ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

বিট সাংবাদিকতা কার টিকে থাকার কথা, কে টিকে থাকে!

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম
কার টিকে থাকার কথা, কে টিকে থাকে!
এনাম আবেদীন

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। সারা দেশে নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। ১২ নভেম্বরেই সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ মিত্র দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। কালের কণ্ঠে ডেপুটি এডিটর পদে কাজ করলেও তখন পর্যন্ত বিএনপি বিটে বেশ সক্রিয় সাংবাদিক ছিলাম। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারছিলাম, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও সর্বত্রই শেখ হাসিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেশ শক্তভাবেই আছে।

তবে প্রতিকূল সব পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপি নির্বাচনে যাক, এমনটা অন্য অনেকের সঙ্গে আমিও চেয়েছিলাম। কারণ হলো, প্রথমত, পরপর দুবার নির্বাচন বর্জন করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হওয়ার সুযোগ ছিল। দ্বিতীয়ত, আমি যে কারণে চেয়েছিলাম, সেটি ছিল ব্যক্তিগত লাভ-অলাভের হিসাব থেকে। বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হলে দলটির রাজনীতি হুমকির মুখে পড়বে। আর তাতে বিএনপির ‘বিট’ বলতে আর কিছু থাকবে না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর রাজনীতির বিষয়ে আমার যে ‘এক্সপার্টিজ’ বা বিশেষ অভিজ্ঞতা, সেটি আর কোনো কাজে আসবে না।

আরও খোলাসা করে বললে এর অর্থ হলো, বিএনপি না থাকলে বিএনপি বিটের আর কোনো সাংবাদিক জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রয়োজন হবে না। মোট কথা, প্রয়োজন না হলে আমাদের আর চাকরিতে না-ও রাখা হতে পারে। কারণ, বিএনপি বা বিরোধী দলগুলোর কর্মকাণ্ড না থাকলে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিককের আর দরকার হবে না। তাদের ‘ইউটিলিটি’ বা উপযোগিতা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের আর চাকরি থাকবে না।

খবরের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক হওয়ার পরে এখন অবশ্য বিট সাংবাদিকতার গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণমূলক লেখালেখির পাশাপাশি পত্রিকার নিউজ পরিকল্পনা ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কাজের পরিধি এখন অনেক বেড়েছে। পত্রিকার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। তবে ‘বিএনপি বিটে’র সাংবাদিক এই পরিচিতি এখনো আছে।  

২০১৮ সালের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিএনপি বিটের পাশাপাশি সক্রিয় বেশির ভাগ সাংবাদিকের মনে থাকার কথা, ‘নির্বাচনে ন্যূনতম ফলাফল অনুকূলে না গেলে বিএনপি বিট বলতে আর কিছুই থাকবে না’- এমন আলোচনা একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমে বেশ চাউর হয়েছিল। সঙ্গে এও বলা হয়েছিল, ক্ষমতায় গেলে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর লোকেরাই মালিকদের চাপ দিয়ে বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করবে। কারণ বিএনপি বিটের সাংবাদিক মানেই সমাজে বিএনপিপন্থি বলে পরিচিত। বিএনপিপন্থি ইউনিয়ন বা পেশাগত সংগঠনে সক্রিয় না হলেও বিট করার কারণে তার গায়ে এক ধরনের দলীয় ‘সিল’ পড়ে যায়। তার ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে যায় বিএনপিপন্থি সাংবাদিক হিসেবে। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিট করলেও আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত হতে হয় তাকে।

বলা বাহুল্য, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগ পর্যন্ত গণমাধ্যমে আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকরাই প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বড় বড় পদও তাদেরই দখলে ছিল। বিএনপিপন্থি বলে পরিচিত অধিকাংশ সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েছিলেন। কেউ চাকরি হারিয়ে এবং কেউবা হারানোর ভয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সিনিয়রদের মধ্যে যে অল্প কজন সাংবাদিক কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি নানা কৌশলে টিকে ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলাম আমি। ২০২১ সালের অক্টোবরে অবশ্য ওই কৌশলও ব্যর্থ হয়। কোনো অনিয়ম, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, এমনকি সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড না করার পরেও বিনা কারণে হঠাৎ করেই ৩ অক্টোবর সকালে কালের কণ্ঠর উপ-সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কারণ, আমার চেয়ে কম বয়সী এবং কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নবনিযুক্ত একজন সম্পাদক চাইছিলেন না যে, এত সিনিয়র একজন সাংবাদিক কালের কণ্ঠে কাজ করুক। আমি বহাল থাকলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা ওই সম্পাদকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই কালের কণ্ঠর মালিকরা শুধু ‘অসফল’ (পরবর্তী সময়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়) ওই সম্পাদকের ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন।       

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ঘটনা সবার জানা। ‘রাতের নির্বাচন’ নামে পরিচিত ওই নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মিলে মাত্র ৯টি আসন লাভ করে। সম্পূর্ণ একটি ‘ফ্রড’ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়েছিল।

সে যা-ই হোক, ৯টি আসন পেয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কের পর বিএনপি একাদশ সংসদে যোগদান করে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিএনপি কিছুটা দুর্বল হলেও রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট ও লেখালেখি তখনো বিএনপিকে নিয়েই হয়েছে। ফলে গুরুত্বহীন হলেও ওই যাত্রায় কোনো রকমে টিকে ছিল বিএনপি বিট।

২০২৪ সালে বিএনপি ও বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের আগে আবারও আলোচনা জোরদার হয় যে, বিএনপি বিট বলে কিছু থাকবে না। বিটের সাংবাদিকরাও ধরে নিয়েছিলেন যে, আর কী বিট! চাকরি তো যাবেই, জীবন না যায়! স্পষ্ট মনে আছে, শেখ হাসিনা বা সরকারের সমালোচনা সাংবাদিকদের মধ্যে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের জন্য বিষয়টি আরও বেশি স্পর্শকাতর ছিল বলে ভয়ে কোনো কথাই বলতাম না। খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামালের কাছে এ জন্য চিরকৃতজ্ঞ যে, বিএনপি বিটের সিনিয়র সাংবাদিক হওয়ার পরেও সাহস করে তিনি আমায় চাকরি দিয়েছিলেন। এ জন্য অবশ্য বারবার গোয়েন্দা সংস্থার চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। আমার প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি এগুলো বেশ কয়েকবার সামাল দিয়েছেন। ‘বিএনপির এক কোটিরও বেশি নেতা-কর্মী ঘরছাড়া’ শিরোনামে একটি লিড রিপোর্ট করার জন্য সরকারের চাপে আমাকে প্রায় এক মাস বাসায় থাকতে হয়েছে। আমাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য প্রবল চাপ থাকলেও কামাল ভাই সেটি করেননি। 
কিন্তু পৃথিবীর কী অদ্ভুত নিয়ম। প্রকৃতির কী খেলা। সরকারের সব বাড়াবাড়ি উল্টে গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। এ জন্যই বলা হয়, মহান আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। রাজনৈতিক ‘মিথ’ তৈরি হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারকে সরানো যাবে না। আলোচনা ছিল এবং আমরা বিশ্বাসও করতেম যে, বিএনপি বিট থাকবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অন্তত এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বিট বলতে কিছু নেই। কারণ দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে। চাকরিচ্যুত না হলেও দেশে প্রভাব কমে গেছে তাদের।

রাজনৈতিক বিটের সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রিপোর্ট করার অনেক বিষয় থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা পারতপক্ষে ওই বিষয়ে লিখতে আগ্রহী নন। কারণ আওয়ামী লীগের নাম নিলেও ‘ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের’ অভিযোগ উঠতে পারে। বেশির ভাগ গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের নাম নিতেও এখন ভয় পাচ্ছে, এটাই বাস্তব পরিস্থিতি। এক কথায় আওয়ামী লীগের বিট থাকবে কি না, এটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে সাংবাদিকরা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কাছে। আওয়ামী লীগপন্থি বলে পরিচিত প্রভাবশালী সাংবাদিকরা সরকারের পক্ষে থেকে বিধানমতো চাকরি করেছেন; কেউ কেউ নিজের ‘আখের’ও গুছিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে সাংবাদিক সমাজের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল। অথচ এখন মাত্র পঞ্চাশ বা এক শ শব্দের একটি রিপোর্ট ছাপার জন্য দলটির নেতাদের অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় প্রত্যক্ষ করছি। এমন বিপদ হতে পারে দলটির নেতারা কখনো কল্পনাও করেননি। বিষয়টি বিএনপির জন্যও শিক্ষণীয়। আলোচনা ছিল বিএনপি বিট থাকবে না। এখন আওয়ামী লীগ বিটই হুমকির মুখে। কার টিকে থাকার কথা, আর কে টিকে থাকে!

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক খবরের কাগজ

সংবাদপত্রশিল্পের ঈদের ছুটি ৫ দিন ঘোষণার দাবি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
সংবাদপত্রশিল্পের ঈদের ছুটি ৫ দিন ঘোষণার দাবি
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদপত্রশিল্পের কর্মীদের ঈদের ছুটি সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ দিনে উন্নীত করার জন্য নোয়াবের প্রতি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বাসস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের যৌথ সভায় এই দাবি জানানো হয়। খবর বাসসের।

সংগঠনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্সের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন খানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমান তালুকদার। সভায় দুই ফেডারেশনের নেতারা আলোচনা করেন।

সভায় নেতারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নির্ধারিত হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে সংবাদপত্রশিল্পের জন্য ছুটি মাত্র তিন দিন নির্ধারিত করেছে ‘নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)’, যা সাংবাদিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। 

বক্তারা বলেন, কর্মচারী, প্রেস শ্রমিক এবং সাংবাদিকরা সমাজের আয়না ও কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেন। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে জনগণকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দেন। অন্য সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যখন ঈদের পূর্ণাঙ্গ ছুটি পাচ্ছে, তখন সংবাদকর্মীদের তিন দিনের মধ্যে কাজে ফিরতে বাধ্য করা অন্যায়।

বক্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংবাদপত্রশিল্পের কর্মীদের ঈদের ছুটি পাঁচ দিনে উন্নীত করা হোক। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার অধিকার সব কর্মীর সমানভাবে পাওয়া উচিত। আমরা আশা করি, নোয়াব এই বৈষম্যমূলক নীতির পুনর্বিবেচনা করবে এবং সাংবাদিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য ছুটি নিশ্চিত করবে।

মাহফুজ/

সাংবাদিকদের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা: কাদের গনি চৌধুরী

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
সাংবাদিকদের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা: কাদের গনি চৌধুরী
সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, প্রতিটি দিন দুটি সূর্য উদিত হয়, একটি হচ্ছে প্রভাত সূর্য অন্যটি হচ্ছে সংবাদ। সূর্যের আলোতে আমরা দেখি আর সংবাদ মাধ্যম আমাদের বিশ্ব দেখায় বা জানায়।

তিনি বলেন, একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। সে জন্য গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সাংবাদিকদেরকে বলা হয় সমাজের ওয়াচডগ। এই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের প্রতিচিত্র। অন্যায়, অনিয়ম, নিগ্রহ, শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে সোচ্চার থাকতে হয় সবসময়। চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে তাদের দিন যায়। ক্ষমতাধরদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব বলেন।

সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন  বিএফইউজে'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, জামায়াতে ইসলামীর আমির প্রফেসর জামাল উদ্দিন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী জাবেদ সাবের, বিএফইউজে নেতা আবু হানিফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের হতে হবে সাহসী। কিন্তু রাষ্ট্রের সহযোগিতা না পেয়ে সাহসী সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেকটা বিলীন হতে চলেছে।

তিনি বলেন, কথায় কথায় সাংবাদিককে হত্যা করা হয়, নিগৃহীত করা হয়, ভয় দেখানো হয়। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে, কাজ ব্যাহত করতে অহরহ দমন-পীড়ন চালানো হয়। পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া, রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের অত্যাচার, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের আক্রমণ- এ সবকিছু সাংবাদিকদের সহ্য করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। তার উপর রয়েছে নিপীড়নমূলক আইন। নানারকম হয়রানি এড়িয়ে যেতে সাংবাদিকরা যখন সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নেন, তখন গণমাধ্যম আর স্বাধীন থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা প্রভাবশালী মহলের চাপে পড়ে সেলফ সেন্সরশিপ অবলম্বন করেন। অনেক সময় চাকরি হারানোর ভয়ে অফিসের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ বেশি, তাদের বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। এভাবে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা মারা পড়ছে।

বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী আইনের সদ্য বিলুপ্ত ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন সাংবাদিকরা মামলা হওয়ার পর নানা সময়ে জটিল বিষয়গুলোতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে গেলে আগে নিজের বিপদ এড়ানোর কথা ভাবেন বার বার। ফলে অনেক সময় অনেক তথ্য জেনেও চুপ করে থাকেন। কেননা, বিপদে পড়লে অফিস বা নেতাদের কাছ থেকে খুব বেশি সমর্থন পাওয়া যায় না।

আরেকটা বিষয়ে না বললেই নয়, বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম’ বিষয়টি কোনো অর্থ বহন করে না। কেননা, বাস্তবতা হলো এখানে সাংবাদিকরা সেলফ সেন্সর্ড। যে ক’জন সাংবাদিক এই পরিস্থিতির বাইরে থেকে পেশাদারত্বের সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে চান, তারা নানা হয়রানির শিকার হন। তাদের নিয়ন্ত্রণের যে প্রক্রিয়া সেটি তাকে সাহসী হতে বাধা দেয়।। মুদ্রার অন্য পীঠও আছে। সাংবাদিকতার বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করলে সঠিক সাংবাদিকতা করা যায় না। সাংবাদিকতার সঙ্গে যু্ক্তরা যখন হয় কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন, নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়ে যান, তখন তিনি মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। বিগত সরকারের সময় এই প্রবণতা বেড়েছে। সাংবাদিকদের প্লট, ফ্ল্যাট অর্থসহ নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের বিবেককে কিনে নেওয়া হয়েছিল। ফলে ওইসব সাংবাদিকরা সত্যিকারের সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতামূখী সাংবাদিকতার দিকে ধাবিত হন। দালালি করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। কোনো কোনো সাংবাদিকের একাউন্টে হাজার কোটি টাকা লেনদেনের খবর জাতিকে বিস্মিত করেছে। সঠিক সাংবাদিকতা ছেড়ে কিছু কিছু সাংবাদিক দলদাসে পরিণত হন। যার ফলে সাংবাদিকতার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সাংবাদিক কোনো দলের না, কারও স্বার্থের না, এমনকি দলমতের উর্ধ্বে থেকে সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করবেন– এটাই প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ।

মাহফুজ/

আশুলিয়ায় সংবাদকর্মীর ওপর হামলা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:১৯ এএম
আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
আশুলিয়ায় সংবাদকর্মীর ওপর হামলা
সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত সংবাদকর্মী সেলিম হোসেন। ছবি: খবরের কাগজ

সাভারের আশুলিয়ায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে গুরুতর আহত হয়েছেন একটি পত্রিকার সংবাদকর্মী সেলিম হোসেন। আহত অবস্থায় তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাত ৮টায় আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। সেলিম হোসেন দৈনিক সংবাদ বাংলাদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, ইফতারের সময় সড়কে যানজটের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন। তার সঙ্গে ছিলেন কালের পরিবর্তন পত্রিকার সুজন আহাম্মেদ এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার শরিফুজ্জামান ফাহিম। তথ্য সংগ্রহ শেষে তারা চলে গেলেও সেলিম হোসেন চাঁদাবাজদের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে তাদের আক্রমণের শিকার হন। সন্ত্রাসীরা তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে এবং তার মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়।

এই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের মধ্যে জামগড়া এলাকার জহিরুল ইসলাম, খোকা ভূঁইয়া, রাকিব মোল্লা, মৃদুল, রিংকু, সাব্বির, রিপন, মিলনসহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী আক্রমণকারীর নাম তালিকায় রয়েছে।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

ইমতিয়াজ/তাওফিক/ 

ফিরে পেল ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লারেশন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
ফিরে পেল ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লারেশন
যায়যায়দিন

দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের সই করা অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।  

ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (প্রকাশনা ও ছাপাখানা শাখা) নুসরাত নওশীন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় এই দৈনিকের ডিক্লরেশন বাতিল করে সরকার।

দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত প্রেস রয়েছে সেখান থেকে ছাপা হচ্ছে না, কিন্তু প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে– এমন অভিযোগ এনেছিলেন শফিক রেহমান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় যায়যায়দিন পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামে যে ঘোষণাপত্র ছিল তা বাতিল করা হয়।

জোবাইদা/ 

খবরের কাগজের চট্টগ্রাম অফিসে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের নিয়ে ইফতার

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:০১ এএম
খবরের কাগজের চট্টগ্রাম অফিসে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের নিয়ে ইফতার
খবরের কাগজের চট্টগ্রাম অফিসে ইফতার করলেন সংবাদপত্র বিক্রেতারা। ছবি: খবরের কাগজ

দৈনিক খবরের কাগজ চট্টগ্রাম অফিসের উদ্যোগে শহরে স্টলে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার (১৬ মার্চ) নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় পত্রিকার নিজস্ব অফিসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

এ সময় খবরের কাগজের ব্যুরোপ্রধান এস এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘দৈনিক খবরের কাগজ মুক্তচিন্তার একটি স্বাধীন দৈনিক। আমাদের পত্রিকার প্রতিষ্ঠালগ্নের স্লোগানও এটি। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল পত্রিকাটির সম্পাদক। তার দক্ষ নেতৃত্বে এ পত্রিকাটি শুরু থেকেই নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের মন জয় করে আসছে। পত্রিকাটির কাগজ, ছাপা, লেখা ও মান অনেক সমৃদ্ধ। পাশাপাশি পত্রিকায় ‘চট্টগ্রামের খবর’ নামে প্রতিদিন আধা পৃষ্ঠার আলাদা বিভাগ রয়েছে।’ 

ব্যুরোপ্রধান আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের পত্রিকা বিক্রেতা এবং আমরা একই পরিবারের সদস্য। পত্রিকাটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে বিক্রেতাদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। পত্রিকাটি এগিয়ে নিতে আপনাদের আরও সহযোগিতা চাই।’ এ সময় উপস্থিত পত্রিকা বিক্রেতারা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান গণি, স্টল দোকানদারদের মধ্যে ছিলেন, নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার মো. মনসুর, বহদ্দারহাট এলাকার লিটন দে ও মোরশেদ, চেরাগী পাহাড় এলাকার গণি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার মো. মান্নান, লালদীঘি এলাকার মো. ওসমান, নেভী হসপিটাল গেট এলাকার মো. কাদের, আগ্রাবাদ এলাকার কালাম, চকবাজার এলাকার জাভেদ, জিইসি মোড় এলাকার রাজীব দে প্রমুখ।