ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৮ ডিসেম্বর: হানাদারমুক্ত হয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ এএম
৮ ডিসেম্বর: হানাদারমুক্ত হয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর। মহান মুক্তিযুদ্ধে এদিন মুক্ত হয় কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া  ও বরিশাল জেলা। এদিন বেতারে ভাষণ দেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বলেন, পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজয় সময়ের ব্যাপার।

জানা যায়, একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে মুক্তিবাহিনীর ৩টি দল কুমিল্লা শহরে ঢুকে পড়ে। হানাদারমুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন মুক্তিবাহিনীর আরেকটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদারমুক্ত করে আশুগঞ্জের দিকে এগিয়ে যায়। এর আগে ভারতীয় বাহিনীর ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনের সেনারা আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে যান। বিনা বাধায় হানাদারমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

৮ ডিসেম্বর সুলতান মাস্টার এবং আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বরিশাল শহর দখলে নেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ওমরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

এদিন হানাদারমুক্ত হয় পিরোজপুর। আগের দিন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুন্দরবনের বিশাল এলাকা দখল করেন। রাত ১০টার দিকে দলটি দক্ষিণ প্রান্তের পাড়েরহাট বন্দর দিয়ে পিরোজপুরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে হানাদার বাহিনী মধ্যরাতের দিকে কচা নদী দিয়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৮ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন মুজিবনগর থেকে দেওয়া এক বেতার ভাষণে জাতির উদ্দেশে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানি হানাদাররা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরাজয় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।’

তাজউদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শত্রুর ওপর শেষ আঘাত হানতে হবে এবং বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কবর রচনা করতে হবে। দেশ যখন আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন সে আহ্বানে যেন আমরা সাড়া দিতে পারি।’

এদিন পাকিস্তানের মনোনীত উপপ্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলাফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যান। পাকিস্তানের নাগরিকদের যুদ্ধ তহবিল খোলার আহ্বান জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। 

৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট ঢাকায় নিযুক্ত ২৪০ জন জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও বিদেশি নাগরিককে নিরাপদে স্থানান্তরের জন্য ভারত ও পাকিস্তানে সুরক্ষিত নিরপেক্ষ অঞ্চল চেয়ে অনুরোধ জানান।

পাবনায় মুক্তিযোদ্ধার নামে করা স্টেডিয়াম-সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
পাবনায় মুক্তিযোদ্ধার নামে করা স্টেডিয়াম-সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন
পাবনায় পরিবর্তন করা হয়েছে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার নামে করা স্টেডিয়াম ও সুইমিং পুল। ছবি: খবরের কাগজ

পাবনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়াম’ ও ‘রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিং পুল’-এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে পাবনার মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার ও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রাতারাতি এসব স্থাপনার নাম পরিবর্তন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।

জেলা প্রশাসনে পাঠানো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে জানা যায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্মিত দেশের বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়াম ও সুইমিং পুলের নাম একযোগে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে পাবনা জেলা স্টেডিয়াম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন করে পাবনা জেলা সুইমিংপুল করা হয়েছে।

চিঠিতে গত ২৩ মার্চ নেওয়া এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলে নতুন নাম লেখা হয়েছে।

এদিকে ক্রীড়া স্থাপনা থেকে জেলার নেতৃস্থানীয় এই দুই মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।

পাবনার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রথম শহিদ এমপি। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তিনদিন ধরে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ইতিহাস থেকে মোছা অসম্ভব। আর বকুল দুঃসাহসী ছাত্রনেতা রণাঙ্গনের যোদ্ধা। বার বার নির্বাচিত এমপি। এদের নাম মুছে ফেলে সরকার কী প্রমাণ করতে চাইছে? মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুছে দিলেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হারিয়ে যাবে না। এই অন্যায়ের জবাব একদিন জাতিকে দিতে হবে।’

শহিদ আমিনউদ্দিনের সন্তান সদরুল আরেফিন বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্র পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে। আমার বাবা না হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠরা তো রাজনীতি করতেন না। তারা বীরশ্রেষ্ঠদের নামের স্টেডিয়ামেও পরিবর্তন এনেছে? এই সরকারকে আমার কিছুই বলার নেই।’

শহিদ আমিনউদ্দিনের নাতনী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, ‘শহিদ আমিনউদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ ও অবদানের কথা সবাই জানেন। তার নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয় ও আপত্তিকর। নাম পরিবর্তনের এই রাজনীতি নোংরা সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বহন করে। ফ্যাসিবাদের সময়টার বাইরেও বাংলাদেশের ইতিহাস আছে। নাম পরিবর্তন করে তা মুছে ফেলা যাবে না।’

পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা বলেন, ‘শহিদ আমিনউদ্দিন পাবনার গর্ব। আমাদের প্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পাবনায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী ও গণ মানুষের নেতা। বিএনপির সভাপতি হলেও দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই তিনি নিজ গুণে প্রিয় মানুষ ছিলেন। বিএনপির এমপি হিসেবে মৃত্যুবরণ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার  রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।’

মুক্তিযোদ্ধা বকুলের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, ‘নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস মোছা যায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

এদিকে, নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনো প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়নি। আমরা কেবল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আদেশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের নির্দেশনা পালন করেছি।’

পার্থ হাসান/সুমন/

মহান স্বাধীনতার অনন‍্য ইতিহাস বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৫ পিএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম
মহান স্বাধীনতার অনন‍্য ইতিহাস বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
জাতির সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। ছবি: সংগৃহীত

জাতির সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শোকাহত স্বজন-গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল। পুরো দেশ জ্বলছে আগুনে, চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর ধ্বংসের ধ্বনি। পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে নিরীহ বাঙালিদের। কিন্তু বীর বাঙালিরা সহজে হার মানার পাত্র নয়। মুক্তিযোদ্ধারা বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এমনই এক সময়ে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুয়াতলা গ্রামে এক মহাকাব্যিক যুদ্ধের জন্ম হয়। যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা—সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।

সেদিন সকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের মন অস্থির। চারদিকে গুঞ্জন, পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। মোস্তফা কামাল তার দল নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। তার চোখে আগুন, হৃদয়ে প্রতিজ্ঞা— ‘এই মাটিকে শত্রুর হাতে তুলে দেবো না!’

“ভাইয়েরা! আমরা মরতে পারি, কিন্তু পিছু হটবো না। আজকের এই যুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের লড়াই!” তার এই দৃঢ় সংকল্প মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সাহস জাগায়। সবাই অস্ত্র হাতে শক্ত করে ধরে অপেক্ষা করতে থাকে শত্রুর আগমনের।

কিছুক্ষণ পরেই চারদিক কেঁপে উঠে গোলাগুলির শব্দে। পাকিস্তানি বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। তাদের সংখ্যা অনেক বেশি, গোলাবারুদও শক্তিশালী। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা সাহস হারালেন না, পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললেন।

মোস্তফা কামাল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি জানতেন, এই যুদ্ধ সহজ হবে না। শত্রুরা বৃষ্টির মতো গুলি চালাচ্ছে। একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা আহত হচ্ছে, শহিদ হচ্ছে। হঠাৎই মোস্তফা কামাল লক্ষ্য করলেন, তাদের অবস্থান ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাকিস্তানি সেনারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে মুক্তিযোদ্ধাদের।

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে এবং তাদের পালানোর সুযোগ দিতে, মোস্তফা কামাল একটা দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি চিৎকার করে বললেন— “তোরা সবাই সরে যা! আমি একাই ওদের সামলাবো!” কেউ রাজি হচ্ছিল না, কিন্তু মোস্তফা কামালের দৃঢ় কণ্ঠস্বর তাদের বাধ্য করল। মুক্তিযোদ্ধারা পেছনে সরে গেলো, আর তিনি একাই সামনে এগিয়ে গেলেন।

তিনি একাই একের পর এক গুলি ছুঁড়তে লাগলেন শত্রুদের দিকে। পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে গেল—একজন মাত্র সৈনিক কীভাবে এত সাহস নিয়ে লড়তে পারে!

দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধের পর তার গুলির মজুদ শেষ হয়ে আসে। তবু তিনি থামলেন না। তিনি শত্রুদের নজর সরিয়ে রাখতে থাকলেন, যাতে তার সহযোদ্ধারা নিরাপদে সরে যেতে পারে।

হঠাৎ একটি গুলি তার বুকের মধ্যে আঘাত করে! তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, কিন্তু হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করেন।

শেষ মুহূর্তেও তিনি ফিসফিস করে বললেন— “বাংলাদেশ জিতবেই! আমার রক্ত বৃথা যাবে না!”

তার আত্মত্যাগের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন উদ্যমে শত্রুদের আক্রমণ করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের পরাস্ত করে। দরুয়াতলা গ্রাম মুক্ত হয়, কিন্তু এক মহান বীর হারিয়ে যায় চিরতরে। সিপাহী মোস্তফা কামালের এই আত্মত্যাগ শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, পুরো জাতির জন্য এক চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার সাহস, দেশপ্রেম ও আত্মোৎসর্গ আমাদের হৃদয়ে চিরকাল জ্বলতে থাকবে।

তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হাবিবুর রহমান একজন হাবিলদার ছিলেন। ১৯৭১  সালের ১৮ এপ্রিল, মোস্তফা কামাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুইন গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন। তাকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

-লেখক ও গবেষক

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধ

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য টেনিসে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত ছিলেন বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মভূমির স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সংগঠনে নেমে পড়েন তিনি। স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জোগাতে বাঙালিদের সংগঠিত করা ও তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনসহ জাতিসংঘে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষের খবর পৌঁছে দিতে সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কাজটি তিনি নিয়মিত করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন জোগাতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলে তার নিজ বাড়ি থেকে প্রকাশ করতেন ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’। খবর বাসসের।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন তার ঘটনাবহুল দিনের কথা উল্লেখ করেছেন নিজের লেখা ‘গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন’ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো এবং সে সময়ে আমার দেশে ফেরার একটা পরিকল্পনা ছিল, তা বানচাল হয়ে গেল। 

মুক্তিযুদ্ধের কাজে আমি সমর্পণ করলাম। অন্য সব বাঙালির মতো আমার নজর ঢাকার দিকেই নিবদ্ধ ছিল। সেই ভয়ংকর দিনটিতে ঘরে ফিরে রেডিওতে খবর শুনলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের দমন করতে নেমে পড়েছে।’

মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় পরের দিন ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলে এক বাড়িতে বাঙালিদের সমবেত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস লিখেছেন, ‘ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে প্রবাসী এক বাঙালির বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। আমাকে নিয়ে বৃহত্তর ন্যাশভিলের পূর্ব পাকিস্তানের ছয় বাঙালি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আশু কর্তব্য স্থির করাই ছিল সবার উদ্দেশ্য। 

বাঙালিদের সেই বৈঠকে তিনটি বিষয় তখন স্থির হয়-

১. আমরা স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের সাংবাদিক ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং বাংলাদেশের স্বার্থে তাদের সমর্থন চাইব।

২. আমরা প্রত্যেকে এক হাজার ডলার দিয়ে একটা তহবিল গঠন করব, যাতে এখানকার কাজের খরচ চালিয়ে নেওয়া যায়।

৩. বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়া অবধি আমাদের বেতনের ১০ শতাংশ আমরা ওই তহবিলে জমা দেব। প্রয়োজনে সাহয্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করব। 

ড. ইউনূসের কথায়, ‘যতদূর সম্ভব খবর সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। সামগ্রিক অবস্থার কোনো স্পষ্ট চিত্র আমাদের সামনে ছিল না। আর সহ্য হলো না আমার। সমবেত বাঙালিদের উদ্দেশে বললাম, ‘যতটা দরকার তার বিস্তারিত বিবরণ আমরা সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আমাদের স্থির করতে হবে আমরা নতুন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলাম কি না। আমি আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই। আমি নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দিলাম। কেউ ইচ্ছা করলে আমার সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, যারা বাংলাদেশের সঙ্গে হাত মেলাবেন না তারা আমার চোখে পাকিস্তানি, বাংলাদেশের শত্রু।’

তিনি বলেন, ‘চারিদিক নীরব। আমি যেভাবে সমর্থনের প্রশ্ন তুলেছি তাতে সবাই অবাক হয়ে গেছে। এক রকম অপ্রত্যাশিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবাই বাংলাদেশের পক্ষ নিল। ‘বাংলাদেশ নাগরিক সমিতি’ গঠন করে তখনই ন্যাশভিলের সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনের সাংবাদিক সম্মেলনে সে কথা প্রচার করার প্রস্তাব দিলাম।’

অধ্যাপক ইউনূস মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন’-এ আরও লেখেন- ‘পরের দিন ২৭ মার্চ আমরা স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্র ও দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক বৈঠক ডাকলাম। আমি ‘বাংলাদেশ নাগরিক সমিতি’র সচিব ও দলের মুখপাত্র নির্বাচিত হলাম। স্থানীয় টেলিভিশন কেন্দ্র আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে খবর পরিবেশনের সুযোগ পায় না। তারা আমাদের প্রতিবেদন উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করল। আমরা তাদের কাছে হয়ে উঠলাম তাজা আন্তর্জাতিক খবর সরবরাহকারী, যে খবরের সঙ্গে আবার স্থানীয় কিছু মানুষজন জড়িত আছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বাকি পাঁচজন সবাই শহরের হাসপাতালের ডাক্তার। আমরা সবাই একযোগে নিজেদের এমন একটি দেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করছি, যার এখনো জন্মই হয়নি। কী রোমাঞ্চকর সংবাদ!’

