ঢাকা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

অনন্তকাল ধরে অনন্তলতা

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
অনন্তকাল ধরে অনন্তলতা
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ফোটা অনন্তলতা। ছবি: লেখক

গত ২৬ অক্টোবর গিয়েছিলাম ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। পুষ্প, বৃক্ষ, লতা গুল্মে উদ্যানটি খুব সমৃদ্ধ। জলজ উদ্ভিদ উদ্যানের পশ্চিম পাশের দেয়ালের গ্রিলের গায়ে অনন্তলতার দেখা পেলাম। পাতার কক্ষে লতার আগায় ঝুলছে পুষ্পমঞ্জরি। পুষ্পমঞ্জরির গায়ে ছোট ছোট গোলাপি-সাদা ফুল। অনন্তলতার বৈজ্ঞানিক নাম Antigonon leptopus, এটি Polygonaceae পরিবারের লতানো, আরোহী উদ্ভিদ। এই লতা ইংরেজিতে Coral vine, Honolulu creeper, Mexican creeper, Kodi rose, Love vine ইত্যাদি নামে পরিচিত। বাংলায় এর অন্য নাম মধুলতা, প্রেমলতা। পাহাড়ের ধারে জন্মায়, তাই মাউন্টেইন রোজ ভাইন। পান পাতার মতো (কিনারায় খাঁজ কাটা) সবুজ পাতার জন্য নাম লাভ ভাইন। অনন্তকাল ধরে টিকে আছে বলেই হয়তো এর নাম অনন্তলতা।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন কমপক্ষে ৮০ হাজার বছর আগের গুহাবাসীরা অনন্তলতার বীজ থেকে পপকর্ন তৈরি করত। এর আদি নিবাস মেক্সিকো। সেখান থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এর লতানো কাণ্ড কোনাচে ও খাঁজ কাটা। লম্বায় ২০ থেকে ২৫ ফুট হয়। সবুজ পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা ঢেউ খেলানো। পাতা পান পাতার আকৃতির, অমসৃণ ও রোমশ। পাতা ৪ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। 

পাতার বিন্যাস একান্তর। পাতার দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পাতার প্রান্তে আকর্ষী থাকে, যা কাণ্ডকে হেলে পড়া থেকে রক্ষা করে। এ লতার বৃদ্ধি হয় দ্রুত। ফুল ফোটে গ্রীষ্মে। পাতার কক্ষে লতার আগায় পুষ্পমঞ্জরির গায়ে ছোট ছোট গোলাপি ফুল ফোটে। ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে সাজানো। প্রতি ফুলে পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ফুলগুলো উজ্জ্বল বর্ণের। 

ফুল ফোটার প্রধান সময় গ্রীষ্মকাল। তবে রেশ থাকে বর্ষা-হেমন্ত অবধি। ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। ফুল দেখতে ছোট হলেও বৃত্যংশ বড় হয়। অনেকেই বৃত্যংশকেই ফুল বলে ভুল করে থাকে। অন্যান্য দেশে এর প্রকারভেদ থাকলেও আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ও গাঢ় লাল বা গোলাপি রঙের ফুল দেখা যায়। গোলাপি রঙের ফুলের বৃত্যংশ পাঁচটি ও রঙিন।

ফল লুকিয়ে থাকে পাঁপড়ির নিচে। অবশ্য সেগুলোকে ঠিক ফুলের পাঁপড়ি বলা যায় না, বৃতিগুলো বেড়ে গিয়ে পাঁপড়ির কাজ করে। বাদামি ফলগুলো এক সেন্টিমিটার লম্বা আর দেখতে সুন্দর মসৃণ, জলের ফোঁটার মতো কিংবা নাশপাতি ফলের মতো, নিচের দিক কিছুটা মোটা, ওপরে ক্রমেই চিকন। 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসায় অনন্তলতার বেশ ব্যবহার দেখা যায়। গাছের নিচের কন্দ আর সাকার-রুট (Succer Root) থেকে অনন্তলতার বংশবৃদ্ধি হয়।

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

গোলাপী-সাদা লতাকরবী

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
গোলাপী-সাদা লতাকরবী
মহারাষ্ট্রের পুনের সিএলএইচএম-এ লতাকরবী। ছবি: লেখক

২০১৭ সালের জুনে গিয়েছিলাম ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে অবস্থিত সেন্টার ফর লাইফ সায়েন্সেস, হেলথ অ্যান্ড মেডিসিনে। সেখানে টিলার ওপর চমৎকার নির্মাণশৈলী, বুদ্ধমূর্তি, উদ্যান, নানা রকমের গাছপালা, অর্কিড দেখে মুগ্ধ হবে সবাই। ছোট একটা সবুজ উদ্যানের পাশে সুন্দর একটা বুদ্ধমূর্তি, তার পাশেই দেখা পেলাম ঝোপাল লতাকরবী গাছের।

লতাকরবী চিরসবুজ, কাষ্ঠল, লতা জাতীয় বা ঝোপাল উদ্ভিদ, ২৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড গাঢ় ধূসর এবং কচি কাণ্ড গাঢ় বেগুনি রঙের এবং তাতে অসংখ্য হালকা বিন্দু থাকে। উদ্ভিদের পাতা চকচকে, চামড়াবৎ, জলপাই সবুজ, উপবৃত্তাকার থেকে আয়তাকার, ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা। বসন্তে ফুল ফোটে। ফুল দর্শনীয়, প্রান্তীয় পুষ্পমঞ্জরিতে ৬-১০টি ফুল ফোটে। ফুল গোলাপের মতো সুগন্ধি, গোলাপি, বা গোলাপি সাদা, ব্যাস ২ ইঞ্চি পর্যন্ত, দলনল ১.৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, খণ্ডের কিনারা খসখসে। ফুলে বৃতি ও পাপড়ি ৫টি। করবী ও অলকানন্দার সঙ্গে এ ফুলের মিল রয়েছে। এই উদ্ভিদটি ক্রিমফ্রুট নামে পরিচিত। ফল লিগিউম জাতীয়, খুব লম্বা, ১৮-৪০ সেন্টিমিটার। 

 লতাকরবীর বৈজ্ঞানিক নাম Strophanthus gratus, এটি Apocynaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর আগের বৈজ্ঞানিক নাম Roupalia grata, এ জন্য অনেকের কাছে এটি রূপেলিয়া নামে পরিচিত। উদ্ভিদটি ইংরেজিতে Rose allamanda, Spider-tresses, Poison arrwo vine নামে পরিচিত। উদ্ভিদের ফুলে পাপড়ির বিস্তার বড়জোর ১০ সেন্টিমিটার। এর ডাল-পালা ছড়ানো-ছিটানো। বাগানে বা থামের ওপর তুলে দিলে সুন্দর মানায়।

 ফুল ফোটার সময়কাল গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত। লতাকরবীর আদি নিবাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকায়। এ উদ্ভিদের বিস্তার মধ্য আফ্রিকার সেনেগাল থেকে কঙ্গো পর্যন্ত। নার্সারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এখন দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। ঢাকায় রমনা উদ্যান ও মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে লতাকরবী রয়েছে। 

অর্ধপত্রঝরা এই উদ্ভিদের বংশবিস্তার বীজ এবং কাটিং দ্বারা সৃষ্ট হয়। Apocynaceae পরিবারের অন্য সদস্যের মতো এই উদ্ভিদটিও বিষাক্ত। গাছের কিছু অংশ আফ্রিকার কোথাও বিষাক্ত তীর তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, সাপের কামড়, দুর্বলতা, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

কুয়াকাটায় অভিযান পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায় বিডি ক্লিন

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায় বিডি ক্লিন
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে গতকাল বিডি ক্লিন বরিশাল বিভাগের সদস্যরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। ছবি: খবরের কাগজ

‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’, স্লোগানকে সামনে রেখে ‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত সংগঠনটি পর্যটকদের কাছে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দিতে চায়।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম শপথবাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে ‘বিডি ক্লিন’-এর এ অভিযানের উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার, সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদসহ ‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়ক এবং স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা। 

