ঢাকা ১১ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
English

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মৌলিক শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত: বিএফইউজে মহাসচিব

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মৌলিক শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত: বিএফইউজে মহাসচিব
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা শ্রমশক্তির অংশ হলেও প্রায়শই অন্যান্য শ্রমিকদের ভোগ করা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের মজুরি বোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয় না। তবুও গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা দাবি করে যে, বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য তারা মজুরি বোর্ড অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে। এই প্রতারক মালিকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নকে সক্রিয় হতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১ মে) মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজে এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই সাংবাদিক নেতা আজ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আধুনিক সভ্যতা শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম এবং শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তবুও এই শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এবং স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। আমাদের সুউচ্চ ভবনের প্রতিটি ইট শ্রমিকদের ঘামে স্থাপিত। এমনকি প্রতীকী তাজমহলও শ্রমিকদের পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে, শ্রমিকদের দ্বারা নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলো উদযাপন করা হয় কিন্তু এখনও তাদের প্রান্তিক করে রাখা হয়।’

তিনি ক্রমবর্ধমান শ্রেণি বিভাজনের উপর আলোকপাত করে বলেন, ‘আজকের সমাজ শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে বিভক্ত। যাদের টাকা আছে তাদের মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যাদের টাকা নেই তারা শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু প্রকৃত অর্থে উভয়ই সমাজের জন্য কাজ করে। তবুও যারা মালিক তারা এটি স্বীকার করে না।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিক মারা যায়। ফলস্বরূপ, বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে যার ফলে প্রতি বছর তার জিডিপির ৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫০২ জন আহত হয়েছেন। ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২১৩ জন শ্রমিক মারা গেছেন কিন্তু নিয়োগ কর্তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি।

সূত্র: বাসস

সিফাত/

অসচ্ছল ১৪৪১ সাংবাদিক পরিবারকে ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ০২:১০ পিএম
অসচ্ছল ১৪৪১ সাংবাদিক পরিবারকে ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর অসুস্থ-অসচ্ছল সাংবাদিকদের বৃহৎ পরিসরে কল্যাণ অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের আওতায় গত ১০ মাসে ১ হাজার ৪৪১টি অসুস্থ-অসচ্ছল সাংবাদিক পরিবারের মধ্যে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৮ জুন) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কল্যাণ অনুদান প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে গত বছরের ৩০শে অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশের ৩৫০ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের মধ্যে কল্যাণ অনুদান হিসেবে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। এরপর এ বছরের ৩০শে জানুয়ারি ৩০৫ জন সাংবাদিক-সন্তানকে এককালীন বৃত্তিবাবদ দেওয়া হয় ৫৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক ও ডিপ্লোমা পর্যায়ের ৭০ জন শিক্ষার্থীকে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, স্নাতক (সম্মান) ও ফাজিল পর্যায়ের ১০৪ জন শিক্ষার্থীকে ২৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং প্রকৌশল ও মেডিক্যাল পর্যায়ের ১১ জন শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। একইদিন অর্থাৎ ৩০শে জানুয়ারি ১২৭ জন সাংবাদিক ও মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক পরিবারকে অনুদান হিসেবে ৮৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ৫ সাংবাদিক পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা এবং গণঅভ্যুত্থানে আহত ২৬ জন সাংবাদিককে ১ লাখ টাকা করে মোট ২৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এ বছরের ২২শে মার্চ ৩৭৪ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার অনুদানের চেক প্রদান করে। এর মধ্যে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক পরিবার ছিল ১১টি। অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাংবাদিক ছিলেন ১৯২জন। সর্বশেষ গত ৩ জুন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ২৫৪ জন অসুস্থ-অসচ্ছল সাংবাদিক পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কল্যাণ অনুদান বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক পরিবার ছিল ১৪টি। 

অসুস্থ-অসচ্ছল সাংবাদিক ও তাঁদর পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ অনুদানপ্রাপ্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ কল্যাণ অনুদান প্রদান কার্যক্রম আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কোনো অসুস্থ কিংবা অসচ্ছল সাংবাদিক এবং মৃত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্য কল্যাণ অনুদানের জন্য যেকোনো সময় নির্ধারিত ফর্মে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন বিবেচনা করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কল্যাণ অনুদান মঞ্জুর করে থাকে।

তপন/মেহেদী/

সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্টহাউজে তল্লাশি, যুবক গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১০:০৯ এএম
সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্টহাউজে তল্লাশি, যুবক গ্রেপ্তার
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে একটি গেস্টহাউজে তল্লাশি,  চাঁদাবাজি ও ফেসবুক আইডিতে অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে পোস্ট করার ঘটনায় এম হান্নান রহিম তালুকদার নামে কথিত এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

সোমবার (১৬ জুন) রাত ১০টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ওই ব্যক্তি কথিত একটি অনলাইন টিভির বুম নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় এক গেস্টহাউজে তল্লাশি চালায়। যা নিজের আইডিতে অভিযান উল্লেখ করে পোস্ট করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সোমবার দিনভর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সমালোচনা তৈরি হয়। 

গ্রেপ্তার হান্নান রহিম তালুকদার চট্টগ্রামের আনোয়ারার পরৈকোড়া ইউনিয়নের মাহাতা গ্রামের হাজী মফজল আহমদের ছেলে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতার বলেন, বহদ্দারহাট এলাকায় একটি গেস্টহাউজে সাংবাদিক পরিচয়ে তল্লাশি চালিয়ে রুমে রুমে অতিথিদের পরিচয় চান ওই যুবক। এমনকি যুগলদের কাছে বিয়ের কাবিননামা চান তিনি। চাঁদাবাজির অভিযোগে হান্নান রহিম তালুকদার নামের ওই কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গেস্টহাউজের স্টাফ জাকির হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এরপর রাত ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির করা হবে।

গ্রেপ্তার হান্নান রহিমের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় দ্রুত বিচার আইনে এবং চান্দগাঁও থানায় ২০১৭ সালে একটি চুরির মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন রাত ১১টার দিকে হান্নান রহিম তালুকদারসহ কয়েকজন অপরাধী এক হয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া পপুলার গেস্ট হাউজে তল্লাশি চালান। হান্নান রহিম তালুকদার ওই তল্লাশির ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুকে আপলোড দেন। 

ভিডিওতে দেখা যায়, হান্নান রহিম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে গিয়ে অতিথিদের পরিচয় জানতে চান এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ভিডিওটি প্রকাশের পর তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফেসবুক আইডিতে হান্নানকে নিজেকে চট্টগ্রাম সংবাদ-এর সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য দাবি করেন।

তবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এই নামে কোনো সদস্য নেই এবং হান্নান রহিমের সঙ্গে প্রেস ক্লাবের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।

প্রেস ক্লাবের নেতারা জানান, প্রেস ক্লাবের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোনো অপকর্ম করে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করুন। 

অমিয়/

সাংবাদিক ফারজানা-শাকিল ৪ ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেলেন

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
সাংবাদিক ফারজানা-শাকিল ৪ ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেলেন
সাংবাদিক ফারজানা-শাকিল দম্পতি

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চার ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা। বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তারা কারাগার থেকে বের হন।

কারাগার সূত্র জানায়, ফারজানা রুপার মা মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফারজানা রুপা ও তার স্বামীকে চার ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

শাকিল আহমেদ একাত্তর টেলিভিশনে বার্তাপ্রধান ও ফারজানা রুপা প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। 

২১ আগস্ট রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর উত্তরায় ফজলুল করিম নামের একজনের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

 

সংবাদ উপস্থাপিকা তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ০৮:২০ এএম
আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
সংবাদ উপস্থাপিকা তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
সাফিনা আহমেদ তরী

সংবাদ উপস্থাপিকা সাফিনা আহমেদ তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার (৮ জুন) বিকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন থেকে পরিবারের সদস্যরা তরীকে অচেতন অবস্থায় মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু।

তিনি জানান, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাফিনা বোন ও মায়ের সঙ্গে ইস্কাটনে থাকতেন। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি চ্যানেল২৪, আরটিভিতে সংবাদ উপস্থাপক ছিলেন। পরে মিডিয়া ছেড়ে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকে যোগ দেন।

সাফিনা আহমদে তরীর মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, হঠাৎ তার রুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি জানান, মরদেহ সুরতহালে ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর আলামত পাওয়া গেছে। তার নাক দিয়ে সাদা ফেনা পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।

অমিয়/

একটি ছবি লাখ শব্দের সমান, বলে দেয় হাজারো কথা: কাদের গনি চৌধুরী

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০৯:২৫ পিএম
একটি ছবি লাখ শব্দের সমান, বলে দেয় হাজারো কথা: কাদের গনি চৌধুরী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘আলোকচিত্র হচ্ছে সময়ের দর্পণ। এমনকি ইতিহাসের সাক্ষী। একটি ছবির অনেক ক্ষমতা। কিছু না বলেও একটা ছবি অনেক সত্যকে তুলে ধরে। ফটোগ্রাফি হলো এমন একটি বড় উদ্ভাবন, যা বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।’

বুধবার (২৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত রূপসী বাংলা জাতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন।

