
গ্রীষ্মের এক সকাল। টাঙ্গাইল শহরের আশপাশের ঝোপঝাড় ও জলাশয়ের কাছে পাখি দেখতে বের হয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের পেছনে একটি পুকুরের পাড়ে গিয়ে দেখলাম তিনটি ছোট পানকৌড়ি গাছের ডালে বসে আছে মাছ ধরার জন্য। পুকুরপাড়ের একটি আমগাছে বসে থাকা কোকিলের ছানাকে খাবার খাওয়াচ্ছে হলদে পাখি। কোকিল অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং ছানাদের সেই পাখিরাই বড় করে তোলে আহার দিয়ে। কয়েকটি সিপাহি বুলবুলি, সাদাবুক মাছরাঙাও দেখা গেল। পুকুরে একটি ভাসমান তালগাছের কাণ্ডের ওপর একটি খুদে বক দেখে অবাক হলাম। কারণ এ বক কিছুটা নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। পুকুরের চারপাশ বেশ নিরিবিলি। যে কারণে অনেক পাখির আনাগোনা।
খুদে বকটি চুপিসারে তাকিয়ে আছে জলের দিকে। শিকার দেখতে পেলেই ধরবে ঠোঁট দিয়ে। বান্দরবানের কেওক্রাডং পর্বতচূড়ায় যাওয়ার পথে বগা লেকে, মহেশখালীর প্যারাবনে এবং শেরপুর জেলার হাতিবান্ধা গ্রামেও খুদে বক দেখেছিলাম।
খুদে বক হালকা সবুজ ও হলদে চোখের জলচর পাখি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। প্রধানত এই বক ঊষা, গোধূলী বেলায় এবং মেঘলা দিনে কর্মতৎপর থাকে। ছায়াময় জলার ধারে খুব সকালে একাকী বসে থাকে শিকারের জন্য। রোদ বাড়লেই ঝোপের আড়ালে চলে যায়। খুবই লাজুক পাখি। নিজকে আড়াল রাখতে সব সময় সতর্ক থাকে। মানুষর অস্তিত্ব কোনোভাবে টের পেলে উড়ে গিয়ে ঝোপে লুকিয়ে পড়ে। পানির কাছের মাটি ও ঝোপের সঙ্গে পালকের রং মিলে ক্যামোফ্লেজ সৃষ্টি হওয়ার কারণে খুব সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। বুনো পরিবেশে পাখিটি পর্যবেক্ষণ করে এ স্বভাবগুলো পাওয়া গেল।
খুদে বক বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এই সবুজ বকের বৈজ্ঞানিক নাম Butorides striatus. ইংরেজি নাম Little Green Her। পাখিটি দেশের কোথাও কোথাও সবুজ বক ও কুড়া বক নামেও পরিচিত। খুদে বকের গায়ের পালকের রং ধূসর মিশ্রিত কালো ও সবুজ। মাথা ও শিখার লম্বা পালক সবুজে কালচে, চিবুক, গাল, গলা সাদা। ঘাড়, বুক, পেট ধূসর। পিঠ, ডানা ও লেজের ওপরের দিক কালচে সবুজ। বর্ষকাল এ বকের প্রজননের সময়। জলের কাছের ঝোপে, নল বনে অগোছালোভাবে বাসা বানিয়ে সবুজ রঙের তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। খাদ্যতালিকায় আছে ছোট মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, ব্যাঙ ও জলজ পোকা। বাংলাদেশের প্যারাবন, নদীর মোহনা, প্রবালপ্রাচীর, পাথুরে উপকূল, নদী, খাল, গ্রামের ছোট জলাশয় বা ডোবার ধারে প্রধানত বিচরণ করে। সচরাচর একাই থাকে। অগভীর জলাশয়ের কাছেই এ বক শিকার ধরতে পছন্দ করে। দেশের সব বিভাগেই খুদে বক দেখা যায়।
লেখক: নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার