ঢাকা ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অভিযান

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৫ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অভিযান
ফিটনেসবিহীন ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অভিযান শুরুর ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ৪৮৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

ত্রুটিপূর্ণ ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অভিযান শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৬ ঘণ্টায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেলসহ ৪৮৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগ ।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) থেকে এই অভিযান শুরু হয়। 

এই অভিযানের ফলে ফিটনেসবিহীন এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচল করা লক্ষণীয়ভাবে কমে যাবে বলে আশা করা যায়। 

চলমান এই অভিযানে বিভিন্ন ব্যানারে চলাচলরত বাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাইদা, শ্যামলী, রাজীব, শরীয়তপুর সুপার, বাহাদুর শাহ, পদ্মা, গাবতলী ৮নং, বলাকা, তুরাগ, হানিফ, আবাবিল, অনাবিল সুপার, বোরাক, বিহঙ্গ, পাহাড়িকা, মেঘনা ডিলাক্স, ট্রান্সসিলভা, বিকল্প, ইমরান, শিকড়, ইমাদ, গ্রিন এক্সসেস, হানিফ, জেদ্দা বাস, বিএমএফ বাস, রাজধানী, রমজান, আশিয়ান, মিয়ামি, সেবা, দিঘীরপাড়, সেবা সুপার, তিশা, অনন্যা সুপার, লাবিবা, শ্রাবণ, ইভান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন,  ইউরো পরিবহন, চৌধুরী পরিবহন, জয় পরিবহন, সুরমা সুপার, সাজ্জাদ বাস, সেভেন স্টার, আনন্দ, সাকুরা, সুন্দরবন ও চৌধুরী পরিবহন। 

তাছাড়া নিষিদ্ধ সময়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি যাতে মহানগরীতে প্রবেশ করে যানজট সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

এনাম আবেদিন/সাদিয়া নাহার/অমিয়/

১৬ মে থেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সব আবেদন অনলাইনে

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৯:১৩ এএম
১৬ মে থেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সব আবেদন অনলাইনে
প্রতীকী ছবি

আগামী ১৬ মে থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের আবেদন শতভাগ অনলাইনে গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে। 

গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশনে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের আবেদন আগামী ১৬ মে থেকে সরাসরি হার্ডকপিতে (অফলাইনে) নেওয়া হবে না। সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং দ্রুততম সময়ে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ১৬ মে থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের আবেদন শতভাগ অনলাইনে গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের scs.ssd.gov.bd লিংকে গিয়ে নিজস্ব জিমেইল আইডি দিয়ে লগইন করে অনলাইনে ফরম পূরণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড ও ই-পেমেন্টের মাধ্যমে সরকারি ফি পরিশোধ করে আবেদন করা যাবে।

আবেদন অনলাইনে নিষ্পত্তির পর ডিজিটাল সনদ আবেদনকারী ই-মেইলে পাবেন। নিজস্ব জিমেইল আইডি থেকে কিউআর কোড সংবলিত ডিজিটাল সনদ ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যাবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মহান মে দিবস আজ ন্যায্য মজুরি পান না শ্রমিক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৮:১৬ এএম
ন্যায্য মজুরি পান না শ্রমিক
তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত এক শ্রমিক। ছবি: ইন্দ্রজিৎ কুমর ঘোষ

‘ও ভাই আমাদের কাজ হলে বাসি
 আমরা মুটে কল-খালাসি!
ডুবলে তরি মোরাই তুলতে আসি রে!’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘শ্রমিকের গান’ কবিতার এই চরণটি যেন সাম্প্রতিক লেখা। নিকট অতীতে করোনা মহামারির সময় যেমন কৃষক-দিনমজুররা খেতে ফসল ফলিয়ে দেশের মানুষের পাতে ভাতের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, তেমনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক সংকটেও প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হাল ধরেছিলেন।

শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, কবিতার প্রথম দুটি পঙ্ক্তি
‘ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রীদল!

ধর হাতুড়ি, তোল কাঁধে শাবল।’-এর মতো জাতীয় যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামেও থাকে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ও আত্মত্যাগ। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় একজন রিকশাচালক রিকশার ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের মিছিল সামনে রেখে দেওয়া স্যালুটের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আজ মহান মে দিবসকে সামনে রেখে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৈষম্য কমার কোনো লক্ষণও দেখছি না। আমাদের দাবি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের মজুরি এর ধারেকাছে নেওয়ার চেষ্টাও নেই।’

গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সাভার এলাকায় নিহতদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু নতুন সরকার আসার ৯ মাসেও তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে এতদিনে কোনো বোর্ড পর্যন্ত গঠন হয়নি।’ 

বৈষম্য নিরসনে করণীয় প্রশ্নে আরেক শ্রমিকনেতা বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন, ৩০ হাজার টাকা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, সর্বজনীন রেশন চালু, আইএলও কনভেনশন অনুসারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করাসহ শ্রম আইন সংশোধন ও কার্যকর করা, গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিক ও নেতাদের মুক্তি, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ছাঁটাই-নির্যাতন-দমন-পীড়ন বন্ধ, রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসহ সব শ্রমিক হত্যার বিচার, বন্ধকৃত পাট, সুতা, বস্ত্র ও চিনিকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, শ্রম উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে আগামী ৭ মের মধ্যে স্টাইল ক্রাফট, টিএনজেড গ্রুপ, মাহমুদ গ্রুপসহ বিভিন্ন কারখানার বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।’

বাংলা ভাষায় শ্রমিকদের নিয়ে গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবার আগে কানে বেজে ওঠে গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের কণ্ঠে ‘জন হেনরি’ গানটি। গানটির কলি
‘জন হেনরির কচিফুল মেয়েটি
পাথরের বুকে যেন ঝর্ণা
মা’র কোল থেকে সে পথ চেয়ে
আছে তার
বাবা তার আসবে না -- আর না।’ যেন রাজধানীর অদূরে সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিক নিহতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনায় নিহত এবং হাজারের বেশি আহতদের পরিবারের অব্যাহত দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন শ্রমিকনেতা কাজী মো. রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, ‘এক যুগেও সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শ্রমিক হত্যার বিচার পর্যন্ত পায়নি তাদের পরিবার। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেও মালিকরা শ্রমিকদের জীবনকে ন্যূনতম দাম দেয় না। কারণ মালিকদের সামনে এত এত শ্রমিক হত্যা করেও পার পেয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে।

প্রসঙ্গত, আজ ১ মে, মহান মে দিবস, যা শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবারের শ্রমিক দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে।’

উল্লেখ্য, ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সেই আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সব গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করে।

দিনটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ দিবসে আদায় হয়েছে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। সে প্রেক্ষাপটে এটি শুধু একটি সাধারণ দিবস নয়, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস।’ 

মহান মে দিবসে শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘মে দিবস হচ্ছে ন্যায্য অধিকার আদায় ও নাগরিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের আলোকবর্তিকা। মে দিবস তাদের প্রতিরোধ করতে শেখায়, যারা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’ 

মে দিবসের বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও সর্বত্র ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, হত্যা-নির্যাতন-ছাঁটাই বন্ধ, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। 

নারী শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করে ইসলামি শ্রমনীতি চালুর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নারী বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নূরুন্নিসা সিদ্দীকা। বিবৃতিতে মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 
বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক এম এ আলীম ছাড়াও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতারাও মে দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম বর্ষ উদযাপিত

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম বর্ষ উদযাপিত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ২৮তম বর্ষ উদযাপিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা ওড়ানো, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, গবেষণা মঞ্জুরি প্রদান, পূবালী ব্যাংকের সৌজন্যে দুটি নতুন স্টাফ বাসের উদ্বোধন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবসটি উদযাপিত হয়। 

দিবসটির থিম ছিল ‘ইনোভেট-এডুকেট-এলিভেট ড্রিমস টু দ্য রিয়েলিটি।’ এই উদযাপনের অংশ হিসেবে ৫৬ শিক্ষক-চিকিৎসককে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়।

এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীরা তাদের জন্য আপ্যায়ন বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ সাধারণ রোগী ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য উৎসর্গ করেন। এই অর্থ দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের মধ্যে যারা বিএমইউতে চিকিৎসাধীন এবং সাধারণ রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। 

দিবসটি উপলক্ষে দুপুরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘গবেষণার জন্য শুধু গবেষণা নয়, গবেষণাকে হতে হবে জনকল্যাণ ও উদ্ভাবনমূলক। নিত্যনতুন জ্ঞানের সৃষ্টি, ওষুধ আবিষ্কার, ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অবদান রাখতে হবে। উচ্চতর চিকিৎসাশিক্ষাসহ স্বাস্থ্য খাতে সঠিক নীতিনির্ধারণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে বিএমইউকে ভূমিকা রাখতে হবে; যা কেবল গবেষণার মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়ারও আহ্বান জানা তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার প্রমুখ।

 

ডেঙ্গুতে এক নারীর মৃত্যু

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম
ডেঙ্গুতে এক নারীর মৃত্যু
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে এক নারীর (৪০) মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্টোল রুম ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে বরিশালে ২২, চট্টগ্রামে ১, ঢাকা বিভাগে ১, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ এবং ময়মনসিংহে একজন ভর্তি হয়েছেন।

কন্ট্রোল রুম জানায়, চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৫৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩ এবং এপ্রিলে ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

আরিফ সাওন/এমএ/

মেরুদণ্ড ভেঙে বেকার মিজান, পঙ্গুত্ব নিয়ে মুছার ৩ বছরের যুদ্ধ

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
মেরুদণ্ড ভেঙে বেকার মিজান, পঙ্গুত্ব নিয়ে মুছার ৩ বছরের যুদ্ধ
(বামে) দুই সন্তানসহ কাটার ম্যান মিজান হোসেন এবং (ডানে) পাইপ ফিটার আবু মুছা। ছবি: খবরের কাগজ

খসে খসে পড়ছে মাটির ভিটার দেয়াল। বাঁশের বেড়াও নড়বড়ে। টিনগুলো জং ধরেছে। কালবৈশাখী ঝড়ে যেকোন সময় উড়ে যাওয়ার শঙ্কা শতাভাগ। ঘরে আসবাবপত্র বলতে পুরোনো একটি খাট, একটি টেবিল, একটি খাঁচা ফ্যান। দুই ছেলে সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘরের চৌকাঠে বসে আছেন তিনি। মাঝেমাঝেই পিঠের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। 

বলছিলাম সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের যুবক মিজান হোসেনের কথা। যিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাড়ির পাশের শিপইয়ার্ড ম্যাক করপোরেশনে জীবিকার তাগিদে শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দেন। সেখানে এক যুগ কাজ করার পর তাকে একই কোম্পানীর এ পি এস করপোরেশনে কাটারম্যান হিসেবে বদলী করা হয়। সেখানে কর্মঘন্টার অতিরিক্ত কাজ করেও ন্যূনতম মজুরি পেতেন না তিনি। ওই ইয়ার্ডে কর্মরত অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ মে বিকালে গ্যাসের মাধ্যমে জাহাজ কাটতে গিয়ে প্রায় ২০ ফুট উপর থেকে সাগরের বালুচরে পড়ে যান। এরপর তাকে স্থানীয় বিএসবিআরএ হাসপাতালে নেওয়া হলেও ভালো চিকিৎসা পাননি। পরবর্তীতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন মিজান। ক্ষতিপূরণ চাইলেও দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রম আদালতে মামলা করেও বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে দারিদ্রের কষাঘাতে গত বছরের ২৮ আগস্ট মাত্র এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি।

শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৫১ এবং তপসীল ৫ অনুসারে জাহাজভাঙা পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা অনুসারে মারাত্মক আহত শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একইসঙ্গে ১ বছরের বেতনসহ ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ছুটি দেওয়ার কথা। সেই হিসেবে মিজানের পাওয়ার কথা ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মিজানকে দেওয়া ক্ষতিপূরণ শ্রম আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। 

এরপর দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনি বেকার হয়ে ঘরেই দিন পার করেছেন। দুই সন্তান, স্ত্রী, ভাবী, মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যেদের নিয়ে পড়েছেন চরম বেকায়দায়। মিজান ভারী কিছু বহনেও অক্ষম। ঘুমাতে হলে তাকে বেল্ট পরিধান করতে হয়। এখনও মাঝ রাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। কবে নাগাদ নিজে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠবেন তাও জানেন না মিজান। ইয়ার্ড মালিকের গাফিলতি আর অমানবিক সিদ্ধান্তে তিনি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।

