হাওরের কালচে জলে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। এ যেন মোহনীয় মন ভোলানো এক অপরূপ দৃশ্য। আশপাশের যে দিকে চোখ যায় শুধুই লাল শাপলার ফুল।
একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে হয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের জুমাপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
জুমাপুর গ্রামে কিছুদিন আগেও বন্যার পানি ছিল। বর্তমানে কোথাও হাঁটুপানি রয়েছে। এর মধ্যেই বিস্তীর্ণ মাঠ সেজে রয়েছে লাল শাপলায়। গ্রামটির ফসলের মাঠে যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল শাপলার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর আগে তারা এত শাপলা এখানে দেখেননি। অনেকেই এ শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন।
কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের জুমাপুর ছাড়াও বানেশ্রী, রায়পুর, রসুলপুর, কাদিপুরসহ অন্তেহরি এলাকা থেকে হাওরের পানি নেমে গেছে। ফলে খাল-বিল, ডোবা-নালা দৃশ্যমান হচ্ছে। হেমন্তের সকালে মানুষ মাছ ধরতে যার যার মতো আয়োজন করছেন। কেউ ডোবার মাছ ধরতে সেচ দিচ্ছেন। কেউ জাল পেতে মাছ ধরছেন।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠা খাল-ডোবায় কোথাও মাটির সঙ্গে শাপলার পাতা লেপটে আছে, কোথাও বোরো চাষের প্রস্তুতিতে চাষিরা শাপলা-শালুক স্তূপ করে রেখেছেন। এগুলো পচলে মাঠে জৈব সারের জোগান দেবেন।
সকালের রোদের তেজ পড়েনি তখনও। গ্রামটিতে ঢুকতেই একদল তরুণের দেখা মিলল। তারা এসেছেন লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ কাদা মাড়িয়ে লাল শাপলা ছিঁড়তে নেমেছিলেন। মাটির সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ফুলগুলো মাঠের বুকে একেক থোকা লালের উল্লাস।
ওই তরুণদের একজন সদর উপজেলার আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফেসবুক পেজের জন্য ভিডিও করতে এসেছি। ভোরের আলোয় মাঠজুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলার সৌন্দর্য যে কারও নজর কাড়ে।’
আরেক তরুণ সজিব হাসান বলেন, ‘সূর্যোদয়ের সময় লাল শাপলার কয়েকটি ছবি তুলতে এখানে এসেছি। দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো জড়িয়ে যেতে থাকে।’
রায়পুর গ্রামের শিক্ষার্থী অখিল বিশ্বাস জানান, আগে এত শাপলা এখানে দেখিনি। এ শাপলার দৃষ্টিনন্দন রূপ লাবণ্য উপভোগ করতে অনেকেই এখানে আসছেন। বানেশ্রী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রমেশ সূত্রধর বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই এ গ্রামে থাকি। এ ধানের জমিতে লাল শাপলা দেখিনি। এ বছর বন্যার কারণে জমিতে ফসল নেই। বন্যার পানি কমার কিছুদিন পরই এই লাল শাপলা জন্মেছে।’
ভোরে শাপলা ফুলের পাপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় জানিয়ে শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস বলেন, ‘শাপলা গ্রামবাংলার প্রকৃতির এক অনবদ্য রূপ। অতীতে এ এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এভাবে লাল শাপলার হাতছানি দেখা যায়নি। কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের জুমাপুর গ্রামের পুরো ফসলের মাঠের চারদিকে ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। আমিও দেখতে এসেছি।’
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদরের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বন্যার কারণে কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের এলাকার কৃষিজমিতেও এই লাল শাপলা জন্মেছে। কিছুদিন পরেই এসব জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে। এ শাপলার পাতা, কাণ্ড পচে গেলে মাটিতে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করবে।’