ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

বান্দরবানের ঘুমধুম করাতকলে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
করাতকলে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের একটি করাতকল। খবরের কাগজ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অবৈধ করাতকল বা স-মিল। অবৈধ এসব করাতকলের দাপটে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্সও নেই বেশির ভাগ করাতকলের।

উপজেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, ২৫টি করাতকল রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। এর মধ্যে ১৪টির লাইসেন্স থাকলেও ১১টির কোনো লাইসেন্স নেই।

নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা নঈমুল ইসলাম বলেছেন, ‘বন আইন অনুযায়ী কোনো করাতকলমালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে। করাতকল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়।’ কর্তৃপক্ষকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেছেন। 

উপজেলার বিভিন্ন করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অনেক করাতকল। এসব করাতকল চত্বরে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব করাতকলে বিরামহীন চলে কাঠ কাটার কাজ।

জানা গেছে, অবৈধ করাতকলগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোনো আইন ও নীতিমালা মানার কোনো বালাই নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার লাইসেন্স করতে বলা হলেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে অবৈধ করাতকল।

সীমান্তঘেঁষা পাহাড় থেকে শুরু করে সমতল ভূমিতে লাগানো সব ধরনের গাছ কেটে সাফ করছে করাতকলের মালিক ও অসাধু ফড়িয়া কাঠ ব্যবসায়ীরা। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কমছে অক্সিজেনের ভারসাম্য। এসব কারণে দ্রুত এসব অবৈধ করাতকল বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে করাতকল স্থাপন করে কাঠের ব্যবসা করছে। 

ঘুমধুমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘করাতকলে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়ি গাছ। আমিও মনে করি অবৈধ ও লাইন্সেসবিহীন করাতকলগুলো বন্ধ করা হোক।’

এ বিষয়ে নাইক্ষংছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান ইতু বলেন, ‘মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বন, বন্যপ্রাণী ও বনভূমি সংরক্ষণ অপরিহার্য। অবৈধ করাতকলের মালিকদের দ্রুত লাইসেন্স করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স না করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিযায়ী পাখি খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০২ এএম
খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান
একটি বাঁশঝাড়ে খয়রা কাস্তেচরা পাখির বিচরণ। সম্প্রতি জয়পুরহাটের গৌরীপাড়া এলাকায়। ছবি: খবরের কাগজ

জয়পুরহাট শহর থেকে প্রায় সোয়া কিলোমিটার দূরে গৌরীপাড়া এলাকা। সেখানে একটি বাঁশঝাড়ে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেকটা বকের মতো। কিন্তু এরা বক নয়। এরা হলো খয়রা কাস্তেচরা পাখি। এদের ঠোঁট কাস্তের মতো বাঁকা। তাই এদের বলা হয় কাস্তেচরা।

সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিল ও হাওরে এসব পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু দেশে এই প্রথম এদের বাসার সন্ধান মিলল। বাসাগুলোতে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়েছে। এই কলোনিতে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি আছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাখিগুলো গৌরীপাড়ার একটি বাঁশঝাড়ে প্রায় সাত বছর ধরে বসবাস করছে। তারা এর নাম জানতেন না। পরে একজন পাখি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনেছেন এরা খয়রা কস্তেচরা পাখি। 

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘পাখিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামের বাঁশঝাড়ে দেখছি। গ্রামের মানুষ পাখিগুলোকে ভালোবাসে। কেউ পাখিগুলোকে উপদ্রব করে না।’ 

মানিক নামের একজন বলেন, ‘পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এরা দিনের বেলায় খাবার সংগ্রহের জন্য দূরে কোথাও উড়ে যায়। আবার সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির আমাদের খুব ভালো লাগে।’

একই এলাকার রানা নামে একজন বলেন, ‘পাখির প্রজনন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দেখভালের পাশাপাশি এদের রক্ষায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।’ 

এই পাখি কলোনির প্রথম সন্ধান পান আক্কেলপুরের বাসিন্দা বন অধিদপ্তরের পাখি বিশারদ শিবলি সাদিক সাদমান। তিনি বলেন, ‘বিরল পাখি আবিষ্কার নেশায় আমি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াই। সেই নেশা থেকে ঘুরতে ঘুরতে জয়পুরহাটের গৌরীপাড়ায় এসে খয়রা কাস্তেচরা পাখির সন্ধান পাই। এর আগেও পাখিটি দেখেছি। কিন্তু বাচ্চা তোলা এখানেই প্রথম দেখলাম। পরে ছবি তুলে আমার স্যারকে পাঠাই। তখন স্যার আমাকে জানান, এই পাখি বাংলাদেশে এই প্রথম বাসা বেঁধেছে। ডিম থেকে বাচ্চা হয়েছে। এটি অতি দুর্লভ ঘটনা। কলোনিটি সংরক্ষণের জন্য আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মুনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সাদমানের কাছ থেকে আমি খবর পেয়ে গৌরীপাড়া পাখি কলোনি দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি রয়েছে। কয়েকটি বাসা করেছে। ছানাও দেখলাম। কয়েকটি ছানা বেশ বড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই পাখি দেখা গেলেও বাসা বানানোর রেকর্ড এটিই প্রথম। বিলুপ্তপ্রায় পাখিটি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করছি।’

খয়রা কাস্তেচরা পাখির বৈজ্ঞানিক নাম প্লেগাডিস ফ্যালসিনিলাস। এদের স্থায়ী আবাস পশ্চিম ভারতে। শীত মৌসুমে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আসে। মৌসুম শেষে ফিরে যায়। পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪৮ থেকে ৬৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের ডানা ৮০ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ওজন ৪৮৫ থেকে ৯৭০ গ্রাম হয়। এদের মাথায় পালক থাকে এবং সরু ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। খাল, বিল, হ্রদ, নদী, খাড়ি ও লবণাক্ত জলাভূমিতে এরা বিচরণ করে। এরা খাল-বিল-পুকুর আর ফসলের মাঠ থেকে পোকামাকড়, শামুক, কাঁকড়া খেয়ে জীবনধারণ করে।

টাঙ্গাইলে নতুন পর্যটন স্পট মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ পিএম
মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা
টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় শাপলা বিল। খবরের কাগজ

টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিলের শত শত একর জমিতে ফুটে থাকা শাপলা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। লাল শাপলার ফুল ফুটে তাই খ্যাতি পাচ্ছে লাল শাপলার বিল নামে। রোদের তাপে নুইয়ে পড়ে বলে ভোরের সূর্য উঠার আগেই লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন নানা প্রান্তের মানুষ। তবে বিলে নৌকা না থাকায় দর্শনার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ফুটে থাকা কাঁশফুল জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষা শেষে শরতের আগমন। তবুও বর্ষার স্নিগ্ধতার রেশ প্রকৃতিতে এখনো রয়েছে। খালে-বিলের থৈ থৈ জলে ফুটে আছে শাপলা। শরতের সকালে হালকা কুয়াশায় সূর্যের কিরণ পড়ে শাপলার সবুজ পাতা আর লাল পাপড়িতে জমে থাকা শিশির মুক্তার মতো চিকমিক করছে। এমন অপূর্ব নান্দনিক ক্ষণের সাক্ষী হতে ছুটে এসেছেন টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজের লামিয়া ফারজানা ও নাহিদা ইসলাম তন্নি।

লামিয়া ফারজানা বলেন, ‘টাঙ্গাইল শহর থেকে ভোর সকালে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে শাপলা বিলে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের টাঙ্গাইলেও এত সুন্দর শাপলা বিল আছে, জানতাম না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গার শাপলা ঝিলের ছবি ও ভিডিও দেখি। আমাদের টাঙ্গাইলে যে এত সুন্দর শাপলা বিল আছে, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’

নাহিদা ইসলাম তন্নী বলেন, ‘বান্ধবীদের এখানে আসতে দেখেছি। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। সকালে ভাইকে নিয়ে ঘুরতে চলে এসেছি। এসে ছবি উঠলাম। খুবই ভালো লাগল। চারিদিকে শুধু লাল শাপলা। এ এক অপরূপ সৌন্দর্য। শাপলা ফুলের মায়ায় মন আটকে গেছে।’

তবে শুধু লাল শাপলাই নয়, এরই মাঝে নান্দনিক হয়ে ধরা দিচ্ছে সাদা শাপলা। সবুজ পাতার ফাঁকে মাথা উঁচু করে ভেসে বেড়াচ্ছে ব্যাঙ, বাতাসে চঞ্চল ফড়িংয়ের উড়াউড়ি। প্রকৃতির এসব সহচরী দর্শনার্থীদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। তাই সদ্য খ্যাতি পাওয়া লাল শাপলার বিলে দিন দিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়ছে।

তবে কেবল সৌন্দর্য উপভোগই নয়, এই লাল শাপলা হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষের জীবিকার উৎসও। এখান থেকে প্রতিদিন আহরণ করা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার শালুক। শাপলা আহরণকারী মাজেদা বেগম বলেন, ‘পানি এলে এই শাপলা তুলে বিক্রি করি। কয়েক দিন ভালোই সংসার চালাই। পানি যে কয়েক দিন আছে, ভালো টাকা কামাই করতে পারব।’

আগামী মৌসুমে নৌকাসহ পর্যটন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা গেলে এই শাপলা বিলকে কেন্দ্র করে তৈরি হতে পারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

কালো-পা কিডিওয়েকের প্রেম!

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
কালো-পা কিডিওয়েকের প্রেম!
সাগরে কালো-পা কিডিওয়েক। ছবি: লেখক

মেরু সাগরের নীল জল। সাদা ও হালকা ধূসর পালকের একটি পাখি তার ঠোঁট জলে ডুবিয়ে, মাথা নত করে ডেকে ডেকে আরেকটি পাখির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। এই আবেদন নিরন্তর। তারপর দেখলাম ওই ঝাঁকের আরও কিছু পাখি একই ধরনের আচরণ করছে। আর কিছু পাখি চুপচাপ তা দেখছে। একপর্যায়ে একটি পাখি অন্য একটি পাখির আবেদনে সাড়া দিল। এতে দুটি পাখির মেলবন্ধন হয়ে গেল। এরপর ওদের প্রেম পর্বের কিছু অংশ পর্যবেক্ষণের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল উত্তর নরওয়ের নানান বসতিতে ১২ দিনের এক সমুদ্র অভিযাত্রায়। জোড়া বাঁধার পর তাদের অফুরন্ত ডাকাডাকি ও ভালোবাসার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। খুব কাছে গিয়েছি। ওরা উড়ে যায়নি। 

মূলত এই পাখি সাগরের কাছে পর্বতের খাঁজে বাসা বানায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জনবসতির কাছাকাছি বাসা বাঁধার প্রবণতা বেড়েছে। নরওয়ের সুদূর উত্তরের শহরগুলো এবং ট্রমসো শহরের মানুষের কাঠামোতে এ পাখির বাসার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত প্রজনন ব্যর্থতা এবং প্রাকৃতিক শিকারিদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের ছানাদের বড় করার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ উপহার দেয় উত্তর নরওয়ের উপকূলীয় শহরগুলো। 

প্রতিবছরই বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে। দেশের পরিযায়ী পাখির তালিকায় ২০১৬ সালে যোগ হয়েছিল আর্কটিক মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার পাখি কালো-পা কিডিওয়েক। প্রসঙ্গত, কিছু পরিযায়ী পাখি আমাদের দেশে খুবই অনিয়মিত। এমন হতে পারে, এক শ বছরে মাত্র একবার দেখা যেতে পারে কোনো প্রজাতির পাখির। পথভুলে কিংবা সাগর-মহাসাগরে ঝড় হলে সাগরচারী পাখিরা নিরাপদ আবাসের খোঁজে চলে আসে। ঝোড়ো বাতাসের গতিও তাদের দিক পরিবর্তন করে অন্যত্র উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ঠাণ্ডার প্রকোপে অনেক পাখি উষ্ণ এলাকায় পাড়ি জমায়।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে কালো-পা কিডিওয়েক ভোলার নদীর ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় প্রথম দেখা যায়। ২০১৬ সালের পর পাখিটি আর দেখা গেছে কি না আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি উত্তর নরওয়ের আর্কটিক মহাসাগর এলাকায় গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে কালো-পা কিডিওয়েকের দেখা পেয়েছি। মূলত উত্তর নরওয়ের উপকূলবর্তী এলাকার পোতাশ্রয়, নৌবন্দর এবং বন্দর এলাকার জনবসতির কাছাকাছি এদের দেখেছি। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি তখন জোড়া বেঁধে বাসা বানানোর জন্য নৌবন্দরের কাছে এবং মানববসতির কাছে জড়ো হয়েছে। খুব ডাকাডাকি করছে। সাগরে গিয়ে পুরুষ পাখিটি মাছ ধরে নিয়ে এসে মেয়ে পাখিকে দেয়। 

এ পাখির ইংরেজি নাম The black-legged kittiwake (Rissa tridactyla)। এরা গাঙচিল পরিবারের পাখি। এরা বেশির ভাগ সময় সাগরে বসবাস করে এবং সামুদ্রিক এলাকার খোলা পর্বতে বাসা বানায়। এ পাখি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কোরিয়া, জাপান, নরওয়ে, কানাডা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায়। তবে মাঝে মাঝে এরা অন্যান্য গাঙচিলের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের উপকূলে চলে আসে। ২০০৫ ও ২০১২ সালে এটি ভারতের কেরালা ও মহারাষ্ট্রের সৈকত এলাকায় এবং আসামের মাজুলি দ্বীপে দেখা গিয়েছিল। 

এ পাখি সাধারণত নিজেদের ঝাঁকে থাকে। তবে কখনো অন্য সামুদ্রিক পাখির সঙ্গে যোগ দেয়। খাবার তালিকায় আছে মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, পাখির ডিম, সামুদ্রিক শৈবাল ইত্যাদি। প্রজননকালে এরা উপনিবেশ তৈরি করে বসবাস করে এবং সমুদ্র উপকূলের পর্বতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। একটি উপনিবেশে এক লাখ কিডিওয়েক পাখি থাকতে পারে। পাখির পালক ও সামুদ্রিক আগাছা দিয়ে উভয় পাখি মিলেমিশে বাসা বানায়। মেয়ে পাখি এক-তিনটি ডিম পাড়ে। পালা করে ডিমে তা দেয়। ২৪-২৮ দিনে ডিম ফেটে ছানা বের হয়ে আসে। ছানা উড়তে শিখে বাসা ছাড়ে প্রায় ৩৪-৫৮ দিনে। প্রজননের পর এরা সাগরে ফিরে যায়। নবাগতরা প্রায় তিন-পাঁচ বছর একটানা সমুদ্রে কাটায়। তারপর ডিম পাড়তে আগের জায়গায় ফিরে আসে। এরা সাধারণত সমুদ্রের যে অংশে ঢেউ ও পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে সেদিকে খাবার খোঁজে। একটি পাখি প্রায় ১৩ বছর বাঁচে। শিকার, ডিম সংগ্রহ ও সমুদ্র তেলদূষণের কারণে এ পাখির সংখ্যা কমে যেতে শুরু করেছে। সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য কিডিওয়েক একটি নির্দেশক পাখি হিসেবে বিশ্বে ও পরিবেশবিদদের কাছে বিবেচিত।

প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যরোস্পেস সেন্টার

তিন রকমের রাবার বট

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ এএম
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ এএম
তিন রকমের রাবার বট
ছবি: লেখক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনের পাশে থাকা বিশাল রাবার বটগাছকে দেখার আগে ভাবতাম রমনা উদ্যান ও জগন্নাথ হলের মাঠের কোণে থাকা রাবার বটগাছ দুটিই বোধ হয় ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় রাবার বটগাছ। ডাকসু ভবনের পাশের রাবার বটগাছটি একটি বটগাছের মতোই যেন মহীরুহ, অসংখ্য ঝুড়ি নামিয়ে ডালপালা ঝুলিয়ে জায়গাটাকে ছেয়ে ফেলেছে। গাছটাকে দেখে বলতে ইচ্ছে করে: ‘লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা/ ঘন পাতার গহন ঘটা/ হেথায় হোথায় রবির ছটা/ দশদিকেতে ছড়িয়ে শাখা/ কঠিন বাহু আঁকাবাঁকা/ সে যেন এই রাবার বট।’ গাছটি যেন শহুরে পাখিদের এক মস্ত বাড়ি, সন্ধ্যাবেলায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে কানে ঝালাপালা লেগে যায়। 

নামে গাছটা রাবার বট হলেও এ গাছ থেকে কখনো রাবার উৎপাদন করা হয় না। রাবার গাছ অরণ্যে লাগানো হয় তার সাদা দুধের মতো কষ সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনের জন্য। আর রাবার বটের ছোট গাছ লাগানো হয় টবে বা বাগানে বাহারি গাছ হিসেবে। পরে সেই ছোট গাছ ধীরে ধীরে বটগাছের মতো বিশাল গাছে রূপ নেয়। তবে বটগাছের মতো এর ডালপালা চারদিকে অত ছড়ায় না, অনেকটা ঊর্ধ্বমুখীভাবে ওঠে ও নবীন ডালপালা নিচের দিকে ঝোলে। বটের পাতা ডিম্বাকার থেকে আয়ত ডিম্বাকার ও অগ্রভাগ ভোঁতা, রাবার বটের পাতা ডিম্বাকার বা আয়তাকার হলেও অগ্রভাগ সূক্ষ্ম বা সুচালো। বট ও রাবার বট উভয়ের পাতাই পুরু। রাবার বটের পাতা চকচকে ও মসৃণ, শক্ত। বটের পাতা শক্ত হলেও রাবার পাতার মতো শক্ত না। পাতার রংও বটের চেয়ে ভিন্ন। তিন জাতের রাবার বট ঢাকা শহরে দেখেছি। রমনায় আছে দুই রকমের। একটির পাতা তুলনামূলকভাবে ছোট ও সবুজ। আর এক জাতের রাবার বটের পাতা লালচে সবুজ ও তুলনামূলকভাবে বড়। এই একই জাতের রাবার বট আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গুলশান ১ নম্বর থেকে ২ নম্বরে যেতে ফুটপাতের ধারে আইএফআইসি ব্যাংক গুলশান শাখার সামনে এ জাতের একটি বিশাল প্রাচীন রাবার বট গাছ রয়েছে। সচরাচর এ জাতের গাছই ঢাকা শহরে বেশি দেখা যায়। আর এক জাতের রাবার বট দেখেছি ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনে জয় হাউসের পাশে ও মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে জলাশয়ের পাড়ে তমাল গাছগুলোর কাছে। সে গাছ দুটির পাতা সবুজের মধ্যে হলুদ রঙে চিত্রিত। এ জন্য এ জাতের রাবার বটকে বলে ভেরিগেটেড রাবার বট বা বিচিত্রা রাবার বট।  

ডিকশনারি অব প্ল্যান্ট নেমস অব বাংলাদেশ বইয়ে রাবার বট গাছের আরও কিছু বাংলা নাম পেলাম, সেগুলো হলো বড়-বট, আতাবর, আস, আত্তাহ বর ও ভারতীয়-রাবার। ভারতীয়-রাবার নামকরণ করা হয়েছে এর ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান রাবার ট্রি থেকে। ভারতবর্ষ, মায়ানমার, জাভা এ গাছের আদিনিবাস। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ফিকাস ইলাস্টিকা (Ficus elastica) ও গোত্র মোরেসী (Moraceae)। 

রাবার বট মাঝারি থেকে বৃহৎ চিরসবুজ বৃক্ষ, গাছ ৩০ থেকে ৪০ মিটার লম্বা হয়। গুড়ির পরিধি ২ মিটার পর্যন্ত বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। গুঁড়ি ও কচি বিটপ মসৃণ, চূড়া অত্যন্ত ঘন, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো ও ঝুলানো, সরু বায়বীয় মূল জন্মে শাখা থেকে।  এগুলো মাটিতে প্রোথিত হয়ে বড় ডালপালার ভার বহন করে। পাতা সরল, একান্তর, বোঁটা খাটো। পাতার উপরের পিঠ চকচকে, কিনারা মসৃণ, অগ্রভাগ সুচালো। পাতার মধ্যশিরা থেকে দুপাশে থাকা পার্শ্বশিরাগুলো প্রায় সমান্তরাল।  পাতা ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কচি অবস্থায় মোড়ানো পাতাকে সুচালো একটা খাড়া কাঠির মতো মনে হয়। কচি অবস্থায় গোলাপি বা গোলাপি-বাদামি। পাতা ভাঙলে সাদা দুধের মতো কষ ঝরে। বয়স্ক পাতা হলদে হয়ে ঝরে পড়ে। অন্তপুষ্পী, পুরুষ ফুল বোঁটাযুক্ত, স্ত্রী ফুল বোঁটহীন। ফিগ ওয়াস্প নামের এক ধরনের বোলতা ফলের ভেতরে থাকা ফুলগুলোর পরাগায়ণ ঘটায়। ফল ডুমুরের মতো, তবে আকারে ডুমুরের চেয়ে অনেক ছোট ও লম্বাটে ডিম্বাকার, নিরেট ভরাট, ফলের রং হলদে-সবুজ, ফলের শীর্ষে একটি ছোট বিন্দুর মতো লাল ফোঁটা থাকে।  মার্চ থেকে এপ্রিলে ফুল-ফল ধরে। কিন্তু রমনায় একটি সবুজ পাতার রাবার বট গাছে সেপ্টেম্বরে ফল ধরতে দেখেছি।
রাবার বট গাছ বিভিন্ন বাগান ও উদ্যানে এ দেশে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবেই লাগানো হয়, কাঠের তেমন কোনো ব্যবহার নেই। এ গাছের সাদা কষ থেকে নিম্নমানের রাবার তৈরি করা যায়। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় এর কচি পাতার ডগা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বীজ ও দাবা কলমের সাহায্যে চারা তৈরি করা যায়। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ গাছ। আপাতত শংকার কোনো কারণ নেই। গাছ জলাবদ্ধতা সইতে পারে না।

কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

শরীর দিয়েই সব দেখে এই রহস্যময় মাছ

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ এএম
শরীর দিয়েই সব দেখে এই রহস্যময় মাছ
হগফিস বা Lachnolaimus maximus

হগফিস বা Lachnolaimus maximus ল্যাচনোলিয়ামাস ম্যাক্সিমাস প্রজাতির মাছ তার ত্বক দিয়েই দেখতে পারে। অর্থাৎ এই মাছের ত্বকই চোখের কাজ করে! এছাড়াও এক  মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, এই মাছ তার আশেপাশের পরিবেশ দেখা ছাড়াও নিজের শরীরকে দেখতেও তাদের ত্বক ব্যবহার করে থাকে। এমনকী হগফিশ তার আশেপাশের পরিবেশে বিপজ্জনক কিছু দেখতে পেলেই নিজের শরীরের রঙ পরিবর্তন করে পরিবেশের সাথে মিশে গিয়ে নিজেকে অদৃশ্য করে দিতে পারে। 
 
লম্বা, হগের মতো নাক থাকার কারণে তাদের হগফিশ বলা হয়। হগফিশরা তাদের সরু মুখ বালির মধ্যে ঢুকিয়ে ঘাপটি মেরে ডুবে থাকা , চিংড়ি,মলাস্কা এবং ক্রাস্টেসিয়ান খুঁজে পেতে ব্যবহার করে। সাধারণত এই মাছ  দেখতে সাদা এবং লাল রঙের হয়. তবে বেগুনি বা মেরুনও হতে পারে। কিন্তু পুরুষ মাছগুলো নারী মাছগুলোর তুলনায় উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে।

এরা wrasse পরিবারের সদস্য এবং প্রকৃতপক্ষে স্ন্যাপার বা কোরাল না হলেও দেখতে স্ন্যাপারের মতো বলেই তাদের এই পরিবারের সদস্য হিসেবেই ধরা হয়। হগফিশ মোটামুটি বিরল মাছ। হরহামেশাই তাকে সাগরে দেখতে পাওয়ায়া যায় না। বিশেষ করে বড় হগফিশ খুঁজে পাওয়া বিরল ঘটনা। যেগুলো মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায় সেগুল দশ পাউন্ড ওজনের হয়ে থাকে।

হগফিশ প্রাথমিকভাবে ফ্লোরিডা এবং বারমুডায় পাওয়া যায় তবে দক্ষিণ ক্যারোলিনা পর্যন্ত উত্তরে এবং মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত পশ্চিমেও এরা ঘুরে বেড়ায়।  সাধারণত সাগরের ১০-১০০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় এবং প্রবাল প্রাচীরের উপর এদের দেখতে পাওয়া যায়। এই মাছ পাথুরে এবং প্রবাল প্রাচীরের নীচের অংশ বা প্যাচ রিফের মতো শক্ত বালি পছন্দ করে । তাই হগফিশ প্রাচীরের কোণা ঘেষে ছোট দল বা ঝাঁক বেধে টহল দেয়।

হগফিশ খাওয়াটা মোটেই নিরাপদ নয়। এই মাছ খেলে মানুষ সিএফপিতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে । সিএফপি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সীফুড-টক্সিন রোগগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও এই তালিকায় গ্রুপার, অ্যাম্বারজ্যাক, স্ন্যাপার, টুনা, কিংফিশ, ট্রেভলি, সী খাদ, ম্যাকেরেল, হগফিশ এবং মাহি-মাহিও অন্তর্ভুক্ত আছে। 

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন