কুয়াশাঘেরা ভোর জানান দিচ্ছে শীতের। শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ময়না দ্বীপে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অতিথি পাখির সমাগম আরও বেড়ে যায়। এ কারণে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়না দ্বীপ সৌন্দর্য উপভোগের এক অন্যতম জায়গায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর শীত এলেই নোবিপ্রবির ময়না দ্বীপে অতিথি পাখি ভিড় জমায়। এ বছরও আগমন ঘটেছে অতিথি পাখির। কুয়াশা জড়ানো সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ময়না দ্বীপের পানিতে বিচরণ শুরু হয় তাদের। দলবেঁধে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। ময়না দ্বীপ পাখিদের স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নোবিপ্রবির সৌন্দর্য আরও বাড়বে, পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
চারদিকে পাখির কলকাকলি। কখনো মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো, আবার কখনো দলবেঁধে জলকেলিতে মত্ত থাকা এসব অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউবা ভিডিও ফুটেজ নিয়ে শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এমন দৃশ্য এখন বলা চলে নিত্যদিনের।
অতিথি পাখির কলকাকলি উপভোগ করতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সৌন্দর্যপ্রেমীরা আসছেন। ময়না দ্বীপের পাশে শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের গানের আসর বসে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ সেই গানের আসরকে করে আরও প্রাণবন্ত। ব্যস্ত ক্যাম্পাস জীবনের মাঝে একটু বিরাম পেতে প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন শত শত শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ময়না দ্বীপের জমি ইজারা দেওয়ায় বিগত বছরগুলোতে সেখানে পানি সেচ দিয়ে করা হতো চাষাবাদ। ফলে কিছুদিন থেকে আবারও ফিরে যেত এসব পাখি। তবে এবার ময়না দ্বীপে চাষাবাদ না করায় এখনো নির্ভয়ে দিন পার করছে চলতি মৌসুমে আসা অতিথি পাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা বলেন, ‘মনে প্রশান্তি এনে দেয় নোবিপ্রবিতে আসা অতিথি পাখি। প্রকৃতির মাঝে বিলীন হতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে, মানসিক শান্তি অনুভব হয়। অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস শেষ হলে মানসিক শান্তির খোঁজে শান্তিনিকেতন, মনোসরণি বা কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের পাশের মাঠে এসে বসি, ওই সময় অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ, উড়ে বেড়ানো সবকিছুই মনে অদ্ভুত শান্তি এনে দেয়।’
আরেক শিক্ষার্থী ইসমাত জাহান বলেন, ‘আমার কাছে নোবিপ্রবির সৌন্দর্য মানে তিনটি জিনিস। শরতের কাশফুল, শীতের অতিথি পাখি আর সূর্যমুখী ফুল। অতিথি পাখি নোবিপ্রবির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সারা দিনের ক্লাস শেষে মনোসরণি কিংবা শান্তিনিকেতনের টঙে বসি। ওই সময় অতিথি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। ময়না দ্বীপজুড়েই তাদের রাজত্ব। চারদিকে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুলের ভিড়ে এসব পাখি যেন ক্যাম্পাসের ১০১ একরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘গত বছর ময়না দ্বীপ ধান চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর লিজ বাতিল করি। অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ময়না দ্বীপকে অভয়ারণ্য ঘোষণার পাশাপাশি একটা প্রকল্প আমরা পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি, অতিথি পাখি যদি আমাদের এ অঞ্চল নিরাপদ মনে করে, তাহলে তারা ভবিষ্যতেও এখানে আসবে। এতে এখানকার পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়বে। কেউ যেন এসব পাখি শিকার না করে, তাদের ঢিল ছুড়ে না মারে এবং তাদের বিরক্ত না করে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’