুষ
ইনকা সভ্যতার মানুষ অনেক রংচঙে পোশাক পরত। এই সভ্যতা নিয়ে তৈরি সিনেমাতেও তার প্রভাব দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

আদিকালে বনে-জঙ্গলে বসবাস করত মানুষ। ধীরে ধীরে এই মানবজাতি সভ্য হয়েছে। যুগে যুগে এসেছে বিভিন্ন সভ্যতা, সভ্যতার পরিবর্তন। সিন্ধু সভ্যতা, রোমান সভ্যতার মতোই আরেকটি সভ্যতা হলো ইনকা সভ্যতা। ১৫ শতকে ইনকা সভ্যতার সূচনা হয় দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণে কুজকো অঞ্চলে।

ইনকা শাসকরা ছিলেন অভিজাত রাজকীয় বংশের। সম্রাটকে বলা হতো ইনকা। পরে অবশ্য সভ্যতার নামই হয়ে যায় ইনকা। সম্রাটের অন্য নাম সাপা ইনকা। ‘ইনকা’ শব্দের অর্থ ‘সূর্য দেবতার সন্তান’। ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, উত্তর পশ্চিম আর্জেন্টিনা, উত্তর চিলি ও দক্ষিণ কলম্বিয়া ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইনকা সভ্যতা বরাবরই বিস্মিত করে আধুনিক মানুষকে। ইনকা সভ্যতার মানুষ তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত দড়ির গিঁটের মাধ্যমে। কী রঙের সুতা, কতগুলো গিঁট কিংবা দুটি গিঁটের দূরত্ব কত- এসব দেখেই তারা অন্যের ভাব ও ভাষা বুঝতেন। এগুলোকে ‘খিপু’ বলে। ইনকাদের আদিপুরুষরা শিকার করতে পছন্দ করত। পরে তারা ধীরে ধীরে কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইনকাদের প্রধান খাদ্য ছিল ভুট্টা ও আলু। তারা ভুট্টা থেকে এক ধরনের পানীয় তৈরি করত যার নাম ছিল ‘চিচা’। পেরুতে অবশ্য এই ‘চিচা’ এখনো জনপ্রিয়। এ ছাড়া তারা ওল, নীল শ্যাওলা, কাঁচা মরিচ খেত। মাংসের মধ্যে খেত গিনিপিগ ও ছাগল জাতীয় লামার মাংস। সাগরের নিকটবর্তী এলাকার মানুষ সামুদ্রিক মাছ খেত।

ইনকা সভ্যতায় অনেক শিশুকে খুঁজে পাওয়া যেত না। শিশু হারানোর রহস্য যেন দিন দিন মানুষকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এই রহস্যেরও সমাধান হয়। জানা গেছে, দেব-দেবীর সন্তুষ্টির জন্য তারা ‘কাপাকোচা’ নামের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে শিশুদের বলি দিত। দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার আগে ইনকারা বিভিন্নভাবে তাদের শিশুদের মোটাতাজা করত। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ব্যাপক খননকাজের ফলে ২০০১ সালে ইনকাদের বলির শিকার তিন শিশুর দেহাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে। যদিও তারা বিষয়টি প্রকাশ করেছেন আরও আট বছর পরে। এই তিন শিশুর বয়স ১৫, ৬ এবং ৭ বছর। তিনজনের মধ্যে দুজন মেয়ে এবং একজন ছেলে শিশু ছিল। এমনকি এদের মধ্যে একজন রাজকুমারীও ছিল। ইনকাদের বিশ্বাস ছিল তিনটি জগতের ওপর। উচ্চ জগৎ, মধ্য জগৎ এবং নিম্ন জগৎ। উচ্চ জগৎ হলো স্বর্গ। তারা বিশ্বাস করত পুণ্যবান এবং রাজারা মৃত্যুর পর স্বর্গে যাবেন। সেখানে রয়েছে অসীম সুখ। মধ্য জগৎ হলো পৃথিবী। ইনকারা বিশ্বাস করত তারা তাদের কর্ম অনুযায়ী মৃত্যুর পর এখানে তার ফল ভোগ করবে এবং নিম্ন জগৎ হলো নরক; যেখানে মৃত্যুর পর পাপীরা ফল ভোগ করবে।

ইনকা সাম্রাজ্য পরিচালনা করত রাজকীয় পরামর্শসভা। পুরোহিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সেনাপতির সমন্বয়েই গড়ে উঠত রাজকীয় পরামর্শসভা। এরা সর্ম্পকে আত্মীয়। সম্রাটরা বিয়ে করতেন আপন বোনকে। পুত্রদের মধ্য থেকে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করতেন। সাধারণত বড় ছেলেই সম্রাট হতো। ইনকা অভিজাতদেরও কাউন্সিল ছিল। তারা সাম্রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত। ইনকা যোদ্ধারা অন্য নগর আক্রমণ করে জয় করলেও স্থানীয় শাসনকর্তাকে হত্যা করত না যদি সে শাসনকর্তা ইনকা আইন মেনে চলত, বিদ্রোহ না করত, কর দিত আর শস্যভান্ডার মজুত রাখত। ইনকাদের কর ব্যবস্থা ছিল কঠোর। মেয়েদের নির্দিষ্ট পরিমাণে কাপড় বুনতে হতো। পুরুষেরা কাজ করত সৈন্যবিভাগে কি খনিতে। জনগণকে কর দিতে হতো। হাতে পয়সা না থাকলে রাষ্ট্রীয় কাজ করে কর শোধ করে দিত। কিংবা  পোশাক তৈরি করে বিক্রি করে কর দিত।

ইনকা সভ্যতার মানুষ অনেক রংচঙে পোশাক পরত। রং ও নকশা তাদের পোশাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব রং ও নকশা ছিল, যা তাদের আলাদা পরিচয় বহন করত। লাল, হলুদ এবং কালো রঙের বিভিন্ন শেড ছিল ইনকা পোশাকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। উজ্জ্বল রঙের কাপড় এবং জটিল জ্যামিতিক নকশা ছিল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। তবে তাদের পোশাক মূলত উল এবং তুলা দিয়ে তৈরি করা হতো। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা আলপাকা এবং ভিকুনার উল দিয়ে তৈরি পোশাক পরত, যা ছিল খুবই মসৃণ ও আরামদায়ক। সাধারণ মানুষ লামার উল ব্যবহার করত, যা ছিল কম দামি। তুলা ব্যবহার করা হতো গরম আবহাওয়ায় হালকা পোশাক তৈরির জন্য। ইনকা সভ্যতার পোশাক শুধু তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয়, বরং তাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোরও প্রতিফলন ছিল। তাদের পোশাকের মধ্য দিয়ে তাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য এবং সামাজিক স্তরের প্রতিচ্ছবি দেখা যেত।

ইনকারা খাদ্য সঞ্চয়ে বেশ সাফল্য দেখিয়েছিল। সাম্রাজ্যজুড়ে অসংখ্য সরকারি খাদ্যভাণ্ডার ছিল। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে খাদ্য সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা হতো। এই প্রক্রিয়ায় তাদের প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছরের খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, খাদ্যশস্য মজুতের কলাকৌশল রপ্ত করেছিল বলেই ইনকা সভ্যতা নাকি অত উন্নত স্তরে পৌঁছেছিল। শস্য ছাড়াও তারা মাংস শুকিয়ে নোনা করে রাখত।

জাহ্নবী

 

ধূপকাঠির এক বিস্ময়কর গ্রাম

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম
ধূপকাঠির এক বিস্ময়কর গ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

