জাতীয় প্রেসক্লাবে সহকর্মীদের উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন দীর্ঘ এক দশক নির্বাসনে থাকা সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনসহ নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমদের সভাপতিত্বে সদস্যসচিব শফিউল আলম দোলনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, আইনজীবী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ নানা পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন নোবেল লরিয়েটকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়েছেন। তিনি আপাদমস্তক একজন নির্লোভ ব্যক্তি। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।’ একইসঙ্গে সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দেশের গণমাধ্যম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো গণমাধ্যম বন্ধ হোক এটা আমরা চাই না। তবে পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী দোসররাই এখনো বেশিরভাগ মিডিয়া চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণের পক্ষের এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের দায়িত্ব দিতে হবে। যাতে সত্যিকার অর্থেই দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষার ভাষা প্রতিফলিত হয়।’
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার অনেক সাংবাদিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সেই সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।
এদিকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পেছনে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর অনন্য ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তাকে বাংলাদেশের রিয়েল হিরো বলে আখ্যা দেন।
এ সময় সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ, তৈরি ও পরিবেশনের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে প্রতীক্ষার আরেক নাম ছিল মুশফিকুল ফজল আনসারী। জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দপ্তরগুলোতে শেখ হাসিনার অপশাসনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে অসামান্য, অনন্য ও অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। সাংবাদিক সমাজ তাকে নিয়ে গর্বিত এবং তাকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত।’
বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া ফুলেল সংবর্ধনা শেষে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘অনেকটা নিরাপদ স্থানে থেকেই আমরা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি। যদিও নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হেনস্থা করা হয়েছিল। তবে আমাদের ত্যাগের চেয়েও দেশে অবস্থান করে যারা লড়াই করে গেছেন তাদের অবদান ভোলার মতো নয়।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার নানাভাবে আমাকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিল। প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করাটাই নিজের ব্রত মনে করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময়টা আনন্দ-উৎসবের নয়। দয়া করে এসব ছবি দিয়ে শহিদি পরিবারগুলোর মনের কষ্ট বাড়িয়ে দেবেন না। এটা আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ। আল্লাহ যেন তাদের সবাইকে শহিদি মর্যাদা দান করেন।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. কামরুল আহসান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, সরকারি কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির নেতা নেয়ামত উল্লাহ, গণধিকার পরিষদ নেতা তারেক রহমান, বিশিষ্ট কবি উদ্দিন স্টালিন, সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক নেতা কবি আবদুল হাই শিকদার, ইলাহি নেওয়াজ খান সাজু, ইলিয়াস খান, কাদের গণি চৌধুরী, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, শহিদুল ইসলাম, খুরশিদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।
মিজানুর রহমান/সালমান/