
খুব ভোরে পাখি দেখতে বেরিয়েছি ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। এক পুকুরের ধারে জারুল বনের এক পাশে থাকা শীতলপাটি গাছের ঝোপে এ পাখি অনিয়মতিভাবে আসে। কোনো বছর দেখা যায়, আবার কোনো বছর দেখা যায় না। হিমালয়সহ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট পাখি নীল রবিন। মেয়েপাখির রং শুকনো পাতার মতো হালকা বাদামি। তাই সহজে চোখে পড়ে না।
সেদিন দেখা গেল, মেয়েপাখিটি খুব সাবধানে শীতলপাটির ঝোপ থেকে বের হয়ে শুকনো জারুল পাতা উল্টিয়ে খুঁটে খুঁটে পোকা খাচ্ছে। ঘণ্টাখানেক পাখিটি দেখলাম। সে ঝোপের আড়ালেই বেশি থাকতে ভালোবাসে। সেদিন ছেলেপাখির দেখা পাইনি।
দেশি নীল রবিন আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে বছরে দুবার। কখনো কখনো এরা বাংলাদেশে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রাবিরতির সময় এরা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আশ্রয় নেয়। থাকে সপ্তাহখানেক।
অন্য একদিন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গিয়েছি। পিচঢালা পথের ওপর পড়ে থাকা একটি পাইপের ওপর বসা পুরুষ নীল রবিন দেখতে পাই। তার ছবি তুলে নিই কয়েকটা। ফুলবাগানের ভেতর দিয়ে উড়ে এসে সবে বসেছে। খানিক বাদেই সে চলে গেল ফুলবাগানে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তার শিকার ধরার কৌশল ও চালচলন পর্যবেক্ষণ করলাম।
প্রায়ই সে পানি জমে থাকা জায়গাতে আসে পোকা ধরতে। ফুলের টবেও যায়। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই ব্যস লাফিয়ে অথবা উড়ে গিয়ে ঝোপ বা পাতার আড়ালে চুপ করে বসে থাকে। নড়াচড়া করে না একটুও। পোকা ধরা এবং হাঁটার সময় লেজ নাড়ায় ঘন ঘন। দুই ডানা ঝাপটায়। যার ফলে ডানার নীল রং আরও ভালোভাবে দেখা যায়। এই দৃশ্য খুবই উপভোগ্য।
নীল রবিন সাধারণত মিশ্র ও পাতাঝরা বনের তলে, ফুলবাগানে ও চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে ভূমিতে শেওলা, শুকনো ঘাস, লাইকেন, পশম ও পালক দিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। ডিম পাড়ে। ডিম দেখতে নীল। সংখ্যায় তিন থেকে পাঁচটি। ছেলেপাখির পিঠের দিক নীল, নিচের দিকে কমলা, ভ্রূরেখা সাদা। কানঢাকনি কালো। গলা ও বুক উজ্জ্বল তামাটে। মেয়েপাখির পিঠ জলপাই বাদামি। গলা সাদা, দেহতল পীতাভ। নেপাল, মায়ানমার ও হিমালয়ে এরা বাসা করে জুলাই মাসের দিকে। ছানারা উড়তে শিখলে আবার পরিযায়ী হয়। এ পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Larvivora brunnea; ইংরেজি নাম Indian blue Robin।