ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

অপরূপ নীল চটক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
অপরূপ নীল চটক
গাছের ডালে বসা নীল চটক পাখি। সম্প্রতি চুয়াডাঙায়। ছবি: বখতিয়ার হামিদ

হালকা শীতের দুপুর। আর কদিন পর আসবে বসন্ত। ঢাকার রমনা পার্কের উত্তরায়ণ গেটের কাছে পলাশগাছটিতে ফুলের কলি এসেছে এবং কিছু ফুলও ফুটেছে। পলাশগাছের ফুলে অনেক পাখি আসে মধু ও ফুলে বিচরণ করা পোকামাকড় খেতে। পলাশগাছটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পলাশ ফুলে আসা পাখি দেখছি। সবুজ টিয়া, বাংলা কাঠঠোকরা, কাঠশালিক, হাঁড়িচাঁচা ফুলে-ফুলে বিচরণ করছে। মাঝে মাঝে একটি চঞ্চল পুরুষ মৌটুসি উড়ে এসে ফুলে বসে দুদণ্ড সময় কাটিয়ে আবার উড়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। তার ডাক রোমাঞ্চকর। বসন্তের আগমনে তার একজন সঙ্গী দরকার, এমনই তার ভাব-সাব। 

পলাশগাছ থেকে একটু দূরে একটি মাঝারি বহেরা গাছ। বহেরার পাতাগুলো ঝরে পড়েনি। পাতার ভেতর থেকে একটি নীল রঙের পাখি উড়ে এসে অন্য পাতার ওপর বসে উড়ন্ত পোকা ধরে খাচ্ছে। পোকা ধরার কৌশলটা অন্য রকম। প্রথমে সে উড়ে এসে পাতার ভেতরে বা পাতার গায়ে লেগে থাকা পোকাদের উড়িয়ে দেয়। তারপর উড়ন্ত পোকা ধরে খায়। পাখিটির পালকের রং তীব্র নীল। শীতের সেই দিনে জীবনে প্রথম দেখা হলো পৃথিবীর সেই পাখিটির সঙ্গে, যার নাম হলো ‘নীল চটক’ বা ‘নীল কটকটিয়া’। পালকের নীল বর্ণের জন্য জুটেছে এমন নাম। পাখিটির অন্য নামগুলো হলো অম্বর চুটকি, নীলাম্বরি ও আকাশি চটক। এটি মূলত পোকা শিকারি পাখি। পাখিটি অনেকক্ষণ ধরে বহেড়াগাছের পাতায় উড়ে উড়ে পোকা ধরে খাচ্ছিল। কী সুন্দর তার পালকের নীল রং! যখন রোদ পড়ছিল, তখন নীল রংটি আরও তীব্র হয়েছিল। চোখের কাছে কাজলের মতো টান এবং নীলপালক পাখিটিকে অনন্য করে তুলেছে। 

নীল কটকটিয়া আমাদের দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে এবং বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে দেশে সব বিভাগের বন, শহরের উদ্যানে এবং গ্রামের জঙ্গলে দেখা যায়। শীতে মূলত একাকী কিংবা ছোট দলে পাখিটি চরে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় থাকে এবং দলে মিশে না। গ্রীষ্মকালীন আবাসে সাধারণত মুক্ত বন, বনের প্রান্তর, বাগান ও জলাধারের কাছে ঝোপে বিচরণ করে। প্রজনন সময় এরা হিমালয়ে বাসা বানায়। 

এ পাখির ইংরেজি নাম ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার। নীল চটক হিমালয় থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নীল চটকের চোখের কালো দাগ এবং ধূসর ভেন্ট ব্যতীত শরীরের সমস্ত অংশে গাঢ় নীল। এই পাখির প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্করা হালকা নীল ও কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়। মার্চ থেকে জুন মাসে এরা গাছের মগডালে বসে গান গায়। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসে গাছের গর্তে, শিলার ফাটলে সবুজ শেওলা দিয়ে দুই স্তরের বাসা বানায়। তিন থেকে পাঁচটি পিত-বেগুনি রঙের ডিম পাড়ে। বাংলাদেশ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে নীল চটক পাখির দেখা পাওয়া যায়। 

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

ভেষজ উদ্ভিদ মটকিলা

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩২ এএম
ভেষজ উদ্ভিদ মটকিলা
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় কলেজ রোড এলাকার মটকিলা গাছ। ছবি: লেখক

গ্রামে আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে গেছেন, টুথব্রাশ বা টুথপেস্ট নিয়ে যাননি। সকালে উঠে বাড়ির পেছন থেকে মটকিলার ডাল ভেঙে মুখে একটু চিবিয়ে থেঁতলে নিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফেললেন। অনেকের এই অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলায় বাড়ির পেছনে, বনের ধারে মটকিলা গাছে পাকা ফল খুঁজে বেড়িয়েছি অন্য বাচ্চাদের মতো আমিও। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দার কলেজ রোড এলাকায় রাংসা নদীর ধারে মটকিলা গাছের দেখা পেলাম।

মটকিলা কাষ্ঠল, গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি উচ্চতায় এক থেকে পাঁচ মিটার হয়। এর অন্যান্য বাংলা নাম আঁশশেওড়া, কওয়াটুটি, মটমটি ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Glycosmis Pentaphylla, এটি Rutaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ ইংরেজিতে Orange berry, Gin berry, Toothbrush plant, Motar tree ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই উদ্ভিদ মারমাদের কাছে ‘তাতিয়াং’, চাকমাদের কাছে ‘হতিজ্ঞিরা’, গারোদের কাছে ‘মোয়াতন’ নামে পরিচিত।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিলিপিন্স, দক্ষিণ চীন, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় এই উদ্ভিদ।

মটকিলার কিছু কিছু গাছ ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। কাণ্ড বেশ শক্ত এবং রং ধূসর। কাণ্ডের দেড় থেকে ২ ফুট পর্যন্ত কোনো ডালপালা হয় না বললেই চলে। কাণ্ডের বেড় দেড় থেকে আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পাতার রং সবুজ। পাতা একপক্ষল, উপবৃত্তাকার, দৈঘ্য ৩-৪ ইঞ্চি। মাঝ বরাবর এর প্রস্থ ২-২.৫ ইঞ্চি। পাতা পাতলা, মসৃণ। মটকিলার ফুল খুব ছোট। ফুলের রং সবুজাভ সাদা। ফুলের ব্যাস ৫-৭ মিলিমিটার। প্রতি ফুলে পাঁচটি করে পাঁপড়ি থাকে। এর ফুল হালকা মিষ্টি গন্ধযুক্ত। পাতা দেখতে লেবু পাতার মতো। 

আসলে লেবু, কমলা, জাম্বুরা আর মটকিলা একই গোত্রের, তাই এই মিল। ফল সবুজ রঙের, মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। একটি গুচ্ছে ২০-৫০টি পর্যন্ত ফল থাকে। কাঁচা ফলের রং সবুজ। পাকা ফলের রং গাঢ় গোলাপি, গোলাকার। ফল রসাল, বেশ মিষ্টি। তবে ফলে সামান্য তেতোভাব আছে। পাখি ও শিশুদের প্রিয় এই ফল। মটকিলার ফলের ভেতর দ্বিবীজপত্রী গোলাকার বীজ থাকে। মটকিলার চারা জন্মায় বীজ থেকে। 

মটকিলা বেশ কয়েক বছর বাঁচে। প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে। পানি পেলে সারা বছর জন্মায়। বাংলাদেশের সর্বত্র এদের দেখা মেলে। এরা যেকোনো পরিবেশে সহজেই অভিযোজিত হতে পারে। রাস্তার দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির পেছনে, পুরোনো দালানের ইটের খাঁজে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে, ঘন ঝোপের আড়ালে প্রায় সব জায়গাতেই জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারে এরা। 

লিভারের সমস্যা, কাশি, জন্ডিস, বাত, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় এ উদ্ভিদের ব্যবহার দেখা যায়। গ্রামের মানুষ এ গাছের ডাল দাঁত মাজার কাজে ব্যবহার করে। মটকিলার পাতা আদার সঙ্গে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়, যা চর্মরোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়। গাছের মূল সেদ্ধ করে তৈরি করা হয় এক ধরনের ক্বাথ, যা মুখমণ্ডলের প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

চট্টগ্রামে সৌন্দর্য-সুবাসে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৪ এএম
আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
চট্টগ্রামে সৌন্দর্য-সুবাসে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে চট্টগ্রামের ডিসি পার্ক। ছবি: খবরের কাগজ