তিনি বলেন, ‘আলোকচিত্রের মাধ্যমে সব সময় গল্পের পেছনের গল্পটি উঠে আসে। ক্যামেরার লেন্সের একটি ক্লিকের ছবি যেমন বুকের ভেতর হাকাকার জাগিয়ে তুলতে পারে, ঠিক তেমনি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও জোগায়।’

বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এস শারমিন  মুরশিদ। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কন্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, লেখক ও গবেষক ওবেইদ জায়গীরদার, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার ও নাসিম শিকদার প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘একটি ছবি একটি গল্প বলতে পারে এবং আবেগ, মেজাজ ও বার্তা প্রকাশ করতে পারে- এমনকি এমন ধারণাও জাগাতে পারে যা শব্দ পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের একটি ছবি বিশ্ব বিবেককে ঝাঁকুনি দিয়েছিল। ছবিটি কি ছিল?  ভূমধ্যসাগরের তীরে মুখ লুটিয়ে আছে তিন বছরের এক শিশু, আয়লান। নিষ্পাপ আয়লানের নিথর দেহের ছবি কাঁদিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। বলেছিল যুদ্ধের নির্মমতা ও অমানবিকতা। তুরস্কের উপকূলে নিথর পড়ে থাকা তিন বছরের শরণার্থী শিশু আয়লান কুর্দি নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে।’

আরেকটি ঐতিহাসিক ছবির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৯৩ সালের মার্চের কোন একদিন। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষে পীড়িত দক্ষিণ সুদান। ক্ষুধার জ্বালায় হামাগুড়ি দিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছিল একটি কন্যা শিশু। ছোট্ট দুপায়ে আর একবিন্দুও শক্তি ছিল না যে আরেক কদম এগোবে। সে সময় কানাডীয় আলোকচিত্রী কেভিন কার্টার দেখেন একটি শকুন অনুসরণ করছে শিশুটিকে। দিনের পর দিন খাবার না পেয়ে কঙ্কালসার ও শক্তিহীন শিশুটি চেষ্টা করছে খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের দিকে যেতে। আর শকুন অপেক্ষা করছে কঙ্কালসার এ শিশুটির প্রাণবায়ু কখন শেষ হবে। তাহলে সে খেতে পারবে। এটি আদিমতম এক লড়াইয়ের ছবি।’ 

তিনি বাংলাদেশে ফটোসাংবাদিকদের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘৭৪ সালে বস্ত্রাভাবে লজ্জা নিবারণের জন্য রংপুরের বাসন্তী ও দুর্গা নামের দুই যুবতী নারীর দেহে মাছ ধরার শতচ্ছিন্ন জাল জড়ানোর ছবি দুনিয়া জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখনকার বাংলাদেশের প্রধানতম সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় এ ছবি ছাপানো হয়েছিল। সীমান্তে কাঁটা তারে ফেলানির ঝুলে থাকা লাশের ছবি ভারতীয় আগ্রাসন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছিল।’

ফটো সাংবাদিকদের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় ফটোগ্রাফারদের ভূমিকা অনিস্বীকার্য। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৮২ থেকে ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের জীবন্ত দলিল ক্যামেরার ফ্রেমে ধারন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও সংগ্রামী প্রেরণা যোগিয়েছেন ফটোসাংবাদিকরা। আর এ কাজটি করতে গিয়ে তাদের আহত হতে হতেছিল এমন কি জীবনও দিতে হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভাষাসংগ্রামের রক্তাক্ত ঘটনাকে অস্বীকার করতে চেয়েছিল। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় একটিমাত্র ছবির কারণে।’

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে নিহত রফিক উদ্দীনের মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। গোপন খবরের ভিত্তিতে আমানুল হক মর্গে ঢুকে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত ছবি। ছবিটি রক্ষা করতে তাকে ভারতে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। আমানুলের তোলা ছবিটি এভাবেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম এশিয়ান হিসেবে ২০০৩ সালে ড. শহিদুল আলম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর জুরি চেয়ার হন। এর আগে তিনি ১৯৯৪, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার জুরি সদস্য ছিলেন। এরপর ওয়ার্ল্ড প্রেসের জুরি সদস্য হয়েছেন আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ ও মুনেম ওয়াসিফ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো আলোকচিত্রী স্বাধীনতা পদক পাননি। একুশে পদক পেয়েছেন মো. কামরুজ্জামান, আফতাব আহমেদ, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, সাইদা খানম ও পাভেল রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা পদক পেয়েছেন শহিদুল আলম, গোলাম মুস্তফা, নাসির আলী মামুন, এমএ তাহের ও শফিকুল ইসলাম স্বপন।’

সুমন/