ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

৯৯৯ এ ফোনকলে ৩ কাঠবিড়ালি শাবক উদ্ধার

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
৯৯৯ এ ফোনকলে ৩ কাঠবিড়ালি শাবক উদ্ধার
কাঠবিড়ালির শাবক। ছবি: খবরের কাগজ

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল পেয়ে সিলেটের মোগলাবাজার থানার শ্রীরামপুর থেকে কাঠবিড়ালির তিনটি শাবক উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) শাবক তিনটি উদ্ধার করা হয়।

শ্রীরামপুর থেকে একজন কলার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, সেখানে তিনটি বন্যপ্রাণীর শাবক পাওয়া গেছে। শাবক তিনটি কীসের তা তিনি নিশ্চিত নন। শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা না নিলে চুরি হতে পারে অথবা বখাটেরা ঢিল ছুঁড়ে ক্ষতি করতে পারে। 

এ সময় শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন তিনি। 

ফোন কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল প্লাবন দেব। তিনি মোগলাবাজার থানা পুলিশকে শাবকগুলো দ্রুত উদ্ধারের জন্য জানান। একইসঙ্গে সিলেট বনবিভাগকেও জানান। 

পরে কলার ও উদ্ধার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন ৯৯৯ ডিসপাচার এসআই বিএম আমানত। 

৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে, মোগলাবাজার থানার একটি দল শাবক তিনটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং পরে সিলেট বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা শাবক তিনটি কাঠবিড়ালির বলে নিশ্চিত করেন। তবে স্থানীয়ভাবে প্রাণীগুলোকে কেউ কেউ কাঠশিয়ালও বলে থাকেন ।

আলমগীর/পপি/

জাবির স্নিগ্ধ-সবুজ ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি জারুলের আলপনা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
জাবির স্নিগ্ধ-সবুজ ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি জারুলের আলপনা
স্নিগ্ধ-সবুজ ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বেগুনি জারুলের আলপনা। ছবি: আমানউল্লাহ খান

বসন্তের বিদায়ে গ্রীষ্মের অগ্নিঝরা সূর্যের তাপে যখন প্রকৃতি হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্লান্তির কোলে, তখনই আকাশজুড়ে নিঃশব্দে নেমে আসে এক বেগুনি আভা। মাটি থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো প্রতিটি জারুলগাছ যেন হয়ে ওঠে রঙের নির্জন উৎসব। ক্যাম্পাসজুড়ে তখন বেগুনি পাপড়ির আলপনা- যা চোখে নয়, মনে গেঁথে যায়।

বিশেষত যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আসে তখন প্রকৃতি বরাবরই এক অনবদ্য কবিতার নাম। এখানে চারদিকে ছড়িয়ে থাকা লেকের জল, সবুজ গাছ-গাছালি যেন ঋতুবদলের গদ্যপদ্য। আর এই ছন্দময় সৌন্দর্যের মধ্যমণি হয়ে ওঠে জারুল, নীলচে-বেগুনি রঙে সেজে ওঠা গ্রীষ্মের অপরূপ রানী।

সর্পিল গতিতে চলা লেকের ধারে, খেলার মাঠের পাশে কিংবা বটতলা, চৌরঙ্গী, পুরান কলা, সুইজারল্যান্ড, শান্তিনিকেতন বা মুক্তমঞ্চের ছায়াঘেরা পথ ধরে হাঁটতে গেলে চোখ আটকে যায়- নিভৃতে দাঁড়িয়ে থাকা জারুল গাছে। মাথা উঁচু করে থাকা ডালগুলো যেন ক্যানভাস হয়ে উঠেছে বেগুনি পাপড়ির। সেই পাপড়ির ভাঁজে ভাঁজে উঁকি দেয় নরম হলুদ পরাগ, যা সূর্যছায়ার খেলায় দিগন্ত ছুঁয়ে যায়। এই রঙিন উপস্থাপনাকে শুধুই ফুল বলা যায় না; এ যেন এক মৌন সিম্ফনি, যা ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে। আকর্ষিত করে বহিরাগত পর্যটকদের।

