নববধূকে দেখিয়া আমার পরিহিত ধুতিখানার নিম্নাংশ পরিত্যাগ করিয়া পদতলে যাইবার উপক্রম হইল। চক্ষুদ্বয় ভয়ানক আকার ধারণ করিয়া কপালে উঠিল। পাঠক হয়তো অনুধাবন করিয়াছেন যে আমার চরিত্রে ভেজালের মিশ্রণ রহিয়াছে, নয়তো নববধূকে দেখিয়া অবাধ্য দেহখানা এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করিবে কেন? দেহখানার এহেন দুশ্চরিত্রের ঢং জানিতে হইলে গল্পটা পড়িয়া সমাপ্ত করিতে হইবে।
বন্ধু বাসুদেব আমাকে আইকাওয়ালা বাঁশ দিয়াছে। তাহার বাড়িতে গণিত সমাধান করিতে নিমন্ত্রণ করিয়াছিল। আমরা গণিত সমাধান সমাপ্ত করিয়া খোশ গল্প করিতেছিলাম। হঠাৎ বিরাট অনিষ্ট ঘটিয়া গেল। আমার মহামূল্যবান সম্পদ চুরি হইয়া গেল। সম্পদের সহিত আমার স্বাধীনতা, ঘুম, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, শান্তি সবই ডাকাতি হইল। আচমকা একজন অতিশয় সুন্দরী বালিকা ঘরে প্রবেশ করিয়া বাসুদেবের সহিত মৃদু আলাপ করিয়া চলিয়া গেল। এলোমেলো চুল আর মিষ্টি হাসির মায়াবী চাহনি ও ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে হৃদয় চুরি করিয়া লইয়া গেল। মন ও দেহ রেজিস্ট্রি সম্ভব হইলে তাহাকে সঙ্গে সঙ্গেই লিখিয়া দিতাম।
রোদেলা বাসুদেবের পিসাতো বোন। কিছুদিনের জন্য বাসুদেবের বাড়িতে অতিথি হইয়া আসিয়াছে। বয়স পনেরো ঠেলিয়া ষোলোর দিকে উঠিতে ব্যস্ত। কিন্তু তাহার শরীর তাহাকে নাবালিকা বলিয়া সাক্ষ্য দিতে নারাজ। দেখিলে মনে হইবে তাহার দেহ তাহাকে পূর্ণাঙ্গ যুবতী বলিয়া প্রমাণ করিতে মহাব্যস্ত। দেবী লক্ষ্মী সৌন্দর্যের সব প্রাচুর্য রোদেলার অঙ্গে উজাড় করিয়া ঢালিয়া দিয়াছেন। সাধু-সন্ন্যাসী হইলেও রোদেলার রূপের জাদুতে মুগ্ধ হইয়া ধ্যান পরিত্যাগ করিতেন।
রোদেলার চামড়ায় রক্তের লাল আভা সুস্পষ্ট লক্ষণীয়। দেবী লক্ষ্মী অতি প্রসন্ন হইয়া দুধে আলতা গায়ের রং আর দু নয়নে কাজল এবং দু ঠোঁটে গোলাপি রং দান করিয়াছেন। ওপরের ঠোঁটে একটা তিল চিহ্ন আঁকিয়া দিয়া ভয়ানক সুন্দরী রূপে সাজাইয়া দিয়াছেন। তাহার নাসিকা ও ঠোঁটের ওপরে ঘামের বিন্দু বিন্দু জলকণা আমার ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগ্রত ও অশান্ত করিয়া দিয়াছে। কোমড়ের ওপরে লম্বা কেশ আর শাড়িতে অর্ধ আবৃত দেহ অবলোকন করিয়া নিজের দুষ্টু মনটাকে বাঁধিয়া রাখিতে পারি নাই। তাহার পরিহিত সাদা শাড়ি আর স্নান ভেজা কেশ আমাকে প্রেমে পড়িতে বাধ্য করিয়াছে।
গোপনে একাধিকবার রোদেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইয়াছিল। সাক্ষাতের সময় সবকিছুই বিনিময় হইয়াছিল। তবে যাহাই আদান-প্রদান হইয়াছিল তা শুধুই নয়নে নয়নে। বহুবার সাক্ষাতের পরও কখনো তাহার দুই হস্তখানি স্পর্শ করা হয় নাই। রোদেলার সম্মুখে হাঁটু গাড়িয়া কর্ণদ্বয়ের নিম্নাংশে ঘাড়ের দু পাশে হাত দিয়া নয়নে নয়ন রাখিয়া তাহাকে বলা হয় নাই ভালোবাসি! সত্যি তোমাকে ভালোবাসি, নিজের চাইতেও অনেক বেশি।
হঠাৎ ডাক পড়িল কীরে তুই দূরে দাঁড়াইয়া কেন? আয় বেটা তোর সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দেই। নববধূর দিকে চাহিয়া মুহূর্তে জ্ঞান হারাইলাম। যখন জ্ঞান ফিরিল, তখন দেখিতে পাইলাম রোদেলা ছোট কাকুর হস্ত ধরিয়া গোলাপি রঙের দু ঠোটে হাসির ঝড় তুলিয়া আমার সম্মুখে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। ছোট কাকু আমাকে আবার পরিচয় করিয়া দিলেন এটা তোর ছোট কাকি। আরও একবার প্রমাণ হইল, আমাদের সমাজে মেধা, সম্পর্ক কিংবা অনুভূতির চেয়ে, টাকাওয়ালা পুরুষের দাম বেশি। দীর্ঘ নিশ্বাসে শেষবারের মতো পলকহীনভাবে চেয়ে থাকিলাম রোদেলার দিকে। নয়নে নয়নে কথা কহিলাম-অনুভূতিগুলো থাক আমার কাছে, উত্তর থাকুক তোমার চোখের তারায়।
আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ
মিরাপাড়া, রিকাবী বাজার, মুন্সীগঞ্জ
তারেক