কুয়াশায় মোড়া সবুজ চা-বাগানের মাঝে এক মনোমুগ্ধকর লেক। এর বুকে ফুটে থাকা লাল শাপলার অপূর্ব সৌন্দর্য যেন প্রকৃতির নিজস্ব ক্যানভাসে আঁকা এক শিল্পকর্ম। লেকের পানিতে সাদা বকের ডানার ঝাপটা আর হাঁসের দল যোগ করেছে রাজসিক আভিজাত্য। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেওন্দি চা বাগানে অবস্থিত এই লেকটি স্থানীয়ভাবে “লাল শাপলা বিল” নামে পরিচিতি পেয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই লেকের সৌন্দর্য উপভোগে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে লেকের চারপাশ। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে প্রকৃতির এই মোহনীয় রূপ উপভোগে মুগ্ধ সবাই।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রঘুনন্দন গভীর অরণ্যের সন্নিকটে হওয়ায় লেকটি সহজেই পর্যটকদের নজর কাড়ে। গেল বছর এই লেকের খবর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে লেকের সৌন্দর্যের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এবার ভ্রমণপিপাসুদের আগমন অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটক এই লেকে ভিড় করছেন।
মাধবপুর থেকে পরিবার নিয়ে লেকে ঘুরতে আসছেন আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, ‘চা বাগানের মধ্যে লেক থাকলে এমনিতেই এর সৌন্দর্য অনেক বেশি থাকে। তার মধ্যে লাল শাপলা থাকায় একারখান পরিবেশ যেমন স্বর্গের মতো।। কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে এটিকে দেখছি। তাই আজ পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসললাম।’
বাহুবলের শাবানা আক্তার বলেন, ‘অনেক শাপলা বিল দেখেছি। কিন্তু এর সৌন্দর্য অন্যগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কারণ এর চারপাশে সবুজ চা বাগান। দিনের চেয়ে সকালে এর সৌন্দর্য বেশি থাকে। কারণ তখন চা বাগানের চারপাশে কুয়াশা থাকে।’
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া নার্গিস আক্তার বলেন, ‘কুয়াশায় ঢাকা চা বাগান দেখতে দেখতে আকাঁ-বাকা পথ ধরে এখানে আসলাম। এখানে আসার পর আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। কি নেই এখানে? চা বাগান, লাল শাপলা, সাদা বক, হাঁসের পালের ছুটোছুটি। এক কথায় অসাধারণ!
তবে পর্যটকদের এমন ভিড়ের মাঝে লেকের পরিবেশ রক্ষায় কিছু সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। অনেকেই শাপলা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন, পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল ও খাদ্যপণ্যের মোড়ক ফেলে লেকের পরিবেশ দূষিত করছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
শায়েস্তাগঞ্জ জহুরচাঁন বিবি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বাড়ির পাশে এমন সুন্দর লেক। তাই দেখতে আসলাম। তবে একটা জিনিস খুব খারাপ লাগলো। অনেকেই যাওয়ার সময় ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না এবং নিরাপত্তা কম। 'প্রশাসনের উচিৎ এটিকে পর্যটন বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা।’
স্থানীয় প্রশাসন লেকটিকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, ‘লেকের পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে সেখানে গ্রামপুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, তাদের সাথে মিলে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হবে।
লাল শাপলা প্রতীক হতে পারে ভালোবাসা, পবিত্রতা ও নির্মলতার। এটি একদিকে প্রকৃতির প্রতি মানুষের মুগ্ধতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করছে।
কাজল সরকার/মেহেদী