ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

হলুদ গোলাপ

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
হলুদ গোলাপ
অলংকরণ : নাজমুল মাসুম

সারাক্ষণ যত্নকরি 
           আমার বাগান
কখন দেখবো স্বপ্ন
           ফুটবে একটি হলুদ গোলাপ

কত মৌমাছি আসে-
      উড়ে যায়
            ফুঁটে থাকে
                লাল, সাদা ও কালো গোলাপ

একদিন অন্য আলোর সকালে
           দেখি নয়নে নয়ন মিলে
                   দুটি বন্তে আহবান করছে
                          মায়াবী হলুদ গোলাপ

স্বপ্নের গোলাপের আশায় আশায়
                      কত গোলাপ এভাবেই ঝরে যায়।

বিড়ালের থাবা

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
বিড়ালের থাবা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

মিনিরা যে পাড়ায় বাস করতো তা ছিল সবুজে ঘেরা বিলের পাড় ঘেষা। চারদিকেের প্রকৃতি, জনজীবন ছিল খুবই সাদামাটা ঘরনার। বিলে মাছ ধরা, ধান, সবজি চাষ সাধারণ গ্রামীণ জনপদের আবহের ধারায় প্রবহমান। এখানে প্রায় সকল বাড়িতেই একটা দুটো দেশি মুরগী পালন করতো। দিনকাল ভালোই কাটছিল সকলের। কিন্তু হঠাৎ করেই আগমন ঘটলো দুষ্ট, ধুরন্দর, বড়সড় এক বিড়ালের। দেখতে সাদার মধ্যে কিছুটা কালো ছোপ ছোপ  কেমন ভয়ানক বাঘডাশের মতো দেখতে অনেকটা। তাকে দেখলেই সকলে আঁতকে উঠতো। তার খাবারের কোন অভাব ছিল এমনটাতো নয় ; বরং এলাকাবাসী সকলেই মাছের কাঁটা, এটা সেটা তাকে খেতে দিতোই । এসব খেয়ে সে দিনকে দিন ভালোই মোটাতাজা হচ্ছিল আর হয়ে উঠছিল আরও বেশি শক্তিশালী এবং ভয়ানক দেখতে। সে যে প্রথমে এমনটা ছিল তা কিন্তু নয়। সে কিছুটা নিরীহ প্রকৃতিরই ছিল বটে।আর এই নিরীহ ভাব নিয়েই সে কুকর্ম শুরু করে।  সহজলভ্য শিকার হাতের কাছে পেয়ে পেয়েই সে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।

সকলের বাড়িতে মুরগীর নতুন ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোর প্রতি বিড়ালটার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। সে নিয়ম করে সকলের মুরগীর বাচ্চাগুলোকে খেতে শুরু করে। তার এই খাওয়া বেড়েই চলে দিনকে দিন। ছোট  থেকে শুরু করে বড় মুরগির বাচ্চা কোনটাই বিড়ালটির থাবা থেকে রেহাই পেত না।

বিড়ালটির লোভের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিনিরা। তাদের অনেক ক্ষতি সে করেছে। কারণ ওদের ছোট বড় সবগুলো বাচ্চাই সে দরজা, জানালা এদিক সেদিন দিয়ে ডুকে ডুকে খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। এমন করে প্রায় সে প্রতিটি বাড়িতেই থাবা বসিয়ে সবাইকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। 

মিনির মার আরও বেশিই কষ্ট হয়। কারণ বিড়ালটি তার মুরগির আদুরে পালিত বাচ্চাগুলোকে তৃপ্তি করে খেয়ে নাদুস নুদুস হচ্ছে ; আবার শীতের মধ্যে তারই মাটির চুলোর পাড়ে শুয়ে দিব্যি আরাম করে ঘুমায়ও।

মিনির মা অবশ্য বহুবার একে তাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কখনো বা ভয় দেখিয়ে কখনও বা আবার ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে ; নয়তো মনের দুঃখে গালমন্দ করে। এতে করে কিছুটা সময় স্বস্তি কিংবা মনের জ্বালা হয়তো মিটতো;  কিন্তু তাতে দীর্ঘ জ্বালা মিটতো না অবশ্য। এতে তার কষ্ট বেড়ে আরও তিন গুণ হয়ে যায়। সে একসময় প্রচণ্ড কষ্ট থেকে চিন্তাই করে এই অতিষ্ঠকারীটাকে মেরেই ফেলবে। যদিও সত্যি সত্যি তা করার দুঃসাহসও দেখায় নি। যতই হোক, একটা জীবন্ত প্রাণী তো। ছোট্ট মিনিও বারবার না করে। দরকার কি একটা প্রাণী মেরে অযথা পাপের ভাগীদার হওয়ার? তার শাস্তি সে নিজেই পাবে হয়তো। মিনির এই কথাটিই সত্যিও হলো অবশ্য পরে একদিন।

