
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেছেন, সৎ সাংবাদিকতা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সমাজকে এগিয়ে নেয়, গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। তাই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে। সততা না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকের কলমের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার না করলে জাতির সর্বনাশ ঘটে। তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো অজুহাত নয়। গণমানুষের মনের কথা পত্রিকার পাতায় পাতায় তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ দাস সাংবাদিকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তাদের আত্মসমর্পণকে ঘৃণা করে। তাই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সম্পাদক-সাংবাদিকদের নির্ভীক, নির্লোভ ভূমিকা পালন করতে হবে। একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। সে জন্য গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। এই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের প্রতিচিত্র।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর আহমেদ চৌধুরী হলে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি মো. মমিনুর রশিদ শাইন এর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম মহসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সংস্থার উপদেষ্টা মো. আবুল বাসার মজুমদার, প্রতিষ্ঠা সদস্য মো. শাহজাহান মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি মো. হাসান সরদার জুয়েল, মো. আতিকুর রহমান আজাদ, মো. জামাল হোসেন, মিজানুর রহমান প্রিন্স, মো. খায়রুল ইসলাম, নীতি নির্ধারণী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ মন্জুর হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব লায়ন সিকদার মোহাম্মদ আরিফুল আলম টিটো, সহকারী মহাসচিব মো. সরকার জামাল হোসেন, সাংগঠনিক সচিব মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন এলিন, অর্থ সচিব মো. আবেদ আলী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আতিকুর রহমান, মো. আনারুল হক, পরিকল্পনা সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব বাপ্পি আহমেদ শ্রাবণ, ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহমান প্রধান, ঢাকা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. মহসিন উদ্দিন, মাদারীপুর জেলা কমিটির সভাপতি মো. ফয়জুল কবিরসহ নেতৃবৃন্দ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সত্য বলার সাহসিকতাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র। গণমাধ্যমের জন্য দরকার সৎ, সত্যনিষ্ঠ, পক্ষপাতমুক্ত সাংবাদিকতা। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এসবের বড্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের পরাজয় মানে জনগণের পরাজয়। আর জনগণের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয়। তাই গণমাধ্যমকে পরাজিত হতে দেওয়া যাবে না।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, কারও চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে সাংবাদিকদের দিন যায়। ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়।
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সাংবাদিক হিসেবে আমাদের যে কর্তব্য, সেই কাজটাই করা উচিত সর্বাগ্রে। তা না করে আমরা কী করছি? রাজনৈতিক ক্যাডারের মতো কাজ করছি। আমরা দলদাসের মতো ভূমিকা রাখছি। এতে আমাদের নৈতিক অঙ্গীকার বলে আর কি-ইবা অবশিষ্ট থাকছে? বস্তুতপক্ষে সাংবাদিকতায় সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে হবে– এটাই শিখে এসেছি আমরা। আজ সে আদর্শ ক'জন লালন করেন? আজ যখন সাংবাদিকদের ধরে জনগণ পুলিশের হাতে সোপার্দ করে তখন লজ্জায় মুখ দেখানো যায় না।
তিনি সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, একদল লোক পাঠিয়ে সাংবাদিকদের যদি পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, এটা সমাজে ভুল বার্তা যায়। সাংবাদিকদের মধ্যে অপরাধী থাকলে প্রচলিত আইনে বিচার করুন। বেআইনি কাজ আমরা মেনে নেব না।
শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও মানবিক চেতনা বিকাশের কেন্দ্র এবং নীতি-নৈতিকতা, দায়-দায়িত্ব ও বুদ্ধি-বিবেকের আধার। তাই সৃজনশীল গণমাধ্যম ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে সংবাদপত্র অগ্রগণ্য। তবে সবচে’ ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাহসী, সংবেদনশীল ও নির্মোহ, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ, সত্যনিষ্ঠ ও গণসম্পৃক্ত সার্বক্ষণিক পেশা সাংবাদিকতা। সংবাদপত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল দল নিরপেক্ষ সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। সংবাদপত্র যতবেশি নিরপেক্ষ হবে এবং সাংবাদিকরা যত বেশি নির্ভীক ও সৎ হবে দেশ ও জাতির তত বেশি মঙ্গল হবে। আর সেজন্যই তো সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বা ‘গেট কিপারস’ বলা হয়।