ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ধারাবাহিক উপন্যাস গোপনীয়

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পিএম
গোপনীয়
গ্রাফিকস: নাজমুল আলম মাসুম

পর্ব-১০

এসবের বিপরীতে, মেঘ ক্লান্ত শ্রাবণ সকালে তার মনে প্রশ্ন জাগল রত্না কি তাকে সেই লম্পট পুরুষের রাহুগ্রাস থেকে বাঁচানোর জন্যই অমন করেছিল, নাকি আসলেই সে ছিল লেসবিয়ান? ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল সে। আর রত্নাই বা গেল কোথায়? সেই ঘটনার পর থেকে তার যে টিকিটিও মিলছে না।
মাসি বোধ করি চারুর অস্থিরতা টের পেয়ে থাকবেন। বললেন,
-তোমরা কালকে যা করেছ, ভালোই করেছ, আমি হলেও তাই করতাম! পুরুষরা যখন খুশি মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটি কোন ধরনের সভ্যতা!
চারু বলল, সে মানুষটিকে কি ধরা হয়েছে? আমি তাকে নিজের হাতে জুতাপেটা করব।
প্রমাদ গুনলেন মাসি। এ কী বলে মেয়েটা! তাকে ধরা তো দূর কি বাত, হাজার রকম কৈফিয়ত দিতে দিতে জান শেষ, দুই লাখ টাকার চুক্তি বলে কথা! অনাঘ্রাতা কুসুমের সুবাস নেওয়ার চুক্তি!!
কিন্তু মনের ভেতরের ঝড় মুখে প্রকাশ হতে দিলেন না মাসি। এ পেশায় থাকতে থাকতে অভিক্ত ডিপ্লোমেট হয়ে উঠেছেন তিনি। তার কারবার সমাজের সব উঁচু তলার মানুষদের এসব নিচু কাজ নিয়ে। লোকটি ছিল পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার কাঁচা মাংস চাই। একেবারে সদ্য দাঁত ওঠা গরুর মাংসের মতো কাঁচা, নরম, তুলতুলে মাংস।
হঠাৎ শিউরে উঠলেন মাসি। ঘটনা যেভাবে হলো, তার এই কাজের লাইসেন্স না বাতিল হয়ে যায়! তবে এ মাঠের পাকা ঘুঘু তিনি। তিনি জানেন, এসব লোক সমস্ত কিছু ত্যাগ করতে পারে, কিন্তু নতুন নতুন স্বাদের আস্বাদন ত্যাগ করতে পারবে না। এজন্য কুহকে পড়া পক্ষীর মতো তাদের তার কাছে আসতেই হবে। তবে নিজের ভাবগাম্ভির্য ধরে রাখলেন তিনি, পাছে চারু কিছু টের পেয়ে যায়।
শ্রাবণ সকালে পরিব্যপ্ত সূর্যালোকে দুই অসম বয়সী নারী বসে আছে। একজন গোপন ব্যবসায়ে হাত পাকানো অভিজ্ঞ নারী আর অন্যজন জগতের এইসব হীনতা তুচ্ছতার ঊর্ধ্বে কোনো নন্দন কাননে সদ্য ফোটা ফুল-পবিত্রতায় স্নিগ্ধ, প্রসন্নতায় অনাবিল।
সদ্য শুরু হওয়া ঝিরিঝিরি বৃষ্টির বিপরীতে মাসির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিল চারু। প্রথমে ভুল করে ভাবল, এ তার ফেলে আসা খালার মতো, আবার খেয়াল করে দেখল, না উনি অনেক সুন্দর। বিগত যৌবনা মাসির চোখে, চোখের কোণায়, নিজের অস্তিত্ব অনুভব করল সে। 
বহু বহু দিন আগে, নয়নহারা কি তেঁতুলঝরা নদীর ধারে বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন মাসি। অল্প বয়স। বাদল আঁধারে বিরহী বধূর মতো চারদিকে অন্ধকার করে আছে। আর সেই অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে ছিল মানবরূপী পশু। সেদিন সেই আঁধারে সর্বস্ব হারানো মাসি হয়তো কোনোদিন কাউকে কিছু বলেননি। নিজের বুকে একান্তে বয়ে চলেছেন সেই গোপন ব্যথা! নাকি কোনো চক্রের সাজানো ঘটনায় সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন সেদিন আর আজ, এতদিন পরে সেই মাসি  সেই চক্রের একজন হয়ে চারুকে একই  রকম ফাঁদে ফেলতে চাইছেন! এরকম কিছু চক্রের কথা চারু গ্রামে থাকতে শুনেছিল। তার অন্তরাত্মা ভয়ে অসহায় ঝড় কপোতীর মতো কাঁপতে থাকে। 
