
মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে গান, সেই গানের রচয়িতা লেখক-সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২২ সালে আজকের এই দিনে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে।
তার পেশাগত জীবন শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত কংগ্রেস হিতৈষী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিয়মিত গল্পও লিখতেন তিনি। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়।
১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মাসিক সওগাত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফ্ফার চৌধুরী। এ সময় তিনি মাসিক নকীব সম্পাদনা করেন। পরে দিলরুবা হয়ে ১৯৫৬ সালে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। তিনি এই পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা মেঘনার সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা চাবুক সম্পাদনার দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুদিন পর সামরিক শাসন জারি হলে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এরপর দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, জেহাদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, দৈনিক আওয়াজ ও যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করেছেন। মাঝে একবার ইত্তেফাকে ফিরে এলেও ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশ-এ যোগ দেন।
১৯৭৪ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লন্ডনের বাসিন্দা হন। সেখানে নতুন দিন নামে একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে প্রবাস থেকে বাংলাদেশের নানা পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তিনি পলাশী থেকে ধানমন্ডি নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী খ্যাতিমান হয়ে আছেন তার সাহিত্যকর্ম, সাংবাদিকতা আর সেই অবিস্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা হিসেবে।
২০০৯ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদক পেয়েছেন।