হঠাৎ একদিন রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক প্রতিবেশী বলে উঠলেন , " আপনাদের রান্নাঘরে এত দু্র্গন্ধ কীসের? " এ কথা শুনে মিনি আর ওর মা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি তারা যা ভাবছে তাই ঘটেছে? আরে ঐ বিড়ালটা তো এখানে আয়েশ করে ঘুমায় ; তার মানে!  শেষ এক সপ্তাহ আগে রান্না শেষে দরজায় তালা। এরপর কেউ আর ঐদিকে যায়ও নি। মিনির মা দ্রুত রান্নাঘরের দরজার তালা খুললেন। তারা দুজন তো অবাক হয়ে গেলেন! আরেহ এ তো সেই বিড়ালটি! তারমানে ঐদিন রান্নার পরই বিড়ালটি মুরগির বাচ্চা খেয়ে প্রচুর শীতের মধ্যে আয়েশ বেশি করতে গিয়ে একেবারে গরম চুলোর মধ্যেই ডুকে পড়েছিল! তাই এই অবস্থা! একেবারে পোকা কিলবিল করছে পুরো শরীর জুড়ে। তারা দুজন আঁতকে উঠলো যাই হোক না কেন একটা প্রাণীর এ অবস্থা তো তারা কোনভাবেই চায় নি, মুখে যাই বলুক না কেন। 

ঘটনাটি শুনে এলাকাবাসী একেকজন একেকরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো। কেউ কেউ ত খুবই মর্মাহত হয়ে বললেন, " আহারে বিড়ালটা মরে গেল, যতই হোক একটা জীব তো! "  আবার আরেকজন পাশ থেকে বলে উঠলেন," মরছে ঠিকই আছে এর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট, এর পাপের শাস্তিই এ পাইছে।" সবার মুরগী এই একটা বিড়ালের কারণে বাচ্চাহীন। সে এত বেশি লোভী আর লাগামছাড়া ছিল যে সবাই তার উপর অতিষ্ট ছিল। কিন্তু কারও কিছুই করার সাধ্যও ছিল না।

ছোট্ট মিনির বিড়ালটির এই ভয়াবহ পরিণতি দেখে করুণা হচ্ছিল। সে বলে, " আচ্ছা বিড়ালটি যদি এত লোভী আর নির্দয় না হতো তাহলে হয়তো এমনটা নাও ঘটতে পারতো! " মাথায় তখন কেবল একটাই কথা   ঘুরপাক খাচ্ছিল - " সমাজের লোভী, নির্দয়,স্বার্থপর মানুষগুলোরও কি শেষে কর্মফলের কারণে এমন পরিণতিই হয় ? " তাদের অতিমাত্রায় - " আরও লাগবে আরও লাগবে , আরও চাই আরও চাই " এই মানসিক ব্যাধির কারণেই তারা নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনে কি! 

 

 

সেলিম সোলায়মানের ‘তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে’

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৭ এএম
সেলিম সোলায়মানের  ‘তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে’

তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে
সেলিম সোলায়মান
শ্রেণি: ভ্রমণবিষয়ক
প্রকাশনী: উৎস প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫ 
পৃষ্ঠা: ১৭৬; মূল্য: ৪৫০ টাকা

দিককানা মানুষ তিয়েন আন মেন চত্বরের মতো খোলামেলা বিশাল চত্বরে, চারদিকে আছে যার নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এরকম জায়গাতেও যে দিকভ্রান্ত হতে পারে, এ হলো সেই গল্প। শীতের বেইজিংয়ের তুমুল হিমে, শিল্পোন্নত চীনের ধোঁয়াশামোড়া তিয়েন আন মেন চত্বরে সপরিবারে দিকভ্রান্ত হয়ে পথ হারিয়ে নাকাল হওয়া, উদ্ধার পাওয়া এবং তৎপরবর্তী নানান মজার ঘটনা মিলে যেসব গল্প জমে উঠেছে, সেসবের সরস বর্ণনা ধারণ করেছে এই বই। গল্পে গল্পে ঘুরে আসা যাক তিয়েন আন মেন চত্বর, বেইজিং ও চীনেরও কিছুটা!

গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার ধানমন্ডি লেকপাড়ের মোগল সাম্পান রেস্তোরাঁর খোলা চত্বরে বইপ্রেমী সুধীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল লেখক সেলিম সোলায়মানের চীন-বিষয়ক অষ্টম ভ্রমণালেখ্য ‘তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে’র পাঠ উন্মোচন।

বইমেলা ২৫ উপলক্ষে ‘তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে’ প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন!

গীতিকার, নাট্যকার, লেখক ও শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক আ বা এম ছালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা হয় খ্যাতিমান শিল্পী সৌমিত রায়ের এসরাজ বাদনে। এরপর ‘তিয়েন আন মেনে পথ হারিয়ে’ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করে শোনায় শিশু শিল্পী রূপকথা রহমান, উচ্ছল নাদিফ ও বাচিক শিল্পী রোটারিয়ান ফরিদা রুমা। এর পর সংগীত পরিবেশন করেন স্বনামখ্যাত স্থপতি শিল্পী রেজাউর রহমান ও তার মেয়ে রূপকথা রহমান।

সাহিত্যসভার ছোটগল্প

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
সাহিত্যসভার ছোটগল্প
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

ভালোবাসার লাল করবী
মো. রায়হান পারভেজ

‘তয় আমার জন্য লাল টকটকা একটা গোলাপ ফুল নিয়া আইসো, আমি মনে করমু তুমি আমার জন্য গোলাপ ফুল না, পুরা ভালোবাসাটাই নিয়ে আসছো…’ খুব অনুরক্ত কণ্ঠে শেফালী তার কামনাটি ব্যক্ত করে সুরুজের কাছে। সুরুজের মনে হয় শেফালীর থেকে শোনা এই কামনাটি এক আকাশ স্বপ্নের বাস্তবতার সৌন্দর্য নিয়ে তার সম্মুখে দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশেরই দক্ষিণাঞ্চলের একটি মফস্বল শহর। ছবির মতো এই সুন্দর শহরেরই দুটি পান্থপথিক যেন সুরুজ এবং শেফালী। শৈশবেই বাবা-মা হারানো সুরুজ দারিদ্র্য নামক পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে উঠেছে। চিরায়ত দারিদ্র্যের অনুপম সঙ্গী হিসেবেই যেন নিয়তির লিখনে তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় রিকশানামক ত্রিচক্রযানে যাত্রী আনয়ন। এই শহরেই অপর এক প্রান্তে রয়েছে শেফালীর আবাস। মা-মরা হতদরিদ্র পিতার একমাত্র অবলম্বন শেফালীকে জীবনের রুঢ় বাস্তবতায় বেছে নিতে হয় পোশাক কারখানার কর্মীনামক কঠোর পরিশ্রমের পেশা। শেফালী আর সুরুজের দেখাটি যেন ঠিক দৈবচক্রের মতোই। কর্মস্থলে যাওয়ার তাগিদে পথে দ্রুত হাঁটা শেফালীর সামনে যেন ঠিক ধ্রুবতারার মতোই আবির্ভূত হয় রিকশাচালকের আসনে থাকা সুরুজ। ‘Love at first sight’ তত্ত্বকে সত্যি করে ওই দিন থেকেই সুরুজের মনের পর্দায় একটিই মুখ ভেসে বেড়ায়- শেফালী। হৃদয়ে দোলনচাঁপার গন্ধটি বুকে ধারণ করে উপলব্ধি করলে বোঝা যায় শেফালীর মনেও দোলা দেয় সুরুজ নামের ঝাঁকড়া চুলের সুঠাম দেহের এক তরুণের আবহ। প্রতিদিন চৌরাস্তার মোড়ে পলকে পলকে দেখায় পুঞ্জীভূত ভালোবাসা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে রূপ নেয় পরিণত বৃক্ষে। একদিন আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ- বুকের ভেতর জমা সব সাহসকে একীভূত করে সুরুজ বলেই ফেলে শেফালীকে, ‘আমি তোমার লগে আইজ বিকেলে নদীর কিনারায় গিয়ে কয়ডা কথা কইবার চাই, তুমি কি আইজ কাম হইতে একটু তাড়াতাড়ি আইতে পারবা?’ সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে শেফালী সুধালো, ‘আইতে পারি, কিন্তু তোমারে কথা দিতে হইব, আমি যা চাই সেইটা তোমারে আমার জন্য নিয়া আইতে হইবো।’ সুরুজ প্রত্যুত্তর দেয়, ‘তোমার জন্য যেহানে আমার পরাণ-মন বরবাদ, সেহানে তোমার চাওয়া যেকোনো কিছুই আমি আইনা দিমু, তাতে যদি শরীরের রক্ত বেচা লাগে তয় লাগবে।’ শেফালী হেসে বলে, ‘আরে না না, তোমার রক্ত বেচা লাগবে না, তুমি আমার জন্য লাল টকটকা একটা গোলাপ ফুল নিয়া আইসো…’। অন্য আর হাজারটি দিনের চেয়ে আজকের দিনটি জনৈক সুরুজের জীবনে বিশেষ থেকে বিশেষতর। সে ঠিক করল খুব বেশি সময় আর আজকে রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে না। ঠিক তাই হলো, দুপুরের মধ্যেই রিকশাটি গ্যারেজে রেখে সুরুজ ফিরল তার ছোট্ট সুখের কুঁড়েঘরে। নিজের যত্নের সঞ্চয়ে কেনা নীলাভ রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামাটি পরিধান করে সুরুজ বেরিয়ে পড়ে তার কাঙ্ক্ষিত পথের পানে। শহরের মধ্যখানেই গোলাপ ফুলের তিন-চারখানা সারিবদ্ধ বিপণি। কিন্তু সুরুজের স্বপ্নের জোয়ারে অনেকটাই ভাটা পড়ে, যখন সে দেখে প্রতিটি দোকানই তালাবদ্ধ। হতাশায় মুষড়ে পড়া সুরুজ ঠিক পাশেই দণ্ডায়মান স্টলের একজন কর্মীকে প্রশ্ন করে জানতে পারে গত দুই দিন ধরে গোলাপ চাষিদের ধর্মঘট চলছে, যার ফলে এই শহরের কোনো ফুলের দোকানেই গোলাপ ফুলের আমদানি হয়নি। সুরুজের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, সে হন্তদন্ত হয়ে লাল গোলাপের হন্য করতে থাকে। কিন্তু ওই ছোট শহরে শখের গোলাপবাগান আছে এমন কারও সন্ধান তার নজরে আসে না। যখনই তার মনে হয় প্রিয়তমার প্রথম কথা রাখার স্নিগ্ধ অনুভূতি থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে, তখনই তার মনে ভেসে ওঠে বর্ষীয়ান ভিক্ষুক তার প্রতিবেশী বশির চাচার কথা, ভিক্ষার তাড়নায় যার পদার্পণ হয়েছে এই শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়। বশির চাচার মাধ্যমে সুরুজ জানতে পারে শহরতলির ঠিক কাছেই একটি খামারবাড়িতে ফুটে উঠেছে সাদা করবী ফুল। ঠিক গোলাপের মতোই আকৃতির এই সফেদ করবী ফুলই হতে পারে সুরুজের সেই আরাধ্য বস্তু। বশির চাচার থেকে শুনে সুরুজ ছোটে করবী ফুলের সন্ধানে। খামারবাড়ির মালিককে বলে-কয়ে সুরুজ তার বাগান থেকে তুলে নেয় শুভ্র, পবিত্র ও শ্বেত একটি উজ্জ্বল করবী ফুল। করবীর দিকে মুখ তুলে সুরুজের হৃদয়টি যেমন প্রশান্ত হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি হৃদয়ের এক কোণে আশঙ্কা ও দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ তার মনকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। যে রক্তিম লাল বর্ণের গোলাপের বাকরুদ্ধ প্রতীক্ষায় তার প্রিয়তমা শেফালী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, সেই অপেক্ষার অবসান হবে এক ইচ্ছাভঙ্গের অবতারণায়, তা ভেবে সুরুজের মুহূর্তগুলো বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এক রাজ্য প্রজাপতিমিশ্রিত ভালোবাসা উপহার দেওয়ার বদলে এক আকাশ কষ্ট শেফালীকে উপহার দেবে, এই চেতনা সুরুজকে মনের সঙ্গে এক নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ করে। প্রগাঢ় ভালোবাসার স্বর্গীয় প্রেষণা নিয়ে সুরুজ মনের সঙ্গে লড়াইয়েও জয়ী হয়, ঠিক নিকটবর্তী একটি ফলের দোকান থেকে সংগ্রহ করে ধারালো এক ছুরি। কালবিলম্ব না করে ছুরির এক তীক্ষ্ম আঘাতে কেটে ফেলে তার নিজ হাতের শিরা। রক্তাক্ত শিরা থেকে প্রবাহিত রক্তের স্পর্শে সাদা করবী ফুল ধারণ করে রক্তিম লাল বর্ণ। তীব্র ব্যথাকে ছাপিয়ে যায় সুরুজের প্রশান্ত মন থেকে উৎসারিত অট্টহাসি। এক নিঃশ্বাসে লাল গোলাপসদৃশ রক্তমাখা করবী নিয়ে সুরুজ ছোটে নদীর তীরে অপেক্ষমাণ প্রেয়সী শেফালীর পানে। ক্রমাগত রক্ত নির্গতের ফলে জীবনীশক্তি নিঃশেষিত হওয়ার পথেও রক্তভেজা করবী হাতে শেফালীর মুক্তাঝরা হাসি তার কাছে এক পৃথিবীর ভালোবাসার সংজ্ঞা নতুন করে জানায়। স্বার্থভরা কণ্টকময় পৃথিবীতে অনন্ত বেঁচে থাকার ক্ষণের থেকেও প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মুখের মায়াভরা চাহনির এক চিলতে হাসি সুরুজের নিকট শ্রেয় থেকে শ্রেয়তর হয়ে ধরা দেয়…। 

