ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

পরিযায়ী পাখি খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০২ এএম
খয়রা কাস্তেচরার বাসার সন্ধান
একটি বাঁশঝাড়ে খয়রা কাস্তেচরা পাখির বিচরণ। সম্প্রতি জয়পুরহাটের গৌরীপাড়া এলাকায়। ছবি: খবরের কাগজ

জয়পুরহাট শহর থেকে প্রায় সোয়া কিলোমিটার দূরে গৌরীপাড়া এলাকা। সেখানে একটি বাঁশঝাড়ে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেকটা বকের মতো। কিন্তু এরা বক নয়। এরা হলো খয়রা কাস্তেচরা পাখি। এদের ঠোঁট কাস্তের মতো বাঁকা। তাই এদের বলা হয় কাস্তেচরা।

সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিল ও হাওরে এসব পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু দেশে এই প্রথম এদের বাসার সন্ধান মিলল। বাসাগুলোতে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়েছে। এই কলোনিতে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি আছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাখিগুলো গৌরীপাড়ার একটি বাঁশঝাড়ে প্রায় সাত বছর ধরে বসবাস করছে। তারা এর নাম জানতেন না। পরে একজন পাখি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনেছেন এরা খয়রা কস্তেচরা পাখি। 

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘পাখিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামের বাঁশঝাড়ে দেখছি। গ্রামের মানুষ পাখিগুলোকে ভালোবাসে। কেউ পাখিগুলোকে উপদ্রব করে না।’ 

মানিক নামের একজন বলেন, ‘পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এরা দিনের বেলায় খাবার সংগ্রহের জন্য দূরে কোথাও উড়ে যায়। আবার সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির আমাদের খুব ভালো লাগে।’

একই এলাকার রানা নামে একজন বলেন, ‘পাখির প্রজনন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দেখভালের পাশাপাশি এদের রক্ষায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।’ 

এই পাখি কলোনির প্রথম সন্ধান পান আক্কেলপুরের বাসিন্দা বন অধিদপ্তরের পাখি বিশারদ শিবলি সাদিক সাদমান। তিনি বলেন, ‘বিরল পাখি আবিষ্কার নেশায় আমি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াই। সেই নেশা থেকে ঘুরতে ঘুরতে জয়পুরহাটের গৌরীপাড়ায় এসে খয়রা কাস্তেচরা পাখির সন্ধান পাই। এর আগেও পাখিটি দেখেছি। কিন্তু বাচ্চা তোলা এখানেই প্রথম দেখলাম। পরে ছবি তুলে আমার স্যারকে পাঠাই। তখন স্যার আমাকে জানান, এই পাখি বাংলাদেশে এই প্রথম বাসা বেঁধেছে। ডিম থেকে বাচ্চা হয়েছে। এটি অতি দুর্লভ ঘটনা। কলোনিটি সংরক্ষণের জন্য আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মুনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সাদমানের কাছ থেকে আমি খবর পেয়ে গৌরীপাড়া পাখি কলোনি দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ৫০টির মতো খয়রা কাস্তেচরা পাখি রয়েছে। কয়েকটি বাসা করেছে। ছানাও দেখলাম। কয়েকটি ছানা বেশ বড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই পাখি দেখা গেলেও বাসা বানানোর রেকর্ড এটিই প্রথম। বিলুপ্তপ্রায় পাখিটি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করছি।’

খয়রা কাস্তেচরা পাখির বৈজ্ঞানিক নাম প্লেগাডিস ফ্যালসিনিলাস। এদের স্থায়ী আবাস পশ্চিম ভারতে। শীত মৌসুমে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আসে। মৌসুম শেষে ফিরে যায়। পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪৮ থেকে ৬৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের ডানা ৮০ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ওজন ৪৮৫ থেকে ৯৭০ গ্রাম হয়। এদের মাথায় পালক থাকে এবং সরু ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। খাল, বিল, হ্রদ, নদী, খাড়ি ও লবণাক্ত জলাভূমিতে এরা বিচরণ করে। এরা খাল-বিল-পুকুর আর ফসলের মাঠ থেকে পোকামাকড়, শামুক, কাঁকড়া খেয়ে জীবনধারণ করে।

বাংলাদেশের একমাত্র ছাতিঘুরুনি

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
বাংলাদেশের একমাত্র ছাতিঘুরুনি
ছাতিঘুরুনি। ছবি: লেখক

পাখির নাম ছাতিঘুরুনি! এ নাম শুনে শহুরে মানুষ অবাক হলেও গাঁয়ের লোকের কাছে নামটি বেশ পরিচিত এবং পাখিটিও চেনা। গ্রামের বাঁশঝাড়ে ঢুকলে মশা, জাবপোকা, হাতিপোকা, অশ্রুচোষা ইত্যাদি কীটপতঙ্গ যদি আপনাকে ঘিরে ওড়াউড়ি করতে থাকে তো দুদণ্ড স্থির থাকুন। দেখবেন, পতঙ্গের টানে ছাতিঘুরুনি পাখি এসে আপনার মাথার ওপরে কঞ্চিতে বসেছে। যেসব উড়ুক্কু পোকামাকড় উষ্ণ রক্তের প্রাণির পিছু নেয়, তা শিকার করাই এ পাখির প্রতিদিনের কাজ। তবে কাছে এসে বসলেও পাখিটিকে ঠাহর করা অনভিজ্ঞ দর্শকের জন্য কঠিন এক কাজ। চোখের সামনে এসেও অদৃশ্য থাকার সব ব্যবস্থা রয়েছে এ পাখির। কিন্তু দেখতে না পেলেও পাখিটির তীক্ষ্ণকণ্ঠ ‘চিক-চিক-চি-চি-হুইচ’ গানটি আপনি নিশ্চয়ই শুনতে পাবেন। 

বন, বাগান ও ঝোপঝাড়ের অন্ধকারে মিশে থাকলে পতঙ্গ শিকারে সুবিধা হয় বলে ছাতিঘুরুনির গায়ের প্রায় সব পালকই কালো। অন্ধকার বনকোণে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকামাকড় খুঁজে পাওয়ার জন্য এর কালো, বিস্ফারিত ও বিশাল একজোড়া চোখ আছে। মিশকালো এই পাখির দর্শনীয় সাজসজ্জার মধ্যে আছে শুধু সরু একজোড়া সাদা ভ্রু ও ধবল একটি গলাবন্দ। এই গলাবন্দের জন্যই পাখিটির পোশাকি নাম ‘ধলাগলা ছাতিঘুরুনি’ এবং ইংরেজি নাম ‘হোয়াইট-থ্রোটেড ফ্যানটেইল’। ছাতিঘুরুনি পাখির দেহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো এর লেজ- ৭ ইঞ্চি লম্বা দেহের ৪ ইঞ্চিই লেজ। লম্বা-চওড়া ১২টি পালকে গড়া এই লেজ সে বারবার মেলে ধরে আর গুটিয়ে নেয় জাপানি পাখার মতো। এক মুহূর্ত কোথাও স্থির থাকে না। অতি চঞ্চল এই পাখি। এক দণ্ড দাঁড়ালেও সে দেহটিকে অনবরত ডানে-বাঁয়ে ঘোরাতে থাকে। এ জন্যই ছাতিঘুরুনির অহমীয়া নাম ‘নাচনি চড়াই’। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার এবং বাংলাদেশ, মায়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এ পাখির বসবাস সীমিত। 

