রক্তাক্ত স্বাধীনতা
মো. আশতাব হোসেন
তুমি এসেছিলে রক্তের সাগর পারি দিয়ে
রুগ্ন কঙ্কাল শরীরে বিধস্ত পথ ধরে,
আজও হয়নি আলোকোজ্জ্বল অবস্থান তোমার।
হে স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে ছুটে
এক হিংস্র বাঘের মুখ থেকে ক্ষতবিক্ষত শরীরে
না শুকাতেই ক্ষতচিহ্ন তোমার
আবার শিকার হলে খ্যাপা ক্ষুধার্ত শৃগাল কবলে!
হে স্বাধীনতা তুমি এখন বন্দি
তৃষ্ণাতুর শৃগাল খাঁচায়,
সে শৃগাল তোমার হাড়গোড় কম্পিত হৃদপিণ্ড রেখে
আগে খাচ্ছে চামড়া মাংস গরম রক্ত,
আমরা তোমার অসহায়ত্বের কাছে নতজানু
পারছি না তোমাকে উদ্ধার করতে খালি হাতে!
হে স্বাধীনতা ভয় পেও না ধৈর্য ধরো
যতই হোক তোমার পতাকা রক্তিম ঝাঁঝরা
রক্তের প্রতিটি ছিদ্র থেকে জন্ম লাভ করবে
তীব্র দাহের অগণন অগ্নিশিখা!
অপেক্ষা করো হে স্বাধীনতা নিগুঢ় অন্ধকারে
তোমাকে আলোর ঝরনাধারায় স্নান করাতে
খেপেছে বুকে বিরহের আগুন রক্তের ঝড় নিয়ে,
তোমাকে মুক্ত করবেই তারা জেনে নাও
তুমি মুক্ত হবে আসবেই তোমার সোনালি দিন,
তুমি অপেক্ষা করো হে কঙ্কাল স্বাধীনতা!
এ কেমন জীবন
মো. আলমামুন হোসেন
তোমাকে ভাবতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ি প্রতিনিয়ত ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।
আচ্ছা তুমি কি আদৌ জীবনের নিয়মে আছ,
শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা কি সম্ভব?
মিথ্যার আড়ালে চাপা পড়ে যায় যত সত্য।
সম্পর্কের মৃত্যু হয়ে গেছে;
ফাটল ধরে দীর্ঘ দেয়াল নীরবে দিয়েছে উঁকি।
ব্যর্থ জীবনে বেঁচে থাকার ছক কাটি অনিশ্চিত,
দিনশেষে পথ হারিয়ে ফেলি চিরচেনা আঙিনায়।
তবে শূন্যতাই হোক জয়ের লক্ষ্য,
যদি থেমে যাই এ যাত্রায়, অভিযোগ রইল না আর
জেনে রেখো মানুষ বারবার থেমে যায়; প্রতীক্ষার প্রহর গুনে।
দূরতম দিগন্ত
মোখতারুল ইসলাম মিলন
অবশ্যম্ভাবী ক্লান্তি আঁকড়ে ধরে,
অনড় পথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে,
নির্ভারতা যেন দূরতম দিগন্তে বিলীন,
নিঃশব্দে অপেক্ষার দুর্ভেদ্য দেয়ালে।
প্রত্যাশার ভারে মন ক্লিষ্ট,
অপ্রতিরোধ্য সময়ের প্রতিধ্বনি।
অচঞ্চল হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা
অনুপ্রেরণার অপরিহার্য আহ্বান।
নিরবধি সংগ্রামের প্রতিটা ধাপে,
অধিকার জমাট বাঁধে প্রতিঘাতের ক্ষণে,
অবিনশ্বর আত্মবিশ্বাসের শিখা জ্বলে,
তবুও অদম্য সেই চলার প্রান্তে।
বদলের আওয়াজ
সুজন সাজু
বিবর্ণ রোদ মেঘের লুকোচুরি
স্থির দাঁড়ানো বট গাছ,
দীঘির জলতরঙ্গে পদ্ম দোলে
আড়ালে রবি আজ।
স্বয়ং ঈশ্বরে দেখাচ্ছে লীলা
বৃষ্টির শাড়িতে রূপ,
ঝাঁঝালো ঝলকে চিত্র আঁকা
নৈঋত দিকেতে ডুব।
ক্লান্ত দ্বীপে গোধূলি নামে আজ,
নূপুরের নৃত্যে বদলের আওয়াজ।
নিরীহ শরৎ
মান্নান নূর
বিকলাঙ্গ শরৎ ডুকরে ডুকরে কাঁদে
যথাযোগ্য শিশির নেই ধুয়ে দিতে প্রাতে
শিউলির পা।
বিরহরাতে নিরীহ শরৎ চিঠি লিখে
কাঁপা হাতে জ্যোৎস্না-তারায়,
উড়ো চিঠি উড়ে উড়ে ঢেউ ভেঙে
আঁচড়ে পড়ে কাশের ডেরায়,
যেখানে থাকে না প্রেম, থাকে না দোলে ওঠা নদীর দুকূল
লুটেরা লুটে নেয় কাশবন মাটি,
পাখির পালক ছেঁড়ে, ছেঁড়ে শুভ্র ভালোবাসা
ছেঁড়ে সাদা মেঘ আকাশ সমান।
মেঘদূত উবু হয়ে থুথু দেয়, ঘৃণা ছোড়ে স্তরে স্তরে গজিয়ে ওঠা অসভ্য সমাজ।
সরলছায়া
দালান জাহান
ঈশ্বরের হাত ধরে অসংখ্য ইঁদুর
পৌঁছে গেছে পাহাড়ের ছাদে
তারা এখনো চূড়ায় দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়
বাঁশি বাজলে নেচে ওঠে দাঁত কামড়ায়।
একদিনের প্রার্থনা ভাঙা সরলছায়ারা
হারিয়ে যায় লাল পাসপোর্টে।
ক্ষতের কাগজে শব্দহীন কালো কান্না
উপোস ভোরে জলদৌড়ে আসে শিমুল ফুলের বিয়ে।
মায়ের হাত থেকে রেখাগুলো কেড়ে নিয়ে
তারা কুকুরকে দিয়ে দেয়
মস্তিষ্ক ছিঁড়ে ছিঁড়ে পালন করে বিশুদ্ধ মৃত্যু উৎসব।
মুমূর্ষু ক্যালেন্ডার থেকে
পৃথিবীতে নেমে এসেছে পতন দিবস
আমি আকাশকে বলে দিয়েছি
আমি ঈশ্বরকে বলে দিয়েছি
আপনার ইঁদুরগুলো থামান। ইঁদুরগুলো নিয়ন্ত্রণহীন।
খণ্ড এক মেঘের আকাশ
চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী
ঐ যে খণ্ড এক মেঘের আকাশ,
খুব সকালে ঘুম ভেঙে হয়তো সে আষাঢ় হবে-
হতে পারে শ্রাবণের অঝোর মায়াও;
হতে পারে,
এমনও সে হতে জানে নীলাদ্রি নিরুপম!
