ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

সৌন্দর্যে অনন্য বেগমবাহার

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
সৌন্দর্যে অনন্য বেগমবাহার
ছবি : খবরের কাগজ

পুষ্প, বৃক্ষ, লতাগুল্মে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন। এ বছর ৬ জানুয়ারি দুপুরে গিয়েছিলাম এই উদ্যানে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে একটু ডান দিকে এগিয়ে গেলে দেওয়ালের কাছে ঘন ও উজ্জ্বল বেগুনি বেগমবাহারের ঝোপ চোখে পড়ল। প্রথমদিকে যে কেউ এদের দাঁতরাঙা বা লুটকি বলে ভুল করতে পারেন। 

দাঁতরাঙা ও বেগমবাহার একই পরিবার Melastomataceae-এর সদস্য। 

বেগমবাহারের পাপড়ি দাঁতরাঙার পাপড়ির মতো এতটা পুরু নয়। বেগমবাহারের ফুলের রং ঘন ও উজ্জ্বল বেগুনি। ফুল ফোটার সময় মে থেকে জানুয়ারি। এর পাপড়ি পাঁচটি সুন্দরভাবে বিন্যস্ত নয়, কিছুটা এলোমেলো। পাতা দাঁতরাঙার মতোই তবে আকারে ছোট। বেগমবাহার ফুল গ্রীষ্মে এবং সারা বছর বিক্ষিপ্তভাবে প্রচুর পরিমাণে ফোটে। উজ্জ্বল বেগুনি ফুলের ব্যাস ৩ ইঞ্চি। শোভাময় বেগুনি ফুলে এই গুল্ম দারুণভাবে সাজে। 

বেগমবাহার একটি চিরসবুজ গুল্ম। ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ Princess Flower, glory bush, purple glory bush নামে পরিচিত। এই ফুলের আদি নিবাস ব্রাজিল। নবাব সিরাজৌদ্দৌলার প্রিয় ছিল এই ফুল। তিনিই এর নাম ‘বেগমবাহার’ দেন বলে কথিত আছে। 

উদ্ভিদ ৩-৬ মিটার উঁচু এবং ২-৩ মিটার চওড়া হতে পারে। পাতা লম্বালম্বিভাবে শিরাযুক্ত, গাঢ় সবুজ লোমযুক্ত। ফুলের ব্যাস ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গ্রীষ্ম এবং শরৎজুড়ে কালো পুংকেশরসহ উজ্জ্বল নীল বা বেগুনি ফুলের গুচ্ছ ফোটে। 
এর বৈজ্ঞানিক নাম Pleroma semidecandrum, Melastomataceae পরিবারের উদ্ভিদ। রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির Award of Garden Merit 

অর্জন করেছে এই উদ্ভিদ। বেগম বাহারের আরেকটি প্রজাতি হলো pleroma urvilleanum-এর সরু ডালপালা প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কমপ্যাক্ট আকারে ছাঁটাই না করলে গাছটি ১০-১২ ফুট ঝোপ তৈরি করতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

সরল পাতাগুলো মখমল সবুজ এবং প্রায়ই লাল রঙের হয় এবং নিচের দিকে হালকা হয়। এগুলো বড় এবং মোটা এবং ২-৪ ইঞ্চি লম্বা এবং ১-১.৫ ইঞ্চি চওড়া এবং ৩-৫ টি মধ্যশিরা দৈর্ঘ্য বরাবর থাকে, যা মেলাস্টোম পরিবারের বৈশিষ্ট্য।
 
কখনো কখনো একটি ছোট গাছকে গ্রীষ্ম থেকে শরৎকালে ছাঁটাই করতে হয়। এটি বাইরে রৌদ্রোজ্জ্বল আশ্রয়স্থলে আর্দ্র ও সুনিষ্কাশিত মাটিতে সবচেয়ে ভালো জন্মায়। 

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ

রাস্তার পাশের ঝোপে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ভাঁটফুল

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
রাস্তার পাশের ঝোপে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ভাঁটফুল
ভাঁটফুল। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ে জঙ্গলে এমনকি রাস্তার ধারেও নিজের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ভাঁটফুল। ভাঁটফুল এ অঞ্চলে বনজুঁই ফুলও নামে পরিচিত। ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার পাশে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে সুবাস ছড়িয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে থাকে ভাঁটফুল। স্থানভেদে এটির নাম ভাঁটফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, ঘণ্টাকর্ণ থাকলেও ফরিদপুর অঞ্চলে ‘ভাঁটফুল’ নামেই পরিচিত। 

এ ছাড়া এর মনোমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি, মৌমাছি, পিঁপড়াসহ নানা প্রজাতির কীট-পতঙ্গের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। এরা ফুলের সুগন্ধ, সৌরভে ব্যাকুল হওয়া ছাড়াও ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বসন্তের আগমনে পলাশ, শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ফুল ফোটে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাঁটফুলের ঝোপ চোখে পড়ে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত এ ফুল ফোটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায়। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাঁটফুলের মধু সংগ্রহ করে।

কলেজছাত্রী শুক্লা বলেন, ‘এক সময় গ্রামগঞ্জে এ ফুল দেখতে পেতাম। এখন আগের মতো দেখা যায় না। অযত্নে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠলেও সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই।’ বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালীপদ চক্রবর্তী বলেন, ‘ভাঁটফুল সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মনের খোরাক জোগায়। রাস্তার পাশে, পরিত্যক্ত জমিতে অনাদর অবহেলায় বেড়ে ওঠা ভাঁটগাছের ফুল বসন্তে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। পথচারীরা উপভোগ করেন আবহমান বাংলার আদি বুনো ফুলের অপরূপ রূপ। রাস্তার দুই পাশে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলের সৌন্দর্য আসা-যাওয়ার পথে পথচারীদের মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রকৃতিতে ফাল্গুন মাস এলেই এ গাছে ফুল ফোটে। এতে পরিবেশে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।’

ভাঁটফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরনডেনড্রন ভিসকোসাম। ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্প দণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল আছে। ভাঁট মায়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ। এর পাতা কবিরাজরা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষরা জ্বর, চর্মরোগ ও বিছার হুল ফোটানোয় এর পাতা, ফল, ফুল ও মূল ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করেন।

চন্দনাইশে অবৈধ ইটভাটা: প্রশাসন বরাবর জাস্টিস অব ডিমান্ড

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম
চন্দনাইশে অবৈধ ইটভাটা: প্রশাসন বরাবর জাস্টিস অব ডিমান্ড
চট্টগ্রামের চন্দনাইশনে অবৈধ ইটভাটা। ছবি: খবরের কাগজ

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ও জনস্বার্থে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও এর আশপাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করার জন্য ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)।

সোমবার (২৪ ফে্রুয়ারি) বিএইচআরএফ মহাসচিব অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া আহসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দাবি সংবলিত এই চিঠি দেন।

এতে উল্লেখ করা হয়, চন্দনাইশ ও এর আশপাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ চট্টগ্রামের অধিকাংশ ইটভাটার লাইসেন্স নেই। তবুও প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আবাদি জমির টপ সয়েল ছাড়াও এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ি মাটি, ইট পোড়াতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বনের গাছ। এর ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষ, পশু, পাখি, গাছপালা এবং জলাশয়গুলোর। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন ফসলের ফলনও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, চন্দনাইশের পাহাড় ও সমতলে গড়ে ওঠা ৩১টি ইটভাটার ২৫টিই অবৈধ। গত ৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে বিএইচআরএফের পক্ষে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদে গড়ে ওঠা ইটভাটা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ আঞ্চলিক, জাতীয় ও অনলাইন মিডিয়া এবং টিভিতে প্রকাশিত হয়। 

এর প্রেক্ষিতে ১২ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহযোগিতায় ইটভাটায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। অভিযানে সে সময়ের স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলামের ভাগনে জোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ রোকনের মেসার্স শাহ আলী রজা (র.) ব্রিকস (এসএবি) ম্যানুফ্যাকচারার্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