কিন্তু মাসির মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত হয় সে। সেখানে বেদনার্ত শ্রাবণ বেলায় জীবনের বনে জোনাক পোকার নেভানেভি।
চারু ভাবল, এ মুখকে বিশ্বাস করা যায়, এ চোখকে বিশ্বাস করা যায়। তার জন্ম-জন্মান্তরের খালা নিজের ভাই মহব্বত চাচাকে দিয়ে যেনতেন কারও হাতে চারুকে তুলে দেননি, দিতে পারেন না। সে যে তাকে মায়ের চেয়েও আপন খালা ডেকেছে, ডেকে এতগুলো বছর সুখে-দুঃখে গুজরান করেছে! মাসির অভিজ্ঞ চোখে চারুর মন, মনের ভাষা প্রাইমারি স্কুলের বইয়ের মতো পড়া হয়ে যায়। হাসিমুখে বলেন তিনি-
-রত্নার কাছ থেকে জানলাম, তুমি সাজগোজ পছন্দ করো। ভাবছি ওর মতো তোমাকে বিউটিশিয়ান বানাব, আবার ভাবছি, তোমার সৌন্দর্যের খাতিরে ভাবছি, তুমি অনন্য সুন্দর একজন গাইয়ে, নাচিয়ে হতে পার। জগৎজোড়া হবে তোমার সুনাম, টাকা-পয়সা, খ্যাতি আর ভক্তি, তুমি যেমনটি চাও, সেভাবে তোমাকে প্রশিক্ষণ দেব। বলো, কী হতে চাও তুমি।
চারু কথা খুঁজে পায় না। বাইরে এতক্ষণ ঝিরিঝিরি চলা বৃষ্টি এখন ঝেপে এসেছে। দিগন্ত অন্ধকার করে হেমন্ত বিকালে শিশিরের শব্দের মতো বৃষ্টি নেমেছে। এমন নরম পরিবেশে জীবনের এই কঠিনতম সিদ্ধান্ত কীভাবে দেবে চারু, ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। মাসিই সাহায্য করল তাকে। 
-আমাদের এখানে দেশের সেরা নাচ আর গানের প্রশিক্ষক আছে। তুমি চাইলে এখানে ঘরের মধ্যেই তোমার ট্রেনিং হবে। 
চারু কী জানি কী ভেবে রাজি হয়ে গেল। আর দুই নারীর ওপরে, বহু ওপরে বসে যার অঙুলি হেলনে আকাশ পৃথিবী ঘুরছে, ঘুরছে মানুষের ভাগ্যচক্র, চারুর সিদ্ধান্ত শুনে তিনি মৃদু হাসলেন। বললেন, তুমি যদি জানতে তোমার ভাগ্য তোমাকে কোথায় নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যাবে; যদি এতটুকু শুধু জানতে! 
চারু জানল না, সে জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো একটি কাজ করে আপতত খুশি। খুশি মাসিও। তিনি বললেন-
ট্রেনিং, নাচ, গান পরে হবে। আগে চলো এ শ্রাবণ বেলায় আজকে বিশেষ মেজবানি রান্না করি তোমার জন্য। এটিও শিখে রাখ।
পল্লির রান্নাঘরে মাসি নিজের হাতে চারুকে মেজবানি রান্না শেখান।
-এটি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খাবার। এখন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।
চারু কিছু বলে না। সে মেজবানির নাম শুনেছে, কিন্তু খাওয়া হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। পরের ঘরে সে বড় হয়েছে। সেই পর অর্থাৎ খালাও ছিলেন গরিব। সেখানে মেজবানির মাংস খাওয়া তো বিলাসিতা। কিন্তু কিছুই বলে না সে।
বিশাল রান্নাঘরে দুপুরের রান্নার এলাহী আয়োজন চলছে। কয়েকজন মহিলা উনানে ভাতের কি তরকারির ডেকচি চড়িয়ে দিয়েছে। হরেক রকম মসলা বাতাসে মিশে সুগন্ধ বিলাচ্ছে চারদিকে। রান্নাঘরের এক কোনায় একটি বিড়াল আর একটি কুকুর নিশ্চুপ বসে আছে। বাইরে বৃষ্টির বিরাম নেই।
