
খবরের কাগজের এবারের ঈদ সংখ্যাটি সত্যিই ব্যতিক্রম! বাংলা কথাসাহিত্যে এখন যারা রাজত্ব করছেন, তাদের প্রায় সবার লেখাই ছাপা হয়েছে এতে। মোড়ক উল্টে ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক মননশীল প্রবন্ধ। প্রবন্ধ অধ্যায় পেরিয়ে যেতেই হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস আর প্রিয় কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, নাসির আহমেদের কবিতা পাওয়া গেল। এবারের সংখ্যায় রয়েছে ভৌতিক গল্প, প্রকৃতিবিষয়ক লেখাও।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য এক আয়োজনে প্রকাশিত হয়েছে খবরের কাগজের এবারের ঈদসংখ্যা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বই পড়তে এসে এক তরুণী অংশ নিয়েছিলেন এ আয়োজনে। ঈদসংখ্যার একটি কপি হাতে পেতে মিনিট দশেক চোখ বুলিয়ে গেলেন এ পাতায়, ও পাতায়। তারপর প্রিয় লেখকদের, প্রিয় কবিদের দেখাও মিলে গেল এই আয়োজনে এসে।
সোমবার বিকেলে খবরের কাগজের ‘লেখক প্রীতি সম্মিলনে’ এসেছিলেন প্রাবন্ধিক ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। উপস্থিত ছিলেন ঔপন্যাসিক ইসহাক খান, মাসুদ আহমেদ, রেজানুর রহমান, শাহনাজ মুন্নী, মনি হায়দার, আতা সরকার, মোহিত কামাল, দীপু মাহমুদ, ড. রকিবুল হাসান, সারওয়ার-উল-ইসলাম, স্বকৃত নোমান, মাসউদ আহমাদ, মোজাফফর হোসেন, শেলী সেনগুপ্তা।
কবিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুহম্মদ নুরুল হুদা, শিহাব সরকার, মাসুদুজ্জামান, ফারুক মাহমুদ, নাসির আহমেদ, বিমল গুহ, সোহরাব হাসান, মিনার মনসুর, মারুফ রায়হান, গোলাম কিবরিয়া পিনু, মারুফুল ইসলাম, শিহাব শাহরিয়ার, তপন বাগচী, সেলিম মাহমুদ, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটন। ভ্রমণ লেখক ইফতেখারুল ইসলাম, প্রকৃতিবিষয়ক লেখক মৃত্যুঞ্জয় রায়, চিত্রশিল্পী রেজা আসাদ আল হুদা অনুপমও যোগ দেন এই আয়োজনে। তাদের প্রত্যেকের লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবারের ঈদসংখ্যায়।
পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন খবরের কাগজের কপি এডিটর মাসুদুজ্জামান।
শুরুতে শাহনাজ মুন্নী বলেন, “আমি প্রতিবছর উপন্যাস লিখি। কিন্তু এবার যেটি লিখেছি খবরের কাগজের ঈদ সংখ্যায় সেটিকে আমি ‘নভেলা’ বলছি।”
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘চলতি সময়ে আমরা মুখে বলছি এক আর করছি আরেক। এই স্ববিরোধিতার কথা রয়েছে আমার প্রবন্ধে।’ রেজানুর রহমান তার বক্তব্যে খবরের কাগজকে একটি সাহিত্য সম্মেলন বা গল্প-উৎসব আয়োজন করার অনুরোধ জানান।
কবি বিমল গুহ বলেন, ‘এ পৃথিবী, এই সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের লেখকরা সে জন্য লিখে চলেছেন।’
দীপু মাহমুদ বলেন, ‘খবরের কাগজের এবারের ঈদ সংখ্যাটি আমার জন্য বিশেষ কিছু। কারণ আমার শিক্ষক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার স্যারের লেখার পরেই আমার লেখাটি ছাপা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, স্যার যেন আমাকে আদর করছেন।’
কবি শেলী সেনগুপ্তা বলেন, ‘আমি অন্তরালের মানুষ। আমার লেখা এর আগে অনেক ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমাকে এমন করে ডেকে এনে ঈদসংখ্যাটি হাতে তুলে দেয়নি। এই স্মৃতি অম্লান থাকবে। এ উৎসাহে হয়তো আমি আরও কিছু লিখতে পারব।’
ছড়াকার ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিভাজনের এ সময়ে কেবল অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ভয় আমাদের।’ এ সময়ে বেসপুক রাইটার এনভায়রমেন্টটা জাগিয়ে রেখেছেন মোস্তফা কামাল। এর মধ্য দিয়ে তো ভালো সৃষ্টি আসবে।’
খবরের কাগজের প্রকাশক ও সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা লেখকদেরও আমাদের পরিবারের অংশ বলে মনে করি। অনেকে আছেন যাদের নিজস্ব লেখক গোষ্ঠী আছে, যাদের কাগজে ওই লেখকরা লেখেন ঘুরে-ফিরে। আমরা কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ লেখক তৈরি করতে চাই না। আমরা চাই সার্বজনীন একটা লেখক গোষ্ঠী। যারা প্রকৃত লেখক তারা লিখবেন শুধু।’
সামাজিক অবক্ষয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গা ক্ষয়ে যাচ্ছে। সে জায়গাটা যদি আমরা পড়ার মধ্যে রাখতে পারি। আমার ইচ্ছা ছিল আমাদের পত্রিকায় সাহিত্যের জন্য চার পাতা বরাদ্দ রাখব। কিন্তু ১৬ পৃষ্ঠার পত্রিকায় অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়।’
একজন লেখককে পূর্ণাঙ্গ কথাসাহিত্যিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় সংবাদপত্রের ভূমিকার কথাও বলেন মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘লেখকগোষ্ঠী তৈরি হয় একটি পত্রিকার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়। ধারাবাহিকভাবে যদি একজন লেখককে গড়ে তোলা যায়, এর মানে তাকে লেখা দিতে বলা- একটা কবিতা দেন, একটা গল্প দেন, এইভাবে। পত্রিকার অফিস থেকে ফোন পেলে, একটু চাপ দিলে তার ভেতরে একটা অনুপ্রেরণা কাজ করে যে, আমাকে লেখা দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সঞ্চালক মাসুদুজ্জামান খবরের কাগজের ঈদসংখ্যার সম্পাদনা টিমকে মঞ্চে ডেকে নেন। তার ডাকে মঞ্চে আসেন উপ সম্পাদক (সম্পাদকীয় ও সাহিত্য বিভাগ) ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন, ফিচার এডিটর খালেদ আহমেদ, সহকারী সম্পাদক ড. সারিয়া সুলতানা, হেড অব আর্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ নিয়াজ চৌধুরী তুলি, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা ও সানজিদ সকাল, গ্রাফিকস বিভাগের নাজমুল মাসুম, মেহেদী হাসান।
অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক খালেদ ফারুকী, বার্তা সম্পাদক রোকেয়া রহমান, সিটি এডিটর আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিজিটাল মিডিয়া প্রধান কাজী গোলাম রাব্বানী, জিএম (মার্কেটিং) মাসুদুর রহমান, মানবসম্পদ ও প্রশাসন প্রধান মিন্টু ভূষণ রায় উপস্থিত ছিলেন। পুরো আয়োজন সমন্বয় করেন খবরের কাগজের ব্র্যান্ড ও ইভেন্ট প্রধান আতিয়া সুলতানা।
৪৮০ পৃষ্ঠার খবরের কাগজের ঈদসংখ্যা আজ থেকে বাজারে পাওয়া যাবে। এর মূল্য ২৫০ টাকা।