পরে ওই বছরের ২২ মে অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে নির্দেশনা অমান্য করায় আইনি নোটিশ দেয় বিএইচআরএফ। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অভিযানে জরিমানার মাধ্যমে ইটভাটাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ২৯ মে এসএবি ইটভাটার চিমনি এস্কেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন, যা সরেজমিনে  বিভিন্ন আঞ্চলিক, জাতীয় ও অনলাইন মিডিয়া এবং টিভিতে প্রকাশিত হয়। 

অভিযানের পর অবৈধ ইটভাটা ও পাহাড় কাটা কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনের নানান পরিবর্তন ও শূন্যতার সুযোগে আমিন আহমদ বাহিনীর নেতৃত্বে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর এর বিস্তীর্ণ পাহাড়ে আবার পরিবেশ বিপন্ন করে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।  এর আগে চট্টগ্রামের পাহাড়, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বিবৃতি দেন ১০৫ জন মানবাধিকার আইনবিদ।

বিগত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্টের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পরিবেশ সচিব ও  চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে চন্দনাইশসহ সবখানে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার আদেশ মান্য করতে এই ডিমান্ড জাস্টিস দাবি করেন।

সুমন/

এক যুগ ধরে গাছ লাগাচ্ছেন রীতু-সুফিয়ান দম্পতি

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
এক যুগ ধরে গাছ লাগাচ্ছেন রীতু-সুফিয়ান দম্পতি
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে গাছ লাগাচ্ছেন রীতু পারভীন। ছবি: খবরের কাগজ

পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে গাছ কাটার সংবাদ। কেউ সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করছেন; আবার কেউবা নিজের বাড়ি দেখানোর জন্য সড়কের গাছ কাটছেন। তবে এত কিছুর ভিড়ে ব্যতিক্রম রয়েছে। 

অনেকেই আছেন যারা নিজ উদ্যোগে সারা জীবন গাছ লাগিয়ে গেছেন। তেমনি দুজন চট্টগ্রামের রীতু পারভীন ও আবু সুফিয়ান দম্পতি। যারা গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন গ্রিন ফিঙ্গারস নামক একটি সংগঠন। যা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে।

বর্তমানে চট্টগ্রামে কাজ করলেও তাদের শুরু ঢাকা থেকে। ২০১২ সালে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শিশুদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে গ্রিন ফিঙ্গারস নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে চলে আসেন। নগরীর সিআরবি ও ডিসি হিল, আউটার রিং রোড়, বায়েজিদ লিংক রোডে গাছ লাগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলে গাছ লাগিয়েছেন। বায়েজিদ লিংক রোডে এক দিনে ১ হাজার ৫০০ ফল গাছ লাগিয়েছিলেন। যদিও সেগুলো বাঁচানো যায়নি।

সম্প্রতি তাদের কর্ণফুলী নদীর পাড়ে স্থানীয় জেলে ও স্থানীয়দের গাছ ও পরিবেশ নিয়ে সচেতন করতে দেখা যায়। তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানোর বিষয়ে রীতু পারভীন বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে সফল প্রকল্প পাহাড়তলীর শহিদ ওয়াসিম আকরাম পার্কে, সেখানে এক হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছি।

সেখানে আমরা বিরল প্রজাতির গাছ লাগিয়েছি। যেগুলো সহজে পাওয়া যায় না। সেখানে হিজল, নাগলিঙ্গম, তমাল, জারুল, শিমুল, হরিণা, গোদা হরিণা, বুদ্ধ নারকেল গাছ লাগিয়েছি। বর্তমানে সেগুলো বেশ বড় হয়েছে। এ ছাড়াও সিআরবি, ডিসি হিল, বায়েজিদ লিংক রোডে গাছ লাগিয়েছি। তবে গাছ রক্ষায় কোনো সহায়তা পাইনি। সে জন্য আমাদের লাগানো অনেক গাছ মরে গেছে।’

শুধু গাছ লাগানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না তারা। গাছ কাটা ও পরিবেশের বিপর্যয় হতে পারে এমন সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন জানিয়ে রীতু পারভীন বলেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম প্রতিবাদ করি। পরে সেটি গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়।

এরপর টাইগারপাসে গাছ কেটে যে সিডিএ র‍্যাম্প করতে চাইলে সেটার বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করি। পরে সেই আন্দোলন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন প্ল্যাটফর্মেও কাজ করছি। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে আমরা সম্মিলিতভাবে সব আন্দোলন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করি। আমরা কর্ণফুলীর বাকলিয়ার চর রক্ষার আন্দোলনেও সামিল হই। সেখানে আমরা অনেক গাছ লাগিয়েছি। গাছ লাগাতে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়িনি। তবে গাছ রক্ষায় কোনো সহযোগিতা পাইনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।’ 

নিজে বাড়িতে বিরল প্রজাতির গাছের চারা সংরক্ষণ করেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব গাছ পাওয়া দুষ্কর সেসব গাছের বীজ সংরক্ষণ করি। এরপর পছন্দনীয় জায়গায় সেগুলো রোপণ করি। যেখানে সংরক্ষণ করা সহজ হবে সেখানে রোপণ করি।’ 

রীতু পারভীনের স্বামী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘পরিবেশের প্রতি প্রেমটা ছোট থেকেই। আমাদের এক সন্তান আছে। শিশুদের সচেতন করতে বেশ ভালো লাগে। কেন না তাদের এই বয়সে যা শেখানো হবে সেটি তারা সহজে ভুলবে না। গাছ লাগানোর অভ্যাসটা তাদের মধ্যে ছোট থেকে গড়ে তোলা দরকার। আসলে পরিবেশ বাঁচাতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। আমরা যখন বুঝলাম এটি নিয়ে কাজ করতে হবে এবং বেশি বেশি লাগানোর বিকল্প নেই। তখনি আসলে নেমে পড়ি। সেই থেকে আর থামিনি। ইচ্ছে আছে বাকি জীবন এ কাজ জারি রাখব।’

সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলেও আমাদের এই কাজে ডা. মঞ্জুরুর করিম সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন। কথা হলে ডা. মঞ্জুরুল করিম বলেন, ২০ বছর ধরে পরিবেশ নিয়ে কাজ করি। তবে ৮ বছর ধরে টানা কাজ করে চলেছি। যারা এসব কাজ করে তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করি, নিজেও যাই।’

লোভাছড়ায় বিরল ‘লাল সারো’ হরিণ, প্রাণ বাঁচল যেভাবে

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ এএম
লোভাছড়ায় বিরল ‘লাল সারো’ হরিণ, প্রাণ বাঁচল যেভাবে
বিরল লাল সারো প্রজাতির হরিণ। জবাই করার সময় উদ্ধার করা ও অবমুক্ত করার সময়কার ছবি। ইনসেটে হরিণটি শিকারিদের হাত থেকে উদ্ধারকারী চা-বাগান পরিচালক ইউসুফ ওসমান। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া চা-বাগানে একটি বিরল ‘লাল সারো’ প্রজাতির হরিণ উদ্ধার হয়েছে। শিকারিরা হরিণটি জবাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে স্থানীয় লোভাছড়া চা-বাগানের পরিচালক ইউসুফ ওসমান এলাকাবাসীকে নিয়ে হরিণটির প্রাণ বাঁচিয়ে বন বিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাটের লোভাছড়া চা-বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানান,  সকালে লোভাছড়ার ওপারে ভারত সীমান্তের পাহাড়ি বন এলাকা থেকে তাড়া খেয়ে হরিণটি বাংলাদেশ সীমানায় আসে। বাংলাদেশে বিচরণকালে শিকারিরা হরিণটিকে ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নেন। এ সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে লোভাছড়া চা-বাগানের পরিচালক ইউসুফ ওসমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং শিকারিদের কাছ থেকে হরিণটি উদ্ধার করেন।

এরপর তিনি বন বিভাগের স্থানীয় বিট অফিসে যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে কানাইঘাট ফরেস্ট বিট অফিসার আলী আক্তারুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল বনকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে হরিণটি বিরল ‘লাল সারো’ প্রজাতির বলে শনাক্ত করেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে লোভাছড়া চা-বাগানের পাশে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে হরিণটি অবমুক্ত করা হয়। 

ফরেস্ট বিট অফিসার আলী আক্তারুল হক চৌধুরী বলেন, ‘লাল সারো প্রজাতির হরিণ বাংলাদেশে নেই বললে চলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাহাড়ি জঙ্গলে বাস করা এই বিরল হরিণকে ছাগল-মৃগপ্রকৃতির। সাধারণত খুবই লাজুক স্বভাবের। তাড়া খেলেও স্বভাবের কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। এ সুযোগে শিকারিরা এটিকে সহজে ধরতে পারে। লোভাছড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় হরিণটি জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। সেটিকে পাশের বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। 

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া চা-বাগানটি সীমান্তঘেঁষা। সেখানে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। পাশাপাশি চা-বাগান এলাকায়ও রয়েছে ঘন বন। চা-বাগানের বনে বন্য প্রাণী রক্ষার সচেতনতায়ও কাজ করছেন বাগানটির মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও পরিচালক ইউসুফ ওসমান। বিরল ‘লাল সারো’ হরিণটি উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করার বিষয়ে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আজ কানাইঘাটের লোভাছড়া চা-বাগানে একটি বিরল প্রজাতির লাল সারো অবমুক্ত করা হয়েছে! 

এলাকাবাসী ও বন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিপন্ন এই প্রাণীটি তার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যেতে পেরেছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আজকের এই উদ্যোগ তারই একটি সুন্দর উদাহরণ। প্রকৃতিকে রক্ষা করি, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করি!’

বিরল হরিণটি বনে অবমুক্ত করা প্রসঙ্গে ইউসুফ ওসমান খবরের কাগজকে বলেন, লোভাছড়া চা-বাগানের পাশে নুনুছড়া বন থেকে ২০১০ সালের দিকে এশিয়ায় বিরল কালো বাঘ (ব্ল্যাক প্যান্থার) ধরা পড়েছিল। সেটিকে এলাকাবাসী বাঘ ধরার প্রাচীন প্রথা ‘বাঘখেওড়’ (বাঘবন্দি) কৌশলে জ্যান্ত ধরেছিলেন। চা-বাগানসহ আশপাশ সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় ভারত থেকে বন্য শূকর, হরিণ, বন্য হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে।

অনেক সময় ভারতীয়রা বন্য প্রাণী তাড়া দিয়ে নিয়ে আসেন। আবার শিকার করেও নিয়ে যান। এ পরিস্থিতিতে দেশীয় শিকারিরাও তৎপর থাকেন। তাদের হাত থেকে লাল সারো হরিণটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে সাধারণ হরিণ মনে করে এটি বনে অবমুক্ত করা হয়েছিল। এরপর দেখা যায় বন থেকে এটি লোকালয়ে ফিরে আসছে। যেন বনে যেতে লজ্জা পাচ্ছে। এই স্বভাব দেখে লাল সারো প্রজাতি হিসেবে শনাক্ত করা হয়। অনেক চেষ্টার পর বনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে শিলাবৃষ্টি, ৪ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১২ পিএম
আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম
রাজধানীতে শিলাবৃষ্টি, ৪ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
ছবি: সংগৃহীত

শীতের আমেজ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, লিংক রোড এবং গুলশানে শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।

শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ হয়ে ওঠে মেঘাচ্ছন্ন। এরপর দুপুরে হঠাৎ করেই শুরু হয় বৃষ্টি।

অন্যদিকে দেশের চার বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। 

আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। 

আরও জানানো হয়, রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, আগামী সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তিথি/মাহফুজ