মাসি একটি সসপ্যানে মাংস আর মসলা জোগাড় করে নিয়ে এসেছেন। তিনি চারুকে ডেকের পাহারায় বসিয়ে কি একটি মসলার জন্য আবার ঘরের বাইরে গেলেন। চারু একেলা উৎকণ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, এ সময় ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে মাসি ফিরে এলেন। তার চুল বেয়ে, চারুর দেখা সেই ছোটোবেলার মোহন দুটি চক্ষু বেয়ে শরতের শিশিরের মতো বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে।
-মেজবানির মূল কথা হলো মাংস। সব জায়গার মাংস চাই, রান, ঘাড়, বুক সব জায়গার। তার পর লাগে বিশেষ এক মসলা।
-সেইটিই আনতে গেলাম। এটি ছাড়া তুমি আর যাই দাও, মেজবানির মাংস অচল।
মাসি চারুকে এমনভাবে সে মসলা দেখালেন, যেন বা বহু বহুদিন গোপনে সংরক্ষিত কোনো প্রত্ন বস্তু ‘নিলামে উঠিতেছে’। মাসির হাসিটা সংকেতপূর্ণ। তার পর প্রায় ফিসফিসিয়ে বললেন, ভয় নেই আমি তোমাকে এই মসলার গোপন রেসিপি শিখিয়ে দেব। 
কিন্তু যার উদ্দেশে এই গোপনের প্রকাশ, সেই চারুর মধ্যে মেজবানির গোপন রেসিপি নিয়ে কোনো উৎসাহের প্রকাশ দেখা গেল না। তার চোখ দুটি মেঘমেদুর শ্রাবণ দিনে বাইরের মলিন দেয়ালে বসে চুপচাপ ভিজে যাওয়া একটি করুণ কোকিলের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে আছে।
মেজবানির মাংস ভালোই হলো। কিন্তু চারুর মধ্যে তা নিয়ে উৎসাহের কোনো আতিশয্য দেখা গেল না। মাসি বললেন, মেয়েটিকে শ্রাবণে পেয়েছে। তিনি বললেন, তার অতীত দিনে এরকম ঝরো ঝরো বেলায় তিনিও উদাস হয়ে যেতেন। পরবর্তী জীবনে সংগীত ও নৃত্যের ওস্তাদগণ এ অবস্থার নাম দিয়েছেন পূর্বরাগ।
চারু বলল, পূর্বরাগ কী? 
মাসি হাসলেন। বললেন, একটি মেয়ে যখন একটি ছেলের প্রেমে পড়ে তখন তার প্রথম লক্ষণ হলো পূর্বরাগ।
চারু অবাক তাকিয়ে থাকল। মাসি বললেন, তোমার কথা বলছি না। একটি পূর্ণাঙ্গ ক্লাসিক নাচের এটি প্রথম অংশ। অপেক্ষা করো, কালকে যখন তোমার ছন্দ ও নৃত্যের ওস্তাদ আসবেন, তখন হাতেকলমে জানতে পারবে। তোমার চোখ-মুখ দেখে বহুদিন আগে বহু কষ্টে শেখা আমার সেই ভাব মনে পড়ে গেল, তাই বললাম, একটি মেয়ের লুক এত ন্যাচারাল হয় কীভাবে!
চারু কিছুই বুঝল না। তবে নতুন ওস্তাদের কাছে নতুন কী পরীক্ষায় পড়তে যাচ্ছে ভেবে অস্থির হয়ে উঠল।
সন্ধ্যা এবং পরের দুই দিন জলে-বৃষ্টিতে কেটে গেল। এমন তুমুল, সবকিছু ভাসিয়ে নেওয়া বৃষ্টি অনেকদিন দেখেনি চারু। চারুর ভালোই লাগল, অন্তত এ দুই দিন ছন্দ ও নৃত্যের ওস্তাদ বা ওস্তাদ নামধারী কারও হাতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি। চারুর মনে হলো, যদি এরকম তুমুল বৃষ্টিতে দিন-মাস-বর্ষ- সারাটি জীবন অতিক্রান্ত হয়ে যেত কতই না ভালো হতো। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালে যখন পল্লির মেয়েরা একসঙ্গে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ নামের এক হিন্দি ছবিতে বুঁদ, মাসি ঘোষণা দিলেন, আজ বিকেলে চারুর ওস্তাদ এসে পৌঁছাবেন। অতএব, চারু যেন সাজগোজ সেরে যথাসময়ে নাচঘরে হাজির হয়।