ঐ এক খণ্ড মেঘের আকাশও বোঝে,
ও যে জানে কতটা কান্না হলে তবে সবুজ হাসে-
কতটা কান্না হলে তবে রোদ হয় উনুনে-উনুনে।
ঐ যে এক খণ্ড মেঘের আকাশও ডুবে গেলে-
ও জানে,
অনেক কান্নারে সে তো মরে যেতে হবে-
মৃয়মাণ হতে হবে অনেক মায়ার সবুজেরে...
উনুনের রোদে-রোদে অরুন্ধতী চোখে দেবে দেখা জিজ্ঞাসা অপার;
ওগো তুমি খণ্ড এক মেঘের আকাশ,
আবার কখন তুমি তাই মোর আকাশ আষাঢ়!
আবার কখন তুমি সে গো মোর শ্রাবণ আঁধার!
পড়ন্ত বিকেলে
এম এ রহমান
একদিন হঠাৎই আপনার মনে হবে
আপনি একটা
একমুখী রাজপথে দৌড়াচ্ছেন
পড়ন্ত বিকেলে শেষ রোদটুকু
আপনার সামনে দৌড়াচ্ছে
তাকে ছুঁতে চাইবেন অথচ পারবেন না
পা অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছে
আপনি থামতে চাইবেন
কিন্তু সামন-পেছনে দ্রুত যান
ডানে বামে তাকাবেন
কিন্তু দাঁড়াতে পারবেন না
আপনার ভেতরে অনেক যাত্রী
নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই
পেছনের সিটে বসে আছেন আপনি
শরীরের জমে থাকা ক্লান্তি
মাঝে মাঝে কেউ খুলে দেবে
আপনি দাঁড়াতে চাইবেন
অথচ পারবেন না
একদিন দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই
দেখবেন আপনি কোথাও নেই
আপনার বরাদ্দের সিটটিও পূর্ণ...
কেন যে বোকার মতো
মেহেদী ইকবাল
বেদনাকে বলেছি যাব না
যতই তীক্ষ্ণ হোক চঞ্চু তোমার
যত পার ঠোকরাও
কাঠ নয়, স্পর্শকাতর শরীরে আমার
রক্তাক্ত আহত কর
শুষে নাও টপ টপ ঝরে পড়া রক্তের ফোঁটা।
না, উঠব না কঁকিয়ে আমি যন্ত্রণায়
ঠোকরাও আনন্দে তুমি বিরতিহীন
তীক্ষ্ণ ঠোঁটে ছিঁড়ে নাও মাংসপিণ্ড
যদি চাও ছিদ্র কর
বুকের এইখানে ঠুকরে যাও হৃদয় আমার।
না, যাব না যাব না কিছুতে আমি
কেন যে বোকার মতো
রক্তবর্ণ চোখ
আমাকে দেখাও ভয়!
শঙ্খপাড়ের হেলেন
গাজী গিয়াস উদ্দিন
শঙ্খ তুমি নীল থেকে
নদীর উত্তরাধিকার দুঃখ মেলাও
এককালে লোক ভুলে কষ্টের শোক
যখন ইহকাল বেদনার পিরামিড!
বিজ্ঞানের ছায়াতলে বিরহের অববাহিকায়
স্মৃতি-সম্রাজ্ঞী প্রেয়সীর সকাল বিকাল
নশ্বর এত সুন্দর
স্বর্ণলতা রূপে- পারফিউমে এশিয়া ঐশ্বরিয়ায়
পুরুষের চোখে পোড়ানো অন্তর্জাল,
আজ তোমার কম্পিত স্মরণ
খুঁজে আনে যন্ত্রণার অবিনশ্বর
দুমড়ে-মুচড়ে হিয়া চোখজুড়ে শঙ্খের বিরহিণী পাল।
হিংসার নিষ্ঠুর প্রায়শ্চিত্ত করুক
না ভাঙুক কুসংস্কার ঝড়ে পাখির বাসা,
সেসব চিত্তদাহ বিরহ ছড়ানো পথে
প্রণয়ের বিদগ্ধ বিস্ময় শঙ্খের হরিণী হেলেন।