হাঁটতে হাঁটতে জারুলতলায় দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ রাতুলের সাথে। তার কাছে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জারুল ফুল ফোটে মানেই ক্যাম্পাসে এক ধরনের নিঃশব্দ উল্লাস শুরু হয়। মনে হয়, প্রকৃতি আমাদের হাতে রঙতুলি তুলে দিয়ে বলছে- আঁকো, ভাবো, ভালোবাসো। প্রকৃতির এই আহ্বানে আমরাও নতুন করে নবরূপে নব আঙ্গিকে ক্যাম্পাসকে ভালোবাসতে শুরু করি।’

জারুলের রঙ গায়ে মেখে হাঁটে যারা, তাদের মনে গেঁথে যায় এই ক্যাম্পাসের ছায়া-জল-রোদ্দুর। কেউ কেউ গাছতলায়, পুকুরপাড় বা লেকপাড়ে বসে লেখে কবিতা, কেউ আবার বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে গুনগুনিয়ে গায় রবীন্দ্রসংগীত। অনেকেই দলবেঁধে করে আড্ডাবাজি।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ঐন্দ্রিলা মজুমদার বলেন, ‘জারুলকে আমরা শুধু ফুল হিসেবেই নয়, এটা আমাদের শিল্পচর্চার মৌসুমি মিউজিক হিসেবেও চিনি। ক্লাসে ঢোকার আগে কিংবা থিয়েটার অনুশীলনের ফাঁকে যখন বেগুনি ফুলটি চোখে পড়ে, তখন মনে হয় জীবনটা থেমে থেকে একটু রঙ খুঁজে নেয়। সজীবতা ফিরে আসে সকল কাজে।’

জাহাঙ্গীরনগরের এই ফুলেল রূপ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং আবেগ, সৃজনশীলতা ও আত্মস্থতারও বাহক। জারুলের নিচে বসে কেউ করছে স্কেচ, কেউ লিখছে কবিতা, কেউ আবার তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে দূর আকাশে- হারিয়ে গেছে অজানা জগতে।

গবেষণা বলছে, প্রকৃতির সান্নিধ্য মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। আর জাহাঙ্গীরনগর যেন তার জীবন্ত প্রমাণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম তালুকদার (তারেক রেজা) বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কবিতার মতো সুন্দর। প্রতি পঙক্তিতে ছড়িয়ে আছে অপার রহস্য! জারুলের প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস আমাদেরকে উদ্বেলিত করে প্রতিনিয়ত। জারুল ফুল শুধু চোখ জুড়ায় না, এর আশপাশে গড়ে ওঠা নিসর্গ শিক্ষার্থীদের আবেগি  করে তোলে। ক্লাসে তারা যা ভাবতে পারে না, প্রকৃতির কোলে এসে তা ভাবতে শেখে।’

গ্রীষ্মের শেষে যখন গাছে গাছে ফোটে নীলচে-বেগুনি জারুল, তখন গোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে এক রঙিন নীরবতা। শিক্ষার্থীরা নীরবতা ভেঙে নিঃশব্দে বসে আঁকে মনস্তত্ত্বের প্রতিচ্ছবি। কবিতার উপমা খোঁজে, সহপাঠীদের হাসি-ঠাট্টা আর গানের সুরে সুরে তৈরি হয় এক আত্মিক আবহ। প্রকৃতির এই নিবিড় সাহচর্য শুধু চোখের আরাম নয়, মনেরও বিশ্রাম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ছালেহ আহমেদ খান বলেন, ‘জারুল গাছ স্থানীয় পরিবেশ ও  বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায়, সৌন্দর্যবর্ধনে এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর আকর্ষণীয় ফুল পরাগবাহী মৌমাছির জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, যা স্থানীয় পরিবেশে পরাগায়ন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। একই সঙ্গে বড় গাছ হিসেবে কার্বন শোষণ করে এবং শহুরে উষ্ণতা কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সংস্পর্শে মনোযোগ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। জাহাঙ্গীরনগরে জারুলফুলের প্রাচুর্যতা শুধু ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিই করে না, বরং এক ধরনের মননচর্চার পরিবেশও গড়ে তোলে।’

জাহাঙ্গীরনগরের প্রতিটি ঋতুরই নিজস্ব ভাষা আছে। কিন্তু গ্রীষ্মে জারুলের ভাষা যেন সবচেয়ে সংবেদনশীল। মৃদু বাতাসে দুলে ওঠা প্রতিটি থোকা যেন বলে, ‘এখনো রঙ ফুরায়নি, এখনো স্বপ্ন বাকি আছে।’ 

জারুল ফুটে ওঠা মানেই জাবির বুকে একটি নতুন গল্পের সূচনা। যে গল্পে বেদনা নেই, আছে কেবল রঙ, প্রেম আর প্রতিদিনের একান্ত কিছু অনুভব। আর তাই প্রতিটি জারুলের নিচে দাঁড়িয়ে যারা ছবি তোলে, তারা শুধু স্মৃতি জমায় না, বরং প্রকৃতিকে জানায় নীরব ধন্যবাদ।’

জাহাঙ্গীরনগরের আকাশ যখন জারুলের বেগুনিতে ঢেকে যায়, তখন সেই রঙ পড়ে না কেবল চোখে— পড়ে মনে। ছুঁয়ে যায় অন্তরের গোপন কোনো প্রান্ত, যেখানে এখনো স্বপ্ন ফোটে, এখনো রঙ থেমে যায়নি। 

তাওফিক/ 

তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার
তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় অসুস্থ অবস্থায় এক বিলুপ্ত প্রজাতির শকুন উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় শকুনটি অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে বনবিভাগকে খবর দিলে তারা শকুনটিকে উদ্ধার করে। 

স্থানীয়রা জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় হঠাৎ শকুনটি আকাশ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় ও পায়ে আঘাত পান। পরে স্থানীয়রা সেটিকে বেঁধে রাখেন। পরে উপজেলা বনবিভাগ খবর পেয়ে শকুনটি অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া ইকো পার্কে নিয়ে যান।

তেঁতুলিয়া উপজেলা বিট কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকা থেকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একটি শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে শকুনটির প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে।’ 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফরোজ শাহিন খসরু জানান, শকুনটি সুস্থ হলে বন্যপ্রাণী দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রনি/তাওফিক/ 

ফুটে আছে অশোক ফুল

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৭ এএম
ফুটে আছে অশোক ফুল
ময়মনসিংহের শশীলজের অশোকগাছ। ছবি: লেখক

ময়মনসিংহ শহরের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের বিপরীত দিকে মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের স্মৃতিবিজড়িত শশীলজ। এটি এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন একটি জাদুঘর। এর আঙিনার উত্তর-পূর্ব পাশে কয়েকটি অশোকগাছে ফুল ফুটে শোভা ছড়াচ্ছে। চলতি এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়েছিলাম সেখানে।

কাব্য-সাহিত্যে অশোকবন্দনা অনেক রয়েছে। রবিঠাকুর অশোককে নিয়ে লিখেছেন,
‘আসত তারা কুঞ্জবনে চৈত্র জ্যোৎস্না রাতে
অশোক শাখা উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে’  

অশোক মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। এটি এই অঞ্চলের নিজস্ব বৃক্ষ। অশোকগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Saraca asoca, এটি Fabaceae গোত্রের Caesalpinioideae উপগোত্রের বৃক্ষ। উদ্ভিদের অন্যান্য নাম হেমাপুষ্প, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প।
 এই বৃক্ষ পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিটার উঁচু হয়। পাতা যৌগিক। একটি পাতায় দশটি পত্রক থাকে, পাতার রং গাঢ় সবুজ। পাতা লম্বা, চওড়া ও বর্শা ফলকাকৃতির। কচি পাতা নরম, ঝুলন্ত ও তামাটে। বসন্তকাল ফুল ফোটার সময়। আষাঢ়ের শুরু পর্যন্ত  গাছে ফুল থাকে। ফুল ছোট, মঞ্জরিতে অনেক ফুল জন্মায়, পুংকেশর দীর্ঘ।  

অশোকের ছায়াতেই গৌতম বুদ্ধের জন্ম। রামায়ণে সীতাকে হরণের পর রাবণ অশোক কাননেই রেখেছিল। গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন লুম্বিনী কাননে অশোকগাছের নিচে। ঢাকার রমনা পার্কে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে অশোকগাছ রয়েছে। ময়মনসিংহে শশীলজের সামনে এবং আনন্দমোহন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে,  কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বাগানে অশোক বৃক্ষ রয়েছে। হিন্দু এবং বৌদ্ধদের কাছে এই ফুল অত্যন্ত পবিত্র। কামদেবের পঞ্চশরের অন্যতম শর এই ফুলে সজ্জিত।

 এই বৃক্ষের ডালপালা ঘন পল্লবময়। কাণ্ডের গা থেকেও মঞ্জরি দণ্ড উৎপন্ন হতে পারে এবং তা থেকে ফুল উৎপন্ন হয়। ফুলের রং কমলা থেকে লাল। ফল শীমজাতীয়, মাংসল ও লাল। ফলে বেশ কিছু খয়েরি রঙের বীজ থাকে। অশোকের ভেষজ গুণও রয়েছে। শুকনো ফুল রক্ত আমাশয়ে এবং বীজ মূত্রনালির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

ফুল ফুটলে মিষ্টি গন্ধে চারপাশ ভরে যায়। শারদীয় দুর্গাপূজায় অশোকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অশোকের ডাল ছাড়া দুর্গাপূজার নবপত্রিকাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায় না। চৈত্র মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে মায়েরা পুত্রের মঙ্গল কামনা করে অশোক ফুল দিয়ে অশোক ষষ্ঠী পূজা করেন। আইইউসিএন অনুসারে এই বৃক্ষটি শঙ্কাকুল (vulnerable ) হিসেবে চিহ্নিত।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান 
মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

রূপবতী জহর পোকা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
রূপবতী জহর পোকা
রংপুরে অড়বরইগাছে দেখা জহর পোকা। ছবি: লেখক

বগুড়া থেকে প্রকৃতিবন্ধু জিনিয়া নাসরিন সুমনের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখলাম, লাল ছিটকিগাছের পাতার মধ্যে রূপবতী চকচকে নীল-সবুজ রঙের কালো ফোঁটাযুক্ত একটা পোকা ঘুরঘুর করছে। দেখে মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগে রংপুরে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের ভেতরে এই ছিটকি গোত্রেরই আরেক গাছ অড়বরইয়ের ডালপালা ও পাতায় পাতায় হাঁটতে দেখেছিলাম এ পোকাটিকে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তার হাবভাব দেখছিলাম। তাই পোকাটিকে চিনতেই তার অনেক কথা মনে পড়ে গেল। পোকাটার নাম জুয়েল বাগ বা জহরপোকা। 

মিলনের আগে পুরুষ জহরপোকারা মেয়ে পোকার সঙ্গে সখ্য স্থাপনের চেষ্টা করে। ওদের সখ্যের ধরনটাও বেশ চমৎকার। পুরুষ পোকাটা কোনো মেয়ে জহরপোকাকে দেখলে তার চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। নানা ভঙ্গিমায় মেয়ে পোকাটাকে তার ইচ্ছেটা বুঝাতে চেষ্টা করে। এরপর মেয়ে পোকার সায় আছে কি না, তা বুঝার জন্য পুরুষ পোকাটা তার পেট পাতার সঙ্গে ছুঁইয়ে মেয়ে পোকার সামনে বসে পড়ে। তারপর নতজানু ভঙ্গিতে সে তার শুঁড় দিয়ে মেয়ে পোকার শুঁড়কে স্পর্শ করে। এতেই ওদের ভাবের আদান-প্রদান হয়। মেয়েটার সঙ্গে ভাব করার জন্য পুরুষটা একই রকম অঙ্গভঙ্গি কয়েক বার করে। মেয়ে পোকা রাজি না থাকলে পুরুষ পোকার শুঁড় স্পর্শ করে না। ভাব না হলে পুরুষ পোকারা সেখান থেকে সটকে পড়ে। 

আর তাদের ভাব হলে হয় মিলন। সাধারণত মার্চ থেকে অক্টোবরের মধ্যে এদের মিলন হয়। মিলনের পর মেয়ে পোকাটা অন্তঃসত্ত্বা হয়। গর্ভের ডিমগুলোকে পরিপুষ্ট করার জন্য মেয়ে জহরপোকাগাছের ফলের ভেতর শুঁড় বা মুখের নল ঢুকিয়ে বীজ থেকে রস চুষে খেয়ে উদরপূর্তি করে। এভাবে রস চুষে খাওয়ার কারণে সেসব বীজ অপুষ্ট বা চিটা হয়ে যায়। এর ফলে ফল বিকৃত হয়ে যায়। 

জহরপোকারা পাতার ওপর ডিম পাড়ে। ডিমগুলো কয়েক সারিতে গুচ্ছাকারে থাকে। ছোট ডিমগুলো দেখতে পিপা বা ব্যারেলের মতো দেখায়। ডিমের মুখে একটা ঢাকনা থাকে। ডিমের রং হয় সাদা ময়লাটে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে সেই ঢাকনা খুলে যায়। বাচ্চারা বেরিয়ে কিছুদিন দল বেঁধে থাকে। শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে বাচ্চা ও বড় পোকারা ওদের গা থেকে এক ধরনের তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছাড়ে। এতে যদি শত্রু ভয় না পায় বা বিরক্ত না হয়, তখন বড় পোকারা ডানা মেলে সেখান থেকে সটকে পড়ে বা পা গুটিয়ে টুপ করে মাটিতে পড়ে যায় ও লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করে।

হেমিপ্টেরা বর্গের এ পোকার বৈজ্ঞানিক নাম বা প্রজাতি ক্রাইসোকোরিস স্টোল (Chysocoris stollii) ও গোত্র স্কুটেলেরিডি। বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতির জুয়েল বাগ আছে। আগে এরা পেন্টাটমিডি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এদের কাঁধে থাকা ত্রিভুজাকার শক্ত স্কুটেলামের কারণে বর্তমানে এদের স্কুটেলেরিডি গোত্রভুক্ত করা হয়েছে। এরা গান্ধি বা বাগজাতীয় পোকা। এ পোকার রং চকচকে সবুজ বা নীল-সবুজ। মাথার মাঝ বরাবর কালো দাগ থাকে। শুঁড় লম্বা ও পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত। দুই চোখের পাশে কালো ছোপ, বুকের সামনে আটটি দাগ আছে। পাখার ওপর সাতটি কালো ফোঁটা থাকে। এর মধ্যে দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি ও মাঝখানে একটি কালো ফোঁটা থাকে। 

ছাত্রজীবনে পড়ার সময় এ পোকাকে মেটালিক শিল্ড বাগ নামে চিনতাম। তবে এর কোনো বাংলা নাম কোথাও পাইনি। আগে ফুটবল খেলায় বিজয়ীদের শিল্ড উপহার দেওয়া হতো। এদের দেহের গড়নটা সেই শিল্ডের মতো বলেই হয়তো এর এরূপ নাম রাখা হয়েছে। তরবারি যোদ্ধারা যুদ্ধের সময় শত্রুদের আঘাত ঠেকানোর জন্য যে ধাতব ঢাল ব্যবহার করতেন, এই পোকার দেহের আকৃতি অনেকটা সে রকম। সে জন্য একে মেটালিক শিল্ড বাগ বলা হয়। আর এর ডানার রংটাও ধাতব দ্রব্যের মতো উজ্জ্বল ও চকচকে, বর্ণময়। দেখে মনে হয় ওদের দেহ থেকে যেন রংধনুর রং বিচ্ছুরিত হচ্ছে, ময়ূরকণ্ঠী সে রং। সাধারণত পুরুষ পোকারা হয় একবর্ণা। কিন্তু মেয়ে পোকারা হয় বহুবর্ণা। পতঙ্গজগতে এমন রূপবতী সুশ্রী পোকা খুব কমই দেখা যায়। 

এখন দেখি, ইংরেজি নাম জুয়েল বাগ আর বাংলা নাম জহরপোকা। এর মানে কি? জুয়েল মানে হীরে-জহরত, মণি-মাণিক্যর মতো উজ্জ্বল দ্যুতিময়। সে অর্থে এর বাংলা নামকরণ হতে পারে জহর পোকা। জহর পোকাদের সাধারণত খেতে, মাঠে, ঝোপঝাড়ে ও অরণ্যে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল এবং ভারতেও জুয়েল বাগ আছে। বাংলাদেশে এ প্রজাতির পোকা অনেক দেখা যায়, বিলুপ্তির কোনো শঙ্কা নেই। এটি অড়বরই, আমলকী, লিচু, আঁশফল, সফেদা ইত্যাদি ফলের একটি ক্ষতিকর পোকা, তাই গবেষণার সুযোগ আছে।

সোনাকপালি হরবোলা

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৯ পিএম
সোনাকপালি হরবোলা
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সোনাকপালি হরবোলা। ছবি: লেখক

গ্রীষ্মের দুপুরে বনের পাখিরা একটি বুনো বৃক্ষে পাকা ফল খেতে ভিড় করে। পাখিরা গরমের সময় রসালো ফল খেতে পছন্দ করে। রাঙামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের সেই গাছটির ফল পেকেছে। ফলগুলোর বর্ণ লাল। ফলগুলো দেখে মনে হয়েছিল আমাদের ছেলেবেলায় দেখা লোহাগাড়া ফল। কিছুটা জামের মতো, তবে তা দেখতে গোলাকার। বনের অনেক প্রজাতির পাখি সেদিন বনের সেই গাছটিতে ফল খেতে এসেছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বুনো হরিয়াল, জলপাই বুলবুল, তেলশালিক, নীলপরি, ধলাচোখ, সিপাহি বুলবুল ও কমলাপেট ফুলঝুরি। সেই সব পাখির মধ্যে একটি সবুজ পালকের পাখি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। পাখিটি তার সরু ঠোঁট দিয়ে ছোট ফল ঠুকরে খাচ্ছিল। পাখিটির নাম সোনাকপালি হরবোলা। কপালে তার সোনালি-কমলা পালক। প্রথম দেখায় সে নজর কেড়েছিল আমার।  

সোনাকপালি হরবোলা বাংলাদেশের চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন এবং বৃক্ষবহুল অঞ্চলে বিচরণ করে। প্রধানত ছোট দলে অথবা জোড়ায় থাকে। গাছের ঘন পাতা এবং উঁচু ডালে এরা খাবার খোঁজে। বনের মান্দারগাছে ফুল এলে তারা নিয়মিত মান্দার ফুলে বিচরণ করে ফুলের মধু পান করতে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে মান্দারগাছে ফুল ফুটলে সেই গাছে পাখিটি প্রতিদিন ভিড় করে এবং খুব সহজেই দেখা যায়। এ পাখি পোকামাকড়, বিশেষ করে শুঁয়োপোকাও খায়। অন্য পাখিদের সঙ্গে মিলে খাবারের জন্য গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। 

গাছে গাছে বিচরণের সময় এরা মধুর সুরে ডাকে। এরা অন্য পাখির সুরও অনুকরণ করতে পারে। প্রজননকালে গাছের খাড়া ও সরু ডালে ঘাস, শেওলা, মাকড়সার জাল দিয়ে বাটির মতো বাসা বাঁধে। হালকা পীতাভ বর্ণের দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। এ সময় পাখি ডিমে তা দেয়। ডিম পাড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ডিম ফোটার ১৩ থেকে ১৫ দিন পর ছানারা বাসা ছাড়ে। 

প্রধানত সবুজ পালকের এ পাখির ঈষৎ বাঁকা কালো ঠোঁট থাকে। চোখের পেছন থেকে সারা বুকের জায়গাটাকে ঘিরে আছে প্রশস্ত হলুদ বন্ধনী। চোখ গাঢ় বাদামি। পা এবং পায়ের পাতা কালো। মেয়েপাখির কপালের পালক অনুজ্জ্বল। এ ছাড়া দেখতে উভয় পাখি একই রকম। দেহের  দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি এবং ওজন ১৯ গ্রাম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ পুরোপরি সবুজ, কেবল গালের নিচ নীলচে। 

বাংলাদেশে চার প্রজাতির হরবোলা দেখা যায়। তদের মধ্যে সোনাকপালি হরবোলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অন্য তিন প্রজাতির হরবোলা বিরল। সোনাকপালি হরবোলা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব বিভাগের বনে এদের দেখা যায়। এ পাখির ইংরেজি নাম গোল্ডেন ফ্রন্টেড লিফবার্ড। এদের  বিস্তৃতি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সুমাত্রা পর্যন্ত। সোনাকপালি হরবোলা বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বিপদমুক্ত পাখি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে পাখিটি সংরক্ষিত। 

প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পরিবেশবিদ, জার্মান এরোস্পেস সেন্টার