পড়ুন: পর্ব- ০৯

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

এক চিলতে রোদ
জহিরুল হক বিদ্যুৎ

 

এক চিলতে রোদের মতো একটু হাসি 
বদলে দেয় মন আকাশের বিরহী রং। 
মরা নদীর অববাহিকায় কোনো সুর নেই, 
ওরা গান গায় এক পসলা বৃষ্টি মেখে।
জলহীন নদী আর জলহীন বৃক্ষ
নাম বদলে হয়ে ওঠে চর আর কাষ্ঠ,
এই পরিবর্তন কাউকে তেমন ভাবায় না!
প্রচ্ছদে আঁকা কিছু ছবি নিছক বিভ্রান্তি ছড়ায় 
পটভূমিতে চোখ রাখলেই বোঝা যায় 
ওখানে হিজল ফুল আর নদীর সখ্যতা বিবর্ণ।
হাসি ও ক্ষুধা কোনটার শক্তি বেশি?
প্রেম ও ঘৃণার মতো বিপরীত?
নাকি জীবন বোধের মর্মে সমান্তরাল?
একটি নির্মল সহাস্যমুখ স্বপ্নে এসে উঁকি দেয়
অন্ধকারে ক্ষুধার দরজায় নক করে,
সে জানে শোষিত মানুষের স্বপ্নের ইতিকথা! 

 


কতদূর শান্তিপুর
এস ডি সুব্রত

 

পাথর সময়ে রুদ্ধ বিবেক
ব্যথা বিষে নীল অন্তরাত্মা
পরবাসী দহন গহিন ভেতর 
বোঝা মুশকিল আসল নকল!
কেবল স্বার্থের বেচাকেনা
বড়ই কঠিন মুখোশ চেনা
আর কতদূর শান্তিপুর 
স্বস্তি কোথায় নেই জানা!!

 


অদৃশ্য চুম্বন 
কাজল নিশি 

শীতের আভাস এলেই,
ঠোঁটের তৃষ্ণারা কেমন যেন বেসামাল হয়ে পড়ে! 
নীরবে খোঁজ করে নওজোয়ানের-
কোলবালিশ চেপে ধরতেই অদৃশ্য চুম্বন!

হিম বাতাসে নাকে আসে যুবকের ঘ্রাণ
আড়াল থেকে আর কত মারবে প্রেমের বান!
মাতাল আমি... বড্ড চঞ্চল তনুমন।

অতঃপর আমার ভেতরের আমিটা তাকেই খোঁজে অষ্টপ্রহর…

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

হৃদয়াকাশে 
সুশান্ত কুমার দে 

হৃদয়াকাশে এক রাস অশনিসংকেত 
কালো মেঘের দাপাদাপি, বজ্রপাতের 
আশঙ্কায় রুদ্ধশ্বাসে গৃহবন্দি জীবন!
হায়রে, হে দুর্লভ জীবন তোমাকে 
দিতে পারিনি এতটুকু সুখ! এতটুকু শান্তি!
তুমি মৃত্যুর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েই থাকো।
তোমার ভালোবাসার স্বপ্নের বাসর আজ
মরুভূমির বালুকাবেলায় আচ্ছাদিত!
হয়তোবা কোনো এক ক্ষণে, তোমাকে 
ছিঁড়ে, ছিঁড়ে খাবে ওই লোলুপ দৃষ্টিটা, 
আপাদমস্তক ক্ষতবিক্ষত চিহ্নে 
এঁকে দেবে কুচক্রীর ভয়ংকর থাবায় 
একটা অমানবিক মানচিত্রের প্রচ্ছদ!

