ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

সুগন্ধের রানি অপরূপ চাঁপা

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৩ এএম
আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
সুগন্ধের রানি অপরূপ চাঁপা
বলধা গার্ডেনে ফোটা অপরূপ চাঁপা ফুল। ছবি: লেখক

শরতের এক স্নিগ্ধ সকালে হাজির হলাম ঢাকার ওয়ারীতে বলধা উদ্যানের সিবিলি অংশে। ক্যামেলিয়া হাউসের পাশে একটি কানাঙ্গাগাছের দেখা পেলাম। গাছটি এর আগেও দেখেছি ছোট অবস্থায়। এখন সে গাছ বেশ বড় হয়েছে, ছোটখাটো বৃক্ষের রূপ ধরেছে। কানাঙ্গাগাছের কাণ্ডের গোড়া থেকে খানিকটা ওপর পর্যন্ত ডালপালা নেই, কিন্তু এরপর কাণ্ড থেকে ডালপালা বেরিয়ে গাছটিকে ঝোপালো করে ফেলেছে। ঘন সবুজ পাতা, পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে অপরূপ ফুল, ফুলগুলোর কাছে গেলে সেগুলোর ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। সুঘ্রাণ আর ফুলের রূপে শরতের সকালটা অন্য রকম হয়ে উঠল। তবে সময়টা শরতের কোজাগরী জ্যোস্না প্লাবিত রাত হলেই ভালো হতো। কেননা, রাতের মতো এ ফুলের তীব্র ঘ্রাণ দিনে পাওয়া যায় না। 

গাছে যখন কুঁড়ি আসে তখন এর কোনো ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। এমনকি ফুল ফোটার পর যখন পাঁপড়িগুলো সবুজ থাকে, তখনো ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু দিন পর পাঁপড়িগুলো যখন হলদে হতে শুরু করে, তখনই সেসব ফুল সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছড়াতে শুরু করে। কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটে শুকাতে বা ফল গঠনের আগ পর্যন্ত প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এ কদিন ফুলগুলো গাছের ডালেই ঝুলতে থাকে। তবে ফোটার পর থেকে ধীরে ধীরে ফুলগুলো ম্লান হতে শুরু করে। প্রায় সারা বছরই এর ফুল ফোটে। 

কানাঙ্গাগাছের বাংলা নাম অপরূপ চাঁপা, ইংরেজি নাম কানাঙ্গা ট্রি (Cananga tree), উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম কানাঙ্গা ওডোরাটা (Cananga odorata) ও গোত্র অ্যানোনেসি (Annonaceae)। অর্থাৎ কানাঙ্গা আতা, শরিফা ও কাঁঠালিচাঁপা গোত্রের গাছ, ফুলের চেহারায় কাঁঠালিচাঁপা ফুলের কিছুটা মিল আছে, আতা ও শরিফার আদল আছে। তবে কানাঙ্গার ফুল কাঁঠালিচাঁপা ফুলের চেয়ে অনেক বড়, লম্বা ও সুগন্ধযুক্ত পাঁপড়ি, বৃতি ও পাঁপড়ির রঙের অনেকটা মিল আছে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের সঙ্গে। উদ্ভিদ জগতে সবুজ রঙের ফুল খুব দুর্লভ। কানাঙ্গা ফুলগুলো যখন ফোটে তখন রঙটা সবুজ থাকে, এরপর ফিকে হতে শুরু করে ও শেষে হলুদ হয়ে যায়। ফুলে সুগন্ধ থাকায় বিদেশে এ ফুল থেকে সুগন্ধী বা পারফিউম উৎপাদন করা হয়। এ জন্য কানাঙ্গার আরেক ইংরেজি নাম পারফিউম ট্রি। প্রাকৃতিক সুগন্ধী উৎপাদনকারী শিল্পে কানাঙ্গার কদর রয়েছে অনেক বেশি, এ জন্য কানাঙ্গা ফুল তাদের কাছ থেকে খেতাব পেয়েছে ‘সুগন্ধের রানি’।

কানাঙ্গা একটি দ্রুতবর্ধনশীল চিরসবুজ ছোট বৃক্ষ। গাছটি বড়জোড় ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অনুকূল পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে গাছ বছরে কয়েক মিটার লম্বা হতে পারে। পাতা যৌগিক ও পক্ষল, পত্রফলক মসৃণ ও চকচকে, ডিম্বাকার, পাতার আগা সূচালো, কিনারা কিছুটা ঢেউ খেলানো। লম্বা চিকন বোঁটায় ফুল ফোটে, ফুল নিচের দিকে ঝুলে থাকে, ফুলের ছয়টি পাঁপড়ি সরু ও লম্বা, পাঁপড়ি আঁকাবাঁকা বা ঢেউ খেলানো, সবুজাভ রং, পাঁপড়িগুলোর মাঝে একটি ছোট্ট চাকতি থাকে, তা থেকে চারদিকে রশ্মির মতো ছড়িয়ে থাকে, দেখতে তারার মতো দেখায়। আবার ফুলকে অক্টোপাসের মতো বললেও ভুল হবে না, তবে অক্টোপাসের মতো আটটি বাহু না, বরং আছে বাহুর মতো ছয়টি পাঁপড়ি। পাঁপড়িগুলো সুগন্ধী গ্রন্থিতে ভরপুর, এসব গ্রন্থিতে থাকে সুগন্ধি তেল। ফুল শেষে থোকা ধরে ফল হয়। পাকা কালো ফলগুলো পাখিরা খায়। পাখিরাই এ গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটায়। শাল-সেগুনের বনে প্রাকৃতিকভাবে কানাঙ্গাগাছ জন্মাতে পারে, কিন্তু এ দেশের কোনো শাল বা সেগুনের বনে কানাঙ্গাগাছকে কখনো দেখিনি। কয়েক বছর আগে কানাঙ্গাকে দেখেছিলাম ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে।

কানাঙ্গার আদি নিবাস ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপেও এ গাছ দেখেছি। কী কারণে জানি না, সেসব গাছের ফুলগুলোকে আমাদের দেশের কানাঙ্গা ফুলের চেয়ে অনেক বড় দেখেছি, আর সুগন্ধও বেশি। বালিনিজদের কাছে শুনেছি, তারা এ ফুল বাসর রাতে নববিবাহিত যুগলের বিছানার ওপর ছড়িয়ে দেয়। গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কাঁঠালিচাঁপা ফুলের মতো ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে। এবার ঢাকার বৃক্ষমেলায় লতানে স্বভাবের কয়েকটি কানাঙ্গাগাছ দেখেছিলাম, যেটা কানাঙ্গার ভিন্ন প্রজাতি বলে মনে হয়, সেসব ফুলের ঘ্রাণ বেশি মনে হলো। এসব গাছ যারা জাতীয় বৃক্ষমেলা থেকে কিনে নিয়ে নিজেদের বাগানে লাগিয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন সে ফুল ও গাছ সম্পর্কে। বাগানের জন্য কানাঙ্গা এক শোভাময়ী ব্যতিক্রমী ফুলের গাছ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরাও কানাঙ্গা নিয়ে গবেষণা করতে পারেন।

সোনাপাতির সোনা রং

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
সোনাপাতির সোনা রং
ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে ফুটে আছে সোনাপাতি। ছবি: লেখক

সোনাপাতি ফুলের আরেক নাম চন্দ্রপ্রভা। চাঁদের নরম হলুদ আলোর সঙ্গে মিলিয়েই হয়তো রাখা হয়েছিল এই নাম। চন্দ্রপ্রভা হিসেবেই এর বিশেষ পরিচিতি আছে। সোনাপাতি বা চন্দ্রপ্রভা দেশি নাম হলেও ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকা। দেশটির ভার্জিন আইল্যান্ডের অফিশিয়াল ফুল এটি। আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এলডার বা সোনাপাতি অথবা চন্দ্রপ্রভা। দেশটির প্রায় সবখানে মৌসুমজুড়ে থরে থরে এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। সে জন্যই ইয়েলো এলডার বা চন্দ্রপ্রভা দেশটির জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।

সোনাপাতি ঝোপালো বা চিরসবুজ ছোট বৃক্ষ। এ গাছ তিন থেকে পাঁচ মিটার লম্বা হয়। মাথা কিছুটা ছড়ানো। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tecoma stans, এটি Bignoniaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। সোনাপাতি ফুলের ইংরেজি নামের মধ্যে Yellwo bells, Yellwo trumpet, Yellwo elder ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হলুদ রঙের অসম্ভব সুন্দর এই ফুল অনেকের দৃষ্টিতে হলুদ নয় বরং এর রং কাঁচা সোনার মতো। সোনাপাতি নামকরণের এটিও একটি কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। হেমন্তে ফোটে বলে এই ফুলের আরেক নাম হৈমন্তী।

সোনাপাতির পাতা যৌগপত্র এক পক্ষল, পত্রক ভল্লাকার, কিনারা খাঁজকাটা। ডালের আগায় থোকায় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ধরে। দল ফানেলের আকার, তিন থেকে চার সেন্টিমিটার চওড়া হয়। ফল শুকনো, বিদারী, ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, বীজ ছোট ও পক্ষল। সোনাপাতি ফুল এখন আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাইরেও এখন প্রচুর পরিমাণে সোনাপাতি ফুল দেখতে পাওয়া যায়। স্কুল-কলেজ, শখের বাগান আর রোড আইল্যান্ডে লাগানোর উপযোগী হলুদ রঙের এই ফুল থোকায় থোকায় ফোটে গ্রীষ্ম থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত। ফুলের ছবিটি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনের বাগান থেকে তুলেছিলাম। শরতের এই মাঝামাঝি সময়েও গাছে ফুল ফুটতে দেখেছি। এ ছাড়া এই সময়ে ময়মনসিংহের টাউন হলের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে এবং সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে সোনাপাতিগাছে হলুদ ফুলের বন্যা বইছে। 

ডালের আগায় বড় বড় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ফোটে। দেখতে অনেকটা হলুদ ঘণ্টার মতো। গাছ দ্রুত বাড়ে। বাড়তে দিলে গাছ বেশ বড় হয় এবং কয়েক বছর বাঁচে। গাছে বেশ ডালপালা হয়, ডালপালা এলোমেলোভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুলের ভারে ডালপালা নুয়ে পড়ে। প্রথমে ডালের আগায় ফুল ফোটে, ধীরে ধীরে ডালের পাতার কোল থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ডালের উজ্জ্বল সবুজ রঙের ঝোপের মধ্যে থোকায় ধরা ফানেল বা কলকের মতো উজ্জ্বল ফুলগুলোকে খুব সুন্দর দেখায়।

বীজ ও কলম থেকে চারা তৈরি করা যায়। দুই থেকে তিন মাস বয়সী চারা বাগানে লাগানো যায়। তবে তা না করে প্রধানত ডাল কেটে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। টবে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, পার্কে, রাস্তার ধারে, সড়কদ্বীপে, স্কুল-কলেজের আঙিনায় চন্দ্রপ্রভা ফুল লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যায়। 

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

সুকণ্ঠী অ্যাবট ছাতারে

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
সুকণ্ঠী অ্যাবট ছাতারে
গাছের ডালে বসা ‘অ্যাবট ছাতারে’ পাখি। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশের একটি পাখির নাম ‘অ্যাবটের ছাতারে’। অনেকে বলেন ‘অ্যাবট ছাতারে’। এ দেশের প্রতিটি বনেই আপনি শুনতে পাবেন অত্যন্ত সুরেলা এ পাখির অন্তহীন গান, ‘টিউ-টিউ-টিউপ…’। গ্রামীণ বাগান ও ঝোপঝাড়েও আগে এর গান শোনা যেত। সারাটা সকাল বিরতিহীন চলতে থাকে অনন্য এ পাখির শ্রুতিমধুর গান। অ্যাবট ছাতারে শুধু সুকণ্ঠী নয়; অত্যন্ত অকৃপণ ও উদার এক গায়ক। সূর্যোদয়েই শুরু হয় এর গান এবং সকাল গড়িয়ে দুপুর না হওয়া পর্যন্ত গান চলতেই থাকে। লতাগুল্মের চাদরে ঢাকা ঝোপঝাড়ের অন্ধকার শাখা থেকে শাখায় এ পাখি অবিরাম লাফিয়ে চলে। পাতায় পাতায় সে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখে, কোথাও কোনো শুঁয়োপোকা লুকিয়ে আছে কি না। 

পোকা খোঁজার জরুরি কাজে যত মনোযোগই থাকুক না কেন, তার কণ্ঠের গানে কোনো ছেদ পড়ে না। সে জানে, কান নেই বলে শুঁয়োপোকারা তার কণ্ঠ শুনতে পাবে না; কিন্তু পাশের ঝোপে তার সঙ্গিনী তা শোনার জন্য কান পেতে আছে। পোকা শিকারের এই প্রাত্যহিক সফরে নেমে স্ত্রী পাখি তার পুরুষের গানের নাগালের মধ্যে থাকার চেষ্টা চালায়। তা না করলে সারা দিনের ভ্রমণ শেষে একের সঙ্গে অন্যের ব্যবধান এত বেশি হয়ে যেতে পারে যে তখন হাঁকডাক করে হারানো সাথী তালাশ করার কঠিন কাজে নামতে হবে দুজনকেই।

লতাপাতার আড়ালে পোকা শিকার করতে নেমে অনেক পাখিই একে অপরের কাছাকাছি থাকার জন্য সারাক্ষণ গান গায়। যেমন, আমাদের অতিচেনা পাখিদের মধ্যে ঝোপঝাড়ে সারা দিন টুনটুনি পাখি ‘টুন টুন’ শব্দ করে। একইভাবে সারা রাত ‘নিম নিম’ করে ডাকে নিমপ্যাঁচা। এসব পাখির মধ্যে নিয়মিত আওয়াজ দেওয়ার দায়িত্বটা পুরুষের এবং সে আওয়াজ শুনে নাগালের মধ্যে থাকার দায়টি স্ত্রীর। টুনটুনির মতো কোনো কোনো পাখির স্ত্রী নিজেও আবার পাল্টা আওয়াজ দেয় এবং দুজনে মিলে একটি ডুয়েট বা দ্বৈত সংগীত গেয়ে চলে। অ্যাবট ছাতারেও মাঝে মাঝে ডুয়েট গায়। পুরুষের ‘টিউ-টিউ-টিউপ’ শুনে সুকণ্ঠী স্ত্রী গায় ‘টিউ-টিউ-টুয়ু’। ওরা দুজনে আসলে কী বলে তা বুঝলে এই ডুয়েটের আবেদন না জানি আরও কত বেশি হতো আমাদের কাছে!

হিমালয়ের পাদদেশের পাখি বলেই নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারই অ্যাবট ছাতারে পাখির প্রধান ঘাঁটি। কলকাতার ব্যবসায়ী জর্জ এডওয়ার্ড অ্যাবটের পুত্র কর্নেল অ্যাবটের নামে এ পাখির ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেছিলেন বিখ্যাত পাখিবিদ এডওয়ার্ড ব্লাইদ। আরাকানের সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্নেল অ্যাবট তার কর্মস্থল থেকে এ ছাতারের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির জাদুঘরে পাঠিয়েছিলেন ১৮৪৫ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেলের নামে প্রিয় এ পাখিটির নামকরণ হয়েছে বলে আমরা কিঞ্চিৎ বিচলিত। এক বন্ধু বললেন, ভারতবর্ষের তৎকালীন সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের স্মৃতিতে এ পাখির নাম ‘বাহাদুর ছাতারে’ রাখলে কেমন হয়! তা মন্দ হয় না। কিন্তু কোম্পানির কাজের বাইরে শখ করে কর্নেল অ্যাবট যে এ এলাকার পাখির নমুনা সংগ্রহ করতেন এবং এ দেশের পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ নিয়ে কাজ করতে করতে ব্লাইদ যে কলকাতার জাদুঘরে জীবন পার করে দিয়েছিলেন, সে ইতিহাস হারিয়ে গেলে কি ভালো হবে!

সংসদ সমুখে সাদা পাকুড়

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ পিএম
সংসদ সমুখে সাদা পাকুড়
সাদা পাকুড়ের পাতা ও ফল। ছবি: লেখক

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পাশে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রায়ই গাছটিকে দেখি। কখনো তাকে মনে হয় বট, কখনো পাকুড়। খামারবাড়ি মোড় থেকে আড়ং মোড় পর্যন্ত যাওয়ার সময় প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে সেই গাছটি। অনেক বছর আগে গাছটি যখন ছোট ছিল, তখন তার গোড়ায় একটা শ্বেতপাথরের নামফলক ছিল। তাতে গাছটির পরিচয় লেখা ছিল ‘অচিন বৃক্ষ’। ২০২২ সালের মার্চেও সে ফলকের কিছুটা দেখেছিলাম। কুড়িগ্রামের জনৈক সংসদ সদস্যের নাম লেখা ছিল তাতে রোপণকারী হিসেবে। কালের গর্ভে গাছটির ছাল-বাকলে ঢেকে সে ফলক হারিয়ে গেছে। সেটাই তো প্রকৃতির নিয়ম, ভালো কোনো কাজই টিকে থাকে, কাজটি কে করেছিলেন সেটি বড় কথা না। প্রায় ২০ বছর ধরে গাছটিকে দেখছি, একটু একটু করে বড় হতে হতে গাছটি এখন এক সুন্দর ছাতার মতো গড়নে রূপ নিয়েছে। গোড়ায় লাল মসৃণ ইটে বাঁধানো বেদি, তাতে সে গাছের ছায়ায় বসে গল্প করা যায়। কিন্তু সে গল্পে হয়তো গাছটির কোনো কথা থাকে না। গাছটি আগতদের কাছে অচিন বৃক্ষই থেকে যায়। অবশেষে বাংলাদেশ নেচার স্টাডি সোসাইটির নিসর্গপ্রেমী কাওসার মোস্তফা ভাই গাছটির পরিচয় উদ্ধার করলেন, জানালেন ওটা সাদা পাকুড়। কয়েক দফায় গাছটির বিভিন্ন চেহারার ছবি ল্যাপটপে খুঁজতে শুরু করলাম। ফলগুলোর রং সাদাটে বলেই হয়তো এর নাম হয়েছে সাদা পাকুড়। 

সাদা পাকুড়ের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম (Ficus virens) ও গোত্র মোরেসি। বট বা পাকুড়ের মতো সাদা পাকুড়গাছ বিশাল হয় না, মাঝারি আকারের বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, তবে এ দেশে সাধারণত এত বড় সাদা পাকুড়গাছ চোখে পড়ে না। শীতকাল এলে সব পাতা ঝরে ঝাঁকড়া ডালপালা নিয়ে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু বসন্ত এলেই আবার সেসব গাছ নতুন পাতার পোশাক পরতে শুরু করে। একে কেউ কেউ বলে ‘স্ট্রেঙ্গলার ট্রি’, যার অর্থ ‘গলা টিপে ধরা গাছ’। কেননা এ গাছে ফল হলেও সে ফলের বীজ গজায় অন্য গাছের ওপর। আর যে গাছের ওপর এর চারা জন্মায়, সে গাছকে আশ্রয় করে চারা বড় হতে থাকে। অন্য গাছের ওপর জন্মালেও সাদা পাকুড়েরও তো সাধ হয় মাটি ছুঁতে। তাই সে শিকড় মাটির দিকে নামাতে থাকে। শিকড় নামানোর সময়ই তার দুষ্টুমিটা শুরু হয়। শিকড়কে এমনভাবে ছাড়তে থাকে যে সে আশ্রয়দাতা গাছকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জালের মতো পেঁচিয়ে ধরে, একবারে গলায় দড়ি দেওয়ার মতো করে। আর তাতে আশ্রয়দাতা গাছটি সেসব শিকড়ের বাঁধনে আটকা পড়ে, কয়েক বছর সেই যন্ত্রণা সহ্য করে আশ্রয়দাতা গাছটি বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শেষে একদিন মরে যায়। ততদিনে সেই পাকুড়গাছ হয়ে যায় মহাবনস্পতি। পাকুড়ের চেয়ে অশ্বত্থের এ স্বভাব দেখা যায় আরও প্রকটভাবে। তাই এসব গাছকে বলা হয় স্ট্রেঙ্গলার ট্রি। রূপগঞ্জের জিন্দা পার্কে অবশ্য দুটি তালগাছকে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে ধরা অশ্বত্থের সেই মহারূপটি রূপান্তরিত হয়েছে এক অনন্য তরু-স্থাপত্যে। 

সাদা পাকুড়ের পাতা সবুজ, উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুঁচাল, পাতা পুরু। কচি পাতার রং লালচে-গোলাপি। ফল বটের চেয়ে ছোট, আকার আধা থেকে দেড় সেন্টিমিটার। অনেকটা বড় কাবুলি বুটের দানার মতো। ডালের আগায় ডালের গা ধরে ডুমুরের মতো ফলগুলো ধরে। ফলও ডুমুরের মতো খাওয়া যায়।

সারা বিশ্বে বটজাতীয় প্রায় সাড়ে ৮০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বট, অশ্বত্থের সঙ্গে পাকুড়ও ওদের স্বগোত্রীয় বৃক্ষ। মহুয়া, সফেদা, রাবার, বট, অশ্বত্থ ও পাকুড়কে বলা হয় ক্ষীরী বৃক্ষ। কেননা, এসব গাছের ডাল ও পাতা ভাঙলে সাদা দুধের মতো ঘন আঠা বের হয়, যাকে বোটানির ভাষায় বলা হয় তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স। এ দেশে উদ্ভিদবিষয়ক বইগুলোতে পাকুড়ের বেশ কয়েকটি প্রজাতির নাম পাওয়া যায়, যেমন- ফিকাস লেকর, ফিকাস বেঞ্জামিনা, ফিকাস ভাইরেন্স, ফিকাস কোমসা ইত্যাদি। জানা নেই, কোন পাকুড়গাছকে দেখে কবি বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন: ‘চৈত্র মাসে তাদের নীচে কত যে শুকনো পাতা ঝরে পড়তো, হাওয়ায় সেগুলো ঘুরে ঘুরে পাড়াময় যেতো ছড়িয়ে। বৈশাখে তাদের নতুন রূপ, জটে বাঁধা প্রচণ্ড ঝুনো শরীরে কচিপাতা ঠিক যেন মানাতো না।’ বট আমাদের দেশের গাছ হলেও সাদা পাকুড়ের আদি নিবাস শুধু বাংলাদেশ না। আসাম, আন্দামান, বোর্নিও, কম্বোডিয়া, চীন, পূর্ব হিমালয়, জাভা, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি অনেক দেশেই সাদা পাকুড়গাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণেও আছে সাদা পাকুড়গাছ। 

পরিযায়ী পাখি খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০২ এএম
খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান
একটি বাঁশঝাড়ে খয়রা কাস্তেচরা পাখির বিচরণ। সম্প্রতি জয়পুরহাটের গৌরীপাড়া এলাকায়। ছবি: খবরের কাগজ

জয়পুরহাট শহর থেকে প্রায় সোয়া কিলোমিটার দূরে গৌরীপাড়া এলাকা। সেখানে একটি বাঁশঝাড়ে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেকটা বকের মতো। কিন্তু এরা বক নয়। এরা হলো খয়রা কাস্তেচরা পাখি। এদের ঠোঁট কাস্তের মতো বাঁকা। তাই এদের বলা হয় কাস্তেচরা।

সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিল ও হাওরে এসব পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু দেশে এই প্রথম এদের বাসার সন্ধান মিলল। বাসাগুলোতে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়েছে। এই কলোনিতে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি আছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাখিগুলো গৌরীপাড়ার একটি বাঁশঝাড়ে প্রায় সাত বছর ধরে বসবাস করছে। তারা এর নাম জানতেন না। পরে একজন পাখি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনেছেন এরা খয়রা কস্তেচরা পাখি। 

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘পাখিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামের বাঁশঝাড়ে দেখছি। গ্রামের মানুষ পাখিগুলোকে ভালোবাসে। কেউ পাখিগুলোকে উপদ্রব করে না।’ 

মানিক নামের একজন বলেন, ‘পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এরা দিনের বেলায় খাবার সংগ্রহের জন্য দূরে কোথাও উড়ে যায়। আবার সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির আমাদের খুব ভালো লাগে।’

একই এলাকার রানা নামে একজন বলেন, ‘পাখির প্রজনন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দেখভালের পাশাপাশি এদের রক্ষায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।’ 

এই পাখি কলোনির প্রথম সন্ধান পান আক্কেলপুরের বাসিন্দা বন অধিদপ্তরের পাখি বিশারদ শিবলি সাদিক সাদমান। তিনি বলেন, ‘বিরল পাখি আবিষ্কার নেশায় আমি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াই। সেই নেশা থেকে ঘুরতে ঘুরতে জয়পুরহাটের গৌরীপাড়ায় এসে খয়রা কাস্তেচরা পাখির সন্ধান পাই। এর আগেও পাখিটি দেখেছি। কিন্তু বাচ্চা তোলা এখানেই প্রথম দেখলাম। পরে ছবি তুলে আমার স্যারকে পাঠাই। তখন স্যার আমাকে জানান, এই পাখি বাংলাদেশে এই প্রথম বাসা বেঁধেছে। ডিম থেকে বাচ্চা হয়েছে। এটি অতি দুর্লভ ঘটনা। কলোনিটি সংরক্ষণের জন্য আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মুনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সাদমানের কাছ থেকে আমি খবর পেয়ে গৌরীপাড়া পাখি কলোনি দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি রয়েছে। কয়েকটি বাসা করেছে। ছানাও দেখলাম। কয়েকটি ছানা বেশ বড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই পাখি দেখা গেলেও বাসা বানানোর রেকর্ড এটিই প্রথম। বিলুপ্তপ্রায় পাখিটি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করছি।’

খয়রা কাস্তেচরা পাখির বৈজ্ঞানিক নাম প্লেগাডিস ফ্যালসিনিলাস। এদের স্থায়ী আবাস পশ্চিম ভারতে। শীত মৌসুমে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আসে। মৌসুম শেষে ফিরে যায়। পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪৮ থেকে ৬৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের ডানা ৮০ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ওজন ৪৮৫ থেকে ৯৭০ গ্রাম হয়। এদের মাথায় পালক থাকে এবং সরু ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। খাল, বিল, হ্রদ, নদী, খাড়ি ও লবণাক্ত জলাভূমিতে এরা বিচরণ করে। এরা খাল-বিল-পুকুর আর ফসলের মাঠ থেকে পোকামাকড়, শামুক, কাঁকড়া খেয়ে জীবনধারণ করে।

বান্দরবানের ঘুমধুম করাতকলে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
করাতকলে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের একটি করাতকল। খবরের কাগজ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অবৈধ করাতকল বা স-মিল। অবৈধ এসব করাতকলের দাপটে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্সও নেই বেশির ভাগ করাতকলের।

উপজেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, ২৫টি করাতকল রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। এর মধ্যে ১৪টির লাইসেন্স থাকলেও ১১টির কোনো লাইসেন্স নেই।

নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা নঈমুল ইসলাম বলেছেন, ‘বন আইন অনুযায়ী কোনো করাতকলমালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে। করাতকল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়।’ কর্তৃপক্ষকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেছেন। 

উপজেলার বিভিন্ন করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অনেক করাতকল। এসব করাতকল চত্বরে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব করাতকলে বিরামহীন চলে কাঠ কাটার কাজ।

জানা গেছে, অবৈধ করাতকলগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোনো আইন ও নীতিমালা মানার কোনো বালাই নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার লাইসেন্স করতে বলা হলেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে অবৈধ করাতকল।

সীমান্তঘেঁষা পাহাড় থেকে শুরু করে সমতল ভূমিতে লাগানো সব ধরনের গাছ কেটে সাফ করছে করাতকলের মালিক ও অসাধু ফড়িয়া কাঠ ব্যবসায়ীরা। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কমছে অক্সিজেনের ভারসাম্য। এসব কারণে দ্রুত এসব অবৈধ করাতকল বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে করাতকল স্থাপন করে কাঠের ব্যবসা করছে। 

ঘুমধুমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘করাতকলে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়ি গাছ। আমিও মনে করি অবৈধ ও লাইন্সেসবিহীন করাতকলগুলো বন্ধ করা হোক।’

এ বিষয়ে নাইক্ষংছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান ইতু বলেন, ‘মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বন, বন্যপ্রাণী ও বনভূমি সংরক্ষণ অপরিহার্য। অবৈধ করাতকলের মালিকদের দ্রুত লাইসেন্স করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স না করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’