চারপাশে শুধু ফুল আর ফুল। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, গোলাপিসহ নানা রঙের ফুলের সুগন্ধ ও সৌন্দর্যে ছেয়ে গেছে পার্কের পুরো এলাকা। আর এ সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাটে ডিসি পার্কে আয়োজিত ফুল উৎসবের কথা।

এ বছর ডিসি পার্কে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ফুল উৎসব। ৩ জানুয়ারি  শুরু হয় এ উৎসব। মাসব্যাপী এ আয়োজনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি এ উৎসব শেষ হবে। এবার প্রত্যেক দর্শনার্থীর পার্কে প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে জোড়া পুকুরের পশ্চিম পাশে মূলত ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সে স্থান সাজানো হয়েছে লাখের বেশি ফুলের চারা দিয়ে। দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির ফুল রয়েছে এখানে। দেশি ফুলের মধ্যে রয়েছে ১৫ প্রজাতির গাঁদা, জবা, কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুল।

উৎসবে যেসব ফুল রাখা হয়েছে তার বেশির ভাগই শীতকালীন বিদেশি প্রজাতির। বিদেশি ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টকস, গ্যাজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নেক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, চেরি, জারবেরা, উইলো, উইস্টেরিয়া, কনকাম্বরি, হাইব্রিড জবাসহ আরও শতাধিক জাতের ফুল।

ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে মিলছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহারি রকমের পিঠা-পুলিসহ নানান খাবারের স্বাদ। আছে শিশুদের জন্য আলাদা কিডস জোন।

উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় গায়কদের পাশাপাশি সারা দেশের শিল্পীরা এখানে অংশগ্রহণ করছেন। গত বছর উৎসবটি ১৫ দিনব্যাপী হলেও এ বছর তা বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে।

প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এ সৌন্দর্য দারুণভাবে উপভোগ করছেন। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকেও দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন। এভাবেই সাগরপাড়ের জেলাতে সুবাস ছড়াচ্ছে ডিসি পার্কের ফুলের বাগান।

ডিসি পার্কে কথা হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা থেকে আসা পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে। তারা বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও টানেল দেখতে এসেছিলাম। সেখান থেকে ডিসি পার্কে এসেছি। এখানে ব্যাপক আয়োজন দেখে অবাক হয়েছি। পুরো পার্কটা ফুলে ফুলে সজ্জিত। ফুলের রাজ্যে অন্য রকম ভালো লাগছে।’

সীতাকুণ্ড থেকে আসা ওমরগনি এমইএস কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান মুনমুন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক) এবং বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে ডিসি পার্কের ফুলের ছবি দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠি। তাই নিজ চোখে দেখতে এলাম। এখানে এসে দেখার পর সত্যি লাখো রঙিন ফুলের সুবাসে আমি বিমোহিত হয়েছি। আমরা গত বছরও এ পার্কে এসেছিলাম। সন্ধ্যার পর ভাবলাম ভিড় কম হবে। কিন্তু দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর বেশি মানুষ এসেছে।’

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন ব্যাংকার জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি ডিসি পার্কে প্রথমবার এসেছি। পার্কের বেশির ভাগ ফুল বিদেশি প্রজাতির, যা আগে কখনো দেখিনি। তাই তো ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। পাশাপাশি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের খাবার রয়েছে। শিশুদের জন্য বিনোদনের নানা ব্যবস্থা থাকায় বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে। এমন মনোমুগ্ধকর আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’

গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফুলের উৎসব ঘিরে ডিসি পার্কে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যাবেলায় এত মানুষ আসে যে মানুষকে ঢোকার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একজন বের হলে অন্যজন ঢোকার সুযোগ পায় এমন অবস্থা। ভেতরে লোকজনের চাপে হাজার হাজার দর্শনার্থী পার্কের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসার সদস্যরা বলেন, শুক্রবার ডিসি পার্কে লাখের ওপরে দর্শনার্থী আসায় বাড়তি চাপে পড়তে হয়। এতে করে দর্শনার্থীদের শৃঙ্খলায় রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। এ ছাড়া টিকিট নিয়ে আবার অনেকে টিকিট না নিয়েই দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। এ সময় বাধা দিলে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ান অনেকে। অনেকে চেয়ারের ওপরে উঠে নাচানাচি করেছেন। অতিথিদের চেয়ার নিয়েও টানাটানি করেন অনেকে। পার্কে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় এক লাখের মতো মানুষে এসেছে পার্কে। এতে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ টিকিট নিয়ে প্রবেশ করলেও সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান চলাকালে প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতির চেয়ে বেশি দর্শক এসেছে। অনুষ্ঠান চলাকালে অতিথিদের চেয়ার দখল করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কিছুটা বিড়ম্বনা তৈরি হয়। পরে মাইকিং করে দর্শকদের বুঝিয়ে শান্ত করে পুনরায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়।’

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর থেকে পযর্টকদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এটি টাইগার পাস থেকে পতেঙ্গা হয়ে ডিসি পার্কে দর্শনার্থীদের নিয়ে আসবে। আবার একই রুট হয়ে গাড়ি টাইগার পাস ফিরে যাবে। এ ছাড়া এখানে দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি এখানে এসে এ ফুল উৎসবকে উপভোগ করার জন্য।’

তিনি জানান, এবারের ফুল উৎসবে বেশ কিছু নতুনত্ব রয়েছে। ১২টি দোকান নিয়ে গ্রামীণ মেলা বসবে, যা আগে ছিল না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল, বই উৎসব, ঘুড়ি উৎসব, ফুলের সাজে একদিন, পিঠা উৎসব, লেজার লাইট শো, ভিআর গেইম, মুভি শো, ভায়োলিন শো, পুতুলনাচসহ নানা রকমের আয়োজন।

লাখো ফুলে সেজেছে চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
লাখো ফুলে সেজেছে চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক
চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে গত ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় বারের মতো মাসব্যাপী ফুল উৎসব। চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, টিউলিপ, উইস্টেরিয়াসহ ১৩৬ প্রজাতির দেশি-বিদেশি দুই লাখের বেশি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।

দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা।

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের দক্ষিণ পাশে ডিসি পার্ক। এই পার্কটি ১৯৪ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে মানুষ যাতে কিছুটা একান্তে সময় কাটাতে পারে তাই এ ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

এবার ফুল উৎসবে ভাসমান ফুল বাগান থেকে শুরু করে গ্রামীণ মেলা বসেছে। বই উৎসব, পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসবসহ আরও নানা ধরনের উৎসবও আছে।

শিশুদের জন্য আলাদা কিড্স জোন তৈরি করা হয়েছে এবং কেউ ফুলের চারা কিনতে চাইলে তাদের জন্য নার্সারির স্টলও করা হয়েছে।

ডিসি পার্কে পর্যটকদের বসার স্থান, সেলফি কর্নার, অনুষ্ঠানস্থল, ভাসমান ফুল বাগান, হাঁটাচলার উন্মুক্ত স্থান, অস্থায়ী খেলার মাঠ, স্থায়ী ফুলের বাগান, শিশুদের খেলার মাঠ, ভিআইপি জোন, কন্ট্রোল রুম, রেস্টুরেন্ট, ফুড কর্নার, সানসেট ভিউ পয়েন্ট, টিউলিপ গার্ডেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান কর্নার রয়েছে।

অপরূপা সোনাবউ

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬ এএম
আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬ এএম
অপরূপা সোনাবউ
আমডালে সোনাবউ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তোলা। ছবি: লেখক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা ও পাগলা নদী দেখতে গিয়ে আমবাগানের অনেক পাখির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এক দিন দুপুরে আমবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় ঘন আমগাছের সবুজ পাতার মধ্যে খোঁজ পাই হলুদ বর্ণের এক পাখির। সবুজ পাতার ভেতর তার সোনালি-হলুদ রং এবং সেই সঙ্গে গোলাপি ঠোঁট চোখ জুড়িয়ে দিয়েছিল আমার। গাছের ডালে ডালে সামান্য বিরতি দিয়ে উড়ে উড়ে পোকা খাচ্ছিল অপরূপা সোনাবউ পাখি। চুপ করে আমডালে কিছুক্ষণ বসে থাকে। মানুষ দেখলে একটু আড়ালে যেতে চায়। ডালের আগায় আগায় চড়তে পছন্দ করে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে পর্যবেক্ষণ করার পর পাখিটি অদূরে আমের ঝোপে উড়ে যায়।

হলুদ বর্ণের এই পাখি গ্রামের মানুষের কাছে হলদে পাখি, হইলদা পক্ষী, ইষ্টিকুটুম, সোনাবউ ও বেনেবউ নামে পরিচিত। সারা পৃথিবীতে ২৭ প্রজাতির বেনেবউ ও সোনাবউ আছে। আমাদের দেশে আছে পাঁচ প্রজাতির। এরা হলো কালাঘাড় বেনেবউ, সরুঠোঁট বেনেবউ, কালামাথা বেনেবউ, তামারং বেনেবউ এবং সোনাবউ। এদের মধ্যে তামারং বেনেবউ পাখির দেহে কোনো হলুদ রং নেই। 

সোনাবউকে বৃক্ষবহুল, অর্ধচির সবুজ বন, ফলের বাগান এবং গাছসমেত শহরে কালেভদ্রে দেখা মেলে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে রসালো ফল, ফুলের মধু ও পোকা। শীত মৌসুমে সোনাবউ নীরব থাকে, কিন্তু গ্রীষ্মে কর্কশ গলায় ডাকাডাকি করে ‘হুয়িলা-হুয়ি-ওহ’ শব্দে। এটি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বনে পাওয়া যায় সোনাবউ পাখি। ঢাকার রমনা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গ্রীষ্ম মৌসুমে পাখিটি কয়েকবার দেখেছি। 

সোনাবউ লাল চোখ ও নীল পায়ের উজ্জ্বল হলুদ রঙের পাখি। উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার, ওজন ৬৫ গ্রাম। মেয়ে ও ছেলে পাখির চেহারা কিছুটা ভিন্ন। ছেলে পাখির ডানার মধ্যে ও গোড়ার পালক হলুদ, ডানার প্রান্তের পালক ঢাকনিসহ কালো। হলুদ ও কালো লেজ ছাড়া পুরো দেহ উজ্জ্বল সোনালি হলুদ। চোখ গাঢ় লাল, পা ও পায়ের পাতা শ্লেট নীল। মেয়ে পাখির পিঠের দিকটা হলো সবুজ ও দেহের নিচের দিকে ডোরাকাটা, চোখ বাদামি-গাঢ় লাল। তরুণ পাখির অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল পিঠ ও পেটে মোটা ডোরা আছে। মার্চ-আগস্টে ৬-১২ মিটার উঁচুতে লম্বা ডালের প্রান্তে ঘাস ও আঁশ দিয়ে বাটির মতো বাসা বানিয়ে এরা ২-৪টি সাদা ডিম পাড়ে। সোনাবউ পাখিটি কেবল ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশেই দেখা যায়। 
এ পাখির ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়ান গোল্ডেন অরিওল’। পূর্বে ইউরেশিয়ান গোল্ডেন অরিওলের একটি উপপ্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো ইন্ডিয়ান গোল্ডেন অরিওলকে। কিন্তু এখন এটি একটি সম্পূর্ণ প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের চোখের পেছনে প্রসারিত চোখের স্ট্রাইপের কালো দ্বারা ইউরেশীয় সোনালি অরিওল থেকে সোনাবউকে আলাদা করা যায়। 

লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার

পটুয়াখালীতে বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
পটুয়াখালীতে বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার
ছবি : খবরের কাগজ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চার ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিলুপ্তপ্রায় লাউডগা সাপ উদ্ধার করেছে সেচ্ছাসেবী প্রাণী কল্যান ও পরিবেশেবাদী সংগঠনের অ্যানিম্যাল লাভার্স অব পটুয়াখালী সদস্যরা।

শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে কলাপাড়ার ৩নং লালুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হাসনাপাড়া গ্রামের একটি বসতবাড়ি থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সাপটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

একটু সুস্থ হলে পরে সাপটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হবে।

উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের লম্বাটে, নলাকার, নাক লম্বা এবং সুচালো মৃদু বিষধর এ লাউডগা সাপের প্রধান খাবার ব্যাঙ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। 

সাপটি উদ্ধার করেন অ্যানিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালী সংগঠনের সাপ ও বন্য প্রাণী উদ্ধারকর্মী মো. আদনান রাকিব। তিনি বলেন, দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাপটি উদ্ধার করি। সচরাচর এসব সাপ দেখা যায় না।

এই সংগঠনের কলাপাড়া শাখার টিম লিডার বায়জিদ মুন্সি বলেন, সাপটিকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি। সাপটি কিছুটা সুস্থ হলে বন বিভাগের সহায়তায় আমরা এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করব। এর আগেও আমরা বেশ কিছু সাপ, পাখি ও বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছি।

হাসিবুর রহমান/অমিয়/