
প্রকৃতিতে এখনো ফাল্গুন না এলেও মাঘের শীতের মধ্যেই বাতাসে আম্রমুকুলের গন্ধে ম-ম করছে উত্তরের জনপদ রাজশাহী। বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আগাম আমের মুকুল। পৌষের শেষে আসা এই মুকুলে আমচাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। ভালো ফলনের স্বপ্ন নিয়ে বাগানগুলোতে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন তারা।
রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এবার আমের ফলন কিছুটা বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর পুলিশ লাইনস, ভেড়িপাড়া, মেহেরচণ্ডী, মালোপাড়া, ভদ্রা ও সিনিন্দা এলাকায় আমগাছে মুকুলের দেখা মিলেছে। তবে রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের আগাম মুকুল বেশি এসেছে। জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুরসহ অন্যান্য উপজেলাতেও গাছে গাছে ফুটেছে আগাম আমের মুকুল। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছে। আবার কোথাও ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটেছে। তবে সব গাছে মুকুল আসতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগবে।
বাগানের কয়েকজন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমগাছে মুকুল আসা শুরু হতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে ওঠেনি। জমে উঠলে এবার আমগাছে রেখেই ভালো দাম পাওয়া যাবে।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের বাগানমালিক জুয়েল রানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছর আমের মুকুল তেমন আসেনি। এবার আগেভাগেই অনেক মুকুল এসেছে। এসব আম আগেভাগে বাজারজাত করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। গত মৌসুমের লোকসান পুষিয়ে এবার লাভ হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছি।’
রাজশাহীর বড়গাছি এলাকার বাগানমালিক আলী হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কিছু কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আর ১০ দিন গেলে পুরো বাগানেই মুকুল ফুটবে। বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে স্বাস্থ্যকর মুকুল দেখা দেবে।’
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে আমবাগান কেনাবেচা শুরু হবে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ভালো দামে বাগান বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছর যেহেতু কম মুকুল এসেছে, সেহেতেু এবার বেশি মুকুল হবে। চাষিদের গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বড় আমগাছে কোনো বছর মুকুল কম এলে পরের বছর বেশি আসে। সেই হিসাবে বড় গাছগুলোতে মুকুল এবার বেশি আসার কথা। আর ছোট গাছ যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রোপণ করেন, তারা যথাযথ যত্ন নেন। এ কারণে ছোট বাগানগুলোতে সব মৌসুমেই মুকুল বেশি হয়। এবারের আবহাওয়া আমের জন্য এখন পর্যন্ত উপযোগী আছে। অধিক ফলনের আশায় যত্ন নিচ্ছেন আমবাগানীরা।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাগানে পুরোপুরি মুকুল আসতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। যেসব গাছে মুকুল এসেছে, সেগুলো আগাম জাতের। চাষিদের বাগান পরিচর্যা এবং ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় কাজ করছেন। আশা করা হচ্ছে, এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। চাষিরাও অধিক লাভবান হবেন।’