চলতি বছরের জুনে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি আনন্দমোহন কলেজে। ওখানে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানের গেটে ঝুলতে থাকা ট্রাম্পেট ক্রিপার লতা দৃষ্টি কাড়ে আমার। আর ছবি তুলে নিই ঝটপট। থোকায় থোকায় কমলা বা ইটের মতো লাল রঙের বড় বড় বাহারি ফুল গুচ্ছ আকারে যখন ঝুলতে থাকে তখন লতার দিকে তাকালে মন ভরে যায়। একটি গুচ্ছে ২ থেকে ৯টি ফুল থাকে। গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটা শুরু হলেও হেমন্তকাল পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে।
ট্রাম্পেট ক্রিপার একটি গুল্মজাতীয়, কাষ্ঠল, বহুবর্ষজীবী, পাতাঝরা, লতানো আরোহী উদ্ভিদ। যেসব লতানো উদ্ভিদে অনেক শাখা-প্রশাখা হয় এবং অন্য কোনো উদ্ভিদ বা আশ্রয় প্রদানকারী গাছের বাকল, পাথর, দেয়াল বা ইট ইত্যাদিকে অবলম্বন করে আঁকড়ে ধরে ছড়িয়ে থাকে বা ওপরে আরোহণ করে তাকে বলা হয় ক্রিপার। ট্রাম্পেট এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। এই ফুলের পাপড়িগুলো যুক্ত হয়ে ট্রাম্পেট আকৃতির হয়। এ জন্য এই উদ্ভিদের নাম ট্রাম্পেট ক্রিপার। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Campsis grandiflora এবং এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে Chinese trumpet vine নামে পরিচিত। রৌদ্রকরোজ্জ্বল এলাকায় এই উদ্ভিদ ৪-৯ মিটার লম্বা হতে পারে। পাতা মাঝারি থেকে ঘন সবুজ, দ্বিপক্ষল যৌগিক, ৪-১৩ সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রক ৭-৯টি। পাতার বোঁটা ৫-১০ মিলিমিটার লম্বা। পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। বৃতি ঘণ্টাকৃতির, ৩ সেন্টিমিটার লম্বা। পুষ্পবিন্যাস প্যানিকল। মঞ্জরিদণ্ড ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা। উদ্ভিদটি কাষ্ঠল এবং বড় বৃক্ষকে আঁকড়ে ওপরে ওঠে। বাঁশের মাচা, সিঁড়ি বা গ্রিলে তুলে দিলে সুন্দর দেখায়। শীতকালে পাতা ঝরে যায়। তখন গাছ ছেঁটে দেওয়া ভালো। গাছকে ছেঁটে ছোট বা বড় করা যায়। এদের ফুলের মধু পিঁপড়া ও প্রজাপতির খাদ্য। Campsis গণের আরেকটি প্রজাতি রয়েছে যার নাম Campsis radicans, এই প্রজাতিটির আদি নিবাস উত্তর আমেরিকা। এটি খুব সবল ও ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।
হামিংবার্ড, সানবার্ড বা মৌটুসি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীরা চীনা ট্রাম্পেট ক্রিপারের ফুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে। যখন ফুলগুলো ঝরে যায় তখন লম্বা, শিমের মতো ফল হয়। ফল পরিপক্ব হওয়ার পর ফেটে যায় দুই ভাগে এবং দুই ডানাযুক্ত বীজগুলোকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। বাসার গেট, বেড়া, দেয়ালের গায়ে সুন্দরভাবে জন্মায়। Campsis নামটি গ্রিক Kampe থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ বাঁকানো। এর দ্বারা ফুলের বাঁকানো পুংকেশরকে বোঝায়। grandiflora লাটিন ‘grandis’ থেকে এসেছে। যার অর্থ বড় এবং ‘floreo’ এর অর্থ প্রস্ফুটিত।
বীজ, শাখা কলম ও দাবা কলম করে চারা তৈরি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণে এবং রমনা পার্ক নার্সারিতে এ উদ্ভিদটি আছে। ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার সামনে একটি গাছের গায়ে এই উদ্ভিদটি আছে।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