
বরিশালের রাজা রায় বাহাদুর সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলস পার্ক) দিকে হাঁটলেই লম্বা একটি লেক পড়ে। লেকের চারপাশে পুরোনো গাছপালার মধ্যে কিছু রেইনট্রিগাছ কালের সাক্ষী হয়েছিল। পাঁচ বছর আগে শুধু একটি রেইনট্রিগাছ টিকে আছে দেখেছিলাম। সেই রেইনট্রির পাতি ডালে বসে থাকত সবুজ রঙের কয়েকটি পাখি। ওড়ার সময় কেবল ডাকাডাকি করত সেই সুন্দর পাখি। লেকের পানির ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে এরা শিকার ধরে আবার ফিরে যেত পাতি ডালে। সকাল-দুপুর ও বিকেলে ওখানে গেলেই সবুজ রঙের সেই পাখি দেখা যেত। সেই পাখির নাম সবুজ সুইচোরা। কেউ কেউ তাদের ডাকত ‘বাঁশপাতি’ বলে।
এই পাখি গ্রামের খেতের প্রান্তর, জলাভূমির কাছে গাছপালায় বেশি সময় কাটায় ও উড়ে উড়ে পোকা ধরে খায়। যেখানে বসে পোকা ধরতে যায়, পোকা ধরে সেখানে আবার ফিরে আসে। কীটপতঙ্গ ধরার জন্য এ পাখিটির ইংরেজি নাম হয়েছে গ্রিন বি-ইটার।
সবুজ সুইচোরা বা বাঁশপাতি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব বিভাগের গ্রামীণ কুঞ্জবন, খামার ও খোলা মাঠে এদের চোখে পড়ে। সবুজ সুইচোরা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা গাছপালা, আবাদি জমি, বেলাভূমি ও চারণভূমিতে বিচরণ করে। এরা সচরাচর ছোট দলে থাকে। এদের খাবার তালিকায় আছে ডানাওয়ালা পোকা, মৌমাছি, উইপোকা, ফড়িং, প্রজাপতি, বোলতা, মথ, গুবরে পোকা ও পিঁপড়া। এই পাখি দ্রুত ডানা ঝাপ্টে ও অনমনীয় মুক্ত ডানায় সুন্দরভাবে ধীরে ধীরে উড়ে চলে। এরা মধুর গলায় কাঁপিয়ে অনুক্রমিকভাবে ট্রি-ট্রি-ট্রি... সুরে ডাকে। সবুজ সুইচোরা বালিময় ভূমি, বিশেষ করে রাস্তার পাশের কাটা পাড়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। সেখানে সাদা রঙের চার থেকে সাতটি ডিম পাড়ে।
সবুজ সুইচোরার দেহের দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার, ওজন ১৫ গ্রাম। সোনালি বা লালচে ঘাড়ের নিচের অংশ ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। কালো মাশকারা চোখ বরাবর চলে গেছে। ফিকে নীল গলায় কালো বেড় থাকে। লেজের কেন্দ্রীয় পালক জোড়ার অভিক্ষেপ ভোঁতা আলপিনের মতো। বাঁকা ঠোঁট বাদামি-কালো ও মুখ পাটল বর্ণের। চোখ গাঢ় লাল। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভাব-বাদামি। নখ শিং বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ফ্যাকাশে কিনারার পালকসহ গলার ফিকে ও কালো বেড় নেই। ঢাকার পুরোনো বিমানবন্দর লেক, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানার আশপাশে পাখিটির দেখা পাওয়া সহজ। রমনা পার্কে লেকের কাছের গাছপালায় বেশ কয়েক জোড়া সবুজ সুইচোরা বাস করে।
লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার