জাপানের আমামিউ দ্বীপের বাসিন্দারা এক সময় হাবু সাপের উপদ্রবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আকারে সাপটি আমাদের দেশের রাসেলস ভাইপারের মতো লম্বা। তার আদল এ সাপের মতোই। এ দ্বীপের অধিবাসীরা রাত এবং দিনেও সাপের কামড়ের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। সাপের দংশনে দ্বীপটিতে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ মারা যেত। এমনকি গৃহপালিত পশুও সাপের কামড়ে মরতে থাকে। সাপের উপদ্রবে সেখানে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সে দ্বীপের বাসিন্দারা শুধু রাত নয়, দিনেও ঘর থেকে বের হতে ভয় পেত। সাপের হাত থেকে বাঁচতে তাই সে দেশের সরকার এক বুদ্ধি বের করল। এশিয়া মহাদেশ থেকে ৩০টি বেজি নিয়ে এসে দ্বীপটিতে ছেড়ে দিল। বেজি সাপকে মেরে ফেললেও সাপের কামড়ে বেজি মরবে না। সাপের বিষ বেজিকে নাকাল করতে পারবে না।
১৯৮৯ সালের ঘটনা এটি। তবে ঘটনা ঘটল বিপরীত। সেখানে বেজি ছাড়ার পর সমস্যা আরও বেড়ে গেলে। হাবু সাপ বেজি শিকার করল না। আর সাপও বেজিকে দেখে দিনের আলোয় বের হয় না। রাতে নিভৃতে-নিশিতে সাপ চলাচল করতে লাগল। আর বেজিও রাতে সাপ শিকারে বের হয় না। এভাবেই সে দ্বীপে সাপ এবং বেজির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। তাই দ্বীপবাসীর সংকট আরও ঘনীভূত হলো। প্রকৃতির বিরুদ্ধে বেজিকে লেলিয়ে দেওয়ার কারণে বেজি এখন দ্বীপের পশুপাখি খেয়ে সাবাড় করতে লাগল। এভাবে খেতে খেতে দ্বীপের ২৫ প্রজাতির উপকারী পশুপাখি খেয়ে শেষ করে ফেলল। তাতেই দ্বীপের ইকোসিস্টেমে ভয়াবহ নৈরাজ্য দেখা দিল।
সব উপকারী প্রাণী বেজি খেয়ে সাবাড় করায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রবে দ্বীপবাসী দিশাহারা হয়ে পড়ল। প্রাণ-প্রকৃতিতে তৈরি হলো জটিলতা। বলা যায়, বেড়াই তখন খেত খেয়ে ফেলছিল।
এবার জাপান সরকারের টনক নড়ল। বেজি নিধনে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করল। সে দ্বীপের বেজি নিধন করতে গিয়ে জাপান সরকারের ২৫ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছিল। বেজি নিধনে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে সে দ্বীপে ক্ষতিকর পোকামাকড়ে ভরে যায়। কৃষক ফসল ফলাতে পারছিল না। গাছপালা-বৃক্ষরাজির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
আমামিউ দ্বীপের হাবু সাপ রাতে লুকিয়ে শিকার করে তার জীবনকে রক্ষা করতে পেরেছে। কিন্তু বেজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ না করায় দ্বীপের ভারসাম্য বিনষ্টে তার ছিল বড় ধরনের ভূমিকা। এ ঘটনায় জাপানের মতো একটি দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়।
প্রকৃতিকে তার নিজের মতোই চলতে দিতে হয়। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, সবই আমাদের প্রয়োজনে কাজে লাগে। একটি পিপীলিকা থেকে শুরু করে সাপ এবং ব্যাঙ কোনো কিছুই ফেলনা নয়।
তাই অযথা কোনো প্রাণী নিধনে আমাদের মেতে ওঠা ঠিক নয়। তাদেরকে তাদের মতো করেই চলতে দিতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশের কোনো অবলা জীব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি।
কলি