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

ফুলের গালে টোল
মোরশেদুল ইসলাম

এক শীতের মাসের গল্প
হৃদয়ের উঠোনজুড়ে
জেঁকে বসে বরফ সময়
দ্রাক্ষালতার মতো হৃদয়
স্রেফ আশাকে পেঁচিয়ে
চেয়ে ছিল ওপরের দিকে
কত ফুল দিয়ে গেছে
হেমন্ত মোহিনী
মাটি হিম হওয়ার খানিক আগে
তবু মন কার যেন প্রতীক্ষায়
তীব্র, তীব্রতর শীত শেষ
বসন্তের শুরু হয় হয় ভাব
ফুল আসলো অবশেষে
উজ্জ্বল হলুদ রঙে হেসে
নাগরেরা ভালোবেসে নাম দেয়
জুঁই
রৌদ্রোজ্জ্বল হৃদয়জুড়ে
ধূসর এক সময়
আলিয়া ভাটের মতো টোল পড়ে
জুঁইয়ের দুর্দান্ত গালে!

সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৫ এএম
সাহিত্যসভার মুক্ত কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

 

অন্ধ মনের চোখ
মো.আশতাব হোসেন 

ক্ষতের উপর ক্ষত করলে ক্ষত হয় বিক্ষত
তার পরে করলে আঘাত নীলকণা হয় বিস্ফোরিত। 
একই কথা বারবার বললে লাগতে পারে তিতা
যে পাত্রে ধারণ হয়না সে পাত্র নয় কি ফুটা? 

বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে না পাইলে তার জবাব
তার ভিতরে কি আছে বিবেক জীবন্ত সজাগ? 
বিবেক বিহীনা বালির পুতুল ধরতেই ভেঙ্গে যায়
 করতে অপারগ নিজের সুবিচার। 

নিজের ভুল ধরতে পারেনা অন্ধ মনের চোখ
ভুলগুলি ভুল হিসাবে থাকে ভুলের গুদাম,
অন্যের ভুল ধরতে যাওয়া  সাধ্য নেই তার 
শুদ্ধি বুদ্ধি গজায় না প্রাণে ভুলেরই হয় পাহাড়। 

তারাই পারে ক্ষতের উপর আরো ক্ষত করতে
তাদের থেকে দূরসীমানায় বসত উত্তম স্থান, 
শুনতে মানা তাদের মুখের মিষ্টি সুরের গান 
তাদের মতো  মমতাহীনার মোম পরশে
বিবেকবিহীন পুতুলের হয় উত্থান।