পুজোর সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে ধূপকাঠি জ্বালানো একটি অন্যতম রীতি। এটি ঘরে সুবাস ছড়ায় এবং ইতিবাচক শক্তির অনুভূতি দেয়। প্রধানত ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর ব্যবহার বেশি। বাংলাদেশ ও ভারতের ধূপকাঠির রং ধূসর হলেও ভিয়েতনামে এটি হয় রঙিন। এর জন্য দেশটির একটি গ্রাম বিখ্যাত। কীভাবে এই গ্রাম অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র ধূপকাঠির কারণে, তা জানলে আপনি অনেকটাই চমকে উঠবেন।

এই গ্রাম কোথায়? 
আমরা যে ধূপকাঠির গ্রামের কথা বলছি সেটি ভিয়েতনামে। এই গ্রামের নাম কাং ফু চাউ। এই গ্রামে গেলে সবখানে শুধু রঙিন ধূপকাঠি দেখতে পাবেন। এই ধূপকাঠি গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সেখানকার মানুষকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে তুলছে। এ ছাড়া এই রঙিন ধূপকাঠিগুলো দূর-দূরান্তের পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করছে।

লাল, সবুজ, হলুদ ধূপকাঠি

ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশিদের বাড়িতে পোড়ানো ধূপকাঠি প্রায়ই চন্দনের কিংবা কালো রঙের হয়। কিন্তু ভিয়েতনামের এই গ্রামে তৈরি ধূপকাঠিগুলো রঙিন। মূলত তিনটি রং রয়েছে। লাল, সবুজ এবং হলুদ। প্রকৃতপক্ষে, ভিয়েতনামে শুরু থেকেই এই রঙের ধূপকাঠি তৈরি হচ্ছে। এখানে আপনি বেশির ভাগ বাড়ির বাইরে ফাঁকা জমিতে এসব ধূপকাঠির গুচ্ছ শুকানো হচ্ছে দেখতে পাবেন।

সেলফির জন্য টাকা
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভ্যালির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গ্রামের মানুষ শুধু এই রঙিন ধূপকাঠি বিক্রি থেকে অর্থ উপার্জন করছে তা নয়। এখানকার লোকেরা এই ধূপকাঠি দিয়ে সেলফি তুলতে চায় এমন পর্যটকদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেয়। এই পরিমাণ ৫০ হাজার ডং, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মতো। তবে এখানে ধূপকাঠির দাম খুবই কম। এই কারণেই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও প্রচুর ধূপকাঠি কিনে নিয়ে যান।

 কলি 

পিসার হেলানো টাওয়ারের ইতিহাস

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
পিসার হেলানো টাওয়ারের ইতিহাস
ছবি: সংগৃহীত

এ পর্যন্ত এমন কোনো স্থাপনার কথা শুনেছেন, যা পৃথিবী-বিখ্যাত কিন্তু তার কারিগর কে, তা কেউ জানে না? আজ আপনাদের তেমনই একটা স্থাপনার গল্প শোনাব।স্থাপনাটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। বলছিলাম, ইতালির পশ্চিমের ছোট্ট শহর ‘পিসা’র হেলানো টাওয়ারের কথা। আজ থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগের কথা।

ব্যবসাবাণিজ্যে সমৃদ্ধ হতে শুরু করেছে পিসা শহরটি। নগরবাসী অনুভব করল, শহরে একটা ক্যাথিড্রাল থাকা প্রয়োজন। না হলে আশপাশের অন্যান্য শহরের তুলনায় তারা কোথাও না কোথাও পিছিয়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর নগরবাসী একটি ক্যাথিড্রাল তৈরি করে ফেলল। ১০৬৩ থেকে ১০৯২, ক্যাথিড্রালটি তৈরি করতে সময় লাগল পাক্কা ২৯ বছর। পাহাড় থেকে আনা বিখ্যাত সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে বানানো ক্যাথিড্রালটি অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ধরা দিল। ২৯ বছরের সাধনা যেন সার্থক হলো।

ক্যাথিড্রাল তৈরির পর কেটে গেল ৫০ বছর। কিন্তু ততদিনেও তেরি হয়নি ক্যাথিড্রালের ঘণ্টা বাজানোর জন্য কোনো ঘণ্টা টাওয়ার। ১১৭৩ সাল। টাওয়ারের নকশা তৈরি করা হয়ে গেল। ঘণ্টা টাওয়ারের নির্মাণকাজের প্রয়োজনে ডোনা বার্তা নামের এক ধনী নারী অনেকগুলো রুপার মুদ্রা দান করলেন। তার দেওয়া অর্থ দিয়ে যতগুলো পাথর কেনা সম্ভব হলো, তা দিয়েই ঘণ্টা টাওয়ারের কাজ শুরু করা হলো। সেই অপর্যাপ্ত পাথর দিয়ে পুরো ফাউন্ডেশনটি মাত্র ৩ মিটার গভীর করা সম্ভব হলো। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা, অথচ কারও মাথাতেই এল না এই মস্ত বড় টাওয়ারটি মাত্র ৩ মিটার গভীরতা নিয়ে কীভাবে ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে থাকবে। ভুলের শুরুটা তখন থেকেই। আর সেই ভুলের মাশুল টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে আজও। যদিও একসময় এই ভুলই শাপে বর হয়েছে। এই ভুলের জন্যই টাওয়ারটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য়ের একটি হতে পেরেছিল!

ফাউন্ডেশনের পর টাওয়ারের কাজ চলতে থাকল। তিনতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা গেল, টাওয়ারটি আর ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। একপাশে হেলে পড়ছে। তার পর টাওয়ারের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। লজ্জায় ঘণ্টা টাওয়ারের কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে জড়িত সবাই প্রোজেক্ট থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিল। নকশা আর হিসাবের কাগজপত্র সব নষ্ট করে দেওয়া হলো। কেউ যেন কখনো আর জানতে না পারে, এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এমন ভুলভাল কাজ কারা করেছিল।

পরবর্তী ১০০ বছর কাজ বন্ধ থাকল। টাওয়ারটি ওরকমভাবেই রয়ে গেল। ততদিনে পিসা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গেল নানান যুদ্ধবিগ্রহ। ১০০ বছর পর পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল হলে নগর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল, টাওয়ারের কাজ এবার ঠিকঠাক মতো শেষ করা হোক। স্থপতি জিওভান্নি ডি সিমিওনিকে দেওয়া হলো এর গুরুভার। কিন্তু ভুল যেন পিছু ছাড়ছিল না। টাওয়ারের হেলে যাওয়া যেন বোঝা না যায়, তাই তিনি প্রতি তলার একপাশ আরেক পাশ থেকে উঁচু করে নির্মাণ করতে লাগলেন। এবং আরও বেশি ঘনত্বের মার্বেল পাথর ব্যবহার করলেন। ফলে, পাথরের ভারে এবং উচ্চতার অসামঞ্জস্যতায় টাওয়ার আরও হেলে পড়ল। স্বাভাবিকভাবে এবারও কাজ বন্ধ হয়ে গেল।
তার পর কেটে গেল আরও ৫০ বছর। আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা হলো। সাত তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ঘণ্টা। ১৩৭২ সালে ঘণ্টা টাওয়ারটি তার কাঙ্ক্ষিত ঘণ্টর ছোঁয়া পেল।

গল্প এখানেই শেষ নয়। টাওয়ারটির কপালে দুর্ভোগের অন্ত নেই। ১৮৩৮ সালে আলেসান্দ্রো ডেল্লা নামের একজন স্থপতি টাওয়ারের ফাউন্ডেশন কিছুটা খুঁড়ে বের করে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে যান। এতে পুরো টাওয়ারটি অনেকখানি হেলে যায়। তিনি তখনই ফাউন্ডেশনটি আবার মাটি সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে ফেলেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে ১৯৯০ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পর শুরু হয় সংস্কারের কাজ। কাজ শেষে ২০০১ সালে তা পুনরায় দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং স্থপতিরা নিশ্চয়তা দেন যে, আগামী ১০০ বছর এটি নিরাপদ থাকবে।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ১৫৯০ সালে এই টাওয়ারে বস্তুর ভরের ওপর পৃথিবীর ত্বরণের পরীক্ষাটি চালান। যার মাধ্যমে তিনি ২ হাজার বছর আগে দেওয়া অ্যারিস্টটলের থিওরি প্রমাণ করেন।

