রাজশাহীর শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটি আবারও ডিম দিয়েছে। তবে এর আগে ছয়বার ডিম দিলেও বাচ্চা ফোটানো যায়নি। এবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশও তৈরি করা হয়। প্রজনন করানো না গেলে দেশে প্রাণীটির বিলুপ্তির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে ১৯৯০ সালে পদ্মা নদী থেকে দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে রাখা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয় তাদের বংশ বৃদ্ধি ঘটানোর। তখন একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ঢাকায় স্থানান্তর করে সেখান থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল আনা হয়। প্রত্যাশা অনুযায়ী নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দিলেও কোনোভাবেই তা থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি।
উদ্যানে কর্মরত বারব আলী জানান, ৬ দফায় ডিম দিলেও সেগুলো কোনোভাবেই প্রজননের জন্য বাচ্চা ফোটানো যায়নি। বেশির ভাগ ডিম পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে অন্তত ৩২টি ডিম দেয়। তবে পানিতে দেওয়ায় তা নষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে। এর আগেও একইভাবে ঘড়িয়ালের ডিম নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছর অল্প কিছু ডিম পুকুরের পাড়ে পাওয়া যায়। সেগুলো বালুতে পুঁতে রাখলেও ফল মেলেনি। অনেক ক্ষেত্রে ঘড়িয়াল নিজেই ডিমগুলো নষ্ট করে দেয়।
প্রায় তিন মাস আগে ঘড়িয়ালের প্রজননের বিষয়ে কাজ করতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিয়েছেন সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি বলেন, ‘ডিম ফোটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এখানে প্রধান সমস্যা। প্রজনন মৌসুমে ডিম দেওয়ার অন্তত তিন মাস আগে থেকেই ঘড়িয়াল পলিমিশ্রিত মাটি, নরম ঘাস রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করে রাখে। যেখানে দিনে তাপ থাকবে, রাতেও তাপ ধরে রাখবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না।’
বোরহান বিশ্বাস রমনের পরামর্শে সম্প্রতি উদ্যানে পুকুরের এক পাশের মাটি ও ঘাস বলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমে ঘড়িয়ালগুলোকে দর্শনার্থী থেকে আড়ালে রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, ‘প্রজননে সফল হলে নদীতে ঘড়িয়াল বাচ্চাদের ছেড়ে দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। তবে তার আগে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত নদী নিশ্চিত করতে হবে। এখান থেকে দুটি ঘড়িয়ালের বাচ্চা উৎপাদন করা গেলেও আগামী ৫০ বছর প্রাণীটি দেশে টিকে থাকবে। কেননা, ঘড়িয়ালের গড় আয়ু অন্তত ৬০ বছর। এরা সর্বাধিক ২০ ফুট লম্বা এবং ১৬০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। মার্চ ও এপ্রিল ঘড়িয়ালের প্রজনন ঋতু।
এ সময়ে মা ঘড়িয়াল নদীর বালিয়াড়িতে ডিম পেড়ে বালু দিয়ে ঢেকে রাখে। একসঙ্গে এরা ২০ থেকে ৯৫টি ডিম পাড়ে। ৭১ থেকে ৯৩ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ফারাক্কা বাঁধ তৈরির আগে পদ্মা নদীতে মিঠা পানির ঘড়িয়ালের দেখা মিলত। পরে নদীতে রুক্ষতা দেখা দেওয়ায় ক্রমেই বিলুপ্ত হয় প্রাণীটি। এখন বলতে গেলে দেশের প্রকৃতিতে ঘড়িয়াল দেখাই যায় না।’