গত ২৬ অক্টোবর গিয়েছিলাম ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। পুষ্প, বৃক্ষ, লতা গুল্মে উদ্যানটি খুব সমৃদ্ধ। জলজ উদ্ভিদ উদ্যানের পশ্চিম পাশের দেয়ালের গ্রিলের গায়ে অনন্তলতার দেখা পেলাম। পাতার কক্ষে লতার আগায় ঝুলছে পুষ্পমঞ্জরি। পুষ্পমঞ্জরির গায়ে ছোট ছোট গোলাপি-সাদা ফুল। অনন্তলতার বৈজ্ঞানিক নাম Antigonon leptopus, এটি Polygonaceae পরিবারের লতানো, আরোহী উদ্ভিদ। এই লতা ইংরেজিতে Coral vine, Honolulu creeper, Mexican creeper, Kodi rose, Love vine ইত্যাদি নামে পরিচিত। বাংলায় এর অন্য নাম মধুলতা, প্রেমলতা। পাহাড়ের ধারে জন্মায়, তাই মাউন্টেইন রোজ ভাইন। পান পাতার মতো (কিনারায় খাঁজ কাটা) সবুজ পাতার জন্য নাম লাভ ভাইন। অনন্তকাল ধরে টিকে আছে বলেই হয়তো এর নাম অনন্তলতা।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন কমপক্ষে ৮০ হাজার বছর আগের গুহাবাসীরা অনন্তলতার বীজ থেকে পপকর্ন তৈরি করত। এর আদি নিবাস মেক্সিকো। সেখান থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর লতানো কাণ্ড কোনাচে ও খাঁজ কাটা। লম্বায় ২০ থেকে ২৫ ফুট হয়। সবুজ পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা ঢেউ খেলানো। পাতা পান পাতার আকৃতির, অমসৃণ ও রোমশ। পাতা ৪ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
পাতার বিন্যাস একান্তর। পাতার দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পাতার প্রান্তে আকর্ষী থাকে, যা কাণ্ডকে হেলে পড়া থেকে রক্ষা করে। এ লতার বৃদ্ধি হয় দ্রুত। ফুল ফোটে গ্রীষ্মে। পাতার কক্ষে লতার আগায় পুষ্পমঞ্জরির গায়ে ছোট ছোট গোলাপি ফুল ফোটে। ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে সাজানো। প্রতি ফুলে পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ফুলগুলো উজ্জ্বল বর্ণের।
ফুল ফোটার প্রধান সময় গ্রীষ্মকাল। তবে রেশ থাকে বর্ষা-হেমন্ত অবধি। ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। ফুল দেখতে ছোট হলেও বৃত্যংশ বড় হয়। অনেকেই বৃত্যংশকেই ফুল বলে ভুল করে থাকে। অন্যান্য দেশে এর প্রকারভেদ থাকলেও আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ও গাঢ় লাল বা গোলাপি রঙের ফুল দেখা যায়। গোলাপি রঙের ফুলের বৃত্যংশ পাঁচটি ও রঙিন।
ফল লুকিয়ে থাকে পাঁপড়ির নিচে। অবশ্য সেগুলোকে ঠিক ফুলের পাঁপড়ি বলা যায় না, বৃতিগুলো বেড়ে গিয়ে পাঁপড়ির কাজ করে। বাদামি ফলগুলো এক সেন্টিমিটার লম্বা আর দেখতে সুন্দর মসৃণ, জলের ফোঁটার মতো কিংবা নাশপাতি ফলের মতো, নিচের দিক কিছুটা মোটা, ওপরে ক্রমেই চিকন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসায় অনন্তলতার বেশ ব্যবহার দেখা যায়। গাছের নিচের কন্দ আর সাকার-রুট (Succer Root) থেকে অনন্তলতার বংশবৃদ্ধি হয়।
লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