
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার দাবিতে এ বছরও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন তাদের সহকর্মী সাংবাদিকরা। সমাবেশ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আগামীকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে রিপোর্টারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউর সামনে আয়োজিত সমাবেশে ওই স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি আবু সালেহ আকন।
এদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা বাধাগ্রস্ত করেছেন। এ কারণে ১৩ বছর পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত (এনেক্স) ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মামলার বাদী নওশের রোমান, সাগর-রুনির ছেলে মাহির সারওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিকরা বলেন, ‘সাংবাদিকদের জীবন অভিশপ্ত জীবন। সবাই চায় আমাদের দমিয়ে রাখতে। বিগত সরকার আমাদের ভয় পাওয়ার জন্য সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি।’
তারা বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলা হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১৪ বারের মতো পিছিয়েছে। বাংলাদেশে কি এর আগে কখনো কোনো হত্যা মামলার বিচার হয়নি? তৎকালীন সরকারের প্রত্যেকে এ মামলার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। ফলে সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত এই মামলার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আমাদের প্রত্যাশা, বর্তমান সরকার এ মামলা এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
প্রতিবাদ সমাবেশে ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য, সাগর-রুনির সহকর্মীসহ অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আবু সালেহ আকন বলেন, ‘এখানে আমরা যারা আছি সবাই সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। আগামী নতুন কমিটিতে যারা আসবেন তারাও আশা করি এই হত্যার বিচার চাইবেন। যারা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে চেয়েছেন, পকেটে টাকা ভরেছেন, সরকারের টাকায় বিদেশে গেছেন, আলিশানভাবে থেকেছেন, ইনশাআল্লা তাদেরও বিচার হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশ থেকে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের কথা এসেছে। ২ মার্চ এই হত্যার প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। আমরা ২ মার্চ পর্যন্ত দেখব। যদি ২ মার্চ এই হত্যার প্রতিবেদন দাখিল করা না হয়, তাহলে আমরা সংগ্রাম কমিটি গঠন করে রাস্তায় নামব এবং জোরালোভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব। এ ছাড়া এই হত্যার বিচার দাবিতে আগামীকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’
এদিকে আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার আসার পর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মামলাটি তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের কথা রয়েছে। টাস্কফোর্সে যারা রয়েছেন তারা মামলার বাদী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তদন্ত কমিটির সংশ্লিষ্টরা আমাদের জানিয়েছেন, আগের সরকারের সময় উচ্চপর্যায় থেকে তদন্তে বাধা দেওয়া হতো। এ কারণে তদন্ত এগোয়নি।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এ সাংবাদিক দম্পতি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি। কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে বলতে পারছেন না তদন্তসংশ্লিষ্টরা। থানা-পুলিশ, ডিবি, র্যাবের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলার তদন্তভার পেয়েছে পিবিআই।