পিসা শহরটি ছোট হলেও শুধুমাত্র এই আশ্চর্যজনক টাওয়ারটি দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক আসেন এ শহরে। বলা বাহুল্য, এ টাওয়ারের জন্যই পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ ইতালির ছোট্ট পিসা শহরটিকে চেনে।

কী অদ্ভুত না! যারা এই টাওয়ারের নকশা ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা যদি জানতেন একদিন তাদের ভুলভাল কাজই টাওয়ারটিকে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত করবে, তাহলে তারা লজ্জায় নিজেদের গুটিয়ে নিতেন না বরং সগৌরবে লিখে রাখতেন টাওয়ারের ইতিহাস-সংবলিত কোনো সাইন বোর্ডে বা বইয়ের পাতায়। সময়ের অতল স্রোতে তারা হারিয়ে গেলেন নীরবে। তাদের কাজ রয়ে গেল কালের সাক্ষী হয়ে।

 কলি 

পোকার দাম ৭৫ লাখ!

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম
পোকার দাম ৭৫ লাখ!
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পোকার মধ্যে একটি এই স্ট্যাগ বিটল। ছবি: সংগৃহীত

ঘরে পোকামাকড়ের উপদ্রব কার ভালো লাগে বলুন তো? তা থেকে বাঁচার জন্যও কত রকমের ওষুধ ঘরে কিনে আনা হয়। আচ্ছা যদি হঠাৎ শোনেন, আপনার ঘরে বাস করা কোনো একটি পোকার দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা! চমকে যাবেন নিশ্চয়ই।পোকার আবার দাম? তাও লাখ টাকার ওপর! এমনই এক পোকা কিন্তু এই বিশ্বে রয়েছে। যার নাম ‘স্ট্যাগ বিটল’। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পোকার মধ্যে একটি এই স্ট্যাগ বিটল।

আর এই দামের পেছনে এক বড় কারণ, এটি একটা বিরল প্রজাতির পোকা। মনে করা হয় স্ট্যাগ বিটলের মধ্যে কোনো না কোনো ঐশ্বরিক শক্তি আছে। এই পোকা রাতারাতি মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়। এ জন্যই এর এত বেশি মূল্য। সৌভাগ্যের জন্য এই পোকাকে গলায় তাবিজ হিসেবে অনেকে পরেন।

পোকাটি সাধারণত পচা কাঠের ওপরই বাসা বাঁধে। কালো চকচকে এই পোকাটির মাথায় একটা শিংয়ের মতো শুঁড় আছে। এই শুঁড়েরই মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। এই প্রজাতির পোকার রং কেবল কালো হয় না। এই পোকা সবুজ, গাঢ় বাদামি, ধূসর, লালচে বাদামি রঙেরও হতে পারে। এই পোকা দেখতে বেশ ভয়ংকর হলেও, মানুষ বা অন্য প্রাণীদের জন্য কিন্তু মোটেও ক্ষতিকর নয়।

প্রসংগত বিটলের ১ হাজার ২০০ রকমের প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে স্ট্যাগ বিটল হলো Lycaenidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই পোকাটি ইউরোপে বিভিন্ন প্রদেশেই বেশি দেখা যায়। এর চোয়ালের দিকে লম্বা একটা শিং আছে, যা অনেকটা হরিণের শিংয়ের মতো। ইংরেজিতে হরিণকে স্ট্যাগ বলে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই এর নাম স্ট্যাগ বিটল নামে পরিচিতি পেয়েছে।

ইউরোপে অনেকেই এই পোকাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করেন। ‘স্ট্যাগ বিটল’কে ইতালির লুকানিয়ার প্রদেশের মতো লোকেরা তাবিজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই পোকাগুলোর ওজন হয় প্রায় দুই থেকে ছয় গ্রামের মধ্যে। স্ট্যাগ বিটলদের গড় জীবনকাল প্রায় তিন থেকে চার বছর হয়ে থাকে। পুরুষ পোকা প্রায় ৩৫ থেকে ৭৫ মিলিমিটার লম্বা হয়। যদিও নারী স্ট্যাগ বিটলের দৈর্ঘ্য কিছুটা কম। প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মিলিমিটার।

স্ট্যাগ বিটল উষ্ণ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠে। ঠাণ্ডা তাপমাত্রার প্রতি এরা সংবেদনশীল। প্রাকৃতিক বনভূমিতেও বাস করে এই পোকা। তবে বাগান, পার্ক এবং মৃত কাঠে প্রচুর স্ট্যাগ বিটল পাওয়া যায়।

 কলি

ঋতুরাণী ভেসে যায়

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম
ঋতুরাণী ভেসে যায়
আঁকা: মাসুম

হিসাবটা এলোমেলো হয়ে গেল। আমরা সাধারণত শরৎকালকে ঋতুরাণী বুঝি। এসেছিলও বটে, পাকা তালের সৌরভ মেখে কাশবনে সাদা শাড়ির আঁচল উড়িয়ে। আসন করেছিল বেশ জাঁকজমকভাবেই। মেঘমালারা যাত্রা শুরু করেছিল তাদের গন্তব্যে। কিন্তু বড্ড হিংসা জাগে বর্ষার মনে।

শরতের নান্দনিক বিচরণ সহ্য করতে না পেরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে বর্ষা নেমে এল বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। দ্রুত সময়ে দানবীয় আচরণ করে ভেসে নিয়ে গেল লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন! যেসব অঞ্চল বন্যার কবলে পড়েছে সেখানকার মানুষজন অতীতে দেখেনি এমন রাক্ষসী বন্যার ভয়াবহ রূপ। চোখের পলকে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু তার উদরে পুরে নিল। মানুষ নিরুপায় হয়ে দিকবিদিক ছুটে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে কারও কারও হয়েছে সলিল সমাধি!

কারও ফসল ভরা মাঠও খেয়ে ফেলেছে এই রাক্ষসী বন্যা। রাস্তাঘাট করেছে ধ্বংসস্তূপ। না, হার মানেনি বাংলার সর্বসাধারণ। জীবন বাঁচাতে সবাই ছুটে গেছে দুর্গত এলাকায়। এই তো কদিন আগেই বাংলার আকাশের কালো মেঘ পরাজিত করেছে বাংলার দামাল ছেলেরা। তারা জানে সব যুদ্ধের কৌশল। বন্যাও পরাজিত হবে আমাদের বিশ্বাস। বিপত্তি বন্য পশুপাখির জন্য, কারণ তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ত্রাণ বরাদ্দ নেই। তাই হয়তো তারা মহাবিপদেই আছে।

বন্যা থাকবে না, চলে যাবে গন্তব্যে কিন্তু ক্ষতচিহ্ন শুকাতে অনেক সময় চলে যাবে। কেউ কেউ স্বজন হারানোর ব্যথা ও স্মৃতি বহন করবে যুগ যুগ। ক্ষতিও পুষে যাবে সময়ের উদারতায় কিন্তু কারও কারও পাঁজর ভেঙে বের হবে বিরহের যন্ত্রণা আজীবন। রহিম উদ্দিন, রমজান আলী, বিমল মাঝি আর আসবে না মুরগি বিক্রি করতে ফেরি করে ঘরে ঘরে। সকাল বেলা আর শোনা যাবে না সুরেন্দ্র মাঝির দরদমাখা কণ্ঠের ডাক, ‘মাছ লাগবে, রুই মাছ ইলিশ মাছ পদ্মার ইলিশ।’ যে শিশুটি তার বাবার সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল পানির প্রবল স্রোতে হেঁটে হেঁটে হাঁটু থেকে কোমর তার পর গলা পানি, শেষে অথই জল কী নির্মম পরিহাস।

অথই জলে পড়ে, বাবা তার ছেলেকে বলে আর পারছি না বাবা, তুই আমাকে ছেড়ে দে, মরে যাচ্ছি আমি! ছোট ছেলে তার বাবাকে ছেড়ে দিয়ে ধরে ফেলে পাশের একটি বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু হতভাগা বাবা কিছুই ধরতে পারিনি, স্রোতের টানে ভেসে যায় দৃষ্টি সীমানার বাইরে! উদ্ধার কর্মীরা এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে কিন্তু তার বাবা হারিয়ে যায় প্রবল স্রোতের উদরে!

ইসলামাবাদ, বলদিয়া, ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম। 

 কলি

ঘুমন্ত রাজকুমার

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম
ঘুমন্ত রাজকুমার
আল ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদ। ছবি: সংগৃহীত

রূপকথার মতো বাস্তবেও বছরের পর বছর ঘুমিয়ে আছে এক রাজপুত্র। যার ঘুম ভাঙানোর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেও তার ঘুম ভাঙানো যায়নি। দু-এক বছর নয় প্রায় ১৯ বছর ঘুমিয়ে আছেন তিনি। বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ (স্লিপিং প্রিন্স) হিসেবে। মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোমায় আছেন। আর কোমায় থাকা মানে এক প্রকার ঘুমিয়ে থাকা। এ কারণে তাকে ‘স্লিপিং প্রিন্স’ বা ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ বলে অভিহিত করা হয়।

সৌদি রাজপরিবারের একজন যুবরাজ তিনি। তার নাম আল ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল আল সৌদ। তিনি সৌদি রাজপরিবারের সদস্য খালিদ বিন তালাল আল সৌদের ছেলে এবং সৌদি ধনকুবের ব্যবসায়ী আল ওয়ালিদ বিন তালালের ভাইয়ের ছেলে।

যুবরাজ আল ওয়ালিদ মূলত ২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রিয়াদে গাড়ি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন এতে মাথায় আঘাতের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কে আঘাত লাগার কারণে তিনি কোমায় চলে গেছেন। তখনই তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। ২০০৫ সাল থেকে ওয়ালিদের অবস্থার কোনো রকম উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা অনেকবার ওয়ালিদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

এমনও সময় হয়েছিল তারা সব আশা ত্যাগ করে লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা খালিদের আশা ছেড়ে দেননি। রিয়াদে একটি হাসপাতালে ১১ বছরের রাখার পর ২০১৬ সালে ওয়ালিদকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ওয়ালিদকে দেখাশোনার জন্য দশেক কর্মচারী রাখা হয়েছে। এর জন্য খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

দ্য নিউ আরবের খবর অনুযায়ী, দীর্ঘ ১৯ বছর কেটে গেলেও খালেদ বিন তালাল ছেলের লাইফ সাপোর্ট খুলতে দেননি। তিনি এখনো আশা করেন, তার ছেলে একদিন জেগে উঠবে। কোমা থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে। কোমায় থাকলেও যুবরাজ আল ওয়ালিদ মাঝে মধ্যেই সাড়া দেন বলে দাবি করেছেন আত্মীয়-স্বজনরা। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা তার অবস্থা নিয়ে পোস্ট করেন। ২০১৫ সালে আঙুল নাড়াতে দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে অক্টোবরে আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। সেখানে তাকে হাত নাড়তে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, যুবরাজ তালাল নিজের হাত সরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় তার বিছানার পাশে স্বজনরা কথা বলছিলেন।

এরপর ২০২২ সালে যুবরাজের একটি ছবি প্রকাশ করে দোয়া চেয়েছেন যুবরাজের ফুফু রাজকুমারী রিমা বিনতে তালাল। রাজকুমারী তার ভাগনের ভিডিও শেয়ার করে তার আরোগ্যের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন।

 কলি