তিনি লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে আমাদের সাক্ষাৎকার ছাপা হলো। ছবি ছাপা হলো। স্থানীয় সংবাদে আমার একটি সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো। আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ‘টেনেসিবাসীদের জন্য আপনার কোনো বার্তা আছে কি? ‘হ্যাঁ, অব্শ্যই আছে’- আমি উত্তর দিলাম। বললাম- ‘দয়া করে আপনাদের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের সদস্যদের অনুরোধ করে বার্তা পাঠান, যাতে অবিলম্বে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা যায়। আপনাদের পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র নির্দোষ নিরস্ত্র বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করতে সাহায্য করছে। আপনাদের এই নির্দয় গণহত্যা বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আপনাদের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান।

তিনি লিখেছেন, ২৯ মার্চ ওয়াশিংটনে বাঙালিদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে এর আগের দিন ২৮ মার্চ আমি ওয়াশিংটনে পৌঁছে যাই। এরপর ২৯ মার্চ বিকেলে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য আমরা সবাই সমবেত হলাম ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে। আমার বানানো ফেস্টুন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে বহু বাঙালি এসেছিলেন বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ডেট্রয়েটের বাঙালিরা সমবেত হন।

অধ্যাপক ইউনূস লিখেছেন, ‘ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। ক্যাপিটল হিলের সিঁড়িতে সে বিক্ষোভ প্রদর্শন এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আমেরিকান আইনসভার সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলাম আমরা।’ 

তিনি আরও লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ-শামসুল বারী ও আমার ওপর ভার পড়ল ওয়াশিংটনের সব দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার। রাষ্ট্রদূত ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সমস্যা তাদের ব্যাখ্যা করা ও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য অনুরোধ জানানো। আমাদের দুজনের পক্ষেই সেই অভিজ্ঞতা খুব রোমাঞ্চকর হয়েছিল। এক দিনে অনেকগুলো দূতাবাসে যেতাম আমরা নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে।’ তিনি অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন জোগাতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন।

শামসুল বারী ন্যাশভিলের তার বাড়ি থেকে ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’ পত্রিকার প্রথম প্রকাশ করেন। তার হাত থেকে সম্পাদকের কার্যভার আমি গ্রহণ করি। তার পর থেকে এই পত্রিকা ন্যাশভিলে ৫০০ নম্বর প্যারাগন মিলস রোডে আমার বাড়ি থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। আমার ফ্ল্যাট হয়ে ওঠে তার প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র। লম্বা প্রচার অভিযান সেরে ফিরে আসার পর ফোন বাজার বিরাম ছিল না। ফোন আসত উত্তর আমেরিকার নানা শহর থেকে, ইংল্যান্ড থেকে। প্রত্যেক প্রবাসী বাঙালি প্রতিদিনের যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর জানার জন্য উদ্গ্রীব থাকতেন।

ওয়াশিংটনে বাঙালিদের প্রচেষ্টায় ক্যাপিটল হিলের কাছে (যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ) বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়। হাউস ও সিনেটের প্রচার অব্যাহত রাখার জন্য প্রথম দিকে তথ্যকেন্দ্রের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ইউনূস ‘বাংলাদেশবান্ধব সমিতি’ স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

অধ্যাপক ইউনূস তার বইয়ে লেখেন, ‘সেই ৯ মাসের সংগ্রামে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ সম্বন্ধে একটি পরিষ্কার চিত্র আমাদের মনে তৈরি হয়ে গেছিল। যত দিন যাচ্ছিল, সে চিত্র স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল। আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনমত প্রকাশের সুযোগ। ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাত্রা নির্বাচনের স্বাধীনতার আস্বাদ মানুষকে দিতে চেয়েছিলাম। আশা করেছিলাম মানুষ দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি পাবে। প্রত্যেক নাগরিকের শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমরা সেই জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে জাতি বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ বিজয়ী হলো। আমি দেশে ফিরে দেশকে নতুন করে গঠনের কাজে ব্রতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বুঝলাম এবার আমার ফেরার সময় এসেছে। দেশ গঠনের কাজে অংশগ্রহণ করার ডাক এসেছে। নিজের মধ্যে নিজের প্রতি একটা তাড়না অনুভব করলাম।’

পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত হন। একসময় সমাজে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে গড়ে তোলেন গ্রামীণ ব্যাংক।

নাটোরমুক্ত দিবস ২১ ডিসেম্বর

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম
আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম
নাটোরমুক্ত দিবস ২১ ডিসেম্বর
নাটোরের উত্তরা গণভবনে ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের চিত্র ও দলিল

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা হানাদারমুক্ত হলেও নাটোর মুক্ত হয় ২১ ডিসেম্বর। 

একই দিন নাটোরের উত্তরা গণভবনে ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এ জেলা মুক্ত হয়।

পাকিস্তান বাহিনীর নাটোর ব্যারাক কমান্ডার পিএ ১৭০২ ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ভারতীয় বাহিনীর আইসি ৪৫৫১ ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নাটোর ছিল পাকিস্তান হানাদারদের ২নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার। এখান থেকেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনা করত পাকিস্তানি বাহিনী। ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যস্ত সম্পূর্ণ নাটোর ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। জেলার উত্তরা গণভবন ছাড়াও আনসার কোয়ার্টার, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, পিটিআই, নাটোর মহারাজা জেএন উচ্চ বিদ্যালয়, ভকেশনাল স্কুল, দিঘাপতিয়া কালীবাড়ি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ 
কার্যালয় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি। 

এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সদর উপজেলার ফুলবাগান, ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকলপট্টি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুর উপজেলার নাড়িবাড়ি, সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরসহ ২০ জায়গায় গণহত্যা চালায়। 

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নবাবজগঞ্জ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাকিস্তানি সেনারা নাটোরের পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস সরকারি কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি ও দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনে (তৎকালীন গভর্নর হাউস) আশ্রয় নেয়। এরপর ২১ ডিসেম্বর উত্তরা গণভবন চত্বরে পাকিস্তানি বাহিনীর নাটোর ব্যারাক কমান্ডার পিএ ১৭০২ ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ভারতীয় বাহিনীর আইসি ৪৫৫১ ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। 

এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ জন অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫ হাজার ৫০০ সৈনিক, ১ হাজার ৮৫৬ জন আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য তাদের ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। 

নাটোরের বীরপ্রতীক সোলায়মান আলী বলেন, পাকিস্তানি সেনারা নাটোরের যেসব জায়গায় গণহত্যা চালিয়েছিল তার কিছু জায়গায় গণকবর ও মিনার নির্মিত হলেও তার যথোপযুক্ত তত্ত্বাবধান নেই। বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের (মুক্তিযুদ্ধকালীন মিলিটারি পুলিশ হেডকোয়ার্টার) ভেতরের শিমুলতলায় এখনো কোনো শহিদ স্মৃতি নির্মিত হয়নি, তালিকা হয়নি গণকবরে শায়িত শহিদদের, সংরক্ষিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি- যা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের পরিত্যক্ত ভবন সংস্কার করে করা যায়। সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। 

শুধু বিশেষ দিন পালন ও শহিদদের স্মরণের মধ্যেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস ভুলে যাবে দাবি করে এ ব্যাপারে তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ কামনা করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাটোরের সদস্য শাহরিয়ার তামিম জানান, ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর নাটোর পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হলেও দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ পায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে নাটোরের আটজন শহিদ হন। আহত হয়ে এখনো বিছানায় কাতড়াচ্ছেন অনেকেই।

হাজারও প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার সূর্য যেন আর কখনোই অস্তমিত না হয়, সে জন্যে দেশের শাসন ক্ষমতাকে ফ্যাসিজমমুক্ত রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কামাল/পপি/

৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে চাঁদপুরে বিজয় দিবস উদযাপন

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে চাঁদপুরে বিজয় দিবস উদযাপন
চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিজয় দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ছবি : খবরের কাগজ

৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে ১৯৭১ সালের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে চাঁদপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরের মুক্তিযোদ্ধা সড়কে লেকের পাড় ‘অঙ্গীকার’ পাদদেশে বীর শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

জেলা প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ এই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, নৌ-পুলিশের পক্ষে (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন- চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চাঁদপুর পৌরসভা, সদর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।   

চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে অঙ্গীকার পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিজয় দিবসে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জেলার আট উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

ফয়েজ/সুমন/