 

ভোরবেলাতে অশ্রু হয়ে
সৌপর্ণ মাছুম

শিউলিতলায় রাশি রাশি নিমেষ-হৃদয়কারা
ভোরবেলাতে অশ্রু হয়ে ঝরে রাতের তারা।।
শীতল-সুবাস মায়াজালে
ছোটে এ মন মোহন তালে
শুভ্রচোখে উন্মীলিত কমলারঙা তারা।।
রাজকুমারী শেফালিকা বহু বছর আগে 
দিনমণিকে চেয়েছিল গভীর অনুরাগে
ফিনিক্স রূপী ভস্ম থেকে
শিউলি ফোটে শিশির মেখে
অসূর্যস্পশ্যা আজও সে অভিমানীপারা।।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

বিনিময়
সাত্ত্বিক দাস

আকাশজুড়ে ধুধু মাঠ,
ওই, আকাশে নক্ষত্রের নাচ, ও পাড়ার বারোয়ারি তলায়।
নির্ঘুম পেঁচার দল, ঘুম চোখে মাথা নাড়ে নিঃসংকোচে
নক্ষত্রের আলোয়, আমার মাথার ভিড়।
পোড়া ভাতের গন্ধে, একাকী ছায়ামূর্তি,
নিরুপায় চোখে চেয়ে আছে, সম্মুখ পানে
কী দেবে বিনিময়ে?
দুই মুঠো ভাত, 
প্রেম, ভালোবাসা, আদুরে হাত।
না কি, মৃত্যু যন্ত্রণা।।

 


দগ্ধ হৃদয়ের খোঁজ
সুমনা আফরিন

তার কোথাও একটা শূন্যতা ছিল
হয়তো শূন্যতায় ভরা কুঠরি ছিল
হয়তো তাতে
নিচ্ছিদ্র যন্ত্রণায় ভরা কোনো দুঃখবাক্স ছিল।

তার বাক্সে হয়তো কালো ও নীল কলম ছিল
কলমে কালি ছিল কম
হৃদয়ে কথার গুরুভার থাকলেও
সব কথা হস্তাক্ষর পায়নি।

তার জন্য সংরক্ষিত সবুজ কালির
সতর্কতার লাল কালির 
বল পেনের কোনো কমতি ছিল না।

তার চোখ বলত
ফাউন্টেন পেনের
অভিলাষ তার নেই।
বাসনা কেবল একটা শূন্য ডাকবাক্সের
শূন্য খাতার অধিকারী
একজন দগ্ধ মানুষের।

তার চোখে খোঁজ ছিল
কোনো পোড়া চোখের
পোড়া চোখের দগ্ধ হৃদয়ই পারে
পৌরহিত্যে করে
বুকের জগদ্দল পাথর নামাতে
দগ্ধ জনের অসীম শূন্যতা ঘোঁচাতে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

ফেরারি নারী
মোহামেদ সাইফুল হাসান

কৃত্তিকা তারার আবির্ভাব হেমন্তের পশ্চিমাকাশে
মৃদুমন্দ শীত নীরবতার গহিন অন্ধ রাতে,
বাঁশির সকরুণ আওয়াজ বাউল গানের সুরে 
টিনের চালে বেদনাতুর শিশির ঝরার শব্দ 
ছাতিমের গন্ধে অতীতের উঁকি তৃষিত অন্তরে,
পুরো একটি বছরের দূরত্ব, হলো দেড় কোটি সমান
অতিথি পাখিরাও চলে এল আপন দেশ ছেড়ে
শুধু ফেরারিদের ফিরে আসার নাম নেই!

 


শক্তি
রজব বকশী 

প্রতিটি মানুষ এক একটি প্রদীপ 
হোক না সে অন্ধ কিংবা অন্ধকারে একা 
তথাপি জ্বলতে থাকে 
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর

এই শক্তির প্রাচীন ব্যবহারে পড়ে থাকে কেউ 
কেউবা নতুন করে পথ খুঁজে ফেরে 
কেবলি নিজের জন্য নয় 
সামগ্রিক চৈতন্যের বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে ভাবতে শেখায় 

এই জেগে থাকা আর জাগানোর গান
আপন সত্তায় প্রতিস্থাপনের টেকনিক স্বপ্ন টাওয়ার
অন্যরকম বোধের আকরিক সংকেত পাঠায়
মানবিক মূল্যবোধে মেধা প্রতিভার এক একটি নক্ষত্র 

এই সভ্যতার আলোকিত মনিটরে ভেসে ওঠে 
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে যে পাওয়াগুলো জয়ধ্বনি করে
সেই আলোয় নিজেকে নতবৃক্ষ হতে দেখা যায়
তারই ইতিহাস পাঠে মনোযোগী আমাদের সময়ের ঢেউ 

 


ক্লিওপেট্রার রোমাঞ্চকর প্রেম 
সাগর আহমেদ 

ক্লিওপেট্রার হাতে সোমরসে শরাব পাত্র 
গলায় প্যাঁচানো সদন্তে সাপ,

তার খিলখিল হাসিতে ছলনার রং 
দেশ, মহাদেশ পেরিয়ে জুলিয়াস সিজার 
পেল তবে পাপ?

এল গৃহযুদ্ধ, এল বিদেশি শক্তি, বিশ্বাসঘাতকতা 
হারেমের দেয়ালে তবু প্রেম আলপনা,
ক্লিওপেট্রার এক হাতে প্রেম, অন্য হাতে যুদ্ধ 
ফণীমনসার রাতে দারুণ উন্মাদনা।

প্রেম, বিরহ, ছলনায় ক্লিওপেট্রা, জুলিয়াস সিজার 
স্থিত যুগে যুগে,
সে এক রোমাঞ্চ কাব্য
উন্মাতাল সর্বগ্রাসী যৌবন সম্ভোগে।

সাহিত্যসভার কবিতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
সাহিত্যসভার কবিতা
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ 
মিনহাজ উদ্দিন শপথ 

রোদের হ্যাঙ্গারে শুকাই 
গত রাতের ভেজা চোখ 
স্যাঁতস্যাঁতে স্বপ্নের পর্দা
তোমার কাছ থেকে ফিরে আসার পর মনে হলো 
বাগানের ফুলগুলো আজ
অযথাই সৌরভে সারাৎসার। 

অন্ধের কাছে সব ইন্দ্রিয় দক্ষতার কথা 
জানতে চেয়ো না কখনো আর
আমার ধ্যান শুধুই তোমার মুখ

 

 


জখমিপ্রেম
মোজাম্মেল সুমন

অতঃপর তুমি
নির্বিঘ্নে পবিত্র হৃদয়ের ভূমি
থেকে হারিয়ে যাওয়াতে
শূন্যতার হাওয়াতে
একাকিত্বের ছায়া জমতে জমতে
ভালো থাকা কমতে কমতে
আমার নিগড়ে পড়ার
চোখের অশ্রুজল বিগড়ে মরার
প্রতিধ্বনিতে বরফ
হয়ে নিশ্চুপ থাকলেও আমার তরফ
থেকে এখনো কিঞ্চিৎ লুকাইনি
অথবা শুকাইনি
বলে প্রতিনিয়ত বোবাকষ্ট প্রপাতের
দৃশ্য বেদনার প্রভাতের
মতো ফোটে
আর জীবনে জোটে
জখমিপ্রেমের অসহ্য ভগ্নাংশ
কিংবা নিষ্পেষিত অহেতুক স্বপ্নাংশ
যার প্রকৃত মানে
বেঁচে থাকা ক্রমাগত জীবন্মৃতের পানে।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });