ব্রিটিশ শাসনামল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ; তিন রাষ্ট্রে উন্নয়ন অব্যাহত থাকলেও ঔপনিবেশিকতার ধারায় পুঁজিবাদ আরও জেঁকে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তবে বিশ্বজুড়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা শেষ প্রান্তে চলে এসেছে বলেও মনে করেন তিনি। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের অবসান ঘটে সাম্যবাদী সমাজকাঠামো নির্মিত হবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আত্মজৈবনিক বক্তৃতা ‘ফিরে দেখা’য় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। গত ২৩ জুন ৮৯তম বর্ষে পদার্পণ করেন তিনি। এ উপলক্ষে গতকাল সাহিত্য-রাজনীতিবিষয়ক পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’ তার একক বক্তৃতার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জীবনী পাঠ করা হয়। বিবর্তন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর দলীয় সংগীত পরিবেশনার পর শিশু একাডেমির শিশুশিল্পীরা সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে।
আত্মজৈবনিক বক্তৃতায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সাতচল্লিশের দেশভাগের প্রেক্ষাপট, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীন বাংলাদেশের নানা প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিজীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ইতিহাস শোনান। তার আত্মজৈবনিক এই আলাপচারিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক জীবনের সংকট ও সম্ভাবনা।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে তিনটি রাষ্ট্রকে আমি ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে দেখেছি। ব্রিটিশ শাসনমালের পরে মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরের বাংলাদেশ। এই তিন রাষ্ট্রে উন্নয়নের ধারা ভাঙেনি, কিন্তু পুঁজিবাদী ধারার বাস্তবতা কিন্তু পরিবর্তন হয়নি।
রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সেই ঔপনিবেশিক ধারা রয়ে গেছে। ধনিক শ্রেণি নানা রকম দস্যুতায় টাকা লুট করছে, লুণ্ঠনের টাকা বিদেশে পাচার করছে। পুঁজিবাদী যে ফ্যাসিবাদের আকার ধারণ করেছে, তা না থামার কারণ হলো তাকে আসলে থাপ্পড় দেওয়ার কেউ নেই।’ শেষ দিকে আবার এই প্রসঙ্গে ফিরে এসে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখন শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। পুঁজিবাদীরা যে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কথা বলে, তা আর চলবে না।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘তারুণ্যকে নষ্ট করতে যত রকমের আয়োজন আছে, রাষ্ট্র তার সব কায়দাকানুন করছে। আমি স্বপ্ন দেখি তরুণদের নিয়ে, যারা প্রতিকূল পরিবেশেও প্রতিবাদ করে। এই তরুণদের রাষ্ট্র ভয় পায়।’
এর আগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, ইংরেজির অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাসদ নেতা ডা. হারুনুর রশীদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। আয়োজনে অধ্যাপক আজফার হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতি ছিলেন এ এস এম কামালউদ্দিন।