সাধারণত গ্রাম-বাংলার রাস্তাঘাট, নদীর তীর, বসতবাড়ির অনাবাদি জায়গা ও স্কুল-কলেজের পাশে দেখা যায় ছাতিম গাছ। গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইনসহ নানা নামে ডাকা হয়। সম্ভবত ছাতার মতো চারদিকে ছড়িয়ে থাকে বলেই এ গাছের নাম ছাতিম।
ছাতিম গাছ ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। এটি চিরসবুজ দুধকষভরা সুশ্রী গাছ। পাতা প্রায় ১৮ সেমি লম্বা, মসৃণ, উপর উজ্জ্বল সবুজ, নিচ সাদাটে। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে।
ছাতিম গাছের মূল আকর্ষণ হলো এর ফুল। ফুল সাদা ও আকারে কিছুটা বড়। শরতের শেষে ফোটে ছাতিম ফুল। সেই ফুল থেকে সন্ধ্যার পর তীব্র ঘ্রাণ বের হয়। ছাতিম গাছ অনেক উঁচু হয় বিধায় এর ঘ্রাণ অনেক দূর পর্যন্ত যায়। এর তীব্র মন মাতানো ঘ্রাণে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেননি কবি-সাহিত্যিকরাও। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যকে’ ছাতিম গাছের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। ছাতিম ফুলের সৌন্দর্য মোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীকেও। রাত যত বাড়ে ততই বাড়তে থাকে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণের তীব্রতা।
ছাতিম গাছ ‘অ্যাপোসাইনেসি’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ডেভিলস ট্রি (Devils tree) নামে। ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ, ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয় বলে। এ ছাড়া ছাতিম কাঠ দিয়ে কোথাও কোথাও কফিন বানানো হয়ে থাকে।
ছাতিম গাছের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এ গাছটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। গাছটি আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে জন্মে। ছাতিম গাছের ছাল ও আঠা জ্বর, হৃদরোগ, হাঁপানি, ক্ষত, আমাশয় ও কুষ্ঠ রোগের জন্য উপকারী।
হাসান