‘ছাতিঘুরুনি’ বা ‘ফ্যানটেইল’ কিন্তু একটিমাত্র পাখির নাম নয়, ৬৬ প্রজাতির একটি বৃহৎ পরিবারের নাম। এ পরিবারের পাখিরা ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে পুবে চীন ও দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড হয়ে ভানুয়াটুর মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে বসবাস করে। কিন্তু এই একটি অঞ্চল ছাড়া বিশ্বের অপর পাঁচটি মহাদেশের কোথাও কোনো প্রজাতির ছাতিঘুরুনি পাখির চিহ্নমাত্র নেই। দুঃখের কথা, আমাদের দেশেও ‘ধলাগলা ছাতিঘুরুনি’ নামে এই একটিমাত্র প্রজাতি ছাড়া আর কোনো ছাতিঘুরুনি নেই। দক্ষিণ ভারতে আবার ‘ধলাগলা ছাতিঘুরুনি’ নেই, আছে অপর একটি প্রজাতি, যার নাম ‘ধলাবুটি ছাতিঘুরুনি’। এ পরিবারের যে সদস্য ম্যানগ্রোভ বা নোনাবনে বাস করে তার নাম ‘নোনাবন-ছাতিঘুরুনি’। এ ক্ষেত্রে আবার দুঃখ করে বলতে হচ্ছে যে, এই প্রত্যাশিত প্রজাতিটিও সুন্দরবনে অনুপস্থিত। উত্তর অস্ট্রেলিয়ার নোনাবনে গিয়ে সম্প্রতি আমরা এই প্রজাতির দেখা পেয়েছি। তবে বাংলাদেশে একটিমাত্র প্রজাতির বসবাস হলেও এখনো দেশের সর্বত্র এ পাখির দেখা পাবেন। এককালে গ্রামের খোলা শৌচাগারগুলোই ছিল ছাতিঘুরুনির জন্য অন্তহীন আহার্যের ভাণ্ডার। গ্রামাঞ্চলে স্যানিটারি শৌচাগার জনপ্রিয় হওয়ায় আহার্যের সেই সাপ্লাই-চেইন এখন ভেঙে পড়েছে। ফলে এ পাখির সংখ্যা কিছুটা কমেছে বটে কিন্তু শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নয়। এ দেশে যত দিন মশা, জাবপোকা ইত্যাদি খুদে পতঙ্গের বসতি টিকে আছে ছাতিঘুরুনি পাখিরা ততদিন অভুক্ত থাকবে না।

অপরূপ বুনোফুল রেড ক্লোভার

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
অপরূপ বুনোফুল রেড ক্লোভার
আমেরিকার ওয়াটকিনস গ্লেন স্টেট পার্কে ফোটা রেড ক্লোভার বুনো ফুল। ছবি: লেখক

আমেরিকা এসেছি বেশ কিছুদিন। প্রথম ৭ দিনই আকাশ ঢেকে ছিল ছাইরঙা মেঘে। থেকে থেকে সেসব মেঘ থেকে পুষ্পবৃষ্টির ঝরেছে। পহেলা অক্টোবরে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলল, আগামী দুই দিন বৃষ্টি হবে না। সে পূর্বাভাসকে শিরোধার্য করে তিন তারিখে বেরিয়ে পড়লাম পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গ শহর থেকে আপার নিউইয়র্কের ওয়াটকিনস গ্লেনের উদ্দেশে। কিন্তু বেরোনোর পর এবার আর ঝিরঝিরে না, নামল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। তবু তাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চললাম ওয়াটকিনস গ্লেন স্টেট পার্কের পথে। মনে মনে বৃষ্টিকে যেন আহ্বানই করলাম। আশা, বৃষ্টির জলে হয়তো ঝরনার বেগ বাড়বে। কেননা, যেখানে যাচ্ছি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় পার্ক, যেখানে রয়েছে একটি দীর্ঘ গিরিখাত, ১২টি ট্রেইল আর ১৯টি ঝরনা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬ হাজার পার্কের ভেতর জনপ্রিয়তায় এ পার্কের র‌্যাঙ্কিং প্রথম ৫টির মধ্যে। অতএব, দূরের দেশে এসে এমন একটি পার্কে বৃষ্টি, ঝরণার উৎসবে মাতব না তো আর কোথায় মাতব? একেই বলে বৃষ্টিবিলাস।

যাওয়ার পথেই চোখে পড়েছে অসংখ্য পার্কের সাইনবোর্ড আর পাহাড়ি দৃশ্য। আলো, মেঘ, ছায়া প্রকৃতিকে যে ক্ষণে ক্ষণে কী রকম বদলে দিতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। পাহাড়ি পথ, বেশ উঁচু উঁচু পাহাড়, কিন্তু সেসব পাহাড়ে গাড়ি ছুটে চলছে বেশ দ্রুতগতিতে। তাই জানালার কাচ দিয়ে কেবলই দেখে যাচ্ছি দ্রুতবেগে সরে যাওয়া প্রকৃতির নানা ইজেল। পাহাড়ের উপত্যকাজুড়ে ঘন বন, ছোট বড় নানা রকমের বনবৃক্ষ। শরৎকাল হওয়ায় সেসব বৃক্ষের পাতার সবুজ রঙ বদলে হলদে, কমলা ও লাল হতে শুরু করেছে। ভারি সুন্দর সেসব দৃশ্য। আমরা চলেছি মাউন্টেন রেঞ্জ পেরিয়ে ফাউন্টেন রেঞ্জে। বৃষ্টি পড়ছে, মেঘ উড়ছে, সেই সঙ্গে মনও যেন উড়ে চলেছে। অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি কখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সত্যি হয়। ছেলে জানাল, দুপুর ১২টার পর রোদ ওঠার কথা। কিন্তু আমরা ওয়াটকিনস গ্লেনে পৌঁছে গেলাম বেলা সাড়ে ১১টায়। তাই তখনো বৃষ্টি ঝরছে। সেখানে প্রবেশ করতেই এক অদ্ভুত মোহের ঘোরে পড়ে গেলাম। দুপাশে সুউচ্চ পাহাড়। মাঝখানে গভীর গিরিখাত। গিরিখাতের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনার জল, পাশে ধাপে ধাপে অসংখ্য সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা। শুধুই ওপরে ওঠা আর একটার পর একটা ঝরনা দেখা। বৃষ্টি থেমেছে, ছাতা লাগছে না, পাহাড়ের কোল দিয়ে পাহাড়কেই ছাতা করে এগিয়ে চলেছি আর পাহাড়ের ওপরের দিকে তাকিয়ে গিরিখাতের ওপরে নিচ থেকে দেখছি নানা রকম বৃক্ষের পাথুরে পাহাড়ে টিকে থাকার দুর্মর বাসনা। শিকড়ের অর্ধেক মাটি সরে গেছে, তবু বিশাল দেহ নিয়ে বড় বড় বৃক্ষরা খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো বৃক্ষতলে, গোড়ায় সবুজ মখমলের মতো জন্মেছে মস, মরা ডালপালার ওপর রিকশিয়া ও লাইকেন। কত রকমের গাছ, চিনি না। শুধু ছবি তুলে রাখছি সেগুলোর।

একে একে ঝরনাগুলো দেখতে দেখতে উঠে পড়লাম গিরিখাতের মাঝামাঝি, সেন্টার ক্যাসকেডে। সেটা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ৭ নম্বর ঝরনাটার কাছে। উনিশটা ঝরনা দেখতে হলে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে, সে জন্য না কি প্রায় ১০ মাইল হাঁটতে হবে। যতই ওপরে উঠব, ঝরনার দেখা মিলবে বাঁকে বাঁকে। লোভ হলো। কিন্তু সময় ও সামর্থ্য পারমিট করল না বলে ফিরে এলাম সেই মাঝপথ থেকেই।

স্মরণ করতে চেষ্টা করলাম ওয়াটকিনস গ্লেন স্টেট পার্কের গিরিখাত ও জলার্দ্র অরণ্যের বুনো ফুলগুলোকে। কোনোটা সাদা, কোনোটা গোলাপি, কোনোটা বেগুনি, নীল ও খয়েরি লাল। কোনো ফুলই নিশ্চিতভাবে চিনি না। কত যে ঘাস ফুল! বিষকাটালির গোলাপি বুনোফুল থেকে শুরু করে বুনো ডেইজি ও বুনো অ্যাস্টার। শেষে এক অপরূপ বুনো ফুলে চোখ আটকে রইল। অদ্ভুত গড়ন ফুলটার। পুষ্পমঞ্জরিতে ফুটে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট গোলাপি ফুল। বৃষ্টিতে ভিজে সেগুলো হয়েছে আরও সতেজ।

