ঢাকা ৩ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
English

রাশিয়ায় পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার : পাটমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম
রাশিয়ায় পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার : পাটমন্ত্রী
সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভি ম্যান্টিটস্কি। ছবি : সংগৃহীত

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দেশের তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্য রাশিয়াতে আরও বেশি রপ্তানির সুযোগ নিতে চায় সরকার। তিনি বলেন, ‘পাট ও পাটজাত পণ্যের বড় রপ্তানি বাজার হতে পারে দেশটি।’

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভি ম্যান্টিটস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বড় অবদান ছিল রাশিয়ার। রাশিয়া আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। তারা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং যুদ্ধ পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে যেমন সহযোগিতা করেছে তেমনি বর্তমান সময়েও তা অব্যাহত রেখেছে।’

নানক বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশটিতে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে ২ দেশে বাণিজ্য মেলা করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।’

দেশের পাট খাতে রাশিয়ান বিনিয়োগ আসবে কি-না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনা চলছে। তাদের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা আসছে। আশা করি রাশিয়ার বিনিয়োগকারীরা পাট খাতে বিনিয়োগ করবে।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অনেক বড় বড় কোম্পানি রাশিয়া থেকে চলে গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আমরা গার্মেন্টস, ট্যোবাকো, কৃষি পণ্য ও চামড়াজাত পণ্য নিতে চাই বাংলাদেশ থেকে। পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহ আছে রাশিয়ার।’

এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা, যুগ্ম সচিব গোপাল চন্দ্র দাস এবং ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাসের তৃতীয় সচিব ওলেগ কোজিন উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : ইউএনবি 

সালমান/

দুদকের দৃষ্টিতে টিউলিপের পরিচয় একজন অভিযুক্ত

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
দুদকের দৃষ্টিতে টিউলিপের পরিচয় একজন অভিযুক্ত
টিউলিপ সিদ্দিক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার বিচার চলছে, আরেকটি তদন্তাধীন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশের একটি মাছের খামার থেকে তিনি ৯ লাখ টাকা আয় করেন। ইনকাম ট্যাক্সে হঠাৎ করেই ১০ থেকে ৩০ ভরি স্বর্ণ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অসংগতি পাওয়া গেছে। তিনি যতই বলুক না কেন তিনি ব্রিটিশ, আমরা উপযুক্ত কাগজপত্র পেয়েছি যে, তিনি বাংলাদেশি। এখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের সুবিধার জন্য কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে, দুদকের দৃষ্টিতে তিনি শুধুই একজন অভিযুক্ত। আমরা আমাদের নাগরিকের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

সোমবার ( ১৬ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দুদক চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন? তার আইনজীবী দুদকে চিঠি লিখলেন কেন? আমরা তার আইনজীবীকে জানিয়েছি, আমাদের আইনের বিধান অনুযায়ী তাকে (টিউলিপ) আমাদের আদালতে মোকাবিলা করতে হবে।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিউলিপ যদিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাকে দেননি এবং কেন সেটা হয়নি তার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে এমন সাক্ষাতের সুযোগ নেই।’

যুক্তরাজ্যে আরও সম্পদ জব্দের চেষ্টা: মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের সম্পত্তি জব্দ করতে বাংলাদেশের আদালতের আদেশসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাপ্ত মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য লন্ডনে পাঠানো হয়েছে।’

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আমার লন্ডন সফর আগেই নির্ধারিত ছিল। একই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরও সেখানে ছিল। কাজেই আমাদের যাওয়াটা একসঙ্গে হয়েছে। কিন্তু প্রোগ্রামটা আলাদা ছিল। আমরা (গভর্নর ও দুদক চেয়ারম্যান) আগেই ঠিক করেছিলাম যে, লন্ডনে জাতীয় অপরাধ সংস্থা (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-এনসিএ) এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার) সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং আদালতের আদেশ সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। আমি বলতেই পারি, এনসিএ খুবই কার্যকরভাবে কাজ করেছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদের পাচার করা টাকায় কেনা অনেক সম্পদ তারা জব্দ করতে আমাদের সহায়তা করেছে। এনসিএর এই বন্ধুসুলভ সহযোগিতার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা লন্ডনে উপস্থিত থাকার সময়ই সম্পদ জব্দের আদেশ জারি হয়। বিভিন্ন দেশে জাভেদের ৫৮০টি বাড়ির খোঁজ আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ৩৪৩টি যুক্তরাজ্যে, ২২৮টি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৯টি যুক্তরাষ্ট্রে। 

