পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শুধু আরব আমিরাত নয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দিয়েছে। দেশগুলোর বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। তাদের মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং ১ জনকে ১১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আরব আমিরাত অতি দ্রুত ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের বিচার করেছে বলে অভিযোগ এনে নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বুধবার (২৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
আরব আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির সাজা
আমিরাতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আমিরাতি নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম) জানিয়েছে, কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই ব্যক্তিরা তাদের নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকটি সড়কে বড় ধরনের বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন।
খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার ওই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। পরদিন শনিবার আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল বিবৃতি দিয়ে প্রবাসীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, কেউ উল্লিখিত কাজগুলো করলে তাকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। তার ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে, জেল-জরিমানা হতে পারে, তাকে আমিরাত থেকে ফেরত পাঠানো হতে পারে বা ভবিষ্যতে তার আমিরাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন। পাকিস্তান ও ভারতের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশের।
দ্রুত ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার করা হয়েছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দ্রুত বিচারের পর ৫৭ বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীকে নির্বিচারে আটক, দোষী সাব্যস্ত এবং দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি, আপত্তিজনকভাবে দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যা ন্যায্যতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ বাড়ায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত এক দশকে আমিরাতে নাগরিক অধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, অনলাইন ও অফলাইনের মতো প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের কঠোর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ ভিন্নমতকে অপরাধীকরণ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ আইনে গ্রেপ্তার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শুধু আরব আমিরাত নয়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বিক্ষোভ করার অপরাধে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ আইনে গ্রেপ্তার করেছে। এখানে বাংলাদেশের কিছু করার নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জন্য আরব আমিরাত ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে যা বলা হচ্ছে সেটা গুজব। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের আগে আরও যাচাই করা দরকার। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস।’