খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে রাঙামাটিতেও। দুই পক্ষের সংঘর্ষে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুই পাহাড়ি জেলায় চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে নিহত হয়েছেন তিনজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় বেলা ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায়ের সই করা আদেশে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ ও একজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পৌর এলাকায় বেলা একটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আমাদের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধির পাঠানো বিস্তারিত খবর:
খাগড়াছড়িতে নিহত ৩
খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন দীঘিনালার ধনঞ্জয় চাকমা (৫০), খাগড়াছড়ি সদরের জুনান চাকমা (২০) ও রুবেল ত্রিপুরা (২১)।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শালবন এলাকা থেকে মোহাম্মদ মামুন (৩৪) নামের এক ব্যক্তিকে গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াপাড়া এলাকায় নেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে তাকে নির্যাতন করেন কয়েকজন পাহাড়ি যুবক। একপর্যায়ে মামুন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চোট পান। গত বুধবার ভোরে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সহযোগিতায় মামুনকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে খাগড়াছড়ি সদরে বিক্ষোভ করে বাঙালিরা। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে দীঘিনালা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাঙালি ছাত্ররা। মিছিল নিয়ে তারা লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই সময় পাহাড়িরা তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তা রূপ নেয় সংঘাতে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
সংঘর্ষ চলাকালে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকার ১০২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দীঘিনালার ইউএনও মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
দীঘিনালার ঘটনার জের ধরে রাতে আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও পানছড়ি উপজেলা। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টার পর থেকে জেলা শহরের নারানখাইয়া, স্বনির্ভর ও খবংপুড়িয়া এলাকায় থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ গুলির শব্দ।
সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান বলেন, ‘রাতে খবংপুড়িয়া এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলে যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়।’
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, দীঘিনালা থেকে সন্ধ্যায় কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত ধনঞ্জয় চাকমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে পথেই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও রাতে জেলা সদরের আহত ৬ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরার মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ অপর তিনজনসহ মোট চারজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন সোহেল চাকমা, মানব ত্রিপুরা, বিজয় চাকমা ও নলেজ চাকমা।
সংঘাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালি উভয় পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করছে। পাহাড়িরা বলছেন, অতর্কিতভাবে পাহাড়িদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বাঙালিদের অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে পাহাড়িরা।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও যৌথ বাহিনী কাজ করছে। এ ছাড়া স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে জরুরি আইনশৃঙ্খলা সভা করা হয়েছে। সবাই মিলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।’
রাঙামাটিতে নিহত ১, আহত ৫৮
রাঙামাটির বনরূপা ও কলেজগেট এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৮ জন। সংঘর্ষ চলাকালে দুর্বৃত্তরা কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সড়েক বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয় এবং আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষের জেরে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ পরিস্থিতিতে শহরে চলাচলকারী একমাত্র গণপরিবহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকে। তবে রাঙামাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
খাগড়াছড়ি মধুপুর ও দীঘিনালায় হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টায় রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন। মিছিলটি বনরূপায় পৌঁছালে বনরূপা মসজিদে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে।
রাঙামাটি শহরের বাণিজ্যিক এলাকা বনরূপা থেকে সংঘর্ষের শুরু হয়। পরে তা বনরূপা কাঁচাবাজার, হ্যাপিরমোড়, দক্ষিণ কালিন্দিপুর, আঞ্চলিক পরিষদ, পাবলিক হেলথ এবং এর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তরা ভাসমান দোকানপাট ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং অফিসে ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়। আতঙ্কে সব দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া সড়ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে পার্কিং করা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকে ভাঙচুর চালানো হয়।
এ সময় বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল। এতে দুই দিকে আটকা পড়েন যাত্রীরা। সংঘর্ষের জেরে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে সেনাবাহিনী।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে বিকেল ৪টার দিকে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
মূলত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরপরই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও শওকত আকবর খান জানিয়েছেন, সংঘর্ষে ৫৮ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল
বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল সকালে পাহাড়ি ছাত্রসমাজের উদ্যোগে সমাবেশ করা হয়। এর আগে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে স্থানীয় রাজার মাঠে এসে জড়ো হন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে যোগ দেয়।
সমাবেশে মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি অংশৈসিং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, টনায়া ম্রো, জন ত্রিপুরা, মাখাই মারমা, অনন্ত প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘দীঘিনালায় চোর অভিযোগে বাঙালি ভাই মামুনকে যারা হত্যা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিরা মিলেমিশে থাকতে চাই। কিন্তু বাঙালি হত্যার অভিযোগে পাহাড়িদের দোকান-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাহাড়িদের ওপর হামলা-অগ্নিসংযোগে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘আমাদেরও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একটি মহল সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এই সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে লংমার্চ করব।’
বক্তারা বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি বিভেদ তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে নীলনকশা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র আগেও সফল হয়নি, এখনো সফল হবে না। পাহাড়ের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবে না।
পার্বত্য ৩ জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা আধা ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু।
‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা একে একে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
পরে সাড়ে ১২টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়ে শাহবাগ ত্যাগ করেন তারা। এ সময় কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র নবাংশু চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের ওপর চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা-অগ্নিসংযোগ-গুলিবর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সঙ্গে শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়ক ও নৌপথে অবরোধ ঘোষণা করছি।’
পরে ছাত্র-জনতার সমাবেশ থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দীঘিনালায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আক্রান্ত জুম্মরাসহ খাগড়াছড়ি ও ৩ পার্বত্য জেলার জুম্ম জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ জানমাল রক্ষা; জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত কমিশন গঠন করে এ ঘটনার তদন্ত করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা; জুম্মদের ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার, দোকানপাট ও বাড়িঘরের মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ; স্থানীয়ভাবে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায় অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বরখাস্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেনা ও সেটলারদের প্রত্যাহার।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালির ওপর হামলা, ঢাবিতে প্রতিবাদ
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিকে হত্যা, মসজিদে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ বন্ধ ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
এ সময় তারা সমতলে খবর দে, ‘জুমল্যান্ডের কবর দে’; ‘আমরা সবাই বাংলাদেশি, কেউ নয় আদিবাসী’; ‘আদিবাসী বলে যারা, বাংলাদেশের শত্রু তারা’; ‘মামুন ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই’; ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, সেনাবাহিনীর বিকল্প নাই’- স্লোগান দেন। এ ছাড়া চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা; সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী পদক্ষেপ; পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোতে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি; পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অসাংবিধানিক ধারাগুলো বাতিল।
মাভাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় হামলার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মাভাবিপ্রবির ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
শুক্রবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘পাহাড় থেকে সমতলে, লড়াই হবে সমান তালে’, সাম্প্রদায়িকতার কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘পার্বত্য চুক্তি, বাস্তবায়ন করতে হবে’, ‘অবিলম্বে ভূমি অধিকার, ফিরিয়ে দাও দিতে হবে’, ‘দীঘিনালায় আগুন কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বাড়ি পুড়ছে কেন? প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
মাভাবিপ্রবি আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের সভাপতি প্রজ্ঞা রেমা বলেন, ‘এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, ধিক্কার জানাই এবং আজকে পাহাড়ে যে আদিবাসী পরিবারগুলো ঘরছাড়া, সেই সব পরিবার ছাড়াও পাহাড়ি এবং সমতলের সব আদিবাসীর নিরাপত্তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’