বাংলাদেশের থাকা বাদ দিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যের ৩৪৩টি বাড়ির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২৫ কোটি টাকা। এনসিএ ইতোমধ্যে এই সম্পদ ফ্রিজ করেছে। এ ছাড়া তার প্রায় ২৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ব্যাংক আমানত (প্রায় ৩৫ কোটি টাকা) ফ্রিজ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য যে, যুক্তরাজ্য প্রথমে সাড়া দিয়েছে। লন্ডন সফরের সময় ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে একটি ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কাঠামো’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের অনুসন্ধান ও আইনি ব্যবস্থায় বাংলাদেশ এখনো অভিজ্ঞ নয়, তাই এনসিএ আমাদের প্রশিক্ষণ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতোমধ্যে একজন বিদেশি প্রশিক্ষক আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। গভর্নর নিজে লন্ডনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে পৃথক সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। এখানে একটা সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে- জব্দকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনতে হলে আমাদের দাবি যথাযথভাবে প্রমাণ করতে হবে। আমাদের আদালতের আদেশের পাশাপাশি এনসিএর সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যের আদালতেও একইভাবে প্রমাণ করতে হবে। এরপর সেসব অর্থ-সম্পদ আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।’ 

মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অর্থ ফেরত আনার একটি প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে আমরা শুধু বলতে চাই, দুদকের যেসব মামলা রয়েছে, তার কোনোটিই আপস বা মীমাংসাযোগ্য নয়। যেহেতু দুদকের মামলা ফৌজদারি প্রকৃতির, সেগুলোর নিষ্পত্তি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব নয়। তবে গভর্নর যে দেওয়ানি মামলার কথা বলেছেন, তা আমাদের আওতাভুক্ত নয়। আমরা দুদকের বিধিবদ্ধ আইনের আওতায় থেকে যতটুকু করণীয়, তা করে যাচ্ছি।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ১৯৭৪ সালের আসামি প্রত্যর্পণ আইন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ফেরানোর বিষয়ে সরকার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশন (ইউএনসিএসি) এবং ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের (ইউএনটিওসি) আওতায় আনার প্রচেষ্টা রয়েছে।’

ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক চলছে

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:০৪ পিএম
আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:০৮ পিএম
ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক চলছে
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ছবি: খবরের কাগজ

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের মুলতবি বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে শুরু হওয়া এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। 

দ্বিতীয় ধাপের বৈঠকের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আমন্ত্রিত সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

আজকের বৈঠকে সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ প্রথম ধাপের অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।

বৈঠক শুরুর আগে আলোচনার সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানান, জুলাইয়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরিতে তারা আশাবাদী। তিনি আশা করেন, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যের প্রশ্নে ছাড় দেবে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা জাতীয় সনদ তৈরিতে সক্ষম হবেন। আগামী ১৮, ১৯ এই দুদিনও ঐকমত্যে প্রয়োজনে সংস্কারের অসমাপ্ত আলোচনা এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সহায়তা করবে। 

তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আগামী শনিবারও (২১ জুন) আলোচনা অব্যাহত রাখতে চায় কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তিন দিনব্যাপী এই বৈঠক চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ ধাপেও বিএনপিসহ ৩০টি দলের সঙ্গে এ সংলাপ চলার কথা রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ করে। সেখানে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হলেও কমিশনের মৌলিক প্রস্তাবে দ্বিমত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর। সেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছাতে ২ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পরদিন ৩ জুন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মধ্য দিয়ে ঈদের আগে সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তিনটি বিষয়ে আলোচনার পরে ওই দিন বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। 

এলিস/সালমান/

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রথমবার ঢাকা সফরে

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০২ পিএম
জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রথমবার ঢাকা সফরে

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক কার্যনির্বাহী দল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল চার দিনের সফরে গত রবিবার ঢাকায় এসেছে। প্রায় এক দশকের চেষ্টার পর এবারই প্রথমবারের মতো তারা ঢাকায় আসার সুযোগ পেলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মতি পাওয়ার পর এই সফরটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলো।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে সফরের অনুমতি চেয়ে আসছিল জাতিসংঘের এ ওয়ার্কিং গ্রুপ। তারা প্রথম ২০১৩ সালের ১২ মার্চ তৎকালীন সরকারকে চিঠি দিয়ে সফরের আগ্রহ জানায়। এরপর একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সাড়া দেয়।

সফরকালে প্রতিনিধিদলটি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী, গুমসংক্রান্ত কমিশনের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গুমের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। পাশাপাশি নীতিগত আলোচনায়ও অংশ নিয়েছে।
ডব্লিউজিইআইডির ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাজিনা বারানোস্কা গতকাল সোমবার পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘বাংলাদেশ গুমবিষয়ক সনদে স্বাক্ষর করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সংকট কাটানোর সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত উপায় হলো গুমের শিকার পরিবারগুলোর কথা শোনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার জন্য এসেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে।’

ওয়ার্কিং গ্রুপের অপর সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ বলেন, ‘আমরা সরকার, সুশীল সমাজ ও গুমের শিকার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য তদন্ত নয়, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ করা। গত জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেন। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের এক দিন আগে বাংলাদেশ এ চুক্তিতে সই করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ৭৬তম দেশ হিসেবে সনদে যুক্ত হয়। 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে এ সনদ গ্রহণ করে।

সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এ সনদে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের চাপ থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বরাবরই অনাগ্রহী ছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে। ভারত শুধু সই করলেও এখনো অনুস্বাক্ষর করেনি।

ডব্লিউজিইআইডির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৭০টি গুমের ঘটনা এখনো নিষ্পত্তিহীন রয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ৮৮ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫ জন আটক, ১০ জন মুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। বাকিদের খোঁজ মেলেনি।

১ লাখ শিক্ষক নেবে সরকার

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:১৬ পিএম
১ লাখ শিক্ষক নেবে সরকার
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজে ৪৬ হাজার ২১১, মাদ্রাসায় ৫৩ হাজার ৫০১ এবং কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১১০টি পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী ২২ জুন দুপুর ১২টার পর থেকে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। 

গতকাল সোমবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শূন্য পদের তালিকা এবং আবেদন ফরম এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট (www.ntrca.gov.bd) এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইটে (http://ngi.teletalk.com.bd) আগামী ২২ জুন দুপুর ১২টায় প্রকাশ করা হবে।

আবেদনকারীর যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট বিষয়, পদ ও প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী নিবন্ধন সনদধারী হতে হবে। এনটিআরসিএ প্রকাশিত সম্মিলিত মেধাতালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৫)-এর বিধি ১০(১) মোতাবেক বৈধ নিবন্ধন সনদধারী হতে হবে। 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ৪ জুন তারিখে ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। আবেদনকারী মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তা বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সাঈদা মুনা তাসনিম

ঋণের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম এবং তার স্বামী জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সোমবার (১৬ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদক চেয়ার‌ম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। 

তিনি বলেন, মুনা ও তার স্বামী পরস্পর যোগসাজশে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডসহ ১২টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অস্তিত্বহীন নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে সেই টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। অভিযোগটি যাচাই শেষে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক সাইফুর রহমান।

অভিযোগ অনুযায়ী, মুনা ও তার স্বামী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে ইউসিবিএল, ব্যাংক এশিয়া, ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এনবিএল, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট, এবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক ঋণের নামে ২ হাজার কোটি টাকা তুলে নেন। পরে সেই ঋণ পরিশোধ না করে সমুদয় টাকা বিদেশে পাচার করেন।  

গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রদবদলের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনের সাঈদা মুনা তাসনিমকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ফেরার আদেশ দেওয়া হয়। আদেশে তাকে দেশে ফিরে মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি দেশে ফেরেননি।

বিসিএস একাদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তার  গত বছরের ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। 

সরকারের আদেশ অমান্য করায় অবসরের আগেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।  

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পরিচিতি পাওয়া পেশাদার কূটনীতিক সাঈদা মুনা তাসনিম ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিজেকে করিৎকর্মা হিসেবে প্রকাশ করতে এই কূটনীতিক ছিলেন সদা তৎপর। তার মেয়াদে হাইকমিশনকে ‘পার্টি অফিসে’ পরিণত করা হয়েছিল বলে বিএনপির প্রবাসী কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে সে সময় হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যে মিশনে যাওয়ার আগে তিনি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ ও বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক লন্ডন হাইকমিশন ও নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়ার পর তাসনিম ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। বিএসএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের  এই কর্মকর্তা ১৯৯৩ সালে চাকরিতে যোগ দেন। 

জলবায়ু কূটনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য সাইদা মুনাকে ‘ডিপ্লোম্যাট অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ দেয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিন।