রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চলছে বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) এই কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে নির্বাচন ভবনের সামনে ইসির বুথগুলোতে আপিল আবেদন করেছেন ১৪১ জন। এ নিয়ে সারা দেশে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে বাদ পড়া ৭৩১ প্রার্থীর মধ্যে আপিলকারীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮৩ জনে।
আপিলকারীদের বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কারণ ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। তাই নির্বাচনী আইনের এই ধারা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অসন্তোষ।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা অঞ্চলে ২৩ জন, কুমিল্লায় ১৬, চট্টগ্রামের ৯, ফরিদপুরে ৬, সিলেটের ৪, ময়মনসিংহের ১৯, বরিশালের ৬, খুলনার ১৮, রাজশাহীর ২৬ ও রংপুর অঞ্চল থেকে ১৪ জন আপিল আবেদন করেন। এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান সংস্থাটির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মাহবুবার রহমান।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে বুধবার ইসিতে আপিল করেন নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। পরে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার তিনি অসুস্থ হওয়ায় আমি প্রার্থী হয়েছি। আওয়ামী লীগের সমর্থনের জন্য দলীয় মনোনয়ন নিয়েছিলাম। কিন্তু সমর্থন পাইনি। তাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছি। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেবে। সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারব।’ একই সঙ্গে নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিষয়টি বাতিল করতে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দেন তিনি।
আপিল আবেদন করেছেন কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রার্থী হয়ে আসন্ন জাতীয় সংসেদ নির্বাচনে পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে মনোনয়নপত্রও জমা দেন। তবে ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে বাছাইয়ের সময় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আপিলের পর ডলি সায়ন্তনী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছোট একটা ক্রেডিট কার্ডের ঝামেলা ছিল, যেটা মনে ছিল না। বাচ্চা বাইরে পড়াশোনা করে, সে জন্য দেশের বাইরে যাওয়া-আসা করা লাগে। ক্রেডিট কার্ডের অ্যামাউন্ট পরিশোধ করেই ইসিতে এসেছি।’
মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পেতে ইসিতে আপিল আবেদন করেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ৮-৯ জন সমর্থক। যদিও তিনজনের বেশি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। ভোটে অংশ নিতে হিরো আলম বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র পূরণ না করায় জেলা রিটার্নিং অফিসার ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম তার প্রার্থিতা বাতিল করেন।
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। গতকাল জাহিদ ফারুকের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ ইসিতে গিয়ে ওই আপিল করেন।
এবারের সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ২ হাজার ৭১৬ প্রার্থী। তার মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ২৭ শতাংশ। বৈধ হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।