‘বিডি ক্লিন’ বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক জায়েদ ইরফান বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমরা বরিশাল থেকে এখানে এসেছি। আমরা কুয়াকাটা টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সারা বিশ্বের কাছে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। আমরা বিডি ক্লিন বরিশাল বিভাগের সকল ইউনিটের সমন্বয়ক আজকের এ অভিযানে অংশ নিচ্ছি। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, কলাপাড়া, কুয়াকাটা টিমের সমন্বয়ে আজকের এই কর্মসূচি।

‘বিডি ক্লিন’ পটুয়াখালী জেলা শাখার উপসমন্বয়ক রাকায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য পর্যটকদের কাছে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকত উপহার দেওয়া। পাশাপাশি সবার উদ্দেশে আমরা একটি মেসেজ পৌঁছে দিতে চাই। আজ আমরা যেভাবে পরিষ্কার করলাম, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাদের তারা যেন এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সৈকতে কোনোভাবেই যেন কেউ প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন না ফেলেন। আশা করছি, আমাদের এ কার্যক্রম দেখে স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে এগিয়ে আসবে, উৎসাহিত হবে।

বিডি ক্লিন কুয়াকাটা ইউনিটের সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, কুয়াকাটায় আজকের যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কুয়াকাটা ইউনিটের আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। আজকের এই  অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য বরিশাল বিভাগের সব ইউনিটের সমন্বয়কসহ সব সদস্যকে কুয়াকাটা টিমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ তৈরির দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বিডি ক্লিনের সদস্যরা কাজ করছে। এ দায়িত্ব শুধু বিডি ক্লিনের নয়, সমাজের সবার। 

পাহাড়ি বনের নীলকান্ত

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
পাহাড়ি বনের নীলকান্ত
পাহাড়ি নীলকান্ত, সাঙ্গু বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য থেকে তোলা। ছবি: লেখক

‘যত নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গেছে রৌদ্রের আকাশে,
নদীর ও নগরীর
মানুষের প্রতিশ্রুতির পথে...’
-    জীবনানন্দ দাশ

পাহাড়ি বনে রাত কাটালে, খুব ভোরে অনেক অচেনা পাখির গান শোনা যায়। সাঙ্গু বনে প্রায় ১০ রাত ঘুমিয়েছি। প্রতিদিনই তাঁবুতে। প্রতিটি দিনই সকালে ঘুম কেটে যেত পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে। দীর্ঘ রাতের পর পাখিরা সকালটাকে বেশ ভালোভাবেই উদযাপন করে। সাঙ্গু বনের মাঝে এক সকালে দেখা হয়েছিল নীল ডানার পাহাড়ি নীলকান্ত পাখির সঙ্গে। পাখিটি একটি উঁচু গাছ থেকে উড়ে সাঙ্গু নদীর কাছে অন্য একটি গাছে বসেছিল। গাছটি ঘন পাতায় সন্নিবেশিত হওয়ায় পাখিটিকে কেবল ওড়ার সময় দেখেছি এবং কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছি। গভীর ও নিস্তব্ধ পাহাড়ি ঘন বন ছাড়া পাহাড়ি নীলকান্ত পাখিদের দেখা পাওয়া যায় না। সাঙ্গু বনে এসে পঞ্চম দিন সকালেই কেবল একবার পাখিটিকে দেখলাম। এর পরও কয়েকবার দেখেছি এই বনের অন্য কয়েকটি স্থানে। তবে সব সময় তারা উঁচু গাছে বসে থাকে।

বাংলাদেশে তিন প্রজাতির নীলকান্ত পাখি আছে। তাদের মধ্যে পাহাড়ি নীলকান্ত সবচেয়ে দুর্লভ। নীলকান্ত পাখির অপর নাম ‘নীলকণ্ঠ’। জীবনানন্দ দাশ ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে নীলকণ্ঠ পাখির কথা আছে।