মিজানের সাথে খবরের কাগজের কথা হয় বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে। তিনি জানান, শিপইয়ার্ড কর্তপক্ষের হুমকি ও তারা প্রভাবশালী হওয়ায় নিজেকে সেই যুদ্ধ থেকে গুটিয়ে নেন। তার এক ভাই সড়ক দূর্ঘটনায় ৬ মাস আগে মারা যান। এতে সংসারের পুরো চাপ তার উপর আসে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি প্রতিদিন চাচার দোকানে সময় দিচ্ছেন। তার দেওয়া সামান্য কিছুতে টানছেন সংসার। বলতে গিয়ে কান্নায় চোখ ভাসান মিজান। বলেন, আমি না মরে বেঁচে আছি। পরিবারকেও মারছি। 

মিজানের মা হোসনে আরা বেগম ছলছল চোখে বলেন, এক সন্তান গাড়ি চাপায় মারা গেছেন। আর সন্তান বেঁচেও মরার মতো। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তাকে ঠকিয়েছে। আমার ছেলেকে কোন ব্যবস্থা না করে দিয়ে তারা আরামসে ব্যবসা করছে।

মিজানের মতোই গল্প আবু মুছার। তিনিও একই মালিকের ভাইয়ের শিপইয়ার্ডে পাইপ ফিটার বিভাগে কাজ করতেন। শিপইয়ার্ডে তার কাজের অভিজ্ঞতা ১২ বছরের। শিপইয়ার্ডে কাজের একপর্যায়ে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। ৩ বছর আগে দেশে এসে স্থানীয় ম্যাক করপোরেশনের মালিক মাস্টার আবুল কাশেমের ভাই হাশেমের শিপইয়ার্ডে কাজ নেন। হঠাৎ করেই জাহাজের উপর থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। তার ডান পা ভেঙে ও থেতলে যায়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন মুছাকে মৃত ভেবে, বাড়ি দূরে বলে ইয়ার্ডে দীর্ঘ সময় ধরে ফেরে রাখা হয়েছিল। পরে প্রথমে চমেক হাসপাতালে নিয়ে মেঝেতে বিনা চিকিৎসায় রেখে দেওয়া হয়। এরপর ক্ষোভে স্থানীয়রা শিপইয়ার্ড ঘেরাও করলে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার ডান পায়ে দুটি রড ও ১৪ টি স্ক্রু লাগানো হয়। দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় আবু মুছাকে। তিনিও আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ পাননি। দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনিও বেকার। বর্তমানে পরিবার নিয়ে আছেন চরম বেকায়দায়। তবে তার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। 

সীতাকুণ্ডের আকিলপুরে বিয়ে করেন সাতক্ষীরার এই যুবক। তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী যখন পায়ে আঘাত পায় তখন আমরা সীমাহীন কষ্টে পড়ে যাই। আমার গর্ভে তখন সন্তান। একদিকে নিজে অসুস্থ, অন্যদিকে স্বামী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। অবর্ণনীয় কষ্টের সেই দিনগুলি কোনদিন ভুলব না। তিনি বলেন, আমার স্বামী এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। সামনে তার পায়ের রড়গুলো খুলতে হবে। মালিক খরচ দেবেন বলেছেন। হয়তো চক্ষু লজ্জায় আমার স্বামী কথা বলছেন না গণমাধ্যমে। 

জানতে চাইলে জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, শিপইয়ার্ড মালিকরা আমাদেরকে একাধিক বৈঠকে শ্রমিকদের নিন্মতম মজুরি বাস্তবায়ন করবে বলে জানালেও আসলে তা করেনি। বছরের পর বছর শ্রমিকরা বঞ্চনার শিকার। তাদের কোন উন্নতি নেই। কর্মঘন্টা বেশি, বেতন কম, নিয়োগপত্র নেই। আহত হলেও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ মিলছে না। ইতিমধ্যে এই শিল্পে ১৫ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। আমরা ডিসির মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছি।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. শিপন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ৩৫ টি ইয়ার্ড থাকলেও জাহাজ আছে ২৫টিতে। সবকটি ইয়ার্ডে মোট শ্রমিক কাজ করছে আনুমানিক সাড়ে ১০ হাজার। তাদের মজুরি রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, ক্ষতিপূরণ আদায়, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ৮ ঘন্টা কর্মঘন্টা ঠিক রাখতে আমরা কাজ করছি। শিপইয়ার্ড গ্রীণ হওয়াতে আগের চেয়ে উন্নতিও হচ্ছে এসব দিকে।

সিফাত/