অন্তর্জাল ঘেঁটে গাছের নামটা পাওয়া গেল রেড ক্লোভার, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Trifolium pratense ও গোত্র Fabaceae. অর্থাৎ গাছটা শিমগোত্রীয়। বহুবর্ষজীবী বিরুৎ প্রকৃতির এ গাছ আমেরিকায় আগাছার মতো যেখানে-সেখানে জন্মে ও খুব বাড়ে। পাথুরে কাঁকুড়ে মাটিতে জন্মাতেও তার আপত্তি নেই। গাছ বড়জোড় ২০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতা চিনাবাদামের পাতার মতো তিনটি পত্রকবিশিষ্ট। এ গাছ চেনার সহজ উপায় হলো, এর পাতায় বিশেষ ‘ভি’ আকৃতির হালকা সবুজ রঙের চিহ্ন থাকে। ভ্রমর আর মৌমাছিদের আকর্ষণ করে এ ফুল। গোলাপি ছাড়া সাদা রঙের ফুলও আছে। রেড ক্লোভার গাছ উত্তম পশুখাদ্য, আগাছা হলেও এর শিকড় মাটির উর্বরতা বাড়ায়। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া এর আদিনিবাস।

সোনাপাতির সোনা রং

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
সোনাপাতির সোনা রং
ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে ফুটে আছে সোনাপাতি। ছবি: লেখক

সোনাপাতি ফুলের আরেক নাম চন্দ্রপ্রভা। চাঁদের নরম হলুদ আলোর সঙ্গে মিলিয়েই হয়তো রাখা হয়েছিল এই নাম। চন্দ্রপ্রভা হিসেবেই এর বিশেষ পরিচিতি আছে। সোনাপাতি বা চন্দ্রপ্রভা দেশি নাম হলেও ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকা। দেশটির ভার্জিন আইল্যান্ডের অফিশিয়াল ফুল এটি। আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এলডার বা সোনাপাতি অথবা চন্দ্রপ্রভা। দেশটির প্রায় সবখানে মৌসুমজুড়ে থরে থরে এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। সে জন্যই ইয়েলো এলডার বা চন্দ্রপ্রভা দেশটির জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।

সোনাপাতি ঝোপালো বা চিরসবুজ ছোট বৃক্ষ। এ গাছ তিন থেকে পাঁচ মিটার লম্বা হয়। মাথা কিছুটা ছড়ানো। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tecoma stans, এটি Bignoniaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। সোনাপাতি ফুলের ইংরেজি নামের মধ্যে Yellwo bells, Yellwo trumpet, Yellwo elder ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হলুদ রঙের অসম্ভব সুন্দর এই ফুল অনেকের দৃষ্টিতে হলুদ নয় বরং এর রং কাঁচা সোনার মতো। সোনাপাতি নামকরণের এটিও একটি কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। হেমন্তে ফোটে বলে এই ফুলের আরেক নাম হৈমন্তী।

সোনাপাতির পাতা যৌগপত্র এক পক্ষল, পত্রক ভল্লাকার, কিনারা খাঁজকাটা। ডালের আগায় থোকায় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ধরে। দল ফানেলের আকার, তিন থেকে চার সেন্টিমিটার চওড়া হয়। ফল শুকনো, বিদারী, ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, বীজ ছোট ও পক্ষল। সোনাপাতি ফুল এখন আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাইরেও এখন প্রচুর পরিমাণে সোনাপাতি ফুল দেখতে পাওয়া যায়। স্কুল-কলেজ, শখের বাগান আর রোড আইল্যান্ডে লাগানোর উপযোগী হলুদ রঙের এই ফুল থোকায় থোকায় ফোটে গ্রীষ্ম থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত। ফুলের ছবিটি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনের বাগান থেকে তুলেছিলাম। শরতের এই মাঝামাঝি সময়েও গাছে ফুল ফুটতে দেখেছি। এ ছাড়া এই সময়ে ময়মনসিংহের টাউন হলের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে এবং সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে সোনাপাতিগাছে হলুদ ফুলের বন্যা বইছে। 

ডালের আগায় বড় বড় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ফোটে। দেখতে অনেকটা হলুদ ঘণ্টার মতো। গাছ দ্রুত বাড়ে। বাড়তে দিলে গাছ বেশ বড় হয় এবং কয়েক বছর বাঁচে। গাছে বেশ ডালপালা হয়, ডালপালা এলোমেলোভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুলের ভারে ডালপালা নুয়ে পড়ে। প্রথমে ডালের আগায় ফুল ফোটে, ধীরে ধীরে ডালের পাতার কোল থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ডালের উজ্জ্বল সবুজ রঙের ঝোপের মধ্যে থোকায় ধরা ফানেল বা কলকের মতো উজ্জ্বল ফুলগুলোকে খুব সুন্দর দেখায়।

বীজ ও কলম থেকে চারা তৈরি করা যায়। দুই থেকে তিন মাস বয়সী চারা বাগানে লাগানো যায়। তবে তা না করে প্রধানত ডাল কেটে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। টবে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, পার্কে, রাস্তার ধারে, সড়কদ্বীপে, স্কুল-কলেজের আঙিনায় চন্দ্রপ্রভা ফুল লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যায়। 

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

সুকণ্ঠী অ্যাবট ছাতারে

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
সুকণ্ঠী অ্যাবট ছাতারে
গাছের ডালে বসা ‘অ্যাবট ছাতারে’ পাখি। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশের একটি পাখির নাম ‘অ্যাবটের ছাতারে’। অনেকে বলেন ‘অ্যাবট ছাতারে’। এ দেশের প্রতিটি বনেই আপনি শুনতে পাবেন অত্যন্ত সুরেলা এ পাখির অন্তহীন গান, ‘টিউ-টিউ-টিউপ…’। গ্রামীণ বাগান ও ঝোপঝাড়েও আগে এর গান শোনা যেত। সারাটা সকাল বিরতিহীন চলতে থাকে অনন্য এ পাখির শ্রুতিমধুর গান। অ্যাবট ছাতারে শুধু সুকণ্ঠী নয়; অত্যন্ত অকৃপণ ও উদার এক গায়ক। সূর্যোদয়েই শুরু হয় এর গান এবং সকাল গড়িয়ে দুপুর না হওয়া পর্যন্ত গান চলতেই থাকে। লতাগুল্মের চাদরে ঢাকা ঝোপঝাড়ের অন্ধকার শাখা থেকে শাখায় এ পাখি অবিরাম লাফিয়ে চলে। পাতায় পাতায় সে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখে, কোথাও কোনো শুঁয়োপোকা লুকিয়ে আছে কি না। 

পোকা খোঁজার জরুরি কাজে যত মনোযোগই থাকুক না কেন, তার কণ্ঠের গানে কোনো ছেদ পড়ে না। সে জানে, কান নেই বলে শুঁয়োপোকারা তার কণ্ঠ শুনতে পাবে না; কিন্তু পাশের ঝোপে তার সঙ্গিনী তা শোনার জন্য কান পেতে আছে। পোকা শিকারের এই প্রাত্যহিক সফরে নেমে স্ত্রী পাখি তার পুরুষের গানের নাগালের মধ্যে থাকার চেষ্টা চালায়। তা না করলে সারা দিনের ভ্রমণ শেষে একের সঙ্গে অন্যের ব্যবধান এত বেশি হয়ে যেতে পারে যে তখন হাঁকডাক করে হারানো সাথী তালাশ করার কঠিন কাজে নামতে হবে দুজনকেই।

লতাপাতার আড়ালে পোকা শিকার করতে নেমে অনেক পাখিই একে অপরের কাছাকাছি থাকার জন্য সারাক্ষণ গান গায়। যেমন, আমাদের অতিচেনা পাখিদের মধ্যে ঝোপঝাড়ে সারা দিন টুনটুনি পাখি ‘টুন টুন’ শব্দ করে। একইভাবে সারা রাত ‘নিম নিম’ করে ডাকে নিমপ্যাঁচা। এসব পাখির মধ্যে নিয়মিত আওয়াজ দেওয়ার দায়িত্বটা পুরুষের এবং সে আওয়াজ শুনে নাগালের মধ্যে থাকার দায়টি স্ত্রীর। টুনটুনির মতো কোনো কোনো পাখির স্ত্রী নিজেও আবার পাল্টা আওয়াজ দেয় এবং দুজনে মিলে একটি ডুয়েট বা দ্বৈত সংগীত গেয়ে চলে। অ্যাবট ছাতারেও মাঝে মাঝে ডুয়েট গায়। পুরুষের ‘টিউ-টিউ-টিউপ’ শুনে সুকণ্ঠী স্ত্রী গায় ‘টিউ-টিউ-টুয়ু’। ওরা দুজনে আসলে কী বলে তা বুঝলে এই ডুয়েটের আবেদন না জানি আরও কত বেশি হতো আমাদের কাছে!

হিমালয়ের পাদদেশের পাখি বলেই নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারই অ্যাবট ছাতারে পাখির প্রধান ঘাঁটি। কলকাতার ব্যবসায়ী জর্জ এডওয়ার্ড অ্যাবটের পুত্র কর্নেল অ্যাবটের নামে এ পাখির ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেছিলেন বিখ্যাত পাখিবিদ এডওয়ার্ড ব্লাইদ। আরাকানের সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্নেল অ্যাবট তার কর্মস্থল থেকে এ ছাতারের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির জাদুঘরে পাঠিয়েছিলেন ১৮৪৫ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেলের নামে প্রিয় এ পাখিটির নামকরণ হয়েছে বলে আমরা কিঞ্চিৎ বিচলিত। এক বন্ধু বললেন, ভারতবর্ষের তৎকালীন সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের স্মৃতিতে এ পাখির নাম ‘বাহাদুর ছাতারে’ রাখলে কেমন হয়! তা মন্দ হয় না। কিন্তু কোম্পানির কাজের বাইরে শখ করে কর্নেল অ্যাবট যে এ এলাকার পাখির নমুনা সংগ্রহ করতেন এবং এ দেশের পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ নিয়ে কাজ করতে করতে ব্লাইদ যে কলকাতার জাদুঘরে জীবন পার করে দিয়েছিলেন, সে ইতিহাস হারিয়ে গেলে কি ভালো হবে!

সংসদ সমুখে সাদা পাকুড়

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ পিএম
সংসদ সমুখে সাদা পাকুড়
সাদা পাকুড়ের পাতা ও ফল। ছবি: লেখক

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পাশে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রায়ই গাছটিকে দেখি। কখনো তাকে মনে হয় বট, কখনো পাকুড়। খামারবাড়ি মোড় থেকে আড়ং মোড় পর্যন্ত যাওয়ার সময় প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে সেই গাছটি। অনেক বছর আগে গাছটি যখন ছোট ছিল, তখন তার গোড়ায় একটা শ্বেতপাথরের নামফলক ছিল। তাতে গাছটির পরিচয় লেখা ছিল ‘অচিন বৃক্ষ’। ২০২২ সালের মার্চেও সে ফলকের কিছুটা দেখেছিলাম। কুড়িগ্রামের জনৈক সংসদ সদস্যের নাম লেখা ছিল তাতে রোপণকারী হিসেবে। কালের গর্ভে গাছটির ছাল-বাকলে ঢেকে সে ফলক হারিয়ে গেছে। সেটাই তো প্রকৃতির নিয়ম, ভালো কোনো কাজই টিকে থাকে, কাজটি কে করেছিলেন সেটি বড় কথা না। প্রায় ২০ বছর ধরে গাছটিকে দেখছি, একটু একটু করে বড় হতে হতে গাছটি এখন এক সুন্দর ছাতার মতো গড়নে রূপ নিয়েছে। গোড়ায় লাল মসৃণ ইটে বাঁধানো বেদি, তাতে সে গাছের ছায়ায় বসে গল্প করা যায়। কিন্তু সে গল্পে হয়তো গাছটির কোনো কথা থাকে না। গাছটি আগতদের কাছে অচিন বৃক্ষই থেকে যায়। অবশেষে বাংলাদেশ নেচার স্টাডি সোসাইটির নিসর্গপ্রেমী কাওসার মোস্তফা ভাই গাছটির পরিচয় উদ্ধার করলেন, জানালেন ওটা সাদা পাকুড়। কয়েক দফায় গাছটির বিভিন্ন চেহারার ছবি ল্যাপটপে খুঁজতে শুরু করলাম। ফলগুলোর রং সাদাটে বলেই হয়তো এর নাম হয়েছে সাদা পাকুড়। 

সাদা পাকুড়ের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম (Ficus virens) ও গোত্র মোরেসি। বট বা পাকুড়ের মতো সাদা পাকুড়গাছ বিশাল হয় না, মাঝারি আকারের বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, তবে এ দেশে সাধারণত এত বড় সাদা পাকুড়গাছ চোখে পড়ে না। শীতকাল এলে সব পাতা ঝরে ঝাঁকড়া ডালপালা নিয়ে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু বসন্ত এলেই আবার সেসব গাছ নতুন পাতার পোশাক পরতে শুরু করে। একে কেউ কেউ বলে ‘স্ট্রেঙ্গলার ট্রি’, যার অর্থ ‘গলা টিপে ধরা গাছ’। কেননা এ গাছে ফল হলেও সে ফলের বীজ গজায় অন্য গাছের ওপর। আর যে গাছের ওপর এর চারা জন্মায়, সে গাছকে আশ্রয় করে চারা বড় হতে থাকে। অন্য গাছের ওপর জন্মালেও সাদা পাকুড়েরও তো সাধ হয় মাটি ছুঁতে। তাই সে শিকড় মাটির দিকে নামাতে থাকে। শিকড় নামানোর সময়ই তার দুষ্টুমিটা শুরু হয়। শিকড়কে এমনভাবে ছাড়তে থাকে যে সে আশ্রয়দাতা গাছকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জালের মতো পেঁচিয়ে ধরে, একবারে গলায় দড়ি দেওয়ার মতো করে। আর তাতে আশ্রয়দাতা গাছটি সেসব শিকড়ের বাঁধনে আটকা পড়ে, কয়েক বছর সেই যন্ত্রণা সহ্য করে আশ্রয়দাতা গাছটি বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শেষে একদিন মরে যায়। ততদিনে সেই পাকুড়গাছ হয়ে যায় মহাবনস্পতি। পাকুড়ের চেয়ে অশ্বত্থের এ স্বভাব দেখা যায় আরও প্রকটভাবে। তাই এসব গাছকে বলা হয় স্ট্রেঙ্গলার ট্রি। রূপগঞ্জের জিন্দা পার্কে অবশ্য দুটি তালগাছকে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে ধরা অশ্বত্থের সেই মহারূপটি রূপান্তরিত হয়েছে এক অনন্য তরু-স্থাপত্যে। 

সাদা পাকুড়ের পাতা সবুজ, উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুঁচাল, পাতা পুরু। কচি পাতার রং লালচে-গোলাপি। ফল বটের চেয়ে ছোট, আকার আধা থেকে দেড় সেন্টিমিটার। অনেকটা বড় কাবুলি বুটের দানার মতো। ডালের আগায় ডালের গা ধরে ডুমুরের মতো ফলগুলো ধরে। ফলও ডুমুরের মতো খাওয়া যায়।

সারা বিশ্বে বটজাতীয় প্রায় সাড়ে ৮০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বট, অশ্বত্থের সঙ্গে পাকুড়ও ওদের স্বগোত্রীয় বৃক্ষ। মহুয়া, সফেদা, রাবার, বট, অশ্বত্থ ও পাকুড়কে বলা হয় ক্ষীরী বৃক্ষ। কেননা, এসব গাছের ডাল ও পাতা ভাঙলে সাদা দুধের মতো ঘন আঠা বের হয়, যাকে বোটানির ভাষায় বলা হয় তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স। এ দেশে উদ্ভিদবিষয়ক বইগুলোতে পাকুড়ের বেশ কয়েকটি প্রজাতির নাম পাওয়া যায়, যেমন- ফিকাস লেকর, ফিকাস বেঞ্জামিনা, ফিকাস ভাইরেন্স, ফিকাস কোমসা ইত্যাদি। জানা নেই, কোন পাকুড়গাছকে দেখে কবি বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন: ‘চৈত্র মাসে তাদের নীচে কত যে শুকনো পাতা ঝরে পড়তো, হাওয়ায় সেগুলো ঘুরে ঘুরে পাড়াময় যেতো ছড়িয়ে। বৈশাখে তাদের নতুন রূপ, জটে বাঁধা প্রচণ্ড ঝুনো শরীরে কচিপাতা ঠিক যেন মানাতো না।’ বট আমাদের দেশের গাছ হলেও সাদা পাকুড়ের আদি নিবাস শুধু বাংলাদেশ না। আসাম, আন্দামান, বোর্নিও, কম্বোডিয়া, চীন, পূর্ব হিমালয়, জাভা, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি অনেক দেশেই সাদা পাকুড়গাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণেও আছে সাদা পাকুড়গাছ।