পাহাড়ি নীলকান্ত পাখি ঘন চিরসবুজ বন, বনের প্রান্তরের কাছের নদী ও খোলা প্রান্তরে বিচরণ করে। সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকে এরা। গাছের মগডালে বসে থাকে। উড়ে গিয়ে শিকার ধরে এবং একই জায়গায় গিয়ে পুনরায় বসে। খাদ্যতালিকায় আছে প্রধানত উড়ন্ত পোকামাকড়। সাধারণত গাছের মগডালে বসে কর্কশ সুরে ডাকে নীলকান্ত। প্রজননকালীন গাছের কোটরে কিংবা মাটিতে প্রাকৃতিক গর্তে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমের রং সাদা; একেকবারে সংখ্যায় তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে এরা। প্রায় ২০ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ডিম ফুটে বের হওয়ার প্রায় ৩০ দিন পর ছানার গায়ে ওড়ার মতো পালক গজায়। 

পাহাড়ি নীলকান্ত বাংলাদেশে দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দেশের পাহাড়ি বনে বিচরণ করে এরা। এই পাখির ইংরেজি নাম ‘ওরিয়েন্টাল ডলারবার্ড’। এই পাখির ডানায় স্বতন্ত্র ফ্যাকাশে নীল বর্ণের পালক থাকে। এটি অস্ট্রেলিয়া থেকে কোরিয়া, জাপান ও ভারতে দেখা যায়। এই পাখিদের কিছু উপপ্রজাতি আছে এবং তারা সবাই পরিযায়ী। নীলকান্ত পাখিটি উত্তর ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাসে এবং নিউ গিনিসহ নিকটবর্তী দ্বীপগুলোতে শীতকালে প্রজনন করে।

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

মনোমুগ্ধকর গোলাপি দোলনচাঁপা

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
মনোমুগ্ধকর গোলাপি দোলনচাঁপা
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সুলতানপুর গ্রামে ফোটা গোলাপি দোলনচাঁপা। ছবি: লেখক

বাংলা সাহিত্যের কোথায় না দোলনচাঁপা আছে? জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নামটাই ছিল দোলনচাঁপা, আজ থেকে ১০১ বছর আগে সেটি প্রকাশিত হয় কলকাতার আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে। শরৎ-হেমন্তের বৃষ্টি আর শিশিরে ভেজা দোলনচাঁপার শুভ্র-স্নিগ্ধ রূপ আর সুগন্ধ প্রকৃতিমনাদের যেমন বিমোহিত করে, তেমনি প্রেমিকদের করে ব্যথিত। কাজী নজরুল ইসলামের অভিশাপ কবিতায় দোলনচাঁপা ফুটে আছে সেই ব্যথার ফুল হয়ে- ‘ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী, আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্নী।’ দোলনচাঁপা ফুলগুলো যেন জ্যোৎস্নাধোয়া বিধবার সাদা শাড়ি পরা কোনো বিরহী প্রেমিকা, যার নিশ্বাসে মেখে আছে বিরহের আতরগন্ধ। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি দোলনচাঁপা ফুলের সেই সাদা স্বরূপ। হঠাৎ দেখলাম এক বাগানে ফুটেছে গোলাপি রঙের দোলনচাঁপা।

কয়েক দিন আগে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের সুলতানপুর গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে তরুরসিক তানভীর আহমেদের বাগানে গিয়ে চিরচেনা বিধবা দোলনচাঁপাকে দেখলাম বর্ণিল সাজে। যেন সে হঠাৎ করে কোনো জাদুর ছোঁয়ায় পেয়ে গেছে প্রেমের রং। গোলাপি পাঁপড়িগুলো যেন প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে চাইছে নীল আকাশে। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধতা, কেননা বিরল রঙে রাঙানো এই দোলনচাঁপা আমাদের দেশে এসেছে বিদেশ থেকে অতিথি হয়ে। তানভীর বললেন, ২০১৬ সালে তিনি নেটে এই গোলাপি দোলনচাঁপার ছবি দেখে তার খোঁজ শুরু করেন। নানা দেশ ও স্থান থেকে নতুন নতুন গাছপালা সংগ্রহ করা তার নেশা। খুঁজতে খুঁজতে তিনি থাইল্যান্ড থেকে এই গোলাপি রঙের দোলনচাঁপাসহ ১০ জাতের দোলনচাঁপা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সোনালি হলুদ ফুলের জাতটিও চমৎকার! তার সংগ্রহে ছিল লাল দোলনচাঁপার জাতটিও। দুর্ভাগ্য যে সে গাছটি চুরি হয়ে গেছে। তার পরও তিনি দমে যাননি। তার বাগানে বর্তমানে প্রায় ২০০ প্রজাতির প্রায় সাড়ে ৭০০ গাছ রয়েছে। এর মধ্যে তার সংগ্রহে আছে প্রায় ৪০ জাতের বাহারি কচু ও ৫০ জাতের জলজ ফুলগাছ। তবে এই গোলাপি দোলনচাঁপা তার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। যেমন এর রং, তেমনি মিষ্টি সুগন্ধ।

আফসোস যে তানভীর আহমেদের বাগানে গিয়ে যখন সেই দুই ঝাড় গোলাপি দোলনচাঁপা ফুলগাছের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, তখন তার যৌবন ঢলে গেছে। হেমন্ত শেষে ফুল ফোটাও শেষের পথে। কয়েকটা গোলাপিরঙা দোলনচাঁপা ফুল কেবল সে গাছের সাক্ষ্য হয়ে আছে। শীতে সেসব গাছে আর ফুল ফুটবে না, অনেক ফোটা ফুল শুকিয়ে গেছে, গাছও মরে যাবে। পরের বর্ষায় সেসব গাছ আবার ঝোপালো ও তাগড়া হয়ে বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত ফুল দেবে।

গোলাপি দোলনচাঁপা গাছ দেখতে অনেকটা আদাগাছের মতো, গাছ দেখতে হুবহু সাদা দোলনচাঁপা গাছের মতোই। এ গাছ প্রায় ৯০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, ঝোপ দেখতে বেশ সুন্দর। এর ফুল বড় আকারের ধবধবে সাদা এবং মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত। গাছ যখন বেশ ঝাড়ালো হয়, তখন প্রতিটি গাছ থেকে ডাঁটির মাথায় অনেকগুলো ফুল ফোটে। দোলনচাঁপা প্রধানত বর্ষা ও শরৎকালের ফুল, বিকেলের দিকে ফুল ফোটে এবং সারা রাত বহুদূর থেকেও ফুলের মধুর গন্ধ পাওয়া যায়। শীতকালে মাটির ওপরে গাছ যখন শুকিয়ে যায়, তখন এর কন্দ বা রাইজোম তুলে সংরক্ষণ করা যায় অথবা মাটির নিচেই রেখে দেওয়া যায়। প্রতিবছর নতুন নতুন জায়গায় গাছ রোপণ করা ভালো। দোলনচাঁপা চাষের জন্য বেশি পানির দরকার হয়। তাই রোপণের পর নিয়মিত পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এ গাছ আবার অতিরিক্ত পানি বা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। 

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে, তবে নভেম্বরের শেষ পর্যন্তও এর কিছু ফুল দেখা যায়। দোলনচাঁপার আদি নিবাস ভারতবর্ষ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মাদাগাস্কার। আদাগোত্রীয় গাছ, গোত্র জিঞ্জিবারেসি। দোলনচাঁপার ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই লিলি বা জিঞ্জার লিলি। দোলনচাঁপা হেডিকিয়াম গণের একটি গাছ। সারা পৃথিবীতে হেডিকিয়াম গণের ৭০ থেকে ৮০টি প্রজাতির গাছ আছে, বাংলাদেশে এ গণের আছে ১৫ প্রজাতির গাছ। ধবধবে সাদা ফুলের প্রজাতি হলো Hedychium coronarium, হলুদাভ সাদা রঙের ফুলের প্রজাতি Hedychium flavum, যার নাম রাঙা আদা। এ দেশে লাল বা গোলাপি ফুলের দোলনচাঁপার মতো ফুল লাল বা কমলা রঙের ফুল ফোটে ভুঁই আদাগাছেও, তার প্রজাতি Hedychium coccineum. লাল, কমলা ও গোলাপিরঙা দোলনচাঁপার আদি নিবাস দক্ষিণ চীন।

