ছবির হাটে ঢুকেই দেখি তার মুখ ছবি
লতাপাতা পুড়ে খায়
পাগলের গান গায়
নিজেকে দাবি করে পোস্ট-মর্ডান কবি ।
ধোঁয়া খেয়ে শূণ্যে ভাসে নাগরিক চিল ।
স্বঘোষিত পা তা লে হা স পা তা লে
ঘুরেফিরে ফাঁক তালে
কবিতা তো নয় যেন কাকের মিছিল।
ছবির হাটে ঢুকেই দেখি তার মুখ ছবি
লতাপাতা পুড়ে খায়
পাগলের গান গায়
নিজেকে দাবি করে পোস্ট-মর্ডান কবি ।
ধোঁয়া খেয়ে শূণ্যে ভাসে নাগরিক চিল ।
স্বঘোষিত পা তা লে হা স পা তা লে
ঘুরেফিরে ফাঁক তালে
কবিতা তো নয় যেন কাকের মিছিল।
বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস
আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত,
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।
দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন
তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।
তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।
তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।
তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।
তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।
ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান
কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!
শক্তি
রজব বকশী
প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা
তথাপি জ্বলতে থাকে
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর
এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে
কেবলি নিজের জন্য নয়
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায়
এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র
এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ
ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম
সাগর আহমেদ
ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,
তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার
পেল তবে পাপ?
এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।
প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ
মিনহাজ উদ্দিন শপথ
রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই
গত রাতের ভেজা চোখ
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার।
অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ
জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন
অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।
ঐশ্বর্য সুখ-হেমন্তকাল
পবিত্র মহন্ত জীবন
সাদারঙে মেঘবালিকা ভেসে বেড়ায় আকাশে...
শীতের সকাল, উল্টো হেমন্তের খোলাহাওয়া
হিমায়িত কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যায় রোদ্দুর।
বাঁশপাতার ফাঁকে টুপটাপ শিশির জলফোঁটা...
সোনা মাটির সবুজবীথি, ফসলের মৌ সুগন্ধ
হেমন্তের আগমন নবান্ন সুখ, ক্যানভাসে ভাসে।
ফড়িংভেজা সকাল চুঁইয়ে চুঁইয়ে টুপটুপ বৃষ্টি
দূর্বাঘাসের ডগায় শিশিরের টলোমলো
হলুদ রং ছোঁয়াতে বসে ঐশ্বর্য সুখ, আনন্দকাল...
মৌমাছি ফুলে ফুলে মধুভরা হেমন্তকাল
কাঁচাপাকা ফসিল মাঠ, কাজে ব্যস্ত কৃষাণ
গ্রামবাংলার কাদামাটির হাঁড়ি বানায় পাল...
শিল্পের সাবলীল জলছবি হেমন্তকাল।
রোদের ডাকপিওন
মতিউর রহমান
মৃত সকালের চৌকাঠে পা রেখে দেখি…
শীত আর কুয়াশায় লেখা চিঠি হাতে ডাকপিওন
চিঠির খাম খুলি
কিছু কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ
অস্ফুটে গোঙায়
প্রেমিকার চুলে সূর্যাস্তের রং মুছে
যে দিন গত হয়েছিল
ফিরে ফিরে আসে
আমি শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে
দিনরাত সেলাই করি আলুথালু জীবন, যাপনের ছেঁড়া জামা
একটু একটু করে পুবালি আকাশ হলুদ হয়
দূরে দেখি, রোদের ডাকপিওন
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে আমার আঙিনায়।
কেউ ছিল না এমন তো নয়
কেউ তো ছিল।
তবু কেউ নেই, কেউ কোথাও নেই!
ওই সুদূরে ভেসে ওঠে খুব চেনামুখ
তবু মনে হয় অচেনা, ভীষণ অচেনা!
জীবনের গল্পগুলো মায়ায় আচ্ছন্ন
এক ধূসর কালো বিরহী উপসংহার।
গোধূলির রং ছুঁয়ে নেমে আসা রাত
নির্ঘুম জোনাকির মতো আলো জ্বেলে
অপেক্ষায় থাকা নিবিড় উষ্ণ অনুভব
বাতাসের বুকে হাস্নাহেনার সৌরভ।
ওই নগ্ন আঁধার ভুলে গেছে প্রতিশ্রুতি
ফিরে আসে নীল খামে বিরহ চিরকুট।
বুকের যত কথা নির্বাক অপাঙ্ক্তেয়
ব্যথার অসুখে ক্ষত হয় হৃৎঅন্তঃপুর।