এক চিলতে রোদ
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
এক চিলতে রোদের মতো একটু হাসি
বদলে দেয় মন আকাশের বিরহী রং।
মরা নদীর অববাহিকায় কোনো সুর নেই,
ওরা গান গায় এক পসলা বৃষ্টি মেখে।
জলহীন নদী আর জলহীন বৃক্ষ
নাম বদলে হয়ে ওঠে চর আর কাষ্ঠ,
এই পরিবর্তন কাউকে তেমন ভাবায় না!
প্রচ্ছদে আঁকা কিছু ছবি নিছক বিভ্রান্তি ছড়ায়
পটভূমিতে চোখ রাখলেই বোঝা যায়
ওখানে হিজল ফুল আর নদীর সখ্যতা বিবর্ণ।
হাসি ও ক্ষুধা কোনটার শক্তি বেশি?
প্রেম ও ঘৃণার মতো বিপরীত?
নাকি জীবন বোধের মর্মে সমান্তরাল?
একটি নির্মল সহাস্যমুখ স্বপ্নে এসে উঁকি দেয়
অন্ধকারে ক্ষুধার দরজায় নক করে,
সে জানে শোষিত মানুষের স্বপ্নের ইতিকথা!
কতদূর শান্তিপুর
এস ডি সুব্রত
পাথর সময়ে রুদ্ধ বিবেক
ব্যথা বিষে নীল অন্তরাত্মা
পরবাসী দহন গহিন ভেতর
বোঝা মুশকিল আসল নকল!
কেবল স্বার্থের বেচাকেনা
বড়ই কঠিন মুখোশ চেনা
আর কতদূর শান্তিপুর
স্বস্তি কোথায় নেই জানা!!
অদৃশ্য চুম্বন
কাজল নিশি
শীতের আভাস এলেই,
ঠোঁটের তৃষ্ণারা কেমন যেন বেসামাল হয়ে পড়ে!
নীরবে খোঁজ করে নওজোয়ানের-
কোলবালিশ চেপে ধরতেই অদৃশ্য চুম্বন!
হিম বাতাসে নাকে আসে যুবকের ঘ্রাণ
আড়াল থেকে আর কত মারবে প্রেমের বান!
মাতাল আমি... বড্ড চঞ্চল তনুমন।
অতঃপর আমার ভেতরের আমিটা তাকেই খোঁজে অষ্টপ্রহর…
হৃদয়াকাশে
সুশান্ত কুমার দে
হৃদয়াকাশে এক রাস অশনিসংকেত
কালো মেঘের দাপাদাপি, বজ্রপাতের
আশঙ্কায় রুদ্ধশ্বাসে গৃহবন্দি জীবন!
হায়রে, হে দুর্লভ জীবন তোমাকে
দিতে পারিনি এতটুকু সুখ! এতটুকু শান্তি!
তুমি মৃত্যুর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েই থাকো।
তোমার ভালোবাসার স্বপ্নের বাসর আজ
মরুভূমির বালুকাবেলায় আচ্ছাদিত!
হয়তোবা কোনো এক ক্ষণে, তোমাকে
ছিঁড়ে, ছিঁড়ে খাবে ওই লোলুপ দৃষ্টিটা,
আপাদমস্তক ক্ষতবিক্ষত চিহ্নে
এঁকে দেবে কুচক্রীর ভয়ংকর থাবায়
একটা অমানবিক মানচিত্রের প্রচ্ছদ!
ভোরবেলাতে অশ্রু হয়ে
সৌপর্ণ মাছুম
শিউলিতলায় রাশি রাশি নিমেষ-হৃদয়কারা
ভোরবেলাতে অশ্রু হয়ে ঝরে রাতের তারা।।
শীতল-সুবাস মায়াজালে
ছোটে এ মন মোহন তালে
শুভ্রচোখে উন্মীলিত কমলারঙা তারা।।
রাজকুমারী শেফালিকা বহু বছর আগে
দিনমণিকে চেয়েছিল গভীর অনুরাগে
ফিনিক্স রূপী ভস্ম থেকে
শিউলি ফোটে শিশির মেখে
অসূর্যস্পশ্যা আজও সে অভিমানীপারা।।
বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস
আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত,
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।
দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন
তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।
তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।
তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।
তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।
তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।
ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান
কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!
শক্তি
রজব বকশী
প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা
তথাপি জ্বলতে থাকে
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর
এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে
কেবলি নিজের জন্য নয়
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায়
এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র
এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ
ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম
সাগর আহমেদ
ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,
তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার
পেল তবে পাপ?
এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।
প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ
মিনহাজ উদ্দিন শপথ
রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই
গত রাতের ভেজা চোখ
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার।
অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ
জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন
অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।