শোভাময় দুপুরমণি ফুল

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
শোভাময় দুপুরমণি ফুল
বাসার টবে ফোটা দুপুরমণি। ছবি: লেখক

দুপুরে ফোটে এবং পরের দিন সকালে ঝরে পড়ে দুপুরমণি ফুল। এ জন্যই হয়তো এই ফুলের নাম ‘দুপুরমণি’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pentapetes phoenicea, এটি Malvaceae পরিবারের একবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। Pentapetes-দের একমাত্র প্রজাতি এটি। এর ইংরেজি নামগুলোর মধ্যে Midday Floower, Scarlet Mallow, Copper Cups, Noon Flower, Scarlet Pentapetes, Scarlet Phoenician ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর অন্য বাংলা নামগুলো হলো কটলতা, বন্ধুলী, বন্ধুক, দুপুরচণ্ডী, বনদুলি, বন্দুকা, বাধুলিপুষ্প, দুপুর মালতি ইত্যাদি। 

দুপুরমণি ফুল খুব সুন্দর। শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপিন্স পর্যন্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল উদ্ভিদটির আদি নিবাস। পরে এটি সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করেছে। এটি বর্ষার মৌসুমি ফুল। তবে হেমন্ত পর্যন্ত ফুল ফোটা অব্যাহত থাকে। গাছ লম্বা, খাড়া হয়। ডালপালা থাকে কম। পাতা বেশ লম্বা, মরিচ পাতার মতো। পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা ও আগা সরু। পাতার কক্ষে ফুল ফোটে। ফুল দুই সেন্টিমিটার চওড়া হয়। ফুলে পাপড়ি পাঁচটি, চ্যাপ্টা। পাপড়ির রং সিঁদুরে লাল, কখনো হালকা গোলাপি বা সাদা হতে পারে। ফুল ২ দশমিক ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হয়। পাপড়িগুলো নরম আর কোমল। ফুলের কেন্দ্র থেকে কয়েকটি উপাঙ্গ পরাগদণ্ডকে ঘিরে পাপড়ির বাইরে বেরিয়ে থাকে। সেগুলোয় রঙের পরাগরেণু লেগে থাকে। সব মিলিয়ে ফুলটির রূপ যেন আরও বেড়ে যায়। এই ফুলে কোনো গন্ধ নেই, দেখতে জেলি ফিশের মতো। 

এর কাণ্ড অর্ধকাষ্ঠল, উদ্ভিদ শূন্য দশমিক ৫ থেকে এক মিটার পর্যন্ত উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। শাখাগুলো লম্বা এবং ছড়ানো। পাতাগুলো ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এই উদ্ভিদে পাঁচ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গোলাকৃতি ফল হয়। ফল গোলাকার, লোমযুক্ত ক্যাপসুল। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে ৮-১২টি করে বীজ থাকে। বীজ থেকে খুব সহজেই চারা জন্মে। আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে এতে ফুল ফোটে। এটি টবে ও বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়। 

তবে অনেক দেশে এই ফুল ভেষজ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভেষজ চিকিৎসায় দুপুরমণি গাছের পাতা, মূল, ফুল ব্যবহার হয়। উদ্ভিদের কাণ্ড, পাতা এবং মূলের নির্যাসের ফাইটোকেমিক্যাল বিশ্লেষণে অ্যালকালয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন, স্টেরয়েড, ফেনোলিকস, কুমারিন এবং ট্রাইটারপেনয়েড পাওয়া যায়। পাতার নির্যাসে ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্টেরল, স্যাপোনিন, কার্বোহাইড্রেট এবং অ্যালকালয়েডের চিহ্ন পাওয়া যায়। দুপুরমণির মূলে জীবাণুনাশক, কামোদ্দীপক, সংকোচক, পাকস্থলীর বায়ুনাশক, প্রশান্তিদায়ক, বিষমুক্তকারী, রেচক ও বিশোধক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ডায়াবেটিসরোধী গুণাগুণ রয়েছে। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });