ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

হাওয়ায় দোলে মালতীলতা

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
হাওয়ায় দোলে মালতীলতা
ময়মনসিংহ টাউন হলের বৃক্ষমেলার স্টলে মালতীলতা। ছবি: লেখক

এ বছরের জুলাই মাসে ময়মনসিংহের টাউন মাঠের এক স্টলে মালতীলতার দেখা পেলাম।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  মালতীকে নিয়ে লিখেছেন- 
‘ঐ মালতীলতা দোলে পিয়াল তরুর কোলে, পুব-হাওয়াতে।
মোর হৃদয়ে লাগে দোলা, ফিরি আপনভোলা--.
মোর ভাবনা কোথায় হারা মেঘের মতন যায় চলে।’
 মালতীলতা  কাষ্ঠল, লতাজাতীয়,  বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aganosma dichotoma,এটি Apocynaceae  পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এই ফুলের অন্যান্য নামের মধ্যে Malati, Clove scented echites, Malati Paalamalle, Mogari, Gondhomaloti, Maalatilata ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর আদি নিবাস বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ। এ উদ্ভিদ রয়েছে রমনা পার্ক, শিশু একাডেমির বাগান, ধানমন্ডির ছায়ানট ভবন প্রাঙ্গণ ও মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় এসেছে মালতীলতা। 
‘একদিন খুঁজেছিনু যারে
বকের পাখার ভিড়ে বাদলের গোধূলি-আঁধারে,
মালতীলতার বনে, কদমের তলে’
মালতীলতার পাতা উপবৃত্তাকৃতির, তেজপাতার মতো। এর পাতা ও পাতার বিন্যাস কম সুন্দর নয়। পাতা পরস্পরের বিপরীতে জোড়ায় জোড়ায় লাগানো, বোঁটা ও শিরা লালচে। পাতার শিরা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গাছ বেশ কষ্টসহিষ্ণু। বর্ষা শেষে কাক্ষিক মঞ্জুরিতে সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল গোছায় গোছায় ফোটে। ফুল সাদা, সুগন্ধি, গড়নের দিক থেকে অনেকটা শিউলি ফুলের মতোই, তবে পাপড়ি মোড়ানো। বৃতি ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও চোখা। প্রস্ফুটনকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর।
এই লতা দেয়ালে ও রেলিংয়ে স্থাপনের উপযোগী। বীজ ও দাবাকলমের মাধ্যমে মালতীলতার বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। অনেকে মালতীকে মধুমালতী কিংবা মাধবীলতা বলে ভুল করেন।
ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় এর আয়ুর্বেদিক ব্যবহার আছে। ব্রংকাইটিস, কুষ্ঠ, চর্মরোগ, মূত্রসংক্রান্ত  জটিলতায়  আলসার, প্রদাহে এই উদ্ভিদের ব্যবহার রয়েছে। বমিরোধে পাতা ব্যবহৃত হয়। ফুলের ক্বাথ ব্যবহৃত হয় চোখের সমস্যায়।

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

দুই পুরুষ কুমিরের মারামারি

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
দুই পুরুষ কুমিরের মারামারি
ছবি : খবরের কাগজ

গাজীপুর সাফারি পার্কে একটি নারী কুমির নিয়ে দুইটি পুরুষ কুমিরের মারামারিতে একটি কুমির আহত হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এই ঘটনা ঘটে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, একই বেষ্টনীতে তিনটি কুমির ছিল। সবগুলো কুমিরই সমবয়সী। এই তিনটির মধ্যে একটি স্ত্রী কুমির। স্ত্রী কুমিরটিকে নিয়েই দুই পুরুষ কুমির মারামারিতে লিপ্ত হয়। এ সময় একটি পুরুষ কুমির আহত হয়। অপর পুরুষ ও স্ত্রী কুমিরটি সুস্থ আছে।

পরে কুমিরের বেষ্টনীর পানি সেচ দিয়ে আহত কুমিরকে চিকিৎসা দিয়ে অন্য আরেকটি বেষ্টনীতে রাখা হয়।

সহকারী বন সংরক্ষক বলেন, এটা কুমিরের স্বভাবগত আচরণ। খাবারের জন্য কুমির কখনো মারামারি করে না। তবে, অনেক সময় প্রাধান্য বিস্তার করতে গিয়ে এগুলো মারামারি করে থাকে।

পলাশ প্রধান/অমিয়/

জাহাঙ্গীরনগরে কমেছে অতিথি পাখির আগমন

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ এএম
জাহাঙ্গীরনগরে কমেছে অতিথি পাখির আগমন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি। ছবি : সংগৃহীত

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জলাশয়ের পানিতে ভেসে থাকা শাপলা পাতার ওপর অতিথি পাখির জলকেলি, তাদের দলবেঁধে উড়ে যাওয়া ও মনোমুগ্ধকর কিচিরমিচির শব্দ— শীতকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাশয়ের চিত্র এমনই দেখা যেত। কিন্তু এখন যেন সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। জাবিতে কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির সংখ্যা।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় শীতকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে অতিথি পাখিরা আসত। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে জাবির লেকগুলোতে প্রথমবারের মতো অতিথি পাখি আসে। এরপর ২০১৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবন-সংলগ্ন লেক, বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র (ওয়ালইড লাইফ রেসকিউ সেন্টার), জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল-সংলগ্ন লেক ও পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকগুলো অতিথি পাখির মূল অভয়ারণ্য। এখন লেকগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর ক্যাম্পাস। তবে দুই-তিন বছর আগের তুলনায় তা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।

অতিথি পাখি আসার আগে তাদের সুস্থ ও সুন্দর আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ দায়িত্বে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত লেকগুলো পরিষ্কার করে থাকে। তাদের নিরাপদ আশ্র‍য় নিশ্চিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতা ও তথ্যমূলক ব্যানার, ফেস্টুন টানায়। এ বছরও এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।

অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় জলাশয়গুলোতে ফোটা লাল শাপলা। লাল শাপলার চাদরে পাখিদের বিচরণের দৃশ্য মন কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।

প্রতিবছর শীতপ্রধান দেশ মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সাইবেরিয়া ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর দিকে দেশে আসতে শুরু করে পাখিরা। বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখিদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারি অন্যতম। এ ছাড়া আছে খঞ্জনা, পান্তামুখী, নর্থগিরিয়া, কমনচিল, কটনচিল, পাতিবাটান, পান্তামুখী, বুটি হাঁস, বৈকাল ইত্যাদি প্রজাতির পাখি। তবে জলাশয়গুলোয় পাতি সরালির বিচরণই বেশি লক্ষণীয়।

অতিথি পাখি দর্শনের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ভোরে ও সূর্য ডোবার আগে। এ সময় পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায় জলাশয়ের ওপর। নিভু নিভু সূর্যের আলো, শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে শত শত পাখির কিচিরমিচির শব্দে এই সময়ে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাইরের অনেক দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন তারা।

ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা হৃদয় হাসান নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতি বছরই আপনাদের ক্যাম্পাসে আসি অতিথি পাখি দেখতে। ঢাকা শহরে এই সুযোগটি নেই। বাসার ছোট ছেলেমেয়েদের এনেছি এবার। তারাও এই সময়টা খুব উপভোগ করছে।’

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আগের তুলনায় গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা অনেকটাই কমে গেছে। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোর পাখিদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জলাশয়ে পাখিরা থাকে, সেগুলো এখন তাদের বসবাস-উপযোগী নয়। জলাশয়গুলোর আশপাশে অধিক লোকসমাগম ও শব্দদূষণই এর প্রধান কারণ।’

‘পরিবহন চত্বরের পেছনে যে লেক, সেই লেকের ধারে সারা দিনই লোকজন থাকে। এর জন্য পাখিরা ওই লেকে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তা ছাড়া অন্যান্য লেকেও এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম।’

ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় যে লেক, সেটি হচ্ছে ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার-সংলগ্ন লেকটি। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় ওই লেকে পাখির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে লেকটি এখন পানা দিয়ে ভরে গেছে। পরিষ্কার না হওয়ায় পাখিরা লেকজুড়ে বসতে পারে না। অল্প কিছু অংশে পাখি বসে। তবে এবার প্রশাসন লেকটি পরিষ্কার করেনি। আমি নিজে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কয়েকবার বলেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত না করা হলে পাখির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগরের অতিথি পাখি তথা সব বন্যপ্রাণীর জন্য সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘এ বছর গতবারের তুলনায় পাখি বেশ কম এসেছে। আটটি লেকের মধ্যে মাত্র দুটিতে পাখি বসতে দেখা গেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই পাতি সরালি। ডব্লিউআরসি-সংলগ্ন লেক বাদে, অন্য একটি লেকে পাখি বসলেও মাত্র দুই হাজারের কাছাকাছি পর্যবেক্ষণ করা গেছে। অধিকাংশ লেক কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় পাখিরা সেখানে বসতে চায় না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য। কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে দেখছি উল্টো চিত্র। আগের মতো আর পাখি নেই। জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘অতিথি পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে আমরা অবগত। কিন্তু প্রশাসনের উচ্চস্তরের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।’

অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, গাছ কাটা, লেক ভরাট, পরিষ্কার না করাসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে পারলেই অতিথি পাখির আগমন আবারও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব লেক পরিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে আবার স্থানীয় জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ কম হওয়ায় বুনো হাঁসগুলো বসছে না, যদিও মাছ শিকারি পাখিগুলো, যেমন— পানকৌড়ি, সাপপাখি, মেটে মাথা কুড়া ঈগল ইত্যাদি এখানে দেখা গেছে।’

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘আসলে এটা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের সমস্যা নয়, পুরো দেশেই বর্তমানে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের জাবিতে যে বিষয়টা, পাখির আবাসস্থল লেকগুলো ঠিক আছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন এবং এগুলোর আলো পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কেননা পাখিদের বিচরণ স্বভাবতই রাতে বা ভোরবেলায় বেশি হয়ে থাকে।’

‘আমরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে গত ৩ জানুয়ারি পাখিমেলার আয়োজন করে দেশবাসীকে আসলে পাখি আবাসস্থল সংরক্ষণ আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মেসেজটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘পাখি কমে যাওয়ার জন্য বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণ, যা পাখিদের বিচরণে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া রয়েছে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ (অতিরিক্ত যানবাহন থেকে তৈরি শব্দদূষণ) ও পাখির খাদ্যসংকট। পাখি আসলে ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে, কিন্তু এই খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা কমে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখবেন যে, পুকুরগুলো পরিষ্কার করে প্রতিটি পুকুরে পাখির বসার জন্য নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লেক সংস্কার করেছি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে। এ ছাড়া আগে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হতো, কিন্তু বর্তমানে পাখির খাদ্যের কথা চিন্তা করে আর লিজ দেওয়া হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা বিবেচনায় রেখেছি, কীভাবে পাখির আগমন বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশে আবহমান জীববৈচিত্র্যের এক অপরূপ সৌন্দর্য এই অতিথি পাখির আগমন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেই অতিথি পাখি জাহাঙ্গীরনগর থেকে সরে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার। সূত্র: ইউএনবি

হৃদয় রাঙানো রঙ্গন ফুল

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ এএম
হৃদয় রাঙানো রঙ্গন ফুল
খুলনা শহিদ হাদিস পার্কে ফোটা রঙ্গন ফুল। ছবি: লেখক

মাঘ মাস, তাই শীতটাও বেশ লাগছে। বেলা প্রায় ১১টা। তাই রোদের তাপটা মন্দ লাগছে না। খুলনায় শহিদ হাদিস পার্কের দখিনা তোরণ দিয়ে সোজা হাঁটতে হাঁটতে প্রায় উত্তরা তোরণের কাছে চলে গেলাম। বাঁয়ে গোধূলি তোরণ, ডানে পূর্ব দিকে বিশাল দিঘি। দিঘির পাড় ধরে চারদিকে চমৎকার হাঁটার পথ। সে পথের ধারে বেশ বড় বড় ৬৯টি ঝোপালো রঙ্গনগাছ। এক সারিতে এতগুলো শোভাময়ী রঙ্গনগাছ খুব কম দেখা যায়। 

বর্ষাকাল হলো রঙ্গনের রঙিন হওয়ার সময়। বড় বড় লাল টুকটুকে থোকা ধরা ফুলে গাছের ডালপালা ভরে থাকে। শীতে সেভাবে ফোটে না। তবুও দেখা গেল, প্রায় সব গাছেই স্বল্প হলেও থোকা ধরে কিছু ফুল ফুটে রয়েছে। 

রঙ্গন একটি চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ ও গুল্মপ্রকৃতির উদ্ভিদ। রঙ্গন রুবিয়েসি গোত্রের ইক্সোরা (Ixora) গণের উদ্ভিদ। ১৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে রঙ্গনের এই গণগত নামকরণ করেন লিনিয়াস। সারা পৃথিবীতে এ গণের এ পর্যন্ত ৫৪৪ প্রজাতির রঙ্গন আছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে আছে ১৮ প্রজাতির রঙ্গন। প্রজাতিভেদে রঙ্গনগাছের ধরন, পাতার আকার ও ফুলের রঙের পার্থক্য হয়। 

সাধারণভাবে রঙ্গনগাছের পাতা ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ডালের আগায় খোঁপার মতো থোকায় প্রচুর ছোট ফুল ফোটে। ফুলগুলোর পুষ্পনল লম্বা ও সোজা, পুষ্পনলের মাথায় চার পাপড়ি থাকে চারদিকে ছড়িয়ে। প্রজাতি ও জাতভেদে পাপড়ির অগ্রভাগ চোখা ও ভোঁতা হয়, রং ঘন লাল থেকে গোলাপি, কমলা, হলুদ, সাদা, এমনকি দোরঙা রঙ্গনও হয়। আমরা সচরাচর যে বড় বড় থোকার টকটকে লাল ফুল ও বড় বড় পাতার রঙ্গনগাছ দেখি, সেটি ইক্সোরা কক্সিনিয়া প্রজাতির। এর অন্য নাম লালরঙ্গন ও রঞ্জন। ইক্সোরা একুমিনাটা প্রজাতির গাছ লম্বা, উচ্চতায় প্রায় তিন মিটার পর্যন্ত হয়। পাতা উপবৃত্তাকার, বড়, চকচকে সবুজ। ফুল সাদা ও সুগন্ধযুক্ত। এ জন্য একে সুরভীরঙ্গনও বলা হয়। ইক্সোরা আলিপোরেনসিস একটি হাইব্রিড রঙ্গন। এ প্রজাতির গাছ উচ্চতায় ১ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। ফুল বড় খোঁপার মতো থোকা ধরে ফোটে, ফুলের রং কমলা। ইক্সোরা লুটিয়া প্রজাতির পাতা বড়, ফুল হলুদ। এ প্রজাতির লাল ফুলও আছে। ইক্সোরা ডাফি প্রজাতিকে বলা হয় রক্তরঙ্গন। এর ফুল টকটকে লাল, পাতা অনেক বড়। ইক্সোরা সিঙ্গাপোরেনসিস প্রজাতির রঙ্গনকে সিঙ্গাপুরি রঙ্গন নামে ডাকা হয়। এর পাতা বড়, ফুল লাল। ইক্সোরা চাইনেসিস প্রজাতির রঙ্গনের গাছ, পাতা ও ফুল ছোট, গোলাপি রঙের পাপড়ি। একে বলা হয় চাইনিজ রঙ্গন। ইক্সোরা আনডুলাটা প্রজাতির রঙ্গন এ দেশে পলকজুঁই নামে পরিচিত এবং বেওফুল বা বিজু ফুল নামে পরিচিত ইক্সোরা কিউনিফোলিয়া প্রজাতির রঙ্গন। শ্বেতরঙ্গন হলো ইক্সোরা প্যাভেটা ও কুঠি রঙ্গন বলা হয় ইক্সোরা নাইগ্রিকানস প্রজাতির রঙ্গনকে। 

উদ্ভিদের গণগত নামের উৎসগুলো হয় সাধারণত লাতিন শব্দ থেকে। কিন্তু ‘ইক্সোরা’ শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে সংস্কৃত শব্দ থেকে। বাংলাদেশের ডিকশনারি অব প্ল্যান্ট নেমস গ্রন্থে ইক্সোরা শব্দের উৎপত্তি ঈশ্বরী থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈশ্বরী হলো শিবের স্ত্রী পার্বতীর আরেক নাম, যাকে পৌরাণিক কালে এই ফুল নিবেদন করা হয়েছিল। অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের উদ্ভিদ অভিধান গ্রন্থে বাংলা নাম রঙ্গনকে আচ্ছুকাদিবর্গের পুষ্পক্ষুপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; যার ফুল লাল, চতুর্দল, অনেক ও গুচ্ছাকারে ফোটে। রঙ্গনের গাছ ক্ষুপ বা ঝোপবিশিষ্ট। তাই রঙ্গন বলতে আমরা প্রধানত লাল রঙ্গনকেই চিনি। এ জন্য হয়তো রঙ্গনের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে জাংগল ফ্লেইম। গুটি কলম, কাটিং বা শাখা কলম করে এর চারা তৈরি করা যায়।

এত সব রঙ্গনের হদিস করা উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কাজ, প্রকৃতিরসিক ও কবিদের কাজ না। কাজী নজরুল ইসলামও রঙ্গন বলতে টকটকে লাল রঙ্গন ফুলকেই বলেছেন তার কবিতায়। রঙ্গন ফুলের রংকে তিনি তুলনা করেছেন রক্তের রঙের সঙ্গে। ‘দোলনচাঁপা’ কাব্যের আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবিতার দুটি পঙ্‌ক্তিতে রয়েছে রঙ্গনের উল্লেখ। ‘আজ রঙ্গন এলো রক্ত প্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে/ আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!’ আবার সিন্ধু-হিন্দোল কাব্যের ফাল্গুনী কবিতাতেও দেখা মেলে সেই লাল রঙ্গনের। 

শীতের ফুল পিটুনিয়া

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১১ এএম
আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৭ এএম
শীতের ফুল পিটুনিয়া
ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের বাংলাদেশ নার্সারির বিক্রয়কেন্দ্রে পিটুনিয়া (Petunia)। ছবি: লেখক

প্রতিদিন সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ধরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে হাঁটতে যাই। ফেরার সময় নার্সারিতে ঢুঁ মারি। উদ্দেশ্য নতুন কোনো উদ্ভিদের দেখা পাই কি না। কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ শহরের কাচারিঘাটে হিমু আড্ডা রেস্তোরাঁর পাশে বাংলাদেশ নার্সারির বিক্রয়কেন্দ্রে দারুণ রঙের সব পিটুনিয়ার দেখা পাই। সাদা, লাল, বেগুনি, হলদে, নীল বিভিন্ন রঙের পিটুনিয়া রয়েছে এখানে। পিটুনিয়া শীতের মৌসুমি ফুল। নানান রঙের পিটুনিয়া বাগান ও বারান্দার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।

মে-জুন মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে এই উদ্ভিদে। পিটুনিয়ার একটি প্রজাতির নাম Petunia hybrida, এটি Solanaceae পরিবারের বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। Petunia এসেছে ব্রাজিলিয়ান শব্দ Petein থেকে। Petunia axillaris এবং Petunia violacea- এর পরাগায়নের মাধ্যমে Petunia hybrida তৈরি করা হয়। এ উদ্ভিদের কাণ্ড দুর্বল। পাতা পুরু এবং লোমশ। এটি ২৪ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার উঁচু হতে পারে। এই ফুলগাছের আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা। 

পিটুনিয়া ফুল বিভিন্ন রংয়ের হয়। শীতের মাঝামাঝি পিটুনিয়ার কলি বের হয়, বসন্তে ফুল ফোটে ও তা গরমে ঝরে যায়। তিন মাসের মতো বেঁচে থাকে এই ফুলগুলো। এই ফুল সুন্দর সুগন্ধি ছড়ায়। ছবির পিটুনিয়াটিতে ডোরাকাটা আছে বলে নার্সারিওয়ালাদের কাছে তা ‘টাইগার পিটুনিয়া’ নামে পরিচিত।

পিটুনিয়া ফুল থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফুলের পাপড়িগুলো যতই ঘন হবে, ততই উদ্ভিদ আরও সুগন্ধযুক্ত হবে। পরাগায়নের জন্য প্রজাপতিসহ অন্য পতঙ্গ আকর্ষণ করতে ফুল মিষ্টি গন্ধ নিঃসরণ করে। 

মায়া এবং ইনকা সভ্যতার মানুষরা বিশ্বাস করত যে পিটুনিয়ার ঘ্রাণে আন্ডারওয়ার্ল্ড দানব এবং আত্মাদের তাড়ানোর ক্ষমতা আছে। Pitunia গণে প্রজাতির সংখ্যা ২০টি । পিটুনিয়ার জনপ্রিয় জাতগুলো হলো ব্লু বার্ড, রোজ অব হেভেন, লেডি বার্ড, কনব্লু,কংলো, কনস্ট্রো, ক্লেফ, স্টর্ম ল্যাভেন্ডার, স্টর্ম পিঙ্ক, স্টর্ম সালমন, সানটোসল, কেরপ্রিল ইত্যাদি।

দোআঁশ মাটি পিটুনিয়া চাষের উপযোগী। এর বীজ খুব ছোট। তাই সমানভাবে যাতে বীজতলায় বীজ পড়ে সেজন্য বীজের সঙ্গে মিহি বালি মিশিয়ে বীজ বোনা উচিত। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

বাতাসে আম্রমুকুলের ঘ্রাণ

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
বাতাসে আম্রমুকুলের ঘ্রাণ
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের একটি আমবাগানে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের ঘ্রাণ। ছবিটি গতকাল তোলা খবরের কাগজ

প্রকৃতিতে এখনো ফাল্গুন না এলেও মাঘের শীতের মধ্যেই বাতাসে আম্রমুকুলের গন্ধে ম-ম করছে উত্তরের জনপদ রাজশাহী। বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আগাম আমের মুকুল। পৌষের শেষে আসা এই মুকুলে আমচাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। ভালো ফলনের স্বপ্ন নিয়ে বাগানগুলোতে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন তারা।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এবার আমের ফলন কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর পুলিশ লাইনস, ভেড়িপাড়া, মেহেরচণ্ডী, মালোপাড়া, ভদ্রা ও সিনিন্দা এলাকায় আমগাছে মুকুলের দেখা মিলেছে। তবে রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের আগাম মুকুল বেশি এসেছে। জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুরসহ অন্যান্য উপজেলাতেও গাছে গাছে ফুটেছে আগাম আমের মুকুল। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছে। আবার কোথাও ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটেছে। তবে সব গাছে মুকুল আসতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগবে। 

বাগানের কয়েকজন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমগাছে মুকুল আসা শুরু হতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে ওঠেনি। জমে উঠলে এবার আমগাছে রেখেই ভালো দাম পাওয়া যাবে। 

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের বাগানমালিক জুয়েল রানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছর আমের মুকুল তেমন আসেনি। এবার আগেভাগেই অনেক মুকুল এসেছে। এসব আম আগেভাগে বাজারজাত করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। গত মৌসুমের লোকসান পুষিয়ে এবার লাভ হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছি।’ 

রাজশাহীর বড়গাছি এলাকার বাগানমালিক আলী হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কিছু কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আর ১০ দিন গেলে পুরো বাগানেই মুকুল ফুটবে। বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে স্বাস্থ্যকর মুকুল দেখা দেবে।’ 

রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে আমবাগান কেনাবেচা শুরু হবে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ভালো দামে বাগান বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছর যেহেতু কম মুকুল এসেছে, সেহেতেু এবার বেশি মুকুল হবে। চাষিদের গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বড় আমগাছে কোনো বছর মুকুল কম এলে পরের বছর বেশি আসে। সেই হিসাবে বড় গাছগুলোতে মুকুল এবার বেশি আসার কথা। আর ছোট গাছ যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রোপণ করেন, তারা যথাযথ যত্ন নেন। এ কারণে ছোট বাগানগুলোতে সব মৌসুমেই মুকুল বেশি হয়। এবারের আবহাওয়া আমের জন্য এখন পর্যন্ত উপযোগী আছে। অধিক ফলনের আশায় যত্ন নিচ্ছেন আমবাগানীরা।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাগানে পুরোপুরি মুকুল আসতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। যেসব গাছে মুকুল এসেছে, সেগুলো আগাম জাতের। চাষিদের বাগান পরিচর্যা এবং ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় কাজ করছেন। আশা করা হচ্ছে, এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। চাষিরাও